Page Nav

HIDE

Grid Style

GRID_STYLE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

মানবিক মুখ্যমন্ত্রী কথা দিয়ে কথা রাখলেন! গভীর সমুদ্রে তাজপুর বন্দর তৈরির প্রক্রিয়া শুরু করল সরকার

একুশে বিধানসভা নির্বাচনে মেদিনীপুরের সভা থেকে তাজপুর বন্দর  নিয়ে বড় ঘোষণা করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বলেছিলেন, ১৬ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগে তাজপুরে গড়ে উঠবে গভীর সমুদ্রবন্দর। এটাই রাজ্যের প্রথম গভীর সমুদ্রবন্দর। এই বন্দর নির্ম…

 







 একুশে বিধানসভা নির্বাচনে মেদিনীপুরের সভা থেকে তাজপুর বন্দর  নিয়ে বড় ঘোষণা করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বলেছিলেন, ১৬ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগে তাজপুরে গড়ে উঠবে গভীর সমুদ্রবন্দর। এটাই রাজ্যের প্রথম গভীর সমুদ্রবন্দর। এই বন্দর নির্মাণ সম্পূর্ণ হলে কয়েক হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হবে বলে আশাপ্রকাশ করেন মুখ্যমন্ত্রী। অবশেষে তাজপুরে গ্রীনফিল্ড বন্দর তৈরির প্রক্রিয়া শুরু করল রাজ্য সরকার।

এখন খুশির হাওয়া এলাকাজুড়ে। বাণিজ্য, যোগাযোগ পর্যটন সহ অনেক ক্ষেত্রেই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে তাজপুর বন্দর। সব ক্ষেত্রেই উন্মোচিত হবে নবদিগন্তের দুয়ার। যা দ্রুতই বদলে দেবে এলাকার অর্থনীতি। সদ্য তাজপুর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের জন্য পশ্চিমবঙ্গ শিল্পন্নয়ন নিগমের তরফে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে টেন্ডার ডাকা হয়েছে। সমুদ্র বন্দর তৈরি করতে পারবে এমন সংস্থাগুলি আগামী ২০ ডিসেম্বরের মধ্যে টেন্ডারের আবেদনপত্র জমা দিতে পারবে। বন্দরের জন্য ১ হাজার একর জমি দেবে রাজ্য। ইতিমধ্যেই প্রয়োজনীয় জমি চিহ্নিত করার কাজ শেষ করেছে রাজ্য সরকার। তাজপুর-শঙ্করপুরের মাঝে তিন কিলোমিটার এলাকা জুড়ে সমুদ্র বন্দর তৈরির জন্য রাজ্য সরকার সড়ক ও রেলপথ নির্মাণ করবে। সরকারি-বেসরকারি অংশীদারির মাধ্যমে তৈরি হবে তাজপুর বন্দর। প্রকল্পে ১৬ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। দুই পর্যায়ে এই কাজ হবে। প্রথম পর্যায়ের কাজের জন্য ১০ হাজার কোটি টাকা এবং দ্বিতীয় পর্যায়ের জন্য ৬ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। এতে প্রত্যক্ষভাবে ১০ হাজার মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে বলে দাবি রাজ্য সরকারের। সূত্রের খবর , প্রথম পর্যায়ে ৬টি বার্থ ও পরের পর্যায়ে আরো ৯ টি বার্থ তৈরি হবে এই বন্দরে। ৯৯ বছরের জন্য লিজ দেওয়া হবে সংশ্লিষ্ট সংস্থাকে। আর বন্দরের সঙ্গে নিকটতম জাতীয় সড়ক এবং রেলপথের যোগাযোগের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।

৩৫০ মিটার প্রস্থ এবং প্রায় ১৬ মিটার নব্যতা থাকা তাজপুর একটি গভীর সমুদ্র বন্দর হিসেবে কাজ করতে পারবে। ২০১৯ সালে এই বন্দর তৈরির কথা প্রথম ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

