Page Nav

HIDE

Grid Style

GRID_STYLE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

মিস্টান্নপুরাণের ইতিকথা :

বাঙালী শুধুমাত্র মিষ্টি খেয়েই তৃপ্ত নয়, খাইয়েও তৃপ্ত। সেকারণে বাঙালীর ঘরে অতিথি হয়ে এসে মিষ্টির বৈচিত্র্য আর স্বাদ নিয়ে প্রশংসায় গদগদ হননি এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া ভার। বহু নামজাদা বিদেশীও সময়ে সময়ে বাঙালীর মিষ্টি খেয়ে শেষমেশ মিষ্টি…

 







বাঙালী শুধুমাত্র মিষ্টি খেয়েই তৃপ্ত নয়, খাইয়েও তৃপ্ত। সেকারণে বাঙালীর ঘরে অতিথি হয়ে এসে মিষ্টির বৈচিত্র্য আর স্বাদ নিয়ে প্রশংসায় গদগদ হননি এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া ভার। বহু নামজাদা বিদেশীও সময়ে সময়ে বাঙালীর মিষ্টি খেয়ে শেষমেশ মিষ্টি-প্রেমে আকুল হয়েছেন—এমন ঘটনাও ঘটেছে ভূরি ভূরি।


সদানীরা নদী যে কোনটি, তার সুরাহা হলো না। তবে অধিক প্রচলিত মত হচ্ছে, বাংলাদেশের করতোয়া নদীই সদানীরা নামে পরিচিত। হিন্দুশাস্ত্র মতে, শ্রাবণ মাসে সব নদী রজস্বলা থাকে। কিন্তু করতোয়া নদী নির্মল জলবাহী থাকার কারণে এটার নাম হয়েছে সদানীরা (শতপথ ব্রাহ্মণ হইতে যাহা উদ্ধৃত হইয়াছে, তাহাতেই আছে, সদানীরা নদীর পরপারস্থিত প্রদেশ জলপ্লাবিত- বঙ্গে ব্রাহ্মণাধিকার, বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়; তোমাদের অঙ্গ থেকে চৈত্রের ঘূর্ণিতে কেঁপে ওঠা সদানীরা নদীর উত্তাল হিল্লোল চাই!- পিতৃগণ, জাকির তালুকদার)।


হিন্দুপুরাণ মতে, গৌরীর বিবাহকালে মহাদেশের করতলগলিত সম্প্রদান জল হতেই এ নদীর উদ্ভব। এই জন্যই নাকি নদীটির নাম করতোয়া হয়েছে। বেদে করতোয়া নদীর নাম রয়েছে।


ড. সুকুমার সেন তাঁর ‘বাঙ্গালা সাহিত্যের ইতিহাস’ প্রথম খণ্ডে লিখেছেন ‘সদানীরা শব্দটি নাম নয়, বিশেষণ। মানে যাহার জল বারো মাস প্রবাহিত থাকে। পণ্ডিতেরা নদীটিকে গণ্ডক মনে করিয়া থাকেন। গঙ্গা মনে করিলে দোষ কী? বারানসীর পরে গঙ্গা পারে যে বিশাল পার্বত্য জাঙ্গল ভূমি বাঙ্গালা দেশের কোল পর্যন্ত চলিয়া আসিয়াছে সেখানে যে অসুর সভ্যতার শেষ নীড় রচিত হইয়াছিল এমন মনে করিবার কারণ আছে। ‘শতপথব্রাহ্মণ’ গ্রন্থে সদানীরা নদীর নাম রয়েছে।’


বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় তাঁর ‘বঙ্গে ব্রহ্মাণাধিকার প্রবন্ধে লিখেছেন, ‘এক্ষণে সদানীরা নামে কোন নদী নাই। কিন্তু হেমচন্দ্রাভিধানে এবং অমরকোষে করতোয়া নদীর নাম সদানীরা বলিয়া উক্ত হইয়াছে। কিন্তু দেখা যাইতেছে যে, সে এ সদানীরা নদী নহে; কেন না, শতপথব্রাহ্মণেই কথিত হইয়াছে যে, এই নদী কোশল (অযোধ্যা) এবং বিদেহ রাজ্যের (মিথিলা) মধ্যসীমা।’


এদিকে সংস্কৃত সন্দেশ অর্থ বার্তা, সংবাদ, আদেশ (তাহার নিকট নিজ প্রভুর সন্দেশ জানাইল- ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর)। কিন্তু বাংলায় সন্দেশ মানে চিনির সাথে পাক করা ছানার মিষ্টান্ন বিশেষ (সন্দেশের গন্ধে বুঝি দৌড়ে এল মাছি- সন্দেশ, সুকুমার রায়; কখনো কখনো আমাদের উৎসাহ দেখার জন্যে ফি পয়ার পিছু একটি করে সন্দেশ প্রাইজ দিতেন- হুতোম প্যাঁচার নকশা, কালীপ্রসন্ন সিংহ; মাইরি বলচি, আমি তা হলে ভাত খাব না, কাল রাত্তির একটা পর্যন্ত জেগে সন্দেশ তৈরি করেচি- বিরাজবউ, শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়; এই বলিয়া সাগর কতকগুলা সন্দেশ আনিয়া প্রফুল্লের মুখে গুঁজিয়া দিতে লাগিল- দেবী চৌধুরাণী, বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়; আমসত্ত্ব দুধে ফেলি, তাহাতে কদলী দলি, সন্দেশ মাখিয়া দিয়া তাতে হাপুস হুপুস শব্দ চারিদিক নিস্তব্ধ, পিঁপিড়া কাঁদিয়া যায় পাতে- জীবনস্মৃতি, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর; সন্দেশের গন্ধে বুঝি দৌড়ে এল মাছি? কেন ভন্ ভন্ হাড় জ্বালাতন ছেড়ে দেওনা বাঁচি!- সন্দেশ, সুকুমার রায়)।


