Page Nav

HIDE

Grid Style

GRID_STYLE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

ছট পুজো কি ? কোন দেবতার উদ্দেশ্যে এই পুজো করা হয়? কেনই বা করা হয়? কি কি নিয়ম মেনে এই পুজো করতে হয়?

ছট পুজো আসলে সূর্য এবং তাঁর স্ত্রীদের উপাসনা। তবে তার নাম ছট কেন হল? আসলে ছয় কথাটাকে নেপাল বা উত্তর ভারতের অনেকে ছট বলে থাকেন। পুজোটি কার্তিক মাসের শুক্লা ষষ্ঠীর দিন হয়, সেখান থেকেই ছট শব্দের উৎপত্তি। আর তা থেকেই ছট পু…

 



           ছট পুজো আসলে সূর্য এবং তাঁর স্ত্রীদের উপাসনা। তবে তার নাম ছট কেন হল? আসলে ছয় কথাটাকে নেপাল বা উত্তর ভারতের অনেকে ছট বলে থাকেন। পুজোটি কার্তিক মাসের শুক্লা ষষ্ঠীর দিন হয়, সেখান থেকেই ছট শব্দের উৎপত্তি। আর তা থেকেই ছট পুজো।

         ভারতের বিহার‚ ঝাড়খণ্ড এবং পড়শি দেশ নেপালের গুরুত্বপূর্ণ উৎসব হল ছট। বিশ্বাস করা হয়‚ বৈদিক যুগের আগে থেকেই ছট পুজো বা সূর্য উপাসনার চল ছিল। এই পুজোয় অর্ঘ্য অর্পণ করে কৃতজ্ঞতা জানানো হয় সূর্যদেব এবং তাঁর দুই স্ত্রী ঊষা আর প্রত্যুষাকে।

        মহাভারতে পঞ্চ পাণ্ডব এবং দ্রৌপদী পালন করেছিলেন এই উৎসব। পাণ্ডবরা যখন পাশা খেলায় নিজেদের সমস্ত রাজ্যপাট হারিয়ে ফেলে তখন দ্রৌপদী ছট ব্রত করেন। দ্রৌপদীর মনস্কামনা পূর্ণ হয় এবং পাণ্ডবরা তাঁদের রাজ্যপাট ফিরে পান। 

             এই পুজোর সূত্রপাত নিয়ে অনেক গল্প চালু রয়েছে। যেমন অনেকে বলেন, রাম-সীতা ১৪ বছর বনবাস কাটিয়ে অযোধ্যায় ফেরার পরে এই পুজো করেছিলেন।

           আবার আর একটি গল্প রয়েছে রাজা প্রিয়ব্রতকে নিয়ে। অনেক যজ্ঞ করার পরে তাঁর স্ত্রী সন্তানসম্ভবা হন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত মৃত পুত্র প্রসব করেন রানি। শোকে-দুঃখে রাজা আত্মহত্যা করতে গেলে, তাঁর সামনে এসে দাঁড়ান দেবী ষষ্ঠী এবং তিনি বলেন যদি কেউ শুদ্ধচিত্তে তাঁর পুজো করে তবে তার সন্তানলাভ হবে। রাজা প্রিয়ব্রত সেই আদেশ পালন করেন এবং তাঁর সন্তান হয়। তার পর থেকেই ঘরে ঘরে ছটপুজোর প্রচলন হয়।         মহাভারতের গল্প অনুযায়ী কর্ণ যে সূর্যদেবের পুত্র, সেটা তিনি জানতেন না। কিন্তু প্রথম থেকেই তিনি ছিলেন সূর্যের উপাসক। প্রচলিত আছে, অঙ্গদেশের রাজা হওয়ার পরে সেই অঞ্চলে ধুমধাম করে সূর্যদেবের পুজো ও উৎসবের প্রচলন করেন কর্ণ এবং সেই উৎসবই কয়েক হাজার বছর পেরিয়ে টিকে রয়েছে ছটপুজো হিসেবে।  কর্ণের শরীরে সব সময় থাকত একটি কবচ ও কুণ্ডল যা ছিল সূর্যদেবের আশীর্বাদ। ওই কবচ-কুণ্ডল থাকার জন্যেই তাঁকে বধ করা ছিল অসম্ভব। কৃষ্ণের পরামর্শ অনুযায়ী কর্ণকে দলে টানতে না পেরে, কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের আগে সেই কবচ-কুণ্ডল চেয়ে নিয়েছিলেন কুন্তী। ধর্মপ্রাণ ও দাতা বলে পরিচিত কর্ণ সেই অনুরোধ ফেরাতে পারেননি। কুরুক্ষেত্র যুদ্ধে এর পর তাঁর মৃত্যু হয়। কিন্তু রাজা হিসেবে তিনি ছিলেন অত্যন্ত জনপ্রিয় এবং তাই হয়তো তাঁর মৃত্যুর পরেও অঙ্গদেশের মানুষ ভক্তিভরে সূর্যষষ্ঠী ও ছটপুজো পালন করে এসেছেন এবং এক প্রজন্ম থেকে আর এক প্রজন্মে সঞ্চারিত হয়েছে এই উৎসবের মাহাত্ম্য।

