Page Nav

HIDE

Grid Style

GRID_STYLE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

" নীলকুরিঞ্জী,এক আশ্চর্য ফুল" ---সমীর ব্যানার্জী

সত্যি  বলছি গতকাল আমার মেয়ের কাছ থেকেই আমি  জীবনে প্রথম জানলাম ভারতের তথা বিশ্বের এই বিস্ময়কর ফুল--কর্ণাটক কেরালার  নীলকুরিঞ্জী ফুলের কথা ! মনে আছে মেয়ের দৌলতেই এক ফেব্রুয়ারী-মার্চে দেখেছিলাম   ব্যাঙ্গালোরের রাজপথকে গোলাপী ফুলের …

 






সত্যি  বলছি গতকাল আমার মেয়ের কাছ থেকেই আমি  জীবনে প্রথম জানলাম ভারতের তথা বিশ্বের এই বিস্ময়কর ফুল--কর্ণাটক কেরালার  নীলকুরিঞ্জী ফুলের কথা ! মনে আছে মেয়ের দৌলতেই এক ফেব্রুয়ারী-মার্চে দেখেছিলাম   ব্যাঙ্গালোরের রাজপথকে গোলাপী ফুলের বন্যায় ভাসিয়ে দেওয়া  বিউটি  অফ ব্যাঙ্গালোর তথা "পিংক পোউই"কে ! 

ওকে আমার আশীর্বাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়ে আজ আবার এই  বিস্ময়কর ফুল নীল-কুরিঞ্জীর  সম্বন্ধে যেটুকু জানলাম সেটুকু আপনাদের  সাথে শেয়ার  করার  ইচ্ছে হচ্ছে! 

 এক এক সময়ে ভাবি, সত্যি  প্রকৃতির কাছে মানুষের জানারও শেষ নেই আর তাকে দেখে শুনে বারবার  অবাক হবারও শেষ নেই! অবশ্য  যদি জানার  আগ্রহ ও কৌতুহল থাকে !  যাই হোক এখন কর্ণাটক বা কেরলের নীল কুরিঞ্জীর কাছে পৌঁছাতে  আমি  রুপসী বাংলার হৃদয়ের  কবি জীবনানন্দ দাশকে স্মরণ করেই  শুরু করবো  ! 


 যে জীবনানন্দ দাশ তাঁর "রুপসী বাংলার" রুপ দেখে  লিখেছিলেন--

"বাংলার মুখ আমি দেখিয়াছি, 

তাই আমি পৃথিবীর রূপ  

 খুঁজিতে যাই না আর--"


সেই জীবনানন্দই তাঁর প্রিয়তমা সুন্দরী 'নাটোরের বনলতা সেনের' রুপের উপমা খুঁজতে  ছুটে গেলেন বাংলা ছেড়ে 

 " অন্ধকার বিদিশার নিশা"তে, আর পৃথিবীর রুপে আকৃষ্ট  হয়ে পৃথিবীর পথে  পথও হাঁটলেন হাজার বছর ধরে,  সিংহল সমুদ্র থেকে মালয় সাগরে ,তারপর  বিম্বিসার অশোকের ধূসর জগতে, সব  ঘুরে শেষে আবার ফিরে  এলেন দুদন্ড শান্তি পেতে বাংলায় তাঁর প্রিয়তমা  বনলতা সেনের কাছে ! তাঁর ভাষায় সে কথাই তিনি লিখলেন --


"হাজার বছর ধরে আমি পথ হাঁটিতেছি পৃথিবীর পথে,  

 সিংহল সমুদ্র থেকে আরো দূর অন্ধকারে মালয় সাগরে  

 অনেক ঘুরেছি আমি; বিম্বিসার অশোকের ধূসর জগতে  

 সেখানে ছিলাম আমি; আরো দূর অন্ধকার বিদর্ভ নগরে;  

