নবপত্রিকা হল নয়টি গাছ বা গাছের শাখার সমন্বয়ে তৈরি নবপত্রিকা বাসিনি দেবী দুর্গার মূর্তি ।এর মধ্যে যেমন বড় গাছ অর্থাৎ বনস্পতি আছে ,তেমনি আবার ছোট গুল্ম -ঔষধি ও আছে । এই গুলি হল কলাগাছ, কচু গাছ, হলুদ গাছ, জয়ন্তীর ডাল, বেল, ডালিম…
নবপত্রিকা হল নয়টি গাছ বা গাছের শাখার সমন্বয়ে তৈরি নবপত্রিকা বাসিনি দেবী দুর্গার মূর্তি ।এর মধ্যে যেমন বড় গাছ অর্থাৎ বনস্পতি আছে ,তেমনি আবার ছোট গুল্ম -ঔষধি ও আছে । এই গুলি হল কলাগাছ, কচু গাছ, হলুদ গাছ, জয়ন্তীর ডাল, বেল, ডালিম গাছ ,অশোকের ডাল, মান কচুর গাছ ও ধান গাছ। দুর্গার যেমন অধিবাস করতে হয় এই নয়টি গাছেরও অধিবাস করতে হয়। তখন এ গাছগুলি আর গাছ থাকেন না-- দেবতা হইয়া যান। কলাগাছ হোন ব্রহ্মাণী ,কচু হন কালিকা ,হরিদ্রা হন দুর্গা, জয়ন্তি হন কার্তিকী, বেল হন শিবা, ডালিম হন রক্তদন্তিকা, অশোকা হন শোকরহিতা, মান কচু চামুন্ডা আর ধান হন লক্ষ্মী।
নবপত্রিকার স্নান অনেক বৃহৎ ব্যাপার। সাধারণ লোকে উহাকে বলে 'কলা বউ ' নাওয়ানো। বাদ্য বাজনা সহকারে
নবপত্রিকা কে ঘাটে লইয়া যাওয়া হয় ।সেখানে প্রত্যেক গাছের দেবতাকে আলাদা আলাদা মন্ত্র পড়িয়া স্নান করাতে হয় । রাজার অভিষেকে যেমন সমুদ্রের জল, নানা নদীর জল দিয়ে অভিষেক করাতে হয় নবপত্রিকার স্নানে ও সেই রূপ নানা নদীর সমুদ্রের জল প্রয়োজন হয় ।এখন আর এত জল সংগ্রহ করা সম্ভব হয় না ।যে কয় প্রকার জল পাওয়া যায় তাতেই কাজ চালাতে হয় ।ইহার পর আবার আটটি ঘটের জলে নবপত্রিকাকে স্নান করাতে হয়। প্রথম ঘটে গঙ্গার জল ,দ্বিতীয় ঘটে বৃষ্টির জল, তৃতীয় ঘটে সরস্বতীর জল,( প্রবাসের জল) চতুর্থ ঘটে সাগর জল ,পঞ্চম ঘটে পদ্ম পরাগ মিশ্রিত জল, ষষ্ঠ ঘটে ঝরনার জল , সপ্তম ঘটে সর্ব তীর্থের জল ,অষ্টম ঘটে তীর্থের জল ।
এইরূপে নবপত্রিকাকে স্নান করানোর পর সম্মুখে আলপনা দেওয়া পিঁড়ির উপর বসাইয়া তাহাতে দূর্বা আতপচাল ,ফুল চন্দন ইত্যাদি দ্বারা নবপত্রিকার পূজা করতে হয় তারপর খই, দূর্বা, আতপ চাল ,চন্দন, সাদা শস্য ছড়াইতে ছড়াইতে নবপত্রিকা কে পিঁড়িতে উঠাইয়া দালানের দুর্গা প্রতিমার ডান দিকে বসাতে হয় নবপত্রিকায় যে নয় টি দেবী আছেন, সপ্তমী অষ্টমী নবমী তিন দিনই ষোড়শোপচারে তাঁহাদের পূজা করতে হয়,তবে মান কচুর দেবতা যে চামুণ্ডা তাহার একটা বিশেষ পূজা আছে তাহার নাম সন্ধিপূজা। সন্ধিপূজায় অন্য কোন দেবতার অধিকার নাই। অষ্টমী ও নবমীর সন্ধিক্ষণে সন্ধিপূজা হয় । দেবীর বিসর্জন হইয়া গেলে স্বতন্ত্রভাবে নবপত্রিকার বিসর্জন করতে হয়।
একভাবে চিন্তা করলে আমরা দেখতে পাই 'দূর্গা পূজা' প্রকৃতিরই পূজা। সনাতন হিন্দু ধর্মে জেনে বা না জেনে সে প্রকৃতির পূজা করে থাকে ।"সর্বং খল্বিদং ব্রহ্ম"এই জ্ঞানে প্রতিষ্ঠিত হিন্দুরা চন্দ্র-সূর্য আকাশ ,বাতাস, বৃক্ষ,লতা নদ-নদী সবকিছুরই পূজা-অর্চনা করে থাকে ।দুর্গাপূজায় এই ভাব টি বিশেষভাবে প্রকটিত হয় ।
প্রণামঃ--
"জয়ন্তী মঙ্গলা কালী ভদ্রকালী কপালিনী।
দুর্গা শিবা ক্ষমা ধাত্রী স্বাহা স্বধা নমোঽস্তুতে ।।"
No comments