ঘূর্ণাবর্তের জেরে দু’দিনের বৃষ্টিতে পূর্ব মেদিনীপুরের বন্যা পরিস্থিতির ভীষণ অবনতি হয়েছে। কেলেঘাই নদীতে জল বেড়ে যাওয়ায় তালছিটকিনি মৌজায় ভেঙে যাওয়া নদীবাঁধ সারানোর কাজে প্রচণ্ড সমস্যায় পড়েছে সেচদপ্তর। নদীবাঁধ মেরামত করতে অন্তত ১০দি…
ঘূর্ণাবর্তের জেরে দু’দিনের বৃষ্টিতে পূর্ব মেদিনীপুরের বন্যা পরিস্থিতির ভীষণ অবনতি হয়েছে। কেলেঘাই নদীতে জল বেড়ে যাওয়ায় তালছিটকিনি মৌজায় ভেঙে যাওয়া নদীবাঁধ সারানোর কাজে প্রচণ্ড সমস্যায় পড়েছে সেচদপ্তর। নদীবাঁধ মেরামত করতে অন্তত ১০দিন লাগবে বলে জানিয়েছেন সেচদপ্তরের কাঁথির এগজিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার উত্তম হাজরা। এরই মধ্যে কেলেঘাই নদীর জল ভগবানপুর-২ব্লক ছাপিয়ে খেজুরি-১ব্লকের লাখি পঞ্চায়েতকে প্লাবিত করেছে। এই প্রথম কেলেঘাই নদীর জলে খেজুরি প্লাবিত হল। বুধবার বাজকুল সংলগ্ন পড়াচিংড়া মৌজায় পিচ রাস্তা কেটে দেন গ্রামবাসীরা। এরফলে ভগবানপুর-২ব্লকের গড়বাড়ি-১পঞ্চায়েতের বেশ কয়েকটি গ্রাম পুরোপুরি জলের তলায় চলে গিয়েছে। ওই এলাকার উপর দিয়েই বয়ে গিয়েছে হিজলি টাইডাল ক্যানেল। সেই ক্যানেলে কেলেঘাই নদীর জলে প্লাবন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে নন্দীগ্রাম-২ব্লকের বিরুলিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতে। কেলেঘাই নদীর জলে খেজুরির পাশাপাশি নন্দীগ্রামেও বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
অতিবৃষ্টি ও ঝড়ের দাপটে দেওয়াল চাপা পড়ে দুই মেদিনীপুরে দু’জনের মৃত্যু হয়েছে। ভগবানপুর-১ব্লকের কাকড়া গ্রামে দেওয়াল চাপা পড়ে জ্যোৎস্না সাউ(৬২) নামে এক বৃদ্ধার মৃত্যু হয়। রামনগর-১ব্লকের বিলামড়িয়া গ্রামে দেওয়াল চাপা পড়ে বিমল শিট ও শঙ্করী শিট নামে দু’জন গুরুতর জখম হয়েছেন। পশ্চিম মেদিনীপুরের চন্দ্রকোণা-১ব্লকের করঞ্জি গ্রামে দেওয়াল চাপা পড়ে প্রতিমা বাগ(৩৮) নামে এক মহিলার মৃত্যু হয়েছে। ঝোড়ো হাওয়ায় ঘাটাল মহকুমা এলাকাতেই ৫০টির বেশি বাড়ি ভেঙে পড়েছে। গাছ ভেঙে পড়ে অনেক জায়গায় রাস্তাঘাট অবরুদ্ধ হয়। খুঁটি ভেঙে যাওয়ায় বিদ্যুৎহীন ছিল ঘাটালের বিস্তীর্ণ এলাকা। পানীয় জলের সমস্যা তীব্র হয়েছে।
টানা বৃষ্টিতে মেদিনীপুর, খড়্গপুর শহর এবং গ্রামীণ এলাকার অনেক জায়গায় জল জমে যায়। রাস্তার উপর দিয়ে জল বইতে থাকে। ঘরেও জল ঢুকে যায়। খড়্গপুর স্টেশনের প্রবেশ পথে এবং খড়্গপুর মহকুমা হাসপাতালের সামনেও জল দাঁড়িয়ে যায়। হাসপাতালে আসা রোগীদের দুর্ভোগে পোহাতে হয়। ডেবরার ফতেপুরের কাছে ডেবরা-সবং রাজ্য সড়কের উপর দিয়ে জল বয়ে যায়। ডেবরার নোয়াপাড়ায় বাড়ির উপর একটি বড় গাছ ভেঙে পড়ে। শালবনীর কর্ণগড়ে মহামায়ার মন্দিরে সামনেও গাছ ভেঙে পড়েছে। মেদিনীপুর শহর লাগোয়া ধর্মার কাছে জাতীয় সড়কের উপর দিয়ে জল বইতে থাকায় ওয়ানওয়ে করে দেওয়া হয়। মেদিনীপুর সদর ব্লকের শিরিষডাঙায় একটি কালভার্ট ভেঙে গিয়েছে। জলসম্পদ দপ্তরের মন্ত্রী মানস ভুঁইয়া বলেন, সবংয়ের দশগ্রাম, চাউলকুড়ি, নওগাঁ, ভেমুয়া সহ সর্বত্রই জল বেড়েছে।
ব্যাপক বৃষ্টির জেরে পূর্ব মেদিনীপুরের ভগবানপুর ও পটাশপুরের বন্যা ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। জেলায় গড়ে ৭৩মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। এরমধ্যে কাজলাগড়ে সর্বোচ্চ ১২১মিলিমিটার, কাঁথিতে ১১৪মিলিমিটার, নন্দীগ্রামে ১১১মিলিমিটার এবং পাঁশকুড়ায় ৮৪মিলিমিটার হারে বৃষ্টি হয়েছে। এই মুহূর্তে জেলায় ৩৭০টি ত্রাণ শিবির চালু হয়েছে। খেজুরি-১ব্লকে দু’টি, কাঁথি-১ ও সুতাহাটায় একটি করে ক্যাম্প খোলা হয়েছে। ময়না, শহিদ মাতঙ্গিনী, পাঁশকুড়া ও কোলাঘাটের অবস্থাও শোচনীয়। শহিদ মাতঙ্গিনী বিডিও অফিসে কোমর সমান জল। ময়না গ্রামীণ হাসপাতাল জলমগ্ন। চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের আসা যাওয়ার জন্য নৌকা ভাড়া করা হয়েছে। ময়নার বিস্তীর্ণ এলাকা পুরোপুরি জলের তলায়।
ভগবানপুর ও পটাশপুরের কিছু এলাকা থেকে জল নামতে শুরু করেছিল। কিন্তু, দু’দিনের বৃষ্টিতে আবার জল বাড়ছে। ১৬সেপ্টেম্বর রাতে নদীবাঁধ ভেঙে প্লাবন শুরু। তারপর দু’সপ্তাহ পার হতে চলল। এখন প্রত্যেকেই নদীবাঁধ কবে মেরামত হবে, তা জানতে উৎসুক। বুধবার জেলাশাসক পূর্ণেন্দু মাজি এনিয়ে সেচদপ্তরের সঙ্গে কথা বলেন। সেচদপ্তরের এগজিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার বলেন, কেলেঘাই নদীতে জলস্তর ক্রমশ বাড়ছে। কাজে নানা সমস্যা হচ্ছে। আপাতত নদীবাঁধের কাজ সম্পূর্ণ হতে ১০দিন সময় লাগবে।
No comments