কোথাও রাজ্য সরকারের জনকল্যাণমুখী প্রকল্পগুলি নিয়ে মণ্ডপে হাজির দেবী। আবার কোথাও ‘নস্টালজিয়া’ মানে, পরিত্যক্ত ও প্রাচীন রাজবাড়িতে গিয়ে ইতিহাসকে ফিরে দেখার চেষ্টা। কোথাও আবার আদিবাসীদের শিকার উৎসব এবং প্রাণীহত্যা নিয়ে সচেতনতার ব…
কোথাও রাজ্য সরকারের জনকল্যাণমুখী প্রকল্পগুলি নিয়ে মণ্ডপে হাজির দেবী। আবার কোথাও ‘নস্টালজিয়া’ মানে, পরিত্যক্ত ও প্রাচীন রাজবাড়িতে গিয়ে ইতিহাসকে ফিরে দেখার চেষ্টা। কোথাও আবার আদিবাসীদের শিকার উৎসব এবং প্রাণীহত্যা নিয়ে সচেতনতার বার্তা মণ্ডপে উঠে এসেছে। এগরা শহরে ছোটবড় মিলিয়ে ১৫টির বেশি সর্বজনীন পুজো হয়। পুজো কমিটিগুলি এবার বাজেটে কাটছাঁট করেছে এবং অনুষ্ঠানের পরিসর কমিয়ে দিয়েছে। বেশকিছু পুজো কমিটি বাজেট কমিয়ে পটাশপুর-ভগবানপুর এলাকায় বন্যাদুর্গতদের ত্রাণও দিয়েছে।
শহরের হটনাগর মন্দির সংলগ্ন এগরা ফ্রেন্ডস রিক্রিয়েশন ক্লাবের অষ্টম বর্ষের পুজোর প্রতিমায় থাকছে বিশেষ চমক। মা দুর্গা দশ হাতে খাদ্যসাথী, স্বাস্থ্যসাথী, বাংলার বাড়ি, শিক্ষাশ্রী থেকে শুরু করে নানা প্রকল্পের ডালি নিয়ে হাজির হবেন। মণ্ডপেও থাকছে অভিনবত্ব। বাঁশ-কাপড়ের উপর পশম, ফোম, চট থেকে শুরু করে নানা সামগ্রী দিয়ে মণ্ডপ তৈরি করা হচ্ছে। মণ্ডপে বিশেষ আলোর কারিকুরির মাধ্যমে গোলাপ ফুলের পাপড়ি যেমন থাকবে, তেমনি তার উপর গ্লোব থাকবে। আবার পাহাড় থেকে ঝর্ণার জল পড়বে, এমন দৃশ্যও দেখা যাবে। আলো-আঁধারি পরিবেশের মধ্যে মা দুর্গাকে অধিষ্ঠান করা হবে। ক্লাবের সম্পাদক জয়ন্ত সাউ বলেন, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্যের মানুষের জন্য বিভিন্ন জনকল্যাণমুখী প্রকল্প চালু করেছেন। সেটাই আমরা মণ্ডপে তুলে ধরেছি। পুজোর বাজেট ছ’লক্ষ টাকা। তা থেকে আমরা পটাশপুরের বন্যাদুর্গতদের খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করেছি। রয়েছে অন্যান্য অনুষ্ঠানও।
শহরের দীঘা মোড় সর্বজনীনের থিম নস্টালজিয়া। দর্শনার্থীরা পরিত্যক্ত, প্রাচীন এবং ভগ্ন রাজবাড়িতে গিয়ে ইতিহাসের স্মৃতির পাতায় ডুব দেবেন। পুজো এবার ১৮ বর্ষে পা দিল। ক্লাবের সভাপতি বিশ্বজ্যোতি মাইতি বলেন, প্রাচীন এবং ভগ্ন রাজবাড়িতে গাছগাছালির জঙ্গল যেমন থাকবে, তেমনি পালকি, ভাঙাচোরা দালান, থাম, পুকুরঘাট থেকে শুরু করে সবকিছুই থাকবে। বাঁশ-কাপড়ের উপর চট, প্লাস্টার অব প্যারিস, থার্মোকল, ফোম প্রভৃতি নানা সামগ্রী দিয়ে মণ্ডপ গড়ে তোলা হবে। কৃত্রিম গাছগাছালি ও শুকনো পাতা দিয়ে প্রাচীন রাজবাড়ির আদল ফুটিয়ে তোলা হবে। মণ্ডপের সঙ্গে সাযুজ্য রেখেই হবে মায়ের প্রতিমা। কোভিড-১৯, ডেঙ্গু, সেফ ড্রাইভ, সেভ লাইফ বিষয়ক সচেতনতা শিবির যেমন রয়েছে, তেমনি রয়েছে অন্যান্য সামাজিক কর্মসূচি।
এগরা সেন্ট্রাল বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন এলাকায় নবরূপ ক্লাবের পুজোয় এবার থিম আদিবাসীদের শিকার উৎসব। পুজো এবার ১২ বর্ষে পা দিল। মণ্ডপে জঙ্গলময় পরিবেশ, আদিবাসীরা কীভাবে বল্লম সহ অন্যান্য অস্ত্র দিয়ে বন্য প্রাণী শিকার করেন, তাঁদের বেশভূষা, এ সবকিছুই মণ্ডপে ধরা দেবে। বাঁশ-কাপড়ের উপর ফোম, থার্মোকল সহ নানা সামগ্রী দিয়ে মণ্ডপ গড়ে তোলা হবে। মণ্ডপের সঙ্গে সাযুজ্য রেখেই আদিবাসীদের আদলেই মায়ের প্রতিমা থাকবে। ক্লাব সম্পাদক মিন্টু দাস বলেন, আদিবাসীদের শিকার উৎসবের বিষয়টি মণ্ডপে তুলে ধরার পাশাপাশি প্রাণীহত্যা যে মহাপাপ, সেবিষয়ে সকলকে নানা বার্তার মাধ্যমে সচেতন করা হবে। পুজোর বাজেটের কিছু অংশ পটাশপুরের বন্যাপীড়িতদের ত্রাণসাহায্য দেওয়া হয়েছে।
দীঘা মোড় সংলগ্ন কৃষ্ণ সরণী এলাকায় মহিলা পরিচালিত ‘স্বপ্ননীড়’ ক্লাবের পুজো ১৭ বছরে পা দিল। ক্লাবের সদস্যা সংখ্যা ২৫। সম্পাদিকা কবিতা প্রধান বলেন, করোনা পরিস্থিতি ও সাম্প্রতিক নানা কারণে পুজোয় আড়ম্বর কমিয়ে দিয়েছি আমরা। সাদামাঠা মণ্ডপ এবং সাবেকি প্রতিমা থাকবে। ক্লাবের পুজোর কিছুটা খরচ বাঁচিয়ে বন্যাদুর্গত এলাকার বাসিন্দাদের ত্রাণসাহায্য দেওয়া হয়েছে।
এছাড়াও এগরা ফ্রেন্ডস রিক্রিয়েশন ক্লাব, এগরা গোল্ডেন পাস্ট, এগরা মিলনী দুর্গোৎসব কমিটি, এগরা সমন্বয় ক্লাব, কসবা-এগরা দাসপাড়া সর্বজনীন দুর্গোৎসব কমিটির পুজো বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
No comments