মূলগত অর্থে সন্দেশ মানে খবর বা সংবাদ। কিন্তু শব্দটিতে নতুন অর্থের আগমন ঘটেছে। এখন সন্দেশ মূলত মিষ্টান্ন জাতীয় খাদ্যকেই নির্দেশ করে। অথচ দূত বা যে সংবাদ বহন করে অর্থে সন্দেশবহ বা সন্দেশহর শব্দের অর্থ পাল্টায়নি (তবে কেন, হে সন্দেশবহ, মলিন বদন তব- মধুসূদন দত্ত)।


শব্দটির গঠন হচ্ছে সংস্কৃত সম্ + দিশ্ + অ।


এক তথ্যে জানা যায়, ছানা চিনি থেকে নয়, সম্-পূর্বক দিশ্ ধাতুতে ঘঞ্ প্রত্যয়ে সন্দেশের উৎপত্তি, যার ব্যুৎপত্তিগত অর্থ সম্যকরূপে দিক্নির্দেশ বা সঠিক বিষয় জ্ঞাপন। এক সময় আত্মীয়স্বজনের খবরাখবর দেয়া নেয়ার জন্যে লোক পাঠানো হতো। খালি হাতে পাঠানো অভদ্রতা বলে সঙ্গে মিষ্টি খাবার। কালক্রমে সেই যে কোনো মিষ্টি খাবার, পরবর্তীকালে এক বিশেষ মিষ্টি খাবারই সন্দেশ হয়ে দাঁড়াল।

ইতিহাসে আছে চৈতন্য দেবের সময় বৈষ্ণবরা সকলেই নিরামিশ খেতেন। তাদের প্রায় সব খাবারই ছিল খুবই সাদামাটা ও স্বাদহীন। এইসব স্বাদহীন খাবারকে আকর্ষণীয় করে তুলতে তালিকায় যোগ হয় নানা ধরনের মিষ্টি। বৈষ্ণবদের পছন্দের মিষ্টিগুলি বেশিরভাগ দুধ ও দই মিশিয়েই তৈরি করা হতো। সঙ্গে যোগ করা হতো বিভিন্ন গন্ধদ্রব্যও। কথিত আছে, চৈতন্যদেব নাকি দইয়ের সঙ্গে সন্দেশ পেলে খুবই খুশি হতেন। শিষ্যরা নৈবেদ্য হিসাবে এই সন্দেশ উপহার দিলে তিনি যারপরনাই খুশি হতেন। 


মধ্যযূগের সূচনা থেকেই বাংলার মানুষ মিষ্টির বৈচিত্র্য খুঁজতে বেশি ব্যস্ত হয়ে ওঠেন। ক্রমে নানা মিষ্টি ঢুকে পড়ে বাঙালীর খাদ্য তালিকায়। এবঙ্গ-ওবঙ্গের মিষ্টি নিয়ে লড়াইও বেশ মজাদার। কৃষ্ণনগরের সরভাজা, বর্ধমানের মিহিদানা-সীতাভোগ, শক্তিগড়ের লেংচা শুধু জগৎ বিখ্যাতই নয়, জগৎজয়ীও। কম যায় না ক্ষীরপাইয়ের বাবরসা, বীরভুমের মোরব্বা, মালদহের রসকদম, জলপাইগুড়ির চাঁছি-দই, জয়নগরের মোয়াও।

বাঙালীর মিষ্টি মূলত কলকাতাকে কেন্দ্র করেই তার আধুনিক রূপ পায়। নবাব সিরাজের পতনের পরবর্তী সময় থেকেই বাঙালীর মিষ্টান্ন শিল্পে বিবর্তন শুরু হয়। তবে এই সময়কালে কলকাতার দেখাদেখি বাংলার অন্য প্রদেশগুলিও পিছিয়ে থাকতে রাজি ছিল না। বর্ধমানের সীতাভোগ ও মিহিদানার কথা আলাদাভাবে না বললেই নয়। 


বর্ধমান শহরের জনবহুল রাস্তার পাশে লর্ড কার্জনের নামাঙ্কিত বিশাল ফটক ‘কার্জনগেট’। এখানেই রাজার অতিথি হয়ে কার্জন সাহেব সীতাভোগ আর মিহিদানার স্বাদ পেয়ে মুগ্ধ হয়েছিলেন। বর্তমানে এই বিশেষ ধরনের মিষ্টি দুটির প্রধান যোগানদাতা দেশবন্ধু মিষ্টান্ন ভাণ্ডার। দোকানের মালিক জয়দেব নাগ। তারই পূর্বপুরুষ ভৈরব নাগ বর্ধমানের রাজার হুকুমে মিহিদানার সঙ্গে সীতাভোগ তৈরি করে সাড়া ফেলে দেন। তারপরেই বি সি রোডের সীতাভোগ ও মিহিদানার জোগানদাতা হিসাবে এই দোকানটি বিখ্যাত হয়ে ওঠে। 


