Page Nav

HIDE

Grid Style

GRID_STYLE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

" খামালু"--সমীর ব্যানার্জী

আমাদের দেশের বাড়িতে  বাগানের ধারে ধারে একটা লতানে গাছ হতো যেটা অন্য কোনো বড় গাছ ধরে লতিয়ে ওপরে উঠতো আর তার লতার পর্বে পর্বে অনেক গোলাকৃতি আলুর মতো ফল ঝুলতো ! আমরা গ্রামের  চলতি ভাষায় একে শুয়োরে আলু বলতাম !  কারন এই গাছের মাটির তল…

 





আমাদের দেশের বাড়িতে  বাগানের ধারে ধারে একটা লতানে গাছ হতো যেটা অন্য কোনো বড় গাছ ধরে লতিয়ে ওপরে উঠতো আর তার লতার পর্বে পর্বে অনেক গোলাকৃতি আলুর মতো ফল ঝুলতো ! আমরা গ্রামের  চলতি ভাষায় একে শুয়োরে আলু বলতাম !  কারন এই গাছের মাটির তলার যে কন্দ  হয় তা নাকি শুয়োরের প্রিয় খাদ্য ! শুয়োরের পছন্দ  কি না জানি না তবে যেদিন কোমর অবধি গর্ত খুঁড়ে এই গাছের বিরাট কন্দ যখন মাটির ওপরে আনা হলো তখন তাকে দেখে তাক লেগে গেছিল !  মোটা মোটা শাখা সহ এই কন্দটির নাম জানলাম  হরিণপালা মাটির আলু ! আর তা যখন মাংসের মতো টুকরো করে নানা মশলা সহকারে রান্না করা হলো  ভাতের সাথে  তা এক দুর্দান্ত  উপাদেয়  তরকারি  বলেই মনে হলো ! তবে গাছের বা লতায় ঝুলে থাকা বুলবিল বা তথাকথিত  ঐ শুয়োরে আলু খেয়ে দেখিনি !

 পরবর্তীকালে বই আর এখন নেট ঘেঁটে যা জানলাম ত হলো এর বেশী পরিচিত নামটা হল খামালু  বা মাটির আলু !  এই আলু খাঁটি ভারতীয়  আলু বলে বলে মনে করা  হয় ! তবে বিদেশী গোল আলুর সাথে এর চেহারা বা গাছের কোনো মিল নেই !  এর বৈজ্ঞানিক  নামটাও সম্পূর্ণ  আলাদা  :--

"ডাইওসকোরিয়া এলাটা !"



আরো কিছু নামে এই খামালু  এপার বাংলা ওপার বাংলাতে পরিচিত !

মেটে আলু, পেস্তা আলু, চুপরি আলু, মাচা আলু, গজ আলু, মোম আলু, মাইট্টা আলু, মাছ আলু, প্যাচড়া আলু !


সুতরাং মাটি আলু বা খামালু  হল অনেক দীর্ঘ লতানো গাছের নীচে হওয়া আলু। মূলত এই আলু গাছগুলি কোন না কোন গাছকে অবলম্বন করে উঁচুতে উঠে থাকে এবং মাটির নিচে সুবৃহৎ  কন্দ হয় । আবার অনেক গাছে  ছোট বড় আলুর মতো ফলও হয়ে থাকে যে ফল  বা বুলবিলগুলো খাবার যোগ্য !  গরীব আদিবাসী  সমাজে  এই আলু সিদ্ধ করে বা পুড়িয়ে  খাওয়ার  ব্যাপক চল আছে ! এটা আমি নিজে দেখেছি !  

শোনা যায় ব্রিটিশ আমলে  অবিভক্ত বাংলায়  ১১৭৬ সনের  বা ইংরেজির ১৭৭০ সালের  মন্বন্তর যা  "ছিয়াত্তরের মন্বন্তর "  নামে কুখ্যাত সেই  সময় মাটির নীচের  এই  জংলি কন্দ এবং মাটির ওপরে তার ফল বা বুলবিল অনেক মানুষকে বাঁচাতে  সক্ষম  হয়েছিলো ! 

