Page Nav

HIDE

Grid Style

GRID_STYLE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

যন্ত্রশিল্পী বিশ্বকর্মার পুজো হয় ভাদ্র সংক্রান্তির দিনে-তমাল দাশগুপ্ত

যন্ত্রশিল্পী বিশ্বকর্মার পুজো হয় ভাদ্র সংক্রান্তির দিনে। ভারতের আদি ও অবৈদিক বস্তুবাদী যন্ত্রসভ্যতার স্মৃতি বহন করেন  নাগরিক প্রকৌশল ও শিল্পকলার দেবতা বিশ্বকর্মা। আবার তিনি বিশেষভাবে বাঙালিরই দেবতা, বাঙালিরই উপাস্য। বিশ্বকর্মাকে…

 







যন্ত্রশিল্পী বিশ্বকর্মার পুজো হয় ভাদ্র সংক্রান্তির দিনে। ভারতের আদি ও অবৈদিক বস্তুবাদী যন্ত্রসভ্যতার স্মৃতি বহন করেন  নাগরিক প্রকৌশল ও শিল্পকলার দেবতা বিশ্বকর্মা। আবার তিনি বিশেষভাবে বাঙালিরই দেবতা, বাঙালিরই উপাস্য। বিশ্বকর্মাকে বঙ্গদেশের স্রষ্টা আখ্যা দিয়ে অবন ঠাকুর তাঁর বুড়ো আংলায় বড় সুন্দর একটি কাহিনী লিখে গেছিলেন। বাঙালি যেভাবে উৎসাহ নিয়ে বিশ্বকর্মা পুজো করে, সেটা সারা ভারতে দৃষ্টান্তমূলক, ভারতের রাজধানী দিল্লিতে একযুগ থাকার সুবাদে জানি যে বাঙালির বিশ্বকর্মা পুজোর তুলনায় উত্তর ভারতের বিশ্বকর্মা পুজো ফ্যাকাশে লাগে, সেটা অবশ্য এদের বিশ্বকর্মার সাদা দাড়ির জন্য বলছি না। কিন্তু বিশ্বকর্মা পুজো বাঙালির একটা জাতীয় উৎসব, উত্তর ভারতে সেটা নিতান্তই প্রান্তিক একটা বিষয়।  বাঙালিই বিশ্বকর্মাপুজোর দিন ঘুড়ি ওড়ায়, উত্তর ভারতে সেটা হয় না। বিশ্বকর্মা প্রাচীন ভারতে “দিব্যবিমান”-নির্মাতা ছিলেন বলা হয়েছে, সেটাই কি আমাদের জাতীয় অবচেতনে ঘুড়ির সঙ্গে সংলগ্ন হয়ে বাঙালির বিশ্বকর্মা পুজোর দিন ঘুড়ি ওড়ানোর প্রথার জন্ম দিয়েছে?      


একটি সুপ্রাচীন তাম্রাশ্ম নগরসভ্যতা এই উপমহাদেশে গড়ে উঠেছিল তথাকথিত প্রাগৈতিহাসিক যুগেঃ হরপ্পা সভ্যতা, যার সঙ্গে বাঙালির উৎস জড়িত আছে বলে অতুল সুর মনে করেছিলেন তাঁর অনেক লেখায়, এবং আমিও বিভিন্ন সময় সেটা নিয়ে লেখালেখি করেছি। এছাড়া ভারতীয় শিল্প, ভাস্কর্য ও স্থাপত্য অবৈদিক হরপ্পা সভ্যতার উত্তরাধিকার বহন করে, অতুল সুর মনে করেছেন। হরপ্পা সভ্যতার ক্র্যাফট অর্থাৎ তার চারুশিল্প, শিল্পকলা, প্রযুক্তি, নির্মাণবিদ্যা প্রভৃতি বিভিন্ন আঙ্গিকের সঙ্গে বিশ্বকর্মার সম্পর্কবিচার করা প্রয়োজন, সেই সঙ্গে  অন্তিম হরপ্পা সভ্যতার সমসাময়িক পাণ্ডু রাজার ঢিবি থেকে চন্দ্রকেতুগড়ের গঙ্গারিডাই সভ্যতা থেকে শশাঙ্ক-পাল-সেনযুগ হয়ে মধ্যযুগের শেষ প্রান্তে পৃথিবীর তাঁতঘর গৌড়বাংলায় সুতানুটি-কলকাতা-গোবিন্দপুরের নগর সভ্যতার কোনও ধারাবাহিক সংযোগ আছে কিনা, সেটা খোঁজার প্রয়াস করব।


