হিন্দুতীর্থ গঙ্গাসাগরের মেলাকে কেন ‘জাতীয় মেলা’র স্বীকৃতি দেওয়া হচ্ছে না,- মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়
গঙ্গাসাগর মেলা নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের উদাসীন ভূমিকা এবং বঞ্চনার বিরুদ্ধে গর্জে উঠলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।…
হিন্দুতীর্থ গঙ্গাসাগরের মেলাকে কেন ‘জাতীয় মেলা’র স্বীকৃতি দেওয়া হচ্ছে না,- মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়
গঙ্গাসাগর মেলা নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের উদাসীন ভূমিকা এবং বঞ্চনার বিরুদ্ধে গর্জে উঠলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অন্যতম হিন্দুতীর্থ গঙ্গাসাগরের ফি বছরের আয়োজনকে কেন ‘জাতীয় মেলা’র স্বীকৃতি দেওয়া হচ্ছে না, সেই অনীহার কারণও জানতে চাইছেন তিনি। জাতীয় মেলার স্বীকৃতির দাবিতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে চিঠি লিখেছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। এই বিষয়ে কেন্দ্র সরকারের অবস্থান জানতে তিনি যে সেই চিঠির উত্তরের অপেক্ষায় রয়েছেন, তাও জানিয়েছেন মমতা। আগামী মাসের গঙ্গাসাগর মেলার প্রস্তুতি খতিয়ে দেখতে দু’দিনের সফরে মঙ্গলবার সাগরে পৌঁছন মুখ্যমন্ত্রী। বিকেলে কপিল মুনির আশ্রমে পুজো দেওয়ার পাশাপাশি পরিদর্শন করেন ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘের মঠও। সেই পর্বেই সাংবাদিকদের কাছে গঙ্গাসাগর মেলা নিয়ে কেন্দ্রের বঞ্চনার বিরুদ্ধে সরব হন তিনি।
বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, কুম্ভ মেলার আয়োজনে কেন্দ্রীয় সরকার সবরকম সাহায্য দেয়। কিন্তু গঙ্গাসাগর মেলায় কেন্দ্রীয় সরকার কোন সাহায্য করে না। কেন্দ্রের তরফে একটি পয়সাও পায় না গঙ্গাসাগর মেলা। সব খরচ করতে হয় রাজ্য সরকারকে। মমতার আক্ষেপ, জল পেরিয়ে অনেক কস্টে আস্তে হয় এই মেলায়। না আছে রেল, না আছে সেতু। গঙ্গাসাগর মেলা দুয়োরানি আর কুম্ভ মেলা সুয়োরানি! দৃশ্যত বিরক্ত মুখ্যমন্ত্রী বলেন, গঙ্গাসাগর মেলার জাতীয় স্বীকৃতির দাবিতে প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লিখেছি। কিন্তু কোন উত্তর পাইনি। এখনও উত্তরের অপেক্ষায় আছি।
মমতা বলেন, এই মেলায় আসতে গেলে আগে এত কষ্ট হতো যে, সবাই বলতেন, সব তীর্থ বারবার গঙ্গাসাগর একবার। আর এখন আমরা এমন ব্যবস্থা করেছি, যে মানুষ বলছে, সব তীর্থ একবার, গঙ্গাসাগর বারবার। আমরা যাতায়াত এখন অনেক সহজ করেছি। কলকাতা থেকে তিন ঘণ্টায় গঙ্গাসাগর মেলা প্রাঙ্গণে আসা যায়। মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে সাগর দ্বীপকে জুড়তে একটা ব্রিজ করতে বলেছিলা, ওরা (কেন্দ্র) করেনি। তাজপুরে বন্দর চেয়েছিলাম, সেটাও ওরা করেনি। প্রত্যয়ী মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণা, ব্রিজ আর বন্দরের কাজ আমরাই করব। কপিল মুনি মন্দিরে এদিন মমতাকে স্বাগত জানান মহন্ত জ্ঞানদাস। তাঁর কথায়, আমাদের দিদি প্রধানমন্ত্রী হলে এই মেলা জাতীয় মেলা হবে। তখন আমরা কেন্দ্রের সব সাহায্য পাব। মমতা দর্শনে আপ্লুত মহন্তর কথায়, উনিই লক্ষ্মী, উনিই দুর্গা!
গঙ্গাসাগর মেলার আর কয়েকদিন বাকি। চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। একেবারে নবরূপে সেজে উঠেছে গোটা মেলা প্রাঙ্গণ। আসমুদ্র হিমাচলের অপেক্ষায় গোটা সাগর দ্বীপ। কচুবেড়িয়া থেকে সাগরে কপিল মুনি আশ্রম পর্যন্ত ৩৫ কিলোমিটার পথের গোটাটা সেজে উঠেছে হিন্দি ভাষার স্বাগতিক ব্যানারে। ঘোষনা চলছে বাংলা ও হিন্দিতে। মন্ত্রী ইন্দ্রনীল সেনের কন্ঠে রেকর্ডিং করা ঘোষনা নাগাড়ে বাজছে মেলা চত্বরে।
কেন্দ্র ঘোষণা না করলেও, তামাম ভারতবাসী তো বটেই, প্রতিবেশী দেশের হিন্দুদের কাছেও ভিন্ন আঙ্গিকের গঙ্গাসাগর মেলার গুরুত্ব কুম্ভের চেয়ে কোনও অংশে কম নয়। বরং পুণ্যার্জনের নিরিখে সাগর সঙ্গমে অবগাহন, পুণ্যার্থীদের কাছে অনেক বেশি আকর্ষণের। মেলা শুরু হওয়ার অনেক আগে থেকে এবার দেশের নানা প্রান্তের সাধু-সন্তরা এসে ভিড় করেছেন মেলা প্রাঙ্গণে। চলছে জপ, তপ, ধ্যান আর সাধন। গঙ্গাসাগরের এই মেলা প্রাঙ্গণেই এবার জপ, তপ আর ধ্যানের জন্য ‘মেডিটেশন সেন্টার’ বা ‘ধ্যান কেন্দ্র’ গড়ার উদ্যোগ নিয়েছে দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা প্রশাসন। মেলা কমিটির সভাপতি তথা জেলাশাসক পি উলগানাথান জানিয়েছেন, প্রথমে অস্থায়ীভাবে এটি তৈরি হচ্ছে, পরে তা হবে পাকা পাকি ধ্যান কেন্দ্র। ২০০-২৫০ সাধু সেখানে ধ্যানে বসতে পারবেন।
No comments