দোকানটি রয়েছে কার্জন গেট ও বর্ধমান রাজবাটির মাঝামাঝি জায়গায়। একসময় বর্ধমানের রাজা বিজয়চন্দ্রের নামেই রাস্তার নামকরণ করা হয়। ১৯০৪সালের ৪ঠা আগস্ট তাঁরই বাড়িতে অতিথি হয়ে এসেছিলেন কার্জন সাহেব। তখনই হালুইকর ভৈরব নাগ কার্জনের আসাকে স্মরণীয় করে রাখতে এই দুই বিশেষ ধরনের মিষ্টি প্রস্তুত করেন। এখন শহরের এদিক-ওদিক ছড়িয়ে থাকা ১৫০টিরও বেশি দোকান থেকে গড়পড়তা দিনে ৬০হাজার কিলোগ্রাম সীতাভোগ ও মিহিদানা বিক্রি হয়। যা সুনামের সঙ্গে বিদেশেও পাড়ি দিচ্ছে। বর্ধমানের আর একটি খাবারের নাম না করলে চলে না তা হলো শক্তিগড়ের ল্যাংচা। দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ে ধরে এগোলে দুপাশে দেখা যাবে বিখ্যাত সব ল্যাংচার দোকান।


 @ ইতিহাস :


ভারতবর্ষের সবচেয়ে প্রাচীন মিষ্টি মতিচূরের লাড্ডু। বয়স প্রায় দুই হাজার বছরেরও বেশি। আধুনিক সন্দেশ-রসগোল্লার বয়স মাত্র দুই-আড়াই'শ বছর। বাঙালিরা ছানা তৈরি করতে শীখেছে পর্তুগিজদের থেকে। তাদের কাছ থেকে বাঙালি ময়রারা ছানা ও পনির তৈরির কৌশল শেখে। ভাস্কো দা গামা কালিকট বন্দরে এসেছিলেন ১৪৯৮ সালে, ভারত ত্যাগ করেন ১৫০৩ সালে। উপমহাদেশে ছানা তৈরির শিক্ষাবিস্তার অনেক পরের ঘটনা।


প্রথম দিকে ছানা ও ছানার মিষ্টি একরকম পরিত্যাজ্যই ছিল ধর্মীয় কারনে। বৈদিক যুগে দুধ ও দুধ থেকে তৈরি ঘি, দধি, মাখন ইত্যাদি ছিল দেবখাদ্য। বিশেষ করে ননি ও মাখন অত্যন্ত প্রিয় ছিল শ্রীকৃষ্ণের। এ জন্য দুধ থেকে রূপান্তরিত ওই সব খাদ্য শ্রেষ্ঠ বলে বিবেচিত হতো। কিন্তু ছানা তৈরি হয় দুধ বিকৃত করে, এ জন্য মনুর বিধানমতে, ছানা ছিল অখাদ্য।


এ সম্পর্কে সুকুমার সেন তাঁর কলিকাতার কাহিনী বইয়ে লিখেছেন, "ক্ষীর-মাখন-ঘি-দই—এগুলো কাচা দুধের স্বাভাবিক পরিণাম, কৃত্রিম অথবা স্বাভাবিক। কিন্তু কোনোটিই দুধের বিকৃতি নয়। ‘ছানা’ কিন্তু ফোটানো দুধের কৃত্রিম বিকৃতি। বাঙালি অন্য দ্রব্য সংযোগ করে দুধ ছিন্নভিন্ন করে দিয়েছে, যাতে সারবস্তু ও জলীয় অংশ পৃথক হয়ে যায়। এভাবে দুধ ছিন্নভিন্ন করা হয় বলেই এর নাম হয়েছিল বাংলায় ‘ছেনা’, এখন বলা হয় ‘ছানা’। সংস্কৃত ভাষায় ছানার কোনো রকম উল্লেখ নেই। অন্য ভাষাতেও ছিল না। আগে অজ্ঞাত ছিল বলেই শাস্ত্রসম্মত দেবপূজায় ছানা দেওয়ার বিধান নেই।"


সন্দেশ ছানা আবিষ্কারের আগে ছিল। আগের দিনে সন্দেশ তৈরি করা হতো বেসন, নারকেল ও মুগের ডালের সঙ্গে চিনির সংযোগে। এ ছাড়া শুধু চিনি দিয়ে তৈরি এক ধরনের চাকতিকেও অনেক সময় সন্দেশ বলা হতো। নীহাররঞ্জন রায় তাঁর বাঙালির ইতিহাস বইয়ে বাঙালির মিষ্টিজাতীয় যে খাদ্যের বিবরণ দিয়েছেন, তাতে সংগত কারণেই ছানার কোনো মিষ্টির উল্লেখ নেই। দুধ থেকে তৈরি মিষ্টির মধ্যে আছে দই, পায়েস ও ক্ষীরের কথা। সন্দেশের উল্লেখ আছে, তবে সেই সন্দেশ ছানার নয়। তিনি বলেছেন, ‘কোজাগর পূর্ণিমা রাত্রে আত্মীয়-বান্ধবদের চিপিটক বা চিঁড়া এবং নারিকেলের প্রস্তুত নানা প্রকারের সন্দেশ পরিতৃপ্ত করিতে হইত এবং সমস্ত রাত বিনিদ্র কাটিত পাশা খেলায়।’


