দলবদলুদের ফেরাতে আপত্তি, পুরভোটের আগে পূর্ব মেদিনীপুরে ফের প্রকাশ্যে তৃণমূলের গোষ্ঠীকোন্দল, রাজ্য তৃণমূলের মুখপাত্র ও সাধারণ সম্পাদক কুনাল ঘোষের হাত ধরে দিঘায় শুভেন্দু অধিকারী ঘনিষ্ঠ বিজেপি নেতা জয়ন্ত সাহুকে তৃণমূলে যোগদান করানো…
দলবদলুদের ফেরাতে আপত্তি, পুরভোটের আগে পূর্ব মেদিনীপুরে ফের প্রকাশ্যে তৃণমূলের গোষ্ঠীকোন্দল, রাজ্য তৃণমূলের মুখপাত্র ও সাধারণ সম্পাদক কুনাল ঘোষের হাত ধরে দিঘায় শুভেন্দু অধিকারী ঘনিষ্ঠ বিজেপি নেতা জয়ন্ত সাহুকে তৃণমূলে যোগদান করানো নিয়ে তৈরি হয়েছে নয়া বিতর্ক
বিজ্ঞাপন
প্রদীপ কুমার মাইতি! দলবদলুদের ফেরাতে আপত্তি, পুরভোটের আগে ফের প্রকাশ্যে তৃণমূলের গোষ্ঠীকোন্দল! পূর্ব মেদিনীপুর ঃ পুরভোটের মুখে তৃণমূলে ফিরিয়ে নেওয়া হল শুভেন্দু অধিকারী ঘনিষ্ঠ এগরা শহর তৃণমূল কমিটির প্রাক্তন সভাপতি জয়ন্ত সাহুকে। একুশের বিধানসভা ভোটের মুখে তিনি তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন। কিন্তু বিজেপির ভরাডুবির জন্য ভোটের পর অবশ্য তৃণমূলে ফেরার জন্য তদ্বির শুরু করেন জয়ন্তবাবু। সেইমতো রবিবার সোশ্যাল মিডিয়ায় কয়েকটি ছবি ভাইরালও হতে দেখা গিয়েছে। তাতে জয়ন্ত সাহু'র গলায় তৃণমূলের উত্তরীয় পরিয়ে দিচ্ছেন রাজ্য তৃণমূলের মুখপাত্র কুনাল ঘোষ। পাশাপাশি পুস্পস্তবক দিয়ে কুনাল ঘোষকে স্বাগত জানাচ্ছেন জয়ন্ত সাহু। সেইসঙ্গে রাজ্য তৃণমূলের মুখপাত্র কুনাল ঘোষের পাশে দাঁড়িয়ে আছেন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যান তথা পূর্ব মেদিনীপুর জেলা পরিষদের কো-মেন্টর হাবিবুর রহমান। এ দিন জয়ন্তবাবু মন্ত্রী সৌমেন কুমার মহাপাত্র এবং দলের কাঁথি সাংগঠনিক জেলা সভাপতি তথা এগরার বিধায়ক তরুণ কুমার মাইতির বাড়িতে গিয়ে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। প্রসঙ্গত, ভোটের মুখে শুভেন্দু ঘনিষ্ঠরা একে একে দল ছাড়ায় শহর তৃণমূলের ভাঙা ঘরের খুঁটি আগলে দাঁড়িয়েছিল দলের পুরনো নেতৃত্ব। বিধানসভা ভোটের মুখে দলবদলু নেতারা বিজেপির ঘরেও নিজেদের মেলে ধরতে পারেনি। বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে তৃণমূল ক্ষমতায় ফেরার পরে এ বার দলবদলু ওই নেতারা খড়গহস্ত এগরা শহর তৃণমূল নেতৃত্ব। কিন্তু তারা স্পষ্ট জানিয়েছেন, জেলা নেতৃত্বের হাত ধরে ওই দলবদলুরা ফের দলে ফিরলেও শহর তৃণমূলের সঙ্গে কোনও সম্পর্ক থাকবে না। তবে এ বিষয়ে এগরা শহর তৃণমূলের তরফে পূর্ব মেদিনীপুর জেলা (কাঁথি সাংগঠনিক জেলা) নেতৃত্বের কাছে অভিযোগ জানানো হয়েছে। এমনিকী দলবদলুদের ঘরে ফেরালে কড়া অবস্থান নেওয়ার কথাও বলেছে শহর তৃণমূল নেতৃত্ব। সে ক্ষেত্রে জেলা নেতৃত্ব এমন পদক্ষেপ করলে শহর তৃণমূলের সঙ্গে ওই ঘরে ফেরাদের কোনও সম্পর্ক থাকবে না বলেও জানানো হয়েছে। কিন্তু পুরভোটের আগে এতে আদতে সংগঠনেরই ক্ষতি হবে বলে মত