হলদিয়া বন্দরের আধুনিকীকরণে ৩০০কোটি টাকা বিনিয়োগ করতে চলেছে ভারতের বৃহত্তম বেসরকারি পোর্ট অপারেটর সংস্থা আদানি গ্রুপ। বন্দরের ২নম্বর বার্থ মেকানাইজেশন অর্থাৎ স্বয়ংক্রিয় পরিকাঠামো গড়তে এই বিনিয়োগ হবে। রাজ্যের বন্দর বাণিজ্যে এই…
হলদিয়া বন্দরের আধুনিকীকরণে ৩০০কোটি টাকা বিনিয়োগ করতে চলেছে ভারতের বৃহত্তম বেসরকারি পোর্ট অপারেটর সংস্থা আদানি গ্রুপ। বন্দরের ২নম্বর বার্থ মেকানাইজেশন অর্থাৎ স্বয়ংক্রিয় পরিকাঠামো গড়তে এই বিনিয়োগ হবে। রাজ্যের বন্দর বাণিজ্যে এই প্রথম বিনিয়োগ করছে আদানিদের সংস্থা আদানি পোর্ট অ্যান্ড স্পেশাল ইকোনমিক জোন লিমিটেড(এপিএসইজেড)। ওই বার্থ আধুনিকীকরণের জন্য বন্দর কর্তৃপক্ষ টেন্ডার ডেকেছিল। টেন্ডার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বন্দর কর্তৃপক্ষ শেষমেশ আদানিকে বাছাই করেছে। বিল্ড অপারেট অ্যান্ড ট্রান্সফার(বিওটি) মডেলে আধুনিকীকরণের পর আদানি গ্রুপ ওই বার্থ পরিচালনা করবে। টেন্ডারে আদানি গ্রুপ জানায়, কার্গো হ্যান্ডেলিংয়ের জন্য তারা বন্দরকে সবচেয়ে বেশি রাজস্ব দেবে। সেজন্য অন্য সংস্থাগুলির মধ্যে বেস্ট বিডার হিসেবে আদানিকে বেছে নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে বন্দর কর্তৃপক্ষ।হলদিয়া বন্দরের ডেপুটি চেয়ারম্যান অমলকুমার মেহেরা বলেন, ডকের ২নম্বর বার্থ মেকানাইজেশনের জন্য টেন্ডার ডাকা হয়েছিল। গত ১অক্টোবর শুক্রবার ওই টেন্ডার খোলা হয়েছে। সেখানে সেই টেন্ডারে বেস্ট বিডার হয়েছে আদানি গ্রুপ। এবার এটি বন্দরের টেন্ডার কমিটির কাছে পাঠানো হবে। বোর্ড মিটিংয়ের মাধ্যমে চূড়ান্ত হবে। বন্দর সূত্রে জানা গিয়েছে, ২নম্বর বার্থ পরিচালনার ক্ষেত্রে পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ অর্থাৎ পিপিপি মডেলে বিল্ড অপারেট অ্যান্ড ট্রান্সফার পদ্ধতিতে বন্দরের সঙ্গে আদানিদের ৩০বছরের চুক্তি হচ্ছে। আদানিদের সংস্থা এপিএসইজেড নতুন করে ওই বার্থের আধুনিক পরিকাঠামো গড়বে এবং পরিচালনা করবে। বন্দরে বিনিয়োগের মাধ্যমে ব্যবসা করার জন্য তারা বন্দরকে লভ্যাংশের একটি অংশ দেবে।
জানা গিয়েছে, ভারতে মেজর পোর্টগুলির কার্গো হ্যান্ডেলিংয়ের রেট নির্ধারক সরকারি সংস্থা ট্যারিফ অথরিটি ফর মেজর পোর্টস(ট্যাম্প) প্রতি বন্দরে টন পিছু ৩৩৫.৯০টাকা রেট বেঁধে দিয়েছে। হলদিয়া বন্দরে আদানিরা বিনিয়োগের পর ট্যাম্প নির্ধারিত রেট মেনেই আমদানি রপ্তানিকারীদের কাছ থেকে নিজেদের মতো হ্যান্ডেলিং চার্জ নেবে। সেখান থেকে আদানিরা টন পিছু বন্দরকে দেবে ৭৫টাকা অর্থাৎ লভ্যাংশের ২২.৩৩ শতাংশ শেয়ার। অন্য সংস্থার চেয়ে এই লভ্যাংশ ১০টাকা বেশি হওয়ায় আদানিরা বেস্ট বিডার হয়েছে। আগে ওই বার্থের বছরে কার্গো হ্যান্ডেলিং ক্ষমতা ছিল ২মিলিয়ন টন। আধুনিকীকরণের পর সেই ক্ষমতা দ্বিগুণ হয়ে প্রায় ৪মিলিয়ন টনে পৌঁছবে। দু’বছরের মধ্যে নতুন ওই বার্থ কাজ শুরু করবে।বন্দরের এক আধিকারিক বলেন, ২নম্বর ওই বার্থ আগে ডকের ৩নম্বর বার্থ হিসেবে পরিচিত ছিল। পরে বার্থগুলির নতুন নামকরণের সময় তা বদলে গিয়েছে। ১৯৭৭সালে বন্দরের প্রথম মেকানাইজড বার্থ হিসেবে গড়ে ওঠে ওই বার্থ। সেসময় ভারত থেকে জাপানে লৌহ আকরিক পাঠানোর জন্য ওই পরিকাঠামো গড়া হয় হলদিয়ায়। কিছুদিন পর সেটি বন্ধ হয়ে যায়। পরে ২০০০সাল নাগাদ ফের চীনে অলিম্পিক স্টেডিয়াম গড়ার জন্য লৌহ আকরিক পাঠানোর জন্য এর ব্যবহার শুরু হয়। ২০০৭সালের পর চীনে লৌহ আকরিক পাঠানো বন্ধ হয়। তারপর দীর্ঘদিন অব্যবহৃত অবস্থায় পড়েছিল। কারণ লৌহ আকরিক হ্যান্ডেলিংয়ের মতো করে এর পরিকাঠামো তৈরি হয়েছিল। দীর্ঘদিনের পুরনো হওয়ায় ওই বার্থের যন্ত্রপাতির কার্যক্ষমতা কমে গিয়েছিল। বছর চারেক আগে বন্দর কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নেয়, ওই বার্থটি কয়লা পরিবহণের জন্য নতুন করে গড়া হবে। পুরনো যন্ত্রপাতি সেজন্য নিলাম করে বেচে দেওয়া হয়। বন্দরের জেনারেল ম্যানেজার (ট্রাফিক) অভয় মহাপাত্র বলেন, বন্দরে বিভিন্ন ধরনের কয়লা হ্যান্ডেলিং আগের তুলনায় চারগুণ বেড়ে গিয়েছে। সেজন্য এই বার্থটি গড়ে তোলা হচ্ছে। এখানে সরাসরি রেলের ওয়াগন এসে লোডিং নিতে পারবে। মূলত ইস্পাত শিল্প ও বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কয়লা আমদানির জন্য ওই বার্থটির আধুনিকীকরণ হচ্ছে।
No comments