চিনির সঙ্গে ছানার রসায়নে আধুনিক সন্দেশ ও রসগোল্লার উদ্ভাবন অষ্টাদশ শতকের শেষভাগে। এই আধুনিক সন্দেশ রসগোল্লার আবিষ্কর্তা হুগলির হালুইকররা। পরে তারা কলকতায় এসে বহু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে একে জগদ্বিখ্যাত করে তোলেন। প্রথম দিকে ছানার সন্দেশকে বলা হতো ‘ফিকে সন্দেশ’। কারণ, এ সন্দেশে আগের দিনের সন্দেশের চেয়ে মিষ্টি কম। শাস্ত্রসম্মত নয় বলে ছানার সন্দেশ অনেকে খেতে চাইত না। কলকাতার ময়রাদের সৃষ্টিতে মুগ্ধ শঙ্কর তাঁর বাঙালির খাওয়া দাওয়া বইয়ে কড়াপাক, নরমপাক, কাঁচাগোল্লা, চন্দন সন্দেশসহ হাজার রকম সন্দেশের কথা উল্লেখ করে বলেছেন, ‘এঁরা আমেরিকান বিজ্ঞানীদের মতো পাইকিরি হারে মিষ্টি শাস্ত্রে নোবেল জয়ী হওয়ার যোগ্যতা রাখেন।’ তিনি জানিয়েছেন, সন্দেশ এত বৈচিত্র্যময় যে শীতকালের সন্দেশ আর গ্রীষ্মের সন্দেশে তো পার্থক্য আছেই, এমনকি সেপ্টেম্বর আর অক্টোবরের সন্দেশও নাকি এক রকম নয়।


রসগোল্লার নাম আদিতে ছিল গোপাল গোল্লা। রসের রসিক বাঙালি চিনির সিরায় ডোবানো বিশুদ্ধ ছানার গোল্লাকে নাম দিয়েছে রসগোল্লা। পরে ছানা ও চিনির রসায়নে নানা আকৃতি ও স্বাদে নানা নামে মিষ্টির সম্ভার হয়ে উঠেছে বৈচিত্র্যময়। এর মধ্যে আছে লেডিকেনি, চমচম, পানিতোয়া, কালোজাম, আমৃতি, রসমালাই—হরেক রকম। রসগোল্লার মতোই গোলাকার লাল রঙের লেডিকেনি নামে মিষ্টিটি তৈরি হয়েছিল ভারতের প্রথম গভর্নর জেনারেল লর্ড ক্যানিংয়ের স্ত্রীর সম্মানে। লোকমুখে এর চলতি নাম লেডিকেনি। আর রসগোল্লার সর্বশেষ নিরীক্ষাধর্মী সংস্করণ হলো স্পঞ্জ রসগোল্লা। এটি এখন উভয় বাংলায় বেশ জনপ্রিয়। ছানার মিষ্টি এপার-ওপার উভয় বাংলায় বিপুল জনপ্রিয় হলেও বঙ্গের বাইরে, বিশেষত ভারতের অন্যত্র এখনো ছানার মিষ্টি তেমন তৈরি হয় না। বহির্বঙ্গের মিষ্টি প্যাড়া, মেওয়ার শুকনো মিষ্টি। এ কারণেই দিল্লির মসনদ এখনো লাড্ডুর দখলে।


 ॰ মিস্টির প্রকারভেদ :


বাংলার মিষ্টিকে দু'ভাগে ভাগ করেছেন সুকুমার সেন। প্রথম ভাগে আছে একক উপাদানে তৈরি মিষ্টি। এ ধরণের মিষ্টিতে গুড় বা চিনির সাথে আর কিছু মিশ্রিত থাকে না। যেমনঃ গুড় বা চিনির নাড়ু ও চাকতি, পাটালি, বাতাসা, খাজা, ছাঁচ ইত্যাদি। দ্বিতীয় ধরণের মিষ্টিকে আরো দু' রকমে ভাগ করা চলে। গুড় বা চিনির সাথে দুগ্ধজাত কোন উপকরণ ছাড়া অন্য দ্রব্য সহযোগে তৈরিকৃত মিষ্টান্ন। যেমনঃ নারকেল, তিল এসবের নাড়ু, চিঁড়া, মুড়ি, খৈ-এর মোয়া ইত্যাদি। দুগ্ধজাত দ্রব্যযোগে তৈরি নানান ধরণের মিষ্টি রসিক ও মিষ্টিপ্রিয় বাঙালির সুপরিচিত। চিনির সাথে ছানার সংযোগে তৈরি হয় সন্দেশ ও মন্ডা। আবার এই ছানা রসে মাখিয়ে তৈরি হয় রসগোল্লা, দুধে ডোবালে রসমালাই। বেসনের ছোট ছোট দানা ঘিয়ে ভেজে তৈরি হয় বুন্দিয়া, যা দেখতে ছোট বিন্দুর মতো। কড়া পাকে প্রস্তুতকৃত বুন্দিয়াই মতিচুর, লাড্ডুর কাঁচামাল৷

