Page Nav

HIDE

Grid Style

GRID_STYLE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

কুকড়াহাটির ইতিবৃত্ত তৃতীয় পর্ব, মনসা মন্দির আজকের পর্ব লিখেছেন, রীতিকা

ভক্তির জোরে লৌকিক দেবীও পৌরাণিক হয়ে ওঠেন। আজ শুনবো সেই গল্প। সালটা ১৩৯৯, ফাল্গুন মাস।কুকড়াহাটির প্রতিবেশী গ্রাম নটপটিয়ায় মহা ধুমধামে চলছে দেবী মনসার আরাধনা।সারা রাত্রি ব্যাপী হচ্ছে পুতুল নাচ, যাত্রা। বিসর্জনের দিনে পড়লো এক বাধা। …

 







ভক্তির জোরে লৌকিক দেবীও পৌরাণিক হয়ে ওঠেন। আজ শুনবো সেই গল্প। সালটা ১৩৯৯, ফাল্গুন মাস।কুকড়াহাটির প্রতিবেশী গ্রাম নটপটিয়ায় মহা ধুমধামে চলছে দেবী মনসার আরাধনা।সারা রাত্রি ব্যাপী হচ্ছে পুতুল নাচ, যাত্রা। বিসর্জনের দিনে পড়লো এক বাধা। জয়নগর থেকে এক অসুস্থ ছেলে এসে পড়লো মায়ের পায়ে। শোনা যায়,মায়ের চরণামৃত খেয়ে সে নাকি সুস্থ হয়ে ওঠে। এই আশ্চর্যের পর নটপটিয়া গ্রামের বেশ কিছু ভক্ত চেয়েছিলেন যাতে মায়ের মূর্তি বিসর্জন দেওয়া না হয়। শেষ পর্যন্ত ব্রজগোপাল দাসের তত্ত্বাবধানে একটি লটারি হয় এবং সেই লটারির শেষে দেবীর প্রতিমা বিসর্জন করা হবে এটাই স্থির করা হয়।


বিসর্জনের পর প্রতিমা গঙ্গা বেয়ে কুকড়াহাটি ফেরিঘাটে এসে আটকে যায়। পাশাপাশি ফকিরচক গ্রামে বসবাসকারী সুকুমার ভূঁইয়া প্রতিমাটিকে ডিঙিতে বেঁধে নিয়ে যান মাঝ গঙ্গায়। নদীপথেই প্রবল ঝড়-বৃষ্টিতে ডিঙিটা ডুবে যায়। আশ্চর্যের বিষয়, সেই প্রতিমা পুনরায় ভেসে আসে কুকড়াহাটি ফেরি ঘাটেই। গ্রামবাসী দেবীর সেই সংকেত বুঝতে পারেন এবং কুকড়াহাটি পুরোনো বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন পুকুরের ওপর মাচা বেঁধে মহাধুমধামে দেবীর আরাধনা করা হয়। বর্তমান যে দেবী প্রতিমা আমরা দেখতে পাই এটাই সেই মূর্তি যেটা গঙ্গায় ভেসে এসেছিলো।এমনকি সেই মূর্তি কে নদীবুক থেকে তুলে নতুন করে গড়ার প্রয়োজনও হয়নি,যার কোনো ভাঙ্গন নেই, গত সাতাশ বছর ধরে সেই মূর্তিই পুজো করা হয়।

বিসর্জনের দিন দেবী প্রতিমার চারপাশে অনেক সাপের আবির্ভাব হয় এবং প্রতিমার গা বেয়ে উঠে অনেক সাপ মূর্তি টিকে আগলে রাখে। সেদিনই স্থির করা হয় যে এই পুকুরের ওপর মন্দির গড়া হবে।অর্থাভাবে পুকুরের ওপর মন্দির গড়া সম্ভব না হওয়ায় মন্দিরের ভিত সরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কিন্তু দেখা যায়, সেই ভিতের ওপর অসংখ্য সাপ বাসা বেঁধে আছে। মন্দিরের বর্তমান পুরোহিত মধুবাবুর মনে হয়েছিল যে দেবী বোধহয় এখানেই ভর করেছেন তাই মন্দির এখানে তৈরী হওয়াই শ্রেয়।১৩৯৯ সালের ১৯ শে চৈত্র মন্দির প্রতিষ্ঠিত হয়।


এই মন্দিরে প্রত্যহ সকাল দশটায় পুজো শুরু হয় এবং সন্ধ্যে ছটায় সন্ধ্যাআরতি হয়। বর্তমানে করোনা পরিস্থিতিতে কম হলেও এখানে দর্শণার্থীর সংখ্যাও বিপুল। প্রতি বছর আটই ফাল্গুন দেবীর জন্মতিথি পালিত হয়। তিনদিন ধরে কীর্তন গান, সারারাত ধরে হয় দেবীর আরাধনা। দশই ফাল্গুন থাকে মহাভোজ। প্রতি বছর প্রায় দশ থেকে পনেরো হাজার মানুষ সেই ভোজে অংশগ্রহণ করেন।দূরদুরান্ত থেকে দর্শনার্থী আসেন নিজেদের বিশ্বাসের জোরে, মনোবাসনা নিয়ে।

শুনলে অবাক লাগে, আজ থেকে প্রায় 27 বছর আগে দেবী মনসার মন্দির গড়তে এগিয়ে এসেছিলেন এক মুসলমান, মতি মল্লিক।খরচের অধিকাংশ তিনিই দিয়েছিলেন।কথিত আছে,তাঁর বাড়ির সামনে বেশ কিছুদিন ধরে একটা সাপ বসেছিল। তাই তাঁর বিশ্বাস, এ নিশ্চই দেবীর কোনো সংকেত, আদেশ।একেই বোধহয় বলে বিশ্বাসের বাঁধন। তখন তো এতো ছুঁতমার্গ, জাত-বেজাতের কাঁটাতার ছিলো না!

যুগযুগ ধরে এই বিশ্বাস মানুষের মধ্যে থাকুক, মন্দির মাঝে শঙ্খ বেজে উঠুক, দেবী আমাদের আগলে রাখুক এই কামনা করি।

আজ এই পর্যন্তই। পরবর্তী পর্বে ফিরে আসছি নতুন কিছু নিয়ে।

 মধুসূদন চক্রবর্তী (পুরোহিত)

No comments