Page Nav

HIDE

Grid Style

GRID_STYLE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

মৃত্যুর_পরে_কী_হয়? স্বামী_সােমেশ্বরানন্দ

মৃত্যুর পর কী হয়? কেউ বলেন ঘুমিয়ে পড়ে, কেউ বলেন পূর্বপুরুষরা নিতে আসেন তাঁকে। তখন কী অবস্থা হতে পারে --(১) মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে কোনও মানুষই বুঝতে পারেন না যে তিনি মারা গেছেন। তাঁর শরীর বিছানায় শােয়া। সবাই শােকার্ত,কেউ বা কাঁদ…

 







মৃত্যুর পর কী হয়? কেউ বলেন ঘুমিয়ে পড়ে, কেউ বলেন পূর্বপুরুষরা নিতে আসেন তাঁকে। তখন কী অবস্থা হতে পারে --

(১) মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে কোনও মানুষই বুঝতে পারেন না যে তিনি মারা গেছেন। তাঁর শরীর বিছানায় শােয়া। সবাই শােকার্ত,কেউ বা কাঁদছে। এসব দেখে তিনি অবাক হন। নিজের শরীরে ঢুকতে চেষ্টা করেন, কিন্তু না পেরে ভয় পান। সবাইকে বলতে চান যে তিনি এখানেই আছেন, কোথাও চলে যাননি। আর অবাক হয়ে দেখেন তাঁর কথা কেউ শুনছে না। মাঝে-মাঝেই তিনি যেন ওই জায়গা থেকে দূরে চলে যান। আবার ফিরে আসেন। কী হচ্ছে তা বুঝতে পারেন না। 


(২) শবদেহকে শ্মশানে পুড়িয়ে দেওয়ার পর তিনি বুঝতে পারেন নিজের মৃত্যুকে। তখন থেকে তাঁর পিছুটান ধীরে ধীরে কমতে থাকে। আর যার পিছুটান বা সংসারের প্রতি আকর্ষণ বেশি, তিনি নিজের বাড়ির কাছেই থেকে যান সূক্ষ্ম বা বায়বীয় শরীর নিয়ে। সূক্ষ্ম দেহে থেকে তিনি পরিবারের সদস্যদের সাহায্য করে যাওয়ার চেষ্টা করেন। সম্পত্তি পাহারা দেন। ক্ষুধা তৃষ্ণা তিনি মেটান খাবারের গন্ধ নিয়ে। সংসারের সুখ-দুঃখে তিনি প্রভাবিত হন। কতদিন এই অবস্থায় তিনি থাকবেন সেটা নির্ভর করে তাঁর পিছুটান বা আকর্ষণের উপর। 


(৩) যার আকর্ষণ বা পিছুটান তত তীব্র নয়, তিনিও সিদ্ধান্ত নিতে না পারলে বিভ্রান্ত থাকেন। ফলে মাঝেমধ্যে দূরে চলে গিয়েও আবার ফিরে আসেন। এই যাওয়া-আসা চলতে থাকে। তাঁর কষ্ট বেশি হয়। 


(৪) সংসারের প্রতি যার আকর্ষণ কম তিনি মৃত্যুর পর ঘুমিয়ে পড়েন। ফলে চিন্তা থাকে না। কতদিন এই অবস্থায় থাকবেন সেটা নির্ভর করে তাঁর মনের সংস্কারের উপর। গভীর ঘুমে তিনি আনন্দের আভাস পান। কারও ক্ষেত্রে কোনও পূর্বপুরুষ এসে তাঁকে নিয়ে যান ঘুম-বিশ্রামের পর। তিনি ভুলে যান তাঁর ফেলে-আসা জীবনকে। 