॰ কয়েকপ্রকারের মিষ্টি:


রসগোল্লা রাজভোগ কালোজাম চম্‌চম রসমালাই প্রাণহারা সন্দেশ ছানামুখী মণ্ডা মকড়ম আমিট্টি বা আমৃতি

॰ প্রসিদ্ধ মিস্টান্ন র দোকানের ইতিহাস :

১. নবীনচন্দ্র দাস—


রসগোল্লা! ভারতের এমন কোনো রাজ্য নেই যেখানে সাদা গোলাকৃতি অতীব সুস্বাদু এই মিষ্টান্নের দেখা মিলবে না। তবে কবে কোথায় প্রথম এই বস্তুটির আত্মপ্রকাশ ঘটেছিল তা নিয়ে যথেষ্টই বিতর্কের অবকাশ রয়েছে। ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যাবে রসগোল্লার প্রথম আবির্ভাব কলকাতায় নয়, ওড়িশাতে। ঐতিহাসিকদের মতে মধ্যযুগে কোনো এক সময় পুরীতেই নাকি রসগোল্লার প্রথম আত্মপ্রকাশ ঘটে। কটকের কাছে সালেপুরের রসগোল্লার যশ এখনো ঈর্ষণীয়। ভুবনেশ্বরের পহলার রসগোল্লাও নামকরা। তবে সেরা রসগোল্লার কারিগরেরা বেশিরভাগই যে এই শহর কলকাতারই সে বিষয়ে ঐকমত্য দেখা দেয়নি। সালেপুরে বিকলানন্দ কর নামে এক ব্যক্তি সর্বপ্রথম রসগোল্লা তৈরির কৌশল বের করেন। স্থানীয় দেবদেবীদের নৈবেদ্য প্রস্তুত করতেই এই খাদ্যবস্তুটির আবির্ভাব ঘটে। 


বাংলার তৎকালীন অবস্থাপন্ন লোকেরা বাড়িতে ওড়িয়া রাঁধুনি রাখতেন। তাঁরাই প্রথম বাড়ির মালিক-মালকিনদের তুষ্ট করতে বিভিন্ন ধরনের খাবার তৈরি করা শুরু করেন। এই রকমই কোনো ওড়িয়া রাঁধুনির হাতে বাঙালী প্রথম রসগোল্লার স্বাদ পান। এরপর ১৮৬৮সাল নাগাদ বাগবাজারের নবীনচন্দ্র দাস রসগোল্লাকে বিশেষ স্বাদযুক্ত করে বাজারজাত করলেন। যদিও নবীন দাস প্রথমে রসগোল্লা নয়, বানিয়েছিলেন সন্দেশ। তারপর এই শুকনো মিষ্টির জায়গায় আনলেন রসালো মন ভরানো রসগোল্লা।


তবে ঘটনা হলো প্রথমে বাঙালী নবীন দাসের রসগোল্লাকে ভালো মতো নেয়নি। বেশি সময় ধরে ফোটানো হতো বলে দেবতারা নাকি তা পছন্দ করবেন না এমনটাই মনে করতেন তাঁরা। কথিত আছে একদিন ভগবান দাস বগলা নামে জনৈক ব্যবসায়ী গ্রীষ্মের দুপুরে ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে বাগবাজারের রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলেন। পথে প্রচণ্ড গরমে খুবই পরিশ্রান্ত হয়ে পড়ে ব্যবসায়ীর পুত্র। এমন সময় তিনি নবীন দাসের দোকান দেখতে পেলেন। দেখেই ছেলেকে নিয়ে দোকানের সামনে এসে থামলেন। বগলার ছেলেটি তখন এতই তৃষ্ণার্ত যে চলার শক্তিটুকুও তার ছিল না। বাধ্য হয়ে বগলা দোকানদারের কাছে এক গ্লাস জল চাইলেন। দোকানের দয়া হলো। তিনি ছেলেটিকে জলের সঙ্গে একখানা রসগোল্লাও খেতে দিলেন। মিষ্টির স্বাদ পেয়ে ভগবান দাস বগলার ছেলে দারুণ তৃপ্ত হলো, তার চোখে মুখে ফুটে উঠলো আনন্দের ঝিলিক। ছেলের খুশি দেখে বাবাও খেয়ে ফেললেন একখানা রসগোল্লা। তারপর আরো একটা। রসগোল্লার অপূর্ব স্বাদে মুগ্ধ হয়ে পিতা-পুত্র মিলে পেটভরে খেলেন মিষ্টি। বগলা বাড়ি নিয়ে যাওয়ার জন্য বিপুল পরিমাণ মিষ্টির অর্ডারও দিয়ে দিলেন সঙ্গে সঙ্গে। তারপর আর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি নবীন দাসকে। দেখতে দেখতে কলকাতার বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে গেল তাঁর রসগোল্লার খ্যাতি। ‘বাগবাজারের নবীন দাস’-ও হয়ে উঠলেন ‘রসগোল্লার কলম্বাস’।