যদিও সমুদ্রবন্দর নিয়ে রাজ্য ও কেন্দ্রের মধ্যে দীর্ঘ টানাপোড়েন চলছে। বেশ কিছুদিন সিদ্ধান্তহীনতার গেরোয় পড়ে বন্দরের ভবিষ্যৎ। অবশেষে গতবছর রাজ্য সরকার নিজস্ব উদ্যোগে বন্দর গড়ার সিদ্ধান্ত নেয়। তারপর থেকেই এগোতে শুরু করে কাজ। টেন্ডার প্রক্রিয়া শুরু হওয়ায় আরও কয়েকধাপ এগিয়ে গেল সেই কাজ। ঠিক হয়েছিল কেন্দ্র এবং রাজ্য যৌথ উদ্যোগে এই বন্দর তৈরি করবে। এমনকি রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে নিজেদের অধিকাংশ শেয়ারও কেন্দ্রকে দিয়ে দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়। কিন্তু দুই তরফে বেশ কিছু টালবাহানায় শেষ পর্যন্ত ২০২০ সালের শেষ দিকে রাজ্য নিজেই এই বন্দর তৈরির সিদ্ধান্ত নেয়। পূর্ব মেদিনীপুর জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে গভীর সমুদ্রবন্দরের জন্য তাজপুর ছাড়াও আরও দুটি প্রস্তাবিত জায়গার নাম নবান্নে পাঠানো হয়েছিল। নবান্ন তাজপুরের সাইটকে প্রস্তাবিত বন্দরের জন্য চূড়ান্ত করে। এই বন্দর আগামী দিনে উত্তর-পূর্ব ভারতের গেটওয়ে হয়ে উঠবে বলে আধিকারিকদের দাবি। আর পূর্ব মেদিনীপুর জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, পলি পড়ে যাওয়ার কারণে হলদিয়া বন্দরে বড় জাহাজ ঢুকতে পারছে না। এ জন্য মাছ সমুদ্রে ‘শিপ টু শিপ’ ট্রান্সলোডিং করতে হচ্ছে। ফলে খরচ বাড়ছে। কিন্তু গভীর সমুদ্র বন্দর তৈরি হলে তাজপুরে সরাসরি বড় জাহাজ ঢুকে যাবে। ট্রান্সলোডিং এর হয়রানি আর থাকবে না। তাতে অর্থনৈতিকভাবেও সাশ্রয় হবে।

পূর্ব মেদিনীপুর জেলা থেকে প্রতিবছর ৫-৬ হাজার কোটি টাকার মাছ ও চিংড়ি বিদেশে রফতানি হয়। তাছাড়া বীরভূমের থেকে কয়লা অনায়াসে তাজপুর বন্দর দিয়ে বাইরে পাঠানো যাবে। আকরিক লোহা পেট্রোপণ্য প্রভৃতি নানা বিধ জিনিসপত্র তাজপুর বন্দর থেকেই নানা দেশে আমদানি- রফতানি করা যাবে।

সম্প্রতি জেলাশাসক পূর্ণেন্দু মাজি বেশ কয়েকবার তাজপুর সমুদ্র বন্দরের প্রস্তাবিত এলাকা পরিদর্শন করেন। রাজ্য থেকেও বিশেষজ্ঞ টিম গিয়ে একাধিকবার ওই এলাকা ঘুরে দেখেছে। উপকূল থেকে কয়েক কিমি গভীরে গড়ে উঠেছে বন্দর। এর মাঝে তৈরি হবে সেতু। সেখান থেকে মালপত্র সড়ক ও রেলপথে নানা প্রান্তে রওনা দেবে। সব দেখেশুনে আশায় স্থানীয়রা। তাজপুরের বাসিন্দা জয়দেব বেরার কথায়, “সমুদ্রবন্দরকে ঘিরে রাজ্য সরকার যে পদক্ষেপ নিচ্ছে, তাতেই এলাকার উন্নতি হবে। বন্দর তৈরি হলে এলাকার শিল্পের বিকাশ তো ঘটবেই, তেমনই দীর্ঘদিনের ভাঙন সমস্যাও মিটে যাবে বলেই ধারণা। বহু মানুষের কর্মসংস্থান হবে৷” বিধায়ক তথা রাজ্যের মৎস্যমন্ত্রী অখিল গিরি বলেন, “দীর্ঘদিনের স্বপ্ন পূরণ হতে চলেছে। পুরো রাজ্যের অর্থনীতিতে এর প্রভাব পড়বে। বিপুল কর্মসংস্থান ও অনুসারী শিল্প গড়ে উঠবে”যদিও সার্বিকভাবে রাজ্যের এই প্রয়াসকে কটাক্ষ করেছে ছাড়েনি বিজেপি। তাদের দাবি, মাত্র ১৬ হাজার কোটিতে কোনো ভাবেই গভীর সমুদ্র বন্দর হওয়া সম্ভব নয়। রাজ্য একক ভাবে কোনওদিন বন্দর তৈরি করতে পারবে না। স্থানীয় বিজেপি নেতৃত্বের কটাক্ষ, যে সরকার ১১ বছর শংকরপুর খাল সংস্কার করতে পারেনি তারা করবে বন্দর!

No comments