মা কালীর ভয়াভয় রূপটি প্রধান। অর্থাৎ মাতৃকা আমাদের অভয় প্রদান করে রক্ষা করেন এবং আমাদের শত্রুদের মাথায় ভয়ের খড়্গ নামিয়ে আনেন। আমরা হরপ্পা সভ্যতাকে স্মরণ করি কারণ এই রূপের উৎস হরপ্পা সভ্যতায় ছিল। হরপ্পা সভ্যতায় পক্ষীমাতৃকার নানা মূ…
মা কালীর ভয়াভয় রূপটি প্রধান। অর্থাৎ মাতৃকা আমাদের অভয় প্রদান করে রক্ষা করেন এবং আমাদের শত্রুদের মাথায় ভয়ের খড়্গ নামিয়ে আনেন। আমরা হরপ্পা সভ্যতাকে স্মরণ করি কারণ এই রূপের উৎস হরপ্পা সভ্যতায় ছিল।
হরপ্পা সভ্যতায় পক্ষীমাতৃকার নানা মূর্তি পাওয়া গেছে। বস্তুত বালচিস্তান ও ঝোব উপত্যকায় যে মূর্তিগুলো দেবীপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায় কর্তৃক ভয়াল মাতৃকা বলে চিহ্নিত সেগুলি আধুনিক প্রত্নতাত্ত্বিকরা পক্ষীমাতৃকা বলেই চিহ্নিত করছেন।
অবৈদিক তন্ত্রাশ্রয়ী ব্রতধর্মী বাঙালি জাতির পূর্বসূরীরা পক্ষীবৎ বলে বর্ণিত হন বৈদিক সাক্ষ্যে। অতুল সুর মনে করেছেন যে এর অর্থ বাঙালি জাতি পক্ষী-উপাসক ছিল। পক্ষীমাতৃকা উড্ডিয়ান, তিনি তন্ত্রে মোক্ষের দ্যোতনা বহন করেন।
হরপ্পা সভ্যতায়, অন্তিম হরপ্পার সমসাময়িক পাণ্ডু রাজার ঢিবি এবং চন্দ্রকেতুগড় গঙ্গারিডাই সভ্যতায় পক্ষীমাতৃকা দেখা গেছে। পৌরাণিক যুগে কালিদাস কর্তৃক মা কালী বলাকিনী বলে চিহ্নিত হয়েছেন। আজও কালীর আবরণ মাতৃকাদের একজন হলেন বলাকা। বিস্তারিত আলোচনা আছে সপ্তডিঙা পত্রিকায় প্রকাশিত আমার লেখা "মা কালীর উত্থান" এবং "মা কালীর উৎসরণ" প্রবন্ধে, গুগল করলেই প্রবন্ধদুটি পেয়ে যাবেন অনলাইনে।
এই বলাকার ক্ষীণ স্মৃতি দশমহাবিদ্যার অন্যতম বগলামুখীর নামে বহমান আজও, যদিও আজ আর মূর্তিরূপকল্পনায় বলাকামাতৃকার স্মৃতি পরিলক্ষিত নয়। কিন্তু বগলা পরিকল্পনায় এই ভয়াভয় আঙ্গিক বিদ্যমান। মা আমাদের আশ্বস্ত করেন, মা আমাদের শত্রুদের বিনাশ করেন।
এই সেদিনও, ১৮৪১ সালে অক্টোবর মাসে কলকাতায় মধ্যরাতে কালীমূর্তি নিয়ে মিছিলে আমরা বলাকামাতৃকা দেখতে পাই, জনৈক রুশ শিল্পীর আঁকা এই ছবিটি সাক্ষ্য দেয়। ছবিটি বড় করে দেখলে মায়ের অন্যান্য আবরণ দেবতার সঙ্গে পক্ষীমাতৃকা স্পষ্ট দৃশ্যমান হবেন। এ চিত্রটি বর্তমানে ব্রিটিশ লাইব্রেরিতে আছে। আগেও পেজে দিয়েছি, এ ছবিটি আমাদের আচ্ছন্ন করে।
প্রকৃতিমাতৃকাশক্তির সর্বোচ্চ অবস্থান ভিন্ন গতি নেই। প্রকৃতির সর্বময়ী কর্তৃত্বকে সাবোতাজ করলে, অপর কাউকে নিজের জাতির কেন্দ্রস্থলে স্থান দিলেই বাঙালি দুর্বল হবে, তাই যে কোনও মূল্যে প্রকৃতির ঋজুপথ নির্মাণে অগ্রসর হয়েছি আমরা।
এই কাজে মা কালী আমাদের সহায় হোন।
মা কালীর দিন আসছে।
No comments