 ‘বউবাজারের কলম্বাস’-এই নামেই ডাকা হত তাঁকে। ১৯ শতকে উত্তর কলকাতায় নবীনচন্দ্র দাস তাঁর মিষ্টির দোকানে তৈরি করেছিলেন ‘রসগোল্লা’নামে এক ছানার মিষ্টি। যা শুধু তৎকালীন বঙ্গসমাজের রসনাকেই তৃপ্ত করেনি, আজ বাঙালি জাতির পরিচয় এই ‘রসগোল্লা’।   


২. কে সি দাস— নবীনচন্দ্র দাসের নাতি ইনি। নবীনচন্দ্র যে ‘রসগোল্লা’ তৈরি করে তাক লাগিয়েছিলেন সেই ক্যারিশমাকে বহন করে নিয়ে যাওয়ার যোগ্য উত্তরাধিকার ছিলেন কে সি দাস। তাঁর নামেই তৈরি করেছিলেন মিষ্টির দোকান। যা বাংলার রসগোল্লাকে ‘কে সি দাস’ ব্র্যান্ডে পরিনত করেছে। তবে রসগোল্লার সঙ্গে সঙ্গে কে সি দাসের ‘ছানার পায়েস’ এবং ‘অমৃত কলস’-ও একবার চেখে দেখতে পারেন।  


৩. গিরিশচন্দ্র দে এবং নকুরচন্দ্র নন্দী— সন্দেশের জগতে অদ্বিতীয় নাম ১৫০বছরের পুরানো নকুড় চন্দ্রের সন্দেশ। সম্প্রতি নকুড়ের আইসক্রিম সন্দেশের কদর বেড়েছে। শীতকালে নকুড়ের নলের গুড়ের সন্দেশের জনপ্রিয়তা এখন সবার জানা। এছাড়াও রয়েছে গোলাপি পেঁড়া, জলভরা তাল সন্দেশ, রাশভারী বাবু সন্দেশ, আবার খাবো, কস্তুরি সন্দেশ ইত্যাদি। নকুড় চন্দ্রের শ্বশুর গিরিশ চন্দ্রও সন্দেশ বানিয়ে নাম করে ছিলেন। ১৮৪৪সালে তিনি হুগলী থেকে কলকাতায় এসে প্রথম ব্যবসা শুরু করেন। 

সন্দেশের স্বাদ নিতে হলে চলে যান এইখানে। উত্তর কলকাতার রামদুলাল স্ট্রিটের এই দোকানের সন্দেশর আস্বাদ না নিতে পারলে জীবনটাই বৃথা।  


৪. ভীম নাগ— এদের তৈরি একটি মিষ্টি তো আজ বাঙালির ঘরে ঘরে।শুধু ‘লেডিকেনি’ নয় ভীম নাগের পিস্তা সন্দেশ, স্ট্রবেরির সন্দেশও কলকাতার অন্যতম বিখ্যাত মিষ্টি।

  বৌবাজারের ভীমচন্দ্র নাগ সন্দেশ তৈরি করে বিখ্যাত হয়ে উঠেছিলেন। তাঁর সন্দেশের একনিষ্ঠ ভক্ত ছিলেন জগদীশচন্দ্র বসু, মেঘনাদ সাহা, প্রফুল্লচন্দ্র রায়, ডাঃ বিধানচন্দ্র রায়ের মতো ব্যক্তিত্ব। ১৮৫৩ সনে লেডি ক্যানিং তাঁর জন্মদিনে ভীম নাগকে আমন্ত্রণ জানান এমন কিছু মিষ্টি তৈরি করার জন্য আবদার জানান যার স্বাদ আগে কেউ কোনোদিন পায়নি। ভীম নাগ সম্মত হন। তারপর তিনি যে বিশেষ ধরনের মিষ্টিটি তৈরি করেছিলেন তার স্বাদ লেডি ক্যানিংকে ভীষণভাবে মুগ্ধ করেছিল। এরপর আত্মতৃপ্ত লাটসাহেব ভীম নাগকে তুলে দেন দুহাত ভরা উপহার। সেই থেকেই বাজারে এই বিশেষ ধরনের মিষ্টির নামকরণ লেডি ক্যানিংয়ের নামানুসারে হয় ‘লেডিকেনি’।


৫. নবকৃষ্ণ গুঁই— উত্তর কলকাতার এই মিষ্টির দোকানের অন্যতম আকর্ষণ রাতাবি সন্দেশ, রোজ-ক্রিম সন্দেশ এবং চন্দন ক্ষীর।  


৬. অমৃতা— শ্যামবাজারের বুকে এই দোকানের মিষ্টি দই বঙ্গজীবনের আইনডেন্টিটি। পাশাপাশি, এখানকার ক্ষীর চপ, ক্ষীর সিঙাড়া, সরভাজাও খুব বিখ্যাত। 


৭. তিওয়ারি সুইটস— বাঙালি মিষ্টি বলতে যা বোঝায় তা এখানে পাওয়া যায় না। তবে, এখানকার ঘি-এর লাড্ডু, শোনপাপড়ি এবং মোটি পাক, কাজু বরফি, রাবড়ি-র বাঙালির অন্যতম পছন্দের।  