 আমি ক্লান্ত প্রাণ এক, চারিদিকে জীবনের সমুদ্র সফেন,  

 আমারে দুদণ্ড শান্তি দিয়েছিল নাটোরের বনলতা সেন। 

 ( "বনলতা সেন"--জীবনানন্দ দাশ )


 সুতরাং আমার মনে হয় যা সুন্দর তাকে বরণ করতে হয় সুন্দরকে দিয়েই ! দেশ কালের সীমারেখার মধ্যে তাকে সীমাবদ্ধ করা সঙ্গত নয় সম্ভবও নয় ! আমরা আমাদের মাকে ভালবেসেই দেশমাতৃকা বা ধরিত্রী মাতাকে ভালবাসতে শিখি!

সুতরাং  আমিও  আমার রুপসী বাংলার রুপে মুগ্ধ  ও গর্বিত হলেও  যে কোনো ফেব্রুয়ারী  মার্চে  হাঁটতেই পারি ব্যাঙ্গালোরে পথে পথে  ব্যাঙ্গালোরের রানী সুন্দরী "পিংক পোউই" এর রুপের মাধুর্যে  মুগ্ধ  হতে ! 

 অথবা সে বছরেই  ঘুরতে যেতেই  পারি  অগাস্ট থেকে অক্টোবরে পশ্চিমঘাট পর্বতমালার পাহাড়ে পাহাড়ে কর্ণাটক কেরালা  বা তামিলনাড়ুর  বিস্ময়কর  ফুল নীলকুরিঞ্জীর ঐশ্বরিক সৌন্দর্য সুধা পান করতে !  একবার  না পারলে আবার বারো বছর পরে এই সুযোগ ফিরে আসবে ! কারণ ভারতের গর্ব ও  অতিব বিস্ময়কর এই "নীল কুরিঞ্জী" ফুল প্রতি  বার বছর অন্তর আগস্ট থেকে অক্টোবরে পর্যন্ত ফুটে  নীলের বন্যায় ভাসিয়ে দেবে কেরল কর্ণাটক ও সংলগ্ন তামিলনাড়ুর বিস্তীর্ণ  এলাকা !  

 

এই নীল কুরিঞ্জীর  বৈজ্ঞানিক নাম 

--" স্ট্রবিল্যান্থাস কুন্থিয়ানা "

সত্যিই  এই ফুল যেন  প্রকৃতির তরফ থেকে ভারতমাতাকে দেওয়া এক অসাধারণ উপহার ! আর বিস্ময়কর ব্যাপার হলো এই ফুলের মধ্যেই  যেন বসে আছেন  কোনো এক অদৃশ্য  বিজ্ঞানী যিনি এই উদ্ভিদের  ভিতরে থাকা কোনো এক সুক্ষ ঘড়ির সাহায্য  সময়  গননা করে প্রতি বারো বছর অন্তর এই ফুলগুলির প্রস্ফুটন নিয়ন্ত্রণ করেন এক আশ্চর্য  শৃঙ্খলায় ! হ্যাঁ এই বেগুনি-নীল রঙের  নীলকুরিঞ্জী ফুল কর্ণাটক  কেরালার পাহাড় ও উপত্যকা  ভাসিয়েছিল ঠিক বারো বছর পরপর  ২০০৬ সালে আর ২০১৮ সালে !   এই ধরণের বহু সময় অন্তর ফুল ফোটার ব্যাপারটা  কিছুটা আমাদের চেনা জানা বাঁশগাছের  ফুলের ক্ষেত্রেও  ঘটে বটে !  তবে সে ক্ষেত্রে এই রকম   সুনির্দিষ্ট  সময় ব্যবধান  নেই ! এ ব্যাপারটি বোধ হয়  পাঠকদের  মধ্যে অনেকেই জানেন ! 


