Page Nav

HIDE

Grid Style

GRID_STYLE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

" পিয়ালের খোঁজে " --সমীর ব্যানার্জী

রবীন্দ্রনাথের লেখায় তার উল্লেখ আছে যেমন --“নব শ্যামল শোভন রথে এসো বকুল বিছানো পথে,এসো বাজায়ে ব্যাকুল বেণু মেখে পিয়াল ফুলের রেণু।“
অথবা“ওই মালতীলতা দোলেপিয়ালতরুর কোলে পুব-হাওয়াতে।“
সুতরাং গানে ,কবিতায় বা লোকমুখে পিয়ালের নাম শোনেন নি…

 




রবীন্দ্রনাথের লেখায় তার উল্লেখ আছে যেমন --

“নব শ্যামল শোভন রথে 

এসো বকুল বিছানো পথে,

এসো বাজায়ে ব্যাকুল বেণু 

মেখে পিয়াল ফুলের রেণু।“


অথবা

“ওই মালতীলতা দোলে

পিয়ালতরুর কোলে পুব-হাওয়াতে।“


সুতরাং গানে ,কবিতায় বা লোকমুখে পিয়ালের নাম শোনেন নি, এমন প্রকৃতিপ্রেমী নেই বললেই চলে ! 

আমার নদিয়া জেলার গ্রামে তাকে দেখিনি বটে তবে আজ থেকে ত্রিশ পঁয়ত্রিশ বছর আগে  পিয়ালকে প্রথম দেখেছি পথের ধারে বিষ্ণুপুর বাঁকুড়ার যাবার পথে ! তারপর পশ্চিম মেদিনীপুরের জঙ্গলে আর বিহারের ডিমনা লেকের কাছের জঙ্গলে!   এখন ঐ সব জায়গাতে তারা আছে কি না জানি না ! কারণ জঙ্গল তো প্রায়  শেষ করে এনেছি আমরা ! এখন গাছ বলতে শহুরে  লোকে চেনে  আম জাম কাঁঠাল বট অশ্ব্থ  আকাশমনি কৃষ্ণচূড়া ছাতিম আর ইউক্যালিপটাস আর দুচারটে দেবদারু ! 

শাল পিয়াল সেগুন পলাশ শিমূল আমলকি, বাবলা, মেহগিনী, তমাল, হিজল,  এসব দেখতে হলে জঙ্গলে  জঙ্গলে  ঘুরতে হবে তাহলে দুচারটের দেখা মিললেও মিলতে পারে ! আমিও  স্থানীয় মানুষকে জিজ্ঞাসা করেই এই  লুপ্তপ্রায় প্রজাতির পিয়াল গাছটিকে চিনতে শিখেছিলাম কারণ ছোটবেলাতে নাম শুনলেও চোখে দেখা হয়নি !


পিয়াল  গাছের বৈজ্ঞানিক নাম "বুচানানিয়া ল্যানজান"! আর একটা প্রজাতির নাম " চিরঞ্জীয়া স্যাপিডা"

চলতি নামে অনেকে বলে "চিরঞ্জী" !ইংরেজিতেও বলে "চিরঞ্জী ট্রী" হিন্দিতে অনেক জায়গায় 'রাজদন' বলে ! বাংলাদেশ, ভারত, মিয়ানমার তথা বিশ্বজুড়ে পিয়ালের  প্রায় কুড়িটি প্রজাতি রয়েছে। তার মধ্যে ছয়টি প্রজাতি এই উপমহাদেশে পাওয়া যায়। 


চিরঞ্জী বা পিয়ালের  বীজ প্রোটিনের ভাল উৎস ! এতে ফ্যাট ও শর্করার পরিমান কম তাই স্বাস্থ্যকর ! এর ভাইবার কনটেন্ট উচ্চ মানের এবং  এই বীজে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন বি১ বি২ ও ভিটামিন থাকে ! আয়রণ ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস জাতীয় লবন থাকায় চিরঞ্জী এই বীজটি এনিমিয়া বা রক্তাল্পতা  রোগ নিরাময়  করতে সাহায্য করে!

শুধু বীজ নয় পিয়াল গাছেরপাতা, ছাল সবকিছুই যথেষ্ট ঔষধি গুণের। প্রতিরোধ ক্ষমতা, রক্তাপ্লতা, শক্তি বাড়াতে এই ফল বিশেষ উপকারী। 


পিয়াল বা চিরঞ্জী  গাছ চল্লিশ  পঞ্চাশ  ফুট পর্যন্ত উচু হয়ে থাকে । গুঁড়ি মোটা ও বেশ লম্বা ! সুতরাং এর কাঠ আসবাব তৈরী  সহ বিভিন্ন কাজে ব্যবহার হয় ! পাতাগুলি বেশ বড়, লম্বাটে-গোলাকার।  শাখার ডগায়  ডগায়  বসন্তে ফুল ফোটে। ছোট ছোট ফুল আর এপ্রিল-মে মাসের দিকে ফল ধরে ।  বৈশাখের  রোদে আদিবাসী  অধ্যুষিত  অঞ্চলে তখন গ্রামগুলোর বাতাস  ম-ম  করতো শাল পিয়ালের গন্ধে। বন জঙ্গল ভরে থাকতো পিয়াল ফলে।  পিয়াল দেখতে অনেকটা কাঁচা সুপারির মতো,পাকলে বাদামি। 

ফলের ভিতরে  এক ইঞ্চির মতো খোপে বীজাধার থাকে। একটি বীজাধারে একটি বীজ, শাঁসগুলি বাদামের মতো। পাকা ফল স্বাদে টক মিষ্টি আঙুরের মতো !

আগে গ্রীষ্মকালে জঙ্গলের সব থেকে সুস্বাদু ফল পিয়াল। সংরক্ষণের অভাবে এ রাজ্যে  পিয়াল প্রায় অবলুপ্তির পথে।  প্রাচীন বনৌষধিতে সবিস্তারে  লেখা আছে  এই ফলের গুনাগুণ।


জানা যায় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ভারতে নাকি  প্রচুর পরিমাণে শাল সেগুন সহ  এই পিয়াল  গাছ ও কেটে ফেলা হয়েছে। বিষ্ণুপুরের 'মোতিচুর' নামের মিষ্টি  এই বীজের থেকেই বেসন থেকেই তৈরি হতো। নামী দামী মিষ্টিতে এই বীজের প্রয়োগ আছে ! আদিবাসীরা অনেকেই পিয়াল ফল নুন লঙ্কা দিয়ে মেখে তৃপ্তি সহকারে খায় !

সরকারি  সংরক্ষিত জঙ্গলে এই উদ্ভিদটির আসু  সংরক্ষণ অতি প্রয়োজন না হলে অন্য অনেক বৃক্ষের মতো এর স্থান থাকবে শুধু বইয়ের পাতায় !


(ছবি সংগৃহীত)

No comments