আজ বিশ্বকর্মা পুজোর পুণ্যতিথিতে এই ভাদ্র সংক্রান্তির দিনে প্রাগৈতিহাসিক যুগের হরপ্পা সভ্যতা থেকে প্রাগাধুনিক যুগের সুতানুটি পর্যন্ত বাঙালির প্রযুক্তি-শিল্পকর্ম-চারুকলার ইতিহাস নির্মাণে ব্রতী হয়েছি। পূর্ণাঙ্গ ইতিহাস লেখা এই প্রবন্ধের আওতার বাইরে, আমরা কেবল একটি রূপরেখা নির্মাণ করব।


যন্ত্রশিল্পী বিশ্বকর্মার হাতে তক্ষণযন্ত্র ছাড়াও দাঁড়িপাল্লা থাকে, তাই শুধু ক্র্যাফট (কারুশিল্প/চারুশিল্প) নয়, তিনি কমার্স বা বাণিজ্যরও প্রতিনিধি। তাঁর হাতে থাকা ছেনি হাতুড়ি প্রতীকী, তিনি সমস্ত ফলিত প্রযুক্তির প্রতিনিধি। তাঁর নামের প্রথমে বিশ্ব আছে, সম্ভবত তিনি উপমহাদেশে তাম্রাশ্ম যুগে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের উত্থানের প্রতি ইঙ্গিত করেন।


হরপ্পা সভ্যতার উন্মেষের ক্ষেত্রে কারিগরি শিল্পের একটা ভূমিকা ছিল। হরপ্পা সভ্যতার আন্তর্জাতিক বাণিজ্য, সাধারণভাবে ব্রোঞ্জ যুগের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য কিন্তু নানাবিধ চারুশিল্পের কাঁচামাল এবং পরিণত পণ্য আদান প্রদানের ফলেই শুরু হয়েছিল, এই মতটি ইতিহাসবিদ মহলে সবথেকে বেশি মান্য হয়। যেমন লাপিস লাজুলির ভূমিকার ওপরে জোর দিয়েছেন শিরিন রত্নাগর তাঁর “আন্তর্জাতিক প্রেক্ষিতে হরপ্পা বাণিজ্য” প্রবন্ধে (১২১)। সুমেরীয়দের মধ্যে এই লাপিস লাজুলি অত্যন্ত কাঙ্ক্ষিত ছিল, তাদের মহাকাব্য, তাদের মন্দির এই নীলবর্ণ পাথরটিকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হয়েছে। ফলে হরপ্পা থেকে বৈদেশিক বাণিজ্যে এটি মেসোপটেমিয়ায় রফতানি হত।


ত্বষ্টা একজন অবৈদিক, অসুরভাষী দেবতা ছিলেন, যিনি সম্ভবত বিশ্বকর্মার আদি রূপ। যদিও ত্বষ্টাকেই পরবর্তী পুরাণে বিশ্বকর্মার থেকে উৎপন্ন বলা হয়েছে। বাঙালির বিশ্বকর্মার চরিত্র যে ভিন্ন, উত্তর ভারতের বিশ্বকর্মার থেকে, এর একটা কারণ কি এই হতে পারে যে বাঙালি হয়ত ত্বষ্টা-বিশ্বকর্মা দ্বিত্ব ভুলে যায় নি?


ত্বষ্টা ছিলেন বৃত্রাসুরের পিতা। সুরাসুর দ্বন্দ্বে তাঁর নাম এসেছে, পুরাণ অনুযায়ী সেখানে অবশ্য তিনি দেবতাদের পক্ষে। কিন্তু বৃত্রাসুরের কাহিনীটি ইন্দ্র অর্থাৎ বৈদিক আর্যের সঙ্গে অবৈদিক অসুরভাষী সভ্যতার সঙ্ঘাতের ইঙ্গিত দেয়। প্রসঙ্গত স্কন্দপুরাণে বিশ্বকর্মাকেই বলা হয়েছে বৃত্রাসুরের পিতা।


 


"সিন্ধু থেকে সুতানুটি: বাঙালির জাতীয় শিল্পকর্মের ইতিহাসের একটা রূপরেখা", সপ্তডিঙা ষষ্ঠ বর্ষ দ্বিতীয় সংখ্যা ১৪২৭। সম্পূর্ণ প্রবন্ধের লিংক কমেন্টে।


ইন্টারনেট থেকে নেওয়া এই ছবিতে দেখছেন বাংলার ডোকরা শিল্পীর তৈরি বিশ্বকর্মা।

No comments