ঠান্ডায় সেনাবাহিনীদের সুরক্ষার জন্য জুতো আবিষ্কার করলেন হলদিয়ার তরুণ অধ্যাপক
এবারে নয়া নজির গড়ল হলদিয়ার তরুণ অধ্যাপক,সিয়াচেন, লাদাখের হাড়হিম করা ঠান্ডায় ভারতীয় জওয়ানদের কাজের সুবিধের জন্য বিশেষ ধরনের জুতো উদ্ভাবন করলেন হলদিয়…
ঠান্ডায় সেনাবাহিনীদের সুরক্ষার জন্য জুতো আবিষ্কার করলেন হলদিয়ার তরুণ অধ্যাপক
এবারে নয়া নজির গড়ল হলদিয়ার তরুণ অধ্যাপক,সিয়াচেন, লাদাখের হাড়হিম করা ঠান্ডায় ভারতীয় জওয়ানদের কাজের সুবিধের জন্য বিশেষ ধরনের জুতো উদ্ভাবন করলেন হলদিয়ার বছর সাঁইত্রিশের তরুণ গবেষক অনির্বাণ দাস। তাঁর সঙ্গী ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের পাঁচ মেধাবী পড়ুয়া। শিক্ষক ও ছাত্রের মিলিত প্রয়াসে এই নয়া উদ্ভাবন। রোবোটিক্সের সেন্সর টেকনোলজি কাজে লাগিয়ে খুব অল্প খরচে তাঁরা তৈরি করেছেন ‘কেয়ার ফ্রি সোল’। এই সোল ব্যবহার করেই তৈরি হয়েছে প্রবল ঠান্ডার মধ্যেও পরা যাবে এমন আরামদায়ক জুতো। সিয়াচেনের মাইনাস ৫৭ডিগ্রিতে এই জুতো কার্যকরী করে বলে দাবি গবেষকের। প্রবল ঠান্ডার মধ্যেও এই জুতো থেকে উৎপন্ন মৃদু কম্পন ও তাপশক্তি শরীরকে চনমনে ও রক্ত সঞ্চালন ঠিক রাখবে। তরুণ অধ্যাপকের এই নয়া উদ্ভাবন প্রকল্পকে ‘বেস্ট ইনোভেটর অ্যাওয়ার্ড’-এর স্বীকৃতি দিয়েছে ইন্সটিটিউশন অব ইলেকট্রনিক্স অ্যান্ড টেলিকমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ার্স(আইইটিই) সংস্থা। আইইটিই ভারত সরকারের ডিপার্টমেন্ট অব সায়েন্টিফিক অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিসার্চের একটি অনুমোদিত সংস্থা। সম্প্রতি দিল্লিতে ইন্ডিয়ান আর্মড ফোর্সেস-এর চিফ অব ডিফেন্স স্টাফ বিপিন রাওয়াত গবেষক অনির্বাণ দাসের হাতে এই পুরস্কার তুলে দেন। এই নয়া উদ্ভাবনকে কীভাবে সেনাবাহিনীতে কাজে লাগানো যায়, সেবিষয়ে ইতিমধ্যেই চিন্তাভাবনা শুরু হয়েছে। অনির্বাণবাবুকে গবেষণায় সহায়তা করেছেন তাঁর পাঁচ ছাত্রছাত্রী। এঁরা প্রত্যেকেই ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের চতুর্থ বর্ষের পড়ুয়া। অনির্বাণবাবু বর্তমানে কলকাতার ইউনিভার্সিটি অব ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড ম্যানেজমেন্টের অধ্যাপক এবং ইনোভেশন কাউন্সিলের ভাইস প্রেসিডেন্ট। সফটওয়ার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে বিটেক ও এমটেক করার পর হলদিয়ার চৈতন্যপুরের বাসিন্দা অনির্বাণ ‘গ্রস এনরোলমেন্ট ইনডেক্স’ নিয়ে গবেষণা শুরু করেন।
বিজ্ঞাপন
এই ইনডেক্স শিক্ষক্ষেত্রে কাজে লাগে। গবেষণা শেষে ২০০৮ সাল নাগাদ ভবিষ্যৎ শিক্ষার রূপরেখা নিয়ে তিনি একটি চিঠি দেন তৎকালীন রাষ্ট্রপতি প্রতিভা পাতিলকে। সেই চিঠিতে তিনি জাতীয় শিক্ষানীতি নিয়ে আলোকপাত করেন। চিঠি পড়ে অনির্বাণবাবুকে ডেকে পাঠান রাষ্ট্রপতি। শিক্ষা নিয়ে তরুণ গবেষকের ভাবনার প্রশংসা করেন রাষ্ট্রপতি। এবার ফের দেশের ইঞ্জিনিয়ারদের সর্বোচ্চ সংস্থা তাঁর গবেষণাকাজের প্রশংসা করল। নয়া উদ্ভাবন নিয়ে অনির্বাণবাবু বলেন, প্রচণ্ড ঠান্ডায় জওয়ানদের দীর্ঘক্ষণ কাজ করতে হয়। তাঁদের সঙ্গে থাকে ভারী ব্যাগ, রাইফেল। কাজের সময় পা শিথিল হলে বিপদের আশঙ্কা থাকে। ওই সময় শত্রুপক্ষ হঠাৎ আক্রমণ করলে পায়ের পেশিতে টান ধরতে পারে। সেজন্য জওয়ানদের জুতোর তলায় বিশেষ ডিভাইস বসানোর ভাবনাচিন্তা করা হচ্ছে। ব্যাটারি চালিত এই ডিভাইস থেকে ভাইব্রেশন ও এনার্জি একসঙ্গে উৎপন্ন হবে। তা জওয়ানদের চনমনে রাখতে সাহায্য করবে এবং সুরক্ষা দেবে।
বিজ্ঞাপন
দু’পায়ে দু’টি ডিভাইসের জন্য হাজার টাকার কাছাকাছি খরচ পড়বে। তবে অনেক সংখ্যায় তৈরি হলে খরচ ১৫০টাকায় নেমে আসতে পারে। অনির্বাণবাবু রাজ্যের প্রত্যন্ত অঞ্চলে সোশ্যাল ইনোভেশন ছড়িয়ে দিতে এবং তরুণ উদ্ভাবকদের উৎসাহিত করতে বিভিন্ন গ্রামে কাজ শুরু করেছেন। ইতিমধ্যেই তাঁর ৬৩টি পেটেন্ট ফাইল হয়েছে। সেন্সর কাজে লাগিয়ে নানা ধরনের ড্রোন উদ্ভাবনের কাজে ব্যস্ত তিনি। হেক্সাকপ্টার নামে অত্যাধুনিক সিসিটিভি ক্যামেরা জাতীয় ড্রোনও তিনি তৈরি করেছেন। মাথার চুলের গোড়ার হেয়ার ফলিকল বিশ্লেষণ করে ব্রেন ক্যানসার হওয়ার আশঙ্কা নিয়েও তিনি গবেষণা করছেন।
No comments