সুতরাং আপনি ২০১৮এর  বারো বছর পরে   ২০৩০ সালের  অগাস্ট থেকে অক্টোবরে কর্ণাটকের মন্ডলাপাট্টি পাহাড়ে গেলে পাহাড় ভাসানো  এই নীল-বেগুনি ফুলের সৌন্দর্যে বিমুগ্ধ হবেনই  ! অথবা আর একটু দক্ষিন  দিকে  "ভগবানের নিজের দেশ" কেরলের মুন্নার জেলার এরাভিকুলাম পাহাড়ের নীচে গিয়ে  দাঁড়ালে আপনি এই বিস্ময়কর ফুলের সৌন্দর্য ও মাধুর্যে  নিজেকে হারিয়ে  ফেলবেন এ নিয়ে কোনো  সন্দেহই  নেই ! 

জানি  প্রকৃতি প্রেমিক বহু দেশী বিদেশী, মানুষ  এই ফুল ফোটার  সময়ে  কর্ণাটক ও কেরালাতে ছুটে আসবেন  ! তাঁরা  ছুটে আসবেন ভারতের  পশ্চিমঘাট  পর্বতমালার বুকে  সুদীর্ঘ  বারো বছর অন্তর  ফুটে ওঠা এই অবাক করা ফুলের সৌন্দর্যের  নীলসাগরে  ভেসে যেতে, আসবেন এই নীল মাধুর্যে  অবাক বিস্ময়ে  হারিয়ে যেতে ! বিশ্বজুড়ে প্রায় ২৫০টি প্রজাতি রয়েছে এই নীল কুরিঞ্জীর !  তার মধ্যে ভারতেই পাওয়া যায়  ৩৮ রকমের প্রজাতি ! শোনা যায় এই সময়ে  কেরল ও কর্ণাটকে মধুর দাম  প্রচন্ড বেড়ে যায় কারণ সবাই এই ফুলের মধু সংগ্রহের চেষ্টা করে কারণ নীল কুরিঞ্জীর ফুলের মধুও স্বাদে গন্ধে অতুলনীয়! শোনা যায়  তামিলনাড়ুর  আদিবাসীরা এই ফুলের সাহায্যে তাদের বয়সের হিসাব রাখে !


উদ্ভিদ বিদ্যায় নীল কুরিঞ্জীর  এই দীর্ঘ সময়ের ব্যবধানে  ফুলফোটার  বিশেষ প্রাকৃতিক  কৌশলের নাম "সারভাইভাল মেকানিজম" অর্থাৎ  টিকে থাকার কৌশল ! এই ফুলটির  পরাগমিলনের জন্য  এই দীর্ঘ সময় কাল প্রয়োজন ! এই কৌশলেই এই গাছ  নাকি প্রকৃতির বুকে দীর্ঘ কাল টিকে থাকার চেষ্টা করে  পরিবেশগত সমস্ত প্রতিকূলতা এড়িয়ে  ! উদ্ভিদ বিজ্ঞানীরা গবেষণা করে দেখেছেন গুল্ম জাতীয়  এই গাছটির অভ্যন্তরে আছে একটি বায়োলজিক্যাল ক্যালেনডার যা দিন রাত মাস বছর এবং ঋতু  হিসাব করে এই নির্দিষ্ট সময়  অর্থাৎ  বারো বছর অন্তর তাকে নির্দেশ  দেয় ফুল ফুটিয়ে সৌন্দর্যের বন্যায়  পশ্চিমঘাট পর্বতমালার সবুজ আস্তরনকে নীলচে বেগুনী চাদরে ঢেকে দিতে !  তখন  এই অগাস্ট  থেকে অক্টোবরে  অবধি কর্ণাটক  কেরালার এই অঞ্চল হয়ে ওঠে নীল আকাশের নীচে এক নীলবেগুনি ফুলে ঢাকা  দক্ষিণ  ভারতের আর এক নন্দন কানন !  


(ছবি ও ফুলের বিষয়ে তথ্যের জন্য নেটের  প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই)

No comments