৮. বলরাম মল্লিক অ্যান্ড রাধারমন মল্লিক— বেকড মিষ্টিতে কলকাতার অগ্রণী এই মিষ্টির দোকান। এখানকার বেকড্ রসগোল্লা, ম্যাঙ্গো জিলাটো সন্দেশ আপনার রসনাকে বাড়িয় দেওয়ার পক্ষে যথেষ্ট।  


৯. চিত্তরঞ্জন মিষ্টান্ন ভাণ্ডার— ১৯০৭ সালে তৈরি হওয়া এই দোকানের ইতিহাস শত বছর পুরনো। এখানকার সন্দেশ, সিরূপী পান্তুয়া এবং রসগোল্লা চেখে দেখুন মজাটাই আলাদা। 


১০. নলীনচন্দ্র দাস অ্যান্ড সনস— কড়াপাকের সন্দেশের জন্য বিখ্যাত এই দোকান।  


১১. সেন মহাশয়— শ্যামবাজারের মোড়ের এই মিষ্টির দোকানকে বাঙালির অন্যতম ঐতিহ্য বলে মনে করা হয়। এখানকার দরবেশ, মিহিদানা,জয়ন্তী, অপরূপা আজও বাঙালির রসনাকে তৃপ্তি দিয়ে আসছে।  

আশুতোষ সেন বাজারে সেনমহাশয় নামেই বেশি পরিচিত। ১৮৯৭সালে ফড়িয়াপুকুরের খুব কাছে ছোটোখাটো একটি মিষ্টির দোকান চালু করেন তিনি। তবে তিনি নিজে ভিয়েনদার ছিলেন না। কারিগর দিয়ে মিষ্টি বানানোই ছিল তাঁর শখ। আর এই সখ থেকেই তিনি হয়ে উঠলেন মিষ্টি জগতের সম্রাট। নতুন নতুন সংযোজন ঘটালেন মিষ্টির দুনিয়াতে। তাঁর আবিষ্কৃত রাতাবী সন্দেশ মিষ্টির জগতে এখনো অদ্বিতীয় নাম। এছাড়া তার গোলাপি পেঁড়া, মালাই চপ, আবার খাবো ইত্যাদি মিষ্টিগুলিও বিশেষ আকর্ষণীয়। দেওঘরের কেশর সন্দেশ ও কেশর কদমও সেন মহাশয়ের দোকানে এসে নতুন আকার ও আকর্ষণীয় স্বাদ নিয়ে বাজার মাত করে ফেলে। সম্প্রতি নতুন সংযোজন পেশোয়ারি সন্দেশ ও কেক সন্দেশও যথেষ্ট নাম করেছে।

১২. পুঁটিরাম— কলেজ স্ট্রিট মোড়ের এই দোকানে একটি ‘ব্রেকফাস্ট’ করে নিতে পারেন। স্পেশাল কচুড়ির সঙ্গে রাজভোগ, রসগোল্লা, চিত্রকূট সহযোগে সেরে নিতে পারেন আপনার প্রাতরাশ। 


১৩. জয়শ্রী— ‘ভাজা মিষ্টি’-র রসনা পেতে গেলে আপনাকে আসতেই হবে এখানে। বউবাজারে থাকা এই দোকানের জিভে গজা,সরভাজা,ক্ষীরের চপ চেখে নিন। 

১৪. গাঙ্গুরাম : 

কলকাতায় আর এক শতবর্ষ অতিক্রম করা মিষ্টির দোকান গাঙ্গুরাম চৌরাশিয়ার দোকান। গাঙ্গুরামের মূলত খ্যাতির শীর্ষে ওঠে ‘মিষ্টি দই’-র হাত ধরে। গাঙ্গুরাম পরিবারে একটি কথা চালু রয়েছে, ভিখারির ছদ্মবেশে এসে স্বয়ং ‘নারায়ণ’ নাকি একদিন গাঙ্গুরামের হাত থেকে এক ভাঁড় দই খান। এরপর তিনি পরম তৃপ্ত হয়ে তাঁকে আশীর্বাদও করেন। বর্তমানে কলকাতায় গাঙ্গুরামের দোকানের ১০টি শাখা রয়েছে। 


ইতিহাস বলে, গাঙ্গুরাম বারাণসীর এক প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে কলকাতায় এসেছিলেন জীবিকার সন্ধানে। রাজা কমলাপ্রসাদ মুখার্জির মিষ্টির দোকানে সামান্য কয়েকটা টাকায় বিনিময়ে তিনি তাঁর রুজির লড়াই শুরু করেন। তখনকার দিনে কমলাপ্রসাদের এই দোকান থেকে বিভিন্ন রাজা ও জমিদারের বাড়িতে মিষ্টি সরবরাহ করা হতো। তাঁরা গাঙ্গুরামের হাতের মিষ্টি খেয়ে প্রশংসায় করতেন। স্বাভাবিকভাবেই দোকানের মালিকও একটু একটু করে তাঁর মাইনে বাড়াতে থাকেন। গাঙ্গুরামও সেই টাকা সঞ্চয় করতে থাকেন। এরপর তিনি স্বাধীন ব্যবসার জন্য উদগ্রীব হয়ে ওঠেন। ১৮৮৫সালে নিজের জমানো টাকায় মানিকতলা রোডে ছোটোখাটো একটি দোকান কিনে শুরু করেন তাঁর মিষ্টি সাম্রাজ্যের জয়যাত্রা। ধীরে ধীরে কলকাতার বিভিন্ন এলাকায় ও শহরতলিতেও সম্প্রসারিত হয় তাঁর দোকানের শাখা। 