নিচুতলার নেতা-কর্মীদের। তবে এ বিষয়ে রাজ্য তৃণমূলের মুখপাত্র কুনাল ঘোষের একটি ওডিও ক্লিপিংস রবিবার রাতে সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হতে দেখা গিয়েছে। তাতে কুনাল ঘোষ কার্যত স্পষ্টভাবেই কাঁথি সাংগঠনিক জেলা যুব তৃণমূলের সভাপতি সুপ্রকাশ গিরির উদ্দেশ্যে বলছেন যে, সুপ্রকাশ আমার খুব স্পষ্ট কথা এ বিষয়ে আমাকে সৌমেনদা (মন্ত্রী সৌমেন কুমার মহাপাত্র) এ বিষয়ে ফোন করেছিলেন একজনের সঙ্গে দেখা করা বা তাদের কয়েক জনের বিষয়ে বলেছিলেন। এবার আমি দিঘায় আছি। আমি একটা ফেসবুক পোস্ট করেছি তাতে মানুষ জেনে গেছে আমি দিঘায়। কিন্তু আমি একটা ব্যক্তিগত সফরে ছিলাম। যে কারনে, আমি তোমাকেও (সুপ্রকাশ গিরি) বলি মানে অন্য কোন এ করবো না। তো আমি পরশু বোধ হয় না কাল আমি সমুদ্রে স্নান সেরে ফিরছি এবং আমার সঙ্গে কিছু ভায়েরা রয়েছে। আমি স্নান সারা সমুদ্রে গায়ে বালি হাফপ্যান্ট। আমার কাছে খবর আসছে যে রিসেপশনে কেউ দেখা করতে আসবেন বলে বসে আছেন। আমি সত্যিই কথা বলতে কি, যারজন্যই আমি বিরক্তি হয়েছি যে ওইসময় কোন কাজ বা কথা হতে পারেনা।আমার হাফপ্যান্ট ও বালি, জাস্ট আমি সমুদ্র থেকে উঠে এসেছি। এবার তিনি সৌমেনদার (মন্ত্রী সৌমেন কুমার মহাপাত্র) নাম বলার পর স্বভাবতই সৌজন্য এবং গুরুত্ব দিয়েই কথা বলেছি। তিনি তখন আরেক জনের সঙ্গে আলাপ করালেন যাকে আমি আগেও কখনো দেখিনি বা চিনতামও না। এবং খুব স্বাভাবিকভাবেই ওই জায়গায়টাই আমি বললাম এখানে আমি কি কথা বলবো বা বলবো না। আপনাকে একটু ফুল দেবে, একটু গিয়ে আশীর্বাদ করে দিন যেন ভালো করে কাজ করে। এবার দুটিমাত্র লোক রিসেপশনে। আমি তাঁদের সরাতে পারলে বাঁচি। কিন্তু সৌমেনদা বলার পর আমি যে লোকটির নাম বলেছিল (সৌমেন কুমার মহাপাত্র) তাঁকে আমি সম্মান দিলে সেটা আমার পক্ষে অন্যায় হত। ফলে আমি কোনক্রমেই তাঁদের কাটিয়ে, তাঁদের অনুরোধ রেখে ও রক্ষা করে আমি উত্তরীয় নিই এবং উত্তরীয় দিই এবং সৌজন্য রেখে আমি ঘরে চলে যাই। সন্ধ্যাবেলা আমি খবর পাই আবার সেই লোকটি এসছেন। আমি খুবর পাঠাই যে আমি কিন্তু এখানে একদম ছুটি কাটাতে এসেছি। আমি মানে একদম বিশ্রামে আছি। আমি কিন্তু এখন কোন পলিটিকাল আলোচনা করবো না। এরপরে খবর যায় যে, তিনি কিছু উপহার নিয়ে এসছেন। আমি তাতে যারজন্যই রেগে যাই। এবং আমার ভায়েরা বারণ করা সত্বেও আমি একেবারে বিশ্রামের পোশাকেই নিচে নেমে আসি এবং রিসেপশনে বলি আপনি এসছেন বা কেন? উনি বললেন আমি উপহার দিতে এসেছি। আমি এইভাবে উপহার নিই না। তারপরেও তিনি যখন একটু বেশি জেদ করতে থাকেন আমি কিন্তু যারজন্যই দুর্ব্যবহার করে তাকে হোটেলের রিসেপশন থেকে তাকে বিদায় করে দিয়েছি। আমার মনে হয় যে আমি মানে সেই জায়গায় খুব একটা রাজনৈতিক মানসিকতা নিয়ে কিছু করিনি। বাকিটা তোমরা এর থেকে যা মানে হয় সেটা বুঝে নিয়ে আমি চাই না আমার কোন মানে