(৫) কেউবা মৃত্যুর পর কিছুক্ষণ ধরে দেখেন নিজের শবদেহ এবং শােকাবিভূত আপনজনদের। প্রথমে অবাক হলেও পরে বুঝতে পারেন যে তাঁর মৃত্যু হয়েছে। এই সময় তিনি অনুভব করেন যে এক লম্বা নীল রঙের আলােকিত সুড়ঙ্গের মধ্য দিয়ে তিনি ভেসে চলেছেন, কেউ কেউ অবশ্য অন্য রঙের সুড়ঙ্গও দেখেন। যেমন সাদা, ধূসর, কালাে, জ্যোতির্ময় ইত্যাদি। অনেকক্ষণ এভাবে গিয়ে তিনি কোনও দিব্য আত্মার দেখা পান যিনি আসেন তাঁকে কোথাও নিয়ে যাওয়ার জন্য। 


(৬) মৃত্যুর পর কেউ নিজেকে খুব হালকা অনুভব করেন। যেন তাঁর কোনও ওজন নেই, এতদিনের রােগও দূর হয়ে গিয়েছে। তিনি বাতাসে ভাসছেন, নীচে বিছানায় নিজের শবদেহ দেখে বুঝতে পারেন যে তাঁর মৃত্যু হয়েছে। মনের আনন্দে কিছুক্ষণ হাওয়ায় ভেসে কোনও পূর্বপুরুষ বা দিব্য আত্মাকে দেখতে পান।  দিব্যাত্মার সঙ্গে চলে যাওয়ার জন্য তিনি প্রস্তুত হন। 


(৭) কেউ মৃত্যুর আগেই দেখতে পান কোনও সূক্ষ্মদেহীকে। বুঝতে পারেন যে তাঁকে নিতে এসেছেন তিনি।  আসক্তি কম থাকলে তিনি মানসিকভাবে তৈরি হন যাওয়ার জন্য। আর আকর্ষণ বা পিছুটান বেশি হলে তিনি কাকুতি-মিনতি করেন মুক্তির জন্য। কিন্তু তিনি যাবেন না থাকবেন সেটা নির্ভর করে সেই সূক্ষ্মদেহীর উপর। এ তাে গেল স্বাভাবিক মৃত্যুর সময়। কিন্তু যিনি অন্যভাবে দেহত্যাগ করেছেন, খুন কি দুর্ঘটনা বা আত্মহত্যা ইত্যাদিতে, তাঁর মন হঠাৎ অনুভূতি শূন্য হয়ে যায়। তিনি যেন আধাে ঘুমে চলে যান। আর মৃত্যুর ঘটনা স্বপ্নের মতাে বারবার তিনি দেখতেে পান। বিশেষ কষ্ট হয় না। যেন স্বপ্ন দেখছেন। এরপর ঘুমিয়ে পড়েন। আত্মীয়রা তাঁর জন্য প্রার্থনা বা শ্রাদ্ধ করলে সেই চিন্তা ও ভাব-তরঙ্গ গিয়ে মৃতাত্মাকে সচেতন করে। 


এই সময় উপরে দেওয়া সাতটি অনুভবের কোনও একটি তাঁর হয়। এবং সেই অনুযায়ী গতি হয়। মৃত্যুর পর জীবের সংস্কার তীব্র হয়ে ওঠে। শরীর না থাকায় মানসিক তরঙ্গ বড় ভূমিকা নেয়। ইতিবাচক (পজিটিভ) তরঙ্গ ভালাে পরিবেশ ও সূক্ষ্ম দেহকে আকর্ষণ করে। আর নেতিবাচক তরঙ্গ আকর্ষণ করে খারাপকে। এবং এই আকর্ষণ তাকে নিয়ে যায় সম-তরঙ্গের পরিবেশ বা জগতে। অর্থাৎ কোন ধরনের সূক্ষ্ম জগতে সে যাবে সেটা নির্ভর করে তার মানসিক সংস্কারের উপর।          


*মহারাজের সুক্ষ বিদেহী আত্মার প্রতি সশ্রদ্ধ প্রণাম জানাই।*

*ওঁ শান্তি!ওঁ শান্তি!ওঁ শান্তি!*

No comments