একদিনের বৃষ্টি এভাবে শহরের জনজীবনে বিভীষিকা নামিয়ে আনবে স্বপ্নেও কখনও ভাবেনি হলদিয়া। বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বললেই এরকম শ'য়ে শ'য়ে কষ্ট ও দুর্ভোগের ছবি সামনে আসে। তার দু'একটি খণ্ডচিত্রেই শহরের দুর্বিসহ অবস্থার ছবি স্পষ্ট…
একদিনের বৃষ্টি এভাবে শহরের জনজীবনে বিভীষিকা নামিয়ে আনবে স্বপ্নেও কখনও ভাবেনি হলদিয়া। বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বললেই এরকম শ'য়ে শ'য়ে কষ্ট ও দুর্ভোগের ছবি সামনে আসে। তার দু'একটি খণ্ডচিত্রেই শহরের দুর্বিসহ অবস্থার ছবি স্পষ্ট হয়।
আবহদপ্তর জানিয়েছে, গত ২৮জুলাই সন্ধে ৬টা থেকে রাত সাড়ে ৯টা পর্যন্ত সাড়ে তিন ঘণ্টায় প্রায় ১৯৫মিলিমিটার বৃষ্টি হয়। ওইদিন জেলার মধ্যে সর্বোচ্চ বৃষ্টি হয় হলদিয়াতেই। শিল্পশহরের উপর কার্যত আকাশ ভেঙে পড়ে। পরদিন দিনভর আরও ১০০মিলিনিটার। সবমিলিয়ে দু'দিনে ৩০০মিলিমিটার বৃষ্টির ফলে জলবন্দি হয়ে পড়ে হলদিয়া। মূলত, টাউনশিপ ও সংলগ্ন এলাকায় ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি। বন্যা পরিস্থিতি বললেও ভুল বলা হবে না। শহরের প্রবীণ বাসিন্দরা তাঁদের পঞ্চাশ বছরের অভিজ্ঞতায় এমন ঘটনার কখনও মুখোমুখি হননি। তিনদিক নদী ঘেরা হলেও মোহনার কাছে হওয়ায় কখনও এমনভাবে শহর প্লাবিত হয়নি। মে থেকে জুলাইয়ের মধ্যে তিনমাসের মধ্যে দু'বার প্লাবিত হল হলদিয়া। একবার যশের ভয়াবহ জলোচ্ছ্বাসে এবং দ্বিতীয়বার অতিবৃষ্টির জমা জলে। জমা জলে হলদিয়ার মত পরিকল্পিত শহর প্লাবিত হওয়ার ঘটনাকে বাসিন্দারা 'ম্যানমেড' আখ্যা দিচ্ছেন। এই পরিস্থিতির জন্য কে বা কারা দায়ী সেই চাপানউতোর শুরু হয়েছে পুরসভা, হলদিয়া উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, বন্দরের মধ্যে। হলদিয়া শিল্পাঞ্চলের নিকাশির মাস্টারপ্ল্যান তৈরি নিয়েও উঠছে প্রশ্ন। কিন্তু বাম আমলে তৈরি আইআইটির মাস্টারপ্ল্যান গত ১০বছরে কেন কার্যকরী হয়নি তা নিয়ে টুঁ শব্দ করেনি তৃণমূল পরিচালিত পুরসভা বা রাজ্য সরকার।
প্রাক্তন সাংসদ ও হলদিয়া উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান লক্ষ্মণ শেঠ জানান, ২০০০-০৯সাল নাগাদ তাঁর উদ্যোগে হলদিয়া শিল্পশহরের নিকাশি ও পয়ঃপ্রণালির মাস্টারপ্ল্যান তৈরি হয়েছিল। খড়্গপুর আইআইটি ৬০০কোটি টাকার প্ল্যান তৈরি করেছিল। ২০০৯সাল নাগাদ সেই প্ল্যান জমা দেওয়া হয় তৎকালীন পুর ও নগরোন্নয়ন দপ্তরে। তাঁর আক্ষেপ সেই পরিকল্পনা ধাপে ধাপে কার্যকরী হলে আজকে হলদিয়াকে এই দুর্ভোগে পড়তে হত না।
রাজ্যে পালাবদলের পর হলদিয়ার নিকাশি সমস্যা নিয়ে গত ১০বছরে কোনও কার্যকরী পদক্ষেপই নেয়নি পুরসভা বা এইচডিএ। অভিযোগ, মাস্টারপ্ল্যানকে ঠাণ্ডা ঘরে পাঠিয়ে পরিকল্পনাহীন কাজ করেছে পুরসভা বা এইচডিএ। ঠিকাদারকে কাজ পাইয়ে দিতে গ্রীনবেল্ট ক্যানেল খনন বা কয়েকটি খাল খননের কোটি কোটি টাকার টেণ্ডার হয়েছে। এবার হলদিয়া জলবন্দি হওয়ার পর সেই ক্যানেলগুলিতে খননের কাজ কতটা হয়েছে তা নিয়েই প্রশ্ন উঠেছে। কার্যত মানুষের ট্যাক্সের কোটি কোটি টাকা জলেই গেছে। মাস্টারপ্ল্যান ছিল কি না তা জানেই না পুরসভা। এদিকে, হলদিয়া উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সিইও হরিশঙ্কর পানিক্কর জানান, আইআইটির সেই মাস্টারপ্ল্যান নতুন করে রিভাইজ করতে হবে। এর খরচ অনেকটাই বেড়ে গিয়েছে। এখানে পয়ঃপ্রনালীর জন্য টাউনশিপ ও দুর্গাচক এলাকায় দুটি স্যুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট ও আন্ডারগ্রাউন্ড ড্রেনেজের উল্লেখ রয়েছে। এছাড়া স্টর্ম ওয়াটার অর্থাৎ জোয়ারভাটার জল বা অতি বৃষ্টির জল নিকাশির জন্য বড় ক্যানেলগুলিকে খনন করে আধুনিক স্লুইসগেট বসানোর পরামর্শ দিয়েছিল।
No comments