           পৌরাণিক মতে ছট পুজো একাধারে সূর্যদেব, মা অন্নপূর্ণা ও গঙ্গাদেবীর পুজো। এ পুজোর পিছনে একটি সামাজিক কারণও আছে। বৃষ্টি না হলে প্রখর তাপে মাঠ শুকিয়ে যেত। ফসল হত না। সেজন্য সূর্যদেবকে তুষ্ট করতেই এই পুজোর শুরু বলে একটি কাহিনি প্রচলিত আছে। সূর্যদেব তুষ্ট হলে মাঠঘাট, খালবিল শুকবে না। মাঠে ফসল ফলবে। অনেকের বিশ্বাস, ছট পুজো করলে সূর্যদেবের প্রত্যক্ষ উপস্থিতি জীবনে বিঘ্ননাশ করে, দুঃখনাশ করে, সুখ ও অর্থ-বৈভব আনে।

         সূর্যের কিরণে এই জগৎ আলোকিত। পৃথিবীতে প্রাণের সঞ্চার সূর্যালোকের জন্যই। তাই সূর্যদেবেকে তুষ্ট রেখে জগৎ সংসারের সার্বিক মঙ্গল কামনায় তাঁর উদ্দেশ্যে কার্ত্তিকের ছ’ দিনব্যাপী উৎসব ছট পুজো সারা বিশ্বে পালিত হয়। 

কার্তিক মাসের অমাবস্যার পরেই ছট্ ব্রত পালন করা হয়। এই ব্রত পালনে সূর্যদেবের প্রত্যক্ষ উপস্থিতি আমাদের জীবনে যেমন বিঘ্ননাশক, দুঃখনাশক, তেমনি সুখদায়ক ও অর্থ-বৈভবদায়ক।

এই ব্রতে তিন দিনের কঠোর উপবাসের বিধান রয়েছে। যাঁরা এই ব্রত করেন, তাঁদের পঞ্চমীর দিন নুন ছাড়া ভোজন গ্রহণ করেত হয়। ষষ্ঠীতে নির্জলা থেকে ব্রত করতে হয়। ষষ্ঠীতে অস্ত সূর্যের পুজো করে অর্ঘ্য নিবেদন করতে হয়। সপ্তমীর সকালে উদিত সূর্যকে অর্ঘ্য দিতে হয়। তার পর জল খেয়ে উপবাস পুরো করতে হয়। কোনও নদী বা পুকুরে গিয়ে এই পুজো করতে হয়।     যাঁরা ছট পুজো করে থাকেন, তাঁরা ভাইফোঁটার পর থেকেই টানা নিরামিষ খান। পুজোর দু’দিন আগে লাউয়ের যে কোনও পদ খেতে হয়। পুজোর ঠিক আগের দিন ‘খারনা’ নামের একটি নিয়ম পালিত হয়। এই সময় সূর্যদেবের উদ্দেশ্যে পায়েস, লুচি, কলা অর্পণ করা হয়। নিঃশব্দ ঘরে এই পুজো হয়ে থাকে। পুজোর শেষে প্রসাদ সকলে ভাগ করে খান। এরপর চলে নির্জলা উপবাস। ছট পুজোর দিন সূর্যাস্তের সময় পড়ন্ত সূর্যকে উদ্দেশ্য করে নদীতে কোমর জলে নেমে পুজো সারেন ভক্তরা। সূর্যদেবের উদ্দেশ্যে এই পুজো বলে, সূর্য ওঠার মুহূর্ত ও সূর্য ডোবার মধ্যে শেষ করতে হয় পুজো। এ পুজোর বিশেষত্ব হল এ পুজোয়  কোনও মূর্তি লাগে না, কোনও পুরোহিত লাগে না।       ছট পুজোর ডালাতে থাকে হলুদ গাছ, আম্র পল্লব, নারকেল, কলার কাঁদি, বিভিন্ন ফল, ঠেকুয়া ও খাস্তা টিকরি। নদীর ঘাটে বসে একমনে সূর্যদেবের আরাধনা করার পর নামতে হয় কোমর জলে। নদীর বুকে দাঁড়িয়ে পুজোর ডালা সূর্যদেবের উদ্দেশ্যে অর্পণ করে, ধূপ ধুনো দেখিয়ে হয় আরতি। অবশেষে পরিবারের সকলের নাম করে একটা একটা করে প্রদীপ ভাসিয়ে দেওয়া হয় নদীর বুকে। এটাই এই পুজোর নিয়মরীতি। ডালার প্রসাদ বাড়িতে নিয়ে যান সকলে। বাড়ি ফেরার পরও কিন্তু উপোস ভাঙা হয় না। পরের দিন ভোরে আরও একবার সূর্য পুজোর জন্য ঘাটে যেতে হয়। যাঁরা মানত করেন তাঁরা বাড়ি থেকে ঘাট পর্যন্ত দণ্ডি কাটেন। এই পুজো বেশ কষ্টসাধ্য। গোটা একটা দিন নির্জলা উপবাস থাকতে হয়। এমনকি দণ্ডি কাটাও বেশ কষ্টকর। অত্যন্ত নিষ্ঠার সঙ্গে পালিত হয় ছট পুজো। ছট পুজোর শেষ দিনে ‘মৎস্যমুখী’ অনুষ্ঠান হয় অনেক পরিবারে।

      সবার বিশ্বাস‚ ছটপুজোয় সব মনস্কামনা পূর্ণ করেন সূর্যদেব। এমনকি, কুষ্ঠরোগীও নাকি সুস্থ হয়ে যায়। সংসারের মঙ্গল কামনায় গৃহিণীরাই এই পুজো করে থাকেন। কলা-সহ বিভিন্ন ফল, ঠেকুয়া‚ ক্ষীর আর মিষ্টি হল পুজোর প্রসাদ।

No comments