গাঙ্গুরামের মিষ্টি খেয়ে তৃপ্ত হয়েছিলেন ইংলণ্ডের রানী এলিজাবেথ, বুলগেরিয়ার রাষ্ট্রপতি, চু এন লাই-র মতো ব্যক্তিত্ব। বর্তমানে কলকাতায় গাঙ্গুরামের দোকানের সংখ্যা ১০০ছাড়িয়ে গেছে। মিষ্টিরও রকমফের ঘটেছে। ২০০টিরও বেশি মিষ্টির সম্ভার নিয়ে গমগম করে চলছে গাঙ্গুরামের মিষ্টি ব্যবসা। এখনো কলকাতায় কোনো নামকরা বিদেশী অতিথি আসলে, তাদের আপ্যায়ন করতে গাঙ্গুরামের মিষ্টিকেই অগ্রাধিকার দেওয়া হয়।


১৫. দ্বারিক ঘোষ :

কলকাতার আর এক বিখ্যাত মিষ্টি প্রস্তুত কারক সংস্থা দ্বারিক ঘোষ। তিনি দাবি করতেন বাংলায় তার মতো বড় দোকান অন্য কারো ছিল না বলে। তিনি প্রথম দোকান চালু করেন শ্যামপুকুর স্ট্রিটে। তাঁর পেঁড়া ও বরফি ছিল কলকাতা বিখ্যাত। পরে শ্যামবাজারেও একটি দোকান চালু করেন। যদিও সেই দোকানটির এখন আর কোনো অস্তিত্বই নেই। পরবর্তী সময়ে তিনি তার মিষ্টির গুণগান করে স্লোগান লিখে দৈনিক পত্রিকা ও অন্যান্য মাধ্যমেও প্রচার শুরু করে দেন। প্রচারের দৌলতেই হোক আর মিষ্টির গুণমানেই হোক শীঘ্রই তাঁর মিষ্টি কলকাতা ছাড়িয়ে অন্য জায়গাতেও বিপুল জনপ্রিয়তা অর্জন করে। বর্তমানে শহর কলকাতায় দ্বারিক ঘোষের ৯টি মিষ্টির দোকান রয়েছে। সকাল থেকেই এইসব দোকানে মানুষের ভিড় দেখলেই বোঝা যায় দ্বারিক ঘোষের মিষ্টি এখনো তার কৌলিন্য হারায়নি। 

১৬. যাদবচন্দ্র দাস


@  জেলাভিত্তিক মিস্টান্নের ইতিকথা :

১. বাঁকুড়া 

মেচা সন্দেশের জনক কে? গোটা বেলিয়াতোড় তোলপাড় করলেও এই প্রশ্নের ঠিকঠাক জবাব মেলা দুষ্কর। অন্ততঃ দুশো বছরের কম নয় মেচার জন্ম ইতিহাস, অনুমান মেচা প্রস্তুতকারকদের। প্রাচীন কয়েকজন নামী মেচা প্রস্তুতকারক গত হয়েছেন কয়েক বছর হল। সম্প্রতি মারা গিয়েছেন চন্দ্রলোক সুইটস্‌ এর কর্ণধার চন্দ্রশেখর দাস মোদক। হিরা হোক বা নারায়নী সুইটস্‌, মেচা সন্দেশের নানা কারখানা ঘুরেও পাওয়া গেল না আদি ইতিহাস। তবে বাঙালির নস্টালজিক ভাবনার খোলস থেকে বেরিয়ে এল, ইংরেজ আমলেও নাকি এখানকার এই বিশেষ মিষ্টি প্রসিদ্ধ ছিল।

২. মালদহ 

আমের রাজ্য মালদহে আছে এমনই এক ঠিকানা। যেখানে মিষ্টির নামেই দোকানের নাম কানসাট। 


ইংরেজবাজারের বিশ্বজিৎ সাহা ও জয়দেব সাহার দোকানে কানসাটেই যত গুরুত্ব। বাকি মিষ্টিরা সেখানে কোণঠাসা। আর এই দোকানে কেবলমাত্র নানা দাম, নানা সাইজের কানসাট পাওয়া যায়। মিষ্টি ব্যবসায় ব্র্যান্ডিং-এর এমন নজির ভূ-ভারতে দ্বিতীয়টা আছে কিনা সন্দেহ। 

ইংরেজবাজারের বিজি রোডের মকদমপুরে কানসাট নিয়ে এমনই কেরামতি দেখিয়েছেন এই দুই ভাই। এই ছকভাঙা পথে নামার পিছনে রয়েছে তাঁদের বাপ-ঠাকুরদার প্রেরণা।

ওপার বাংলার শিবগঞ্জ জেলা

No comments