আমার কোন তাৎক্ষণিক পদক্ষেপে কোনরকম ভুল বোঝাবুঝি হোক আমি একদম চাই না। পূর্ব মেদিনীপুরে গেলে আমি তোমার (সুপ্রকাশ গিরি) সঙ্গে কথা না বলে পূর্ব মেদিনীপুরে আমি কোন রকম পদক্ষেপ নিই নি। সুতরাং তোমায় (সুপ্রকাশ গিরি) আমি পছন্দ করি, স্নেহ করি। ফলে আমার মনে হয় তুমি বিষয়টি দেখে নাও। ওইসময় বোধহয় একজন একেবারে ব্যক্তিগত সফরে এসছে। সেখানে গিয়ে রিসেপশনে হাজির হওয়া এবং আমি একেবারে একটা হাফপ্যান্ট পরে স্নান করা অবস্থায়, তখন কোন রাজনৈতিক কর্মসূচি বোধহয় বাঞ্চনীয় নয়। এবার উপরোধে- অনুরোধে ঢেঁকিগেলার ফলে বিভিন্ন প্রবাদ আছে। আর সৌমেনদা যে ব্যক্তির নাম করেছিলেন আমি তাকে সম্মান দেওয়াটাও আমার মনে হয়েছে। কিন্তু এখন তিনি যদি সেইটাকে কোনভাবে অপব্যবহার করে থাকেন তাঁর ব্যাপার। ফলে তোমরা বিষয়টাকে একটু দেখে নাও। কিন্তু সোমবার কাঁথি সাংগঠনিক জেলা তৃণমূল সভাপতি ও এগরার বিধায়ক তরুণ কুমার মাইতি'র একটি ওডিও ক্লিপিংস সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়। তাতে তরুণবাবু পরিষ্কার বলছেন, সোশ্যাল মিডিয়ার একটা ছবিতে আমরা দেখতে পাই রাজ্য তৃণমূল কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক কুনাল ঘোষ এগরার বিজেপি নেতা জয়ন্ত সাহুর গলায় একটা তৃণমূলের উত্তরীয় পরিয়ে দিচ্ছেন। এর থেকে আমাদের মনে হয়েছিল রাজ্য নেতৃত্ব জয়ন্তবাবুকে দলে অন্তর্ভুক্ত করছেন এবং জয়ন্তবাবু আমাদের দলে যোগদান করছেন। কিন্তু তার এই যোগদানের ব্যপারে আমাদের জেলা কমিটিতে কোন আলোচনা করা হয় নি এবং আমরা কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করিনি। সুতরাং তার এই যোগদানকেও আমরা অনুমোদন দিই নি। তবে এ দিন এই বিষয়ে এগরা শহর তৃণমূলের তরফে সাংবাদিক সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এগরা শহর তৃণমূলের সভাপতি উত্তম দাস জানান, শহর নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনা করে সহমতের ভিত্তিতে দলে ফেরানোর সিদ্ধান্ত নেওয়াই নিয়ম। তবে এ বিষয়ে এখনও শহর নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনা হয়নি। জেলা ও রাজ্য নেতৃত্ব দলে ফেরালেও শহর তৃণমূলের সঙ্গে কোনও সম্পর্ক থাকবে না। কিন্তু আবার এগরা শহর তৃণমূল যুব কংগ্রেসের সভাপতি কৌস্তুভ দাস জানিয়েছেন, জয়ন্ত সাহু তৃণমূলে থাকাকালীন দলবিরোধী কাজ করেছেন। দলের বিশ্বাসঘাতক জয়ন্ত সাহুকে আমরা এগরা শহর তৃণমূলের তরফে কোনভাবেই গ্রহণ করবো না। তবে এ প্রসঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা হলে দলবদলু জয়ন্ত সাহু কোন প্রতিক্রিয়া দিতে রাজি হননি। কিন্তু অবশ্য খোঁচা দিতে ছাড়েনি গেরুয়া শিবিরও। কাঁথি সাংগঠনিক জেলা বিজেপির সভাপতি অনুপ কুমার চক্রবর্তী জানিয়েছেন, ওঁরা চলে গেলেও দলের কোনও ক্ষতি হবে না। এটা ওদের ব্যক্তিগত ব্যাপার।
No comments