রাতভর বৃষ্টিতে ফের বিপর্যস্ত হলদিয়া শিল্পশহর ও লাগোয়া সুতাহাটা, মহিষাদল ব্লক এলাকার গ্রামগুলি। হলদিয়ার সিংহভাগ ওয়ার্ডের রাস্তাঘাটে জল থই থই করছে। নিকাশি সমস্যার কারণে পুরসভার একাধিক উদ্বাস্তু ও শিল্পকারখানা লাগোয়া ওয়ার্ডগুলি ক…
রাতভর বৃষ্টিতে ফের বিপর্যস্ত হলদিয়া শিল্পশহর ও লাগোয়া সুতাহাটা, মহিষাদল ব্লক এলাকার গ্রামগুলি। হলদিয়ার সিংহভাগ ওয়ার্ডের রাস্তাঘাটে জল থই থই করছে। নিকাশি সমস্যার কারণে পুরসভার একাধিক উদ্বাস্তু ও শিল্পকারখানা লাগোয়া ওয়ার্ডগুলি কার্যত জলের তলায়। হলদিয়া বন্দরে পণ্য রাখার প্লটগুলিতে এক কোমর জল জমে গিয়েছে। ফলে ব্যাহত হচ্ছে জাহাজে কার্গো হ্যান্ডেলিংয়ের কাজকর্ম। পাম্পিং মেশিন বসিয়ে জোরকদমে চলছে জল বের করার কাজ। এদিকে, লাগাতার বর্ষণের জেরে হলদিয়ার ইন্ডাস্ট্রিয়াল রোড ও ১১৬ নম্বর জাতীয় সড়কের অবস্থা ভয়াবহ আকার নিয়েছে। অতিবৃষ্টির পাশাপাশি পূর্ণিমার কোটালে জলস্ফীতির ভয়ে হলদিয়া, সুতাহাটা ও মহিষাদলের ভাঙনপ্রবণ নদীবাঁধগুলি নিয়ে চিন্তায় রয়েছে বিভিন্ন ব্লক প্রশাসন। মঙ্গলবার হলদি, হুগলি ও রূপনারায়ণের নদীপাড় ঘুরে দেখেন মহিষাদলের বিধায়ক তিলক চক্রবর্তী। তিনি বলেন, যশের পর মেরামতির ফলে বাঁধগুলিতে সমস্যা না থাকলেও নিকাশি সমস্যার কারণে আমন চাষ এখন জলের তলায়।আবহাওয়া দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় হলদিয়া শিল্পাঞ্চলে প্রায় ১০০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। হলদিয়া বন্দরের কর্মীরা বলেন, প্রবল বৃষ্টির জন্য গত ১৫ দিন ধরে পণ্য পরিবহণে ভীষণ সমস্যা হচ্ছে। বন্দরের ডক এলাকায় পণ্য রাখার ফাঁকা প্লটগুলিতে এক কোমর জল জমেছে। বিদেশ থেকে আমদানি করা কোকিং কোল, থার্মাল কোল, ডলোমাইট, রক ফসফেটের মতো পণ্য জলে ডুবে রয়েছে। বৃষ্টিতে লক্ষ লক্ষ টাকার কোকিং কোল ধুয়ে যাচ্ছে, ছড়িয়ে পড়ছে সর্বত্র। বন্দরের জিসি বার্থ এলাকায় একটি বেসরকারি সংস্থা প্লটের জল বের করার জন্য বড় বড় পাম্প বসিয়েছে। হাইড্রেনের মাধ্যমে সেই জল বের করা হচ্ছে। কারণ, আমদানি করা পণ্য এনে রাখার জায়গা নেই। ফলে জাহাজে পণ্য আসাও কমে গিয়েছে। অতিবৃষ্টির ফলে জল জমে যাওয়ায় আমানি রপ্তানিকারিরা প্লট ভাড়া নিয়েও তা ব্যবহার করতে না পারায় ক্ষতির মুখে পড়ছেন বলে অভিযোগ।
বন্দরের জেনারেল ম্যানেজার (প্রশাসন) প্রবীণকুমার দাস বলেন, অতিবৃষ্টি হলে সব বন্দরেই কাজে সমস্যা হয়। তবে আগের চেয়ে হলদিয়া বন্দরে পরিকাঠামোর উন্নতি হয়েছে। পেভার ব্লক বসিয়ে রাস্তা তৈরির ফলে পণ্য পরিবহণে সুবিধে হচ্ছে। এছাড়া নতুন করে কংক্রিটের হাইড্রেন তৈরি করে নিকাশির ব্যবস্থা করা হয়েছে। এদিকে, বন্দর সংলগ্ন পুরসভার ১৩ ও ১৪ নম্বর ওয়ার্ড দুটি এখনও জলমগ্ন অবস্থায় রয়েছে। বিশ্বকর্মা পুজোর আগে ওই ওয়ার্ড দুটি জলমগ্ন হয়। একই পরিস্থিতি পুরসভার কার্যালয় সংলগ্ন শহরের প্রাণকেন্দ্র সিটি সেন্টার ও ১৫ নম্বর ওয়ার্ডে। অভিযোগ, এই ওয়ার্ডগুলিতে নিকাশিনালার একাংশ দখল হয়ে যাওয়ায় জল বেরনোর পথ আটকেই ডুবছে রাস্তাঘাট, ঘরবাড়ি। নাকের ডগায় সমস্যা হলেও পুর কর্তৃপক্ষের কোনও হেলদোল নেই বলে ক্ষুদ্ধ বাসিন্দারা। এদিকে, বর্ষায় হলদিয়ার রাস্তাঘাট বেহাল হয়ে পড়ায় উদ্বিগ্ন বিভিন্ন শিল্পসংস্থা, পুর প্রশাসন ও হলদিয়া উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (এইচডিএ)। হলদিয়ার দুর্গাচক এলাকায় ইন্ডাস্ট্রিয়াল রোডগুলি কার্যত মেঠো পথে পরিণত হয়েছে বলে অভিযোগ শিল্পসংস্থাগুলির। গত দু’মাসে সংস্থাগুলি পুরসভা, এইচডিএ ও জেলাপ্রশাসনকে একাধিক চিঠি দিয়ে ক্ষোভের কথা জানিয়েছে। তাঁরা বলেন, গত দু’সপ্তাহের একটানা বৃষ্টিতে ওই রাস্তাগুলি কার্যত উধাও হয়ে গিয়েছে। কারখানা থেকে পণ্য বেরতে বা ঢুকতে গিয়ে দুর্ঘটনা ঘটছে। লোড গাড়ি খারাপ হয়ে গিয়ে যানজট হচ্ছে। দুর্গাচকের হনুমান মন্দির থেকে ইন্দোরামা হয়ে নদীপাড় দিয়ে একেবারে মিৎস্যুবিশি পর্যন্ত এবং বালার মোড় থেকে হলদিয়া এনার্জি পর্যন্ত দুটি রোড খুবই খারাপ অবস্থায় রয়েছে। এইচডিএর চিফ এগজিকিউটিভ অফিসার হরিশঙ্কর পানিক্কর বলেন, ওই রাস্তায় পেভার ব্লক বসিয়ে ভাড়িগাড়ি পরিবহণের জন্য শক্তিশালী করা হবে। এজন্য ৫ কোটি টাকার এস্টিমেট প্ল্যান রাজ্যের কাছে পাঠানো হয়েছে।
No comments