অর্থদপ্তর নিজের হাতে রেখেই রাজ্য মন্ত্রিসভায় বড়সড় রদবদল করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শারীরিক অসুস্থতার কারণে এবার বিধানসভা নির্বাচনে প্রার্থী হননি অমিত মিত্র। তা সত্ত্বেও তাঁকেই অর্থদপ্তরের দায়িত্ব সঁপেছিলেন মমতা। সে…
অর্থদপ্তর নিজের হাতে রেখেই রাজ্য মন্ত্রিসভায় বড়সড় রদবদল করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শারীরিক অসুস্থতার কারণে এবার বিধানসভা নির্বাচনে প্রার্থী হননি অমিত মিত্র। তা সত্ত্বেও তাঁকেই অর্থদপ্তরের দায়িত্ব সঁপেছিলেন মমতা। সেই মেয়াদ শেষ হয়েছে মঙ্গলবার। তারপরও অমিতবাবুর জায়গায় অন্য কোনও মন্ত্রীকে আনার কথা ভাবেননি মুখ্যমন্ত্রী। বরং চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যকে অর্থ প্রতিমন্ত্রী করে নিজেই তুলে নিলেন দপ্তরের ভার। পাশাপাশি এদিনই অমিত মিত্রকে মুখ্যমন্ত্রীর অর্থ বিষয়ক প্রধান মুখ্য উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ করলেন মমতা। পরিষদীয়মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় জানালেন, পূর্ণ মন্ত্রীর মর্যাদাই পাবেন অমিতবাবু।
এদিনের ঘোষণায় দৃশ্যতই গুরুত্ব বাড়ল চন্দ্রিমাদেবীর। পুর-নগরোন্নয়ন দপ্তরের পূর্ণ দায়িত্ব সামলানোর পাশাপাশি স্বাস্থ্যদপ্তরের প্রতিমন্ত্রীও ছিলেন তিনি। এবার অর্থদপ্তরের প্রতিমন্ত্রী হিসেবে নতুন দায়িত্ব বর্তাল তাঁর কাঁধে। তবে রাজনৈতিক মহলে এদিন সবচেয়ে বেশি কৌতূহল ছিল সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের ছেড়ে যাওয়া আসন নিয়ে। কে হতে চলেছেন পঞ্চায়েতমন্ত্রী? যাবতীয় জল্পনা এবং চর্চা উড়িয়ে পুলক রায়ের উপর আস্থা রাখলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অর্থাৎ, জনস্বাস্থ্য কারিগরি দপ্তরের সঙ্গে নতুন দায়িত্ব এল পুলকবাবুর কাঁধে। ওই দপ্তরেরই প্রতিমন্ত্রী করা হয়েছে বেচারাম মান্নাকে। তবে, তিনি শ্রমদপ্তরের দায়িত্ব যেমন পালন করছেন, তেমনই করবেন। এছাড়াও অবশ্য শিউলি সাহা পঞ্চায়েত দপ্তরের প্রতিমন্ত্রী রয়েছেন।
২০১২ সাল থেকে সুব্রত মুখোপাধ্যায় পঞ্চায়েত ও জনস্বাস্থ্য কারিগরি দপ্তরের দায়িত্বে ছিলেন। প্রশাসনিক মহলের ব্যাখ্যা, জনস্বাস্থ্য কারিগরি দপ্তরের প্রধান কাজ হল, গ্রামীণ এলাকায় বাড়ি বাড়ি জলের সংযোগ। এর নামই জলস্বপ্ন। এই কাজের গতি অনেকটা বাড়িয়েছেন পুলকবাবু। রাজনৈতিক মহল মনে করছে, তারই পুরস্কার পেয়েছেন তিনি। মূলত পঞ্চায়েত দপ্তরের সঙ্গে সমন্বয় রেখে ওই প্রকল্পের কাজ করতে হয়। একই ব্যক্তির হাতে পঞ্চায়েত এবং জনস্বাস্থ্য কারিগরি দপ্তর থাকলে কাজের ক্ষেত্রে অনেক সুবিধা হবে।
প্রয়াত সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের হাতে পঞ্চায়েত দপ্তর ছাড়া আরও তিনটি দপ্তর ছিল—ক্রেতা সুরক্ষা, স্বনির্ভর গোষ্ঠী এবং শিল্প পুনর্গঠন। এর মধ্যে ক্রেতাসুরক্ষা দপ্তরটি মানস ভুঁইঞার হাতে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। স্বনির্ভর গোষ্ঠীর দায়িত্ব পেলেন ডঃ শশী পাঁজা। আর শিল্প পুনর্গঠন দপ্তর এল শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের হাতে। পরে রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে বিজ্ঞপ্তি জারি করে অমিত মিত্রের দায়িত্ব সম্পর্কে বলা হয়, রাজ্যের অর্থ ব্যবস্থা সংক্রান্ত সবরকম পরামর্শ তিনি মুখ্যমন্ত্রীকে দিতে পারবেন। যাবতীয় আর্থিক প্রস্তাব, ফাইল, নীতি তিনি খতিয়ে দেখতে পারবেন এবং তাঁর মতামত জানাবেন। এমনকী রাজ্য সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্তরের ইভেন্ট, মিটিং এবং কমিটিতে থাকতে পারবেন অমিতবাবু। পাবেন রাজ্যের ক্যাবিনেট মন্ত্রীর সমান সাম্মানিক।
মন্ত্রীদের দায়িত্ব বণ্টন ছাড়াও এদিনের রাজ্য মন্ত্রিসভার বৈঠকে শিল্প পার্ক গড়ার ক্ষেত্রে ছাড় দেওয়া হয়। আগের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, শিল্প পার্কের জন্য নির্ধারিত ছিল ২০ একর জমি। শিল্পোদ্যোগীদের সুবিধার্থে সেই জমির পরিমাণ কমিয়ে ৫ একর করা হল। আগে তা কলকাতা ও আশপাশের এলাকায় করা হয়েছিল। এবার তা হবে গোটা রাজ্যে।
No comments