বর্তমানের জঙ্গল শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এই সমস্ত আলু বা কন্দ প্রায় শেষের মুখে! শোনা যায় বাংলাদেশের কোনো কোনো জেলাতে বর্তমানে   এই খামালুর বাণিজ্যিকভাবে চাষ করা হচ্ছে। আমাদের এপার বাংলার খবর সঠিক জানি না ,তবে বাজারে  শীতকালে মাঝেসাঝে এর একটু আধটু  দেখা পাই ! তবে সব গৃহিনীরা এই খামালু রান্না করতে জানেন না বলেই জানি ! 


রামকন্দ:--

এই  জংলি খামালুর  আগের কালে  কন্দ জাতীয়  খাদ্যের  উপযোগী যে ভারতীয় সব্জির সন্ধান  পাওয়া  যায়  তা হলো "রাম কন্দ"  ! রামচন্দ্র  নাকি বনবাসকালে এই কন্দ খেতেন তাই এই নাম ! আমি এই কন্দ গুজরাটের জামনগরে রাস্তার ধারে বিক্রি হতে দেখেছি তবে খেয়ে দেখিনি ! শুনেছি সাংঘাতিক রকমের বলকারক ও পুষ্টিগুন সমৃদ্ধ! 


গোল আলু :---


"কত নামে কত জনে

 ডাকে আলু গো তোমায়, 

তুমি ধনী গরীব সবার পাতে,

আছ ভাত কিম্বা রুটির সাথে, 

নিজ গুনে তুমি করেছো বিশ্বজয় !"


আলুর কথা বলতে প্রথমেই যে আলুর নাম মনে সবার  পড়ে তা হলো আমাদের  বিশ্বব্যাপী  পরিচিত সাধারণ আলু  বা গোল আলু। সারা জগতে ধান ও গমের পরেই প্রাথমিক খাদ্য হিসাবে এই আলুর স্বীকৃতি! পৃথিবীর  প্রায়  সব দেশেই কিছু  না কিছু পরিমানে এই আলু উৎপন্ন হয়!

 

এই গোল আলুর  ইংরেজী নাম পটাটো আর বৈজ্ঞানিক নাম:--   সোলানাম  টিউবারোসাম ! 

গবেষকরা  জানিয়েছেন এর আদি নিবাস দক্ষিণ আমেরিকাতে! সেখান থেকে  পর্তুগিজদের  হাত ধরে এই পটাটো  বিশ্বব্যাপী  ছড়িয়ে পড়ে !এখন তো আধুনিক গবেষণারফলে এর হাজার পাঁচেক ভ্যারাইটি উৎপন্ন  হয় বিশ্বজুড়ে! আমাদের এপার বাংলাতে   জ্যোতি  কুফরী আর চন্দ্রমুখী বাজারে খুব চলে ওপার বাংলায় চলে আউশা, চল্লিশা, দোহাজারী লাল, হাসরাই, লাল পাকরী, লালশীল, পাটনাই,  ও সূর্যমূখী। যাক এপারে চন্দ্রমুখী  আর ওপারে সূর্যমুখী  ! 


ধারণা করা হয় যে সতেরো শতকের গোড়ার দিকে পর্তুগিজ নাবিকরা ভারতে প্রথম আলু নিয়ে আসে। ১৮৪৭ সালে ইংল্যান্ড থেকে প্রকাশিত  গার্ডেনিং ম্যাগাজিনের একটি সংখ্যায় ভারতে আলু চাষ সম্পর্কে প্রথম রেকর্ড দেখা যায়।

ওয়ারেন হেস্টিংস গভর্নর থাকাকালীন সময়ে (১৭৭২-১৭৮৫), তাঁর উদ্যোগে আলুর চাষ বোম্বেসহ অনেক প্রদেশে বিস্তার লাভ করে।

আলুর মতো আর কোনো সবজি এত বিভিন্ন  রুপে  বিভিন্ন  পদে রান্না করে খাওয়া  সম্ভব নয় ! সেই হিসাবে একম অদ্বিতীয়ম আমাদের  গোল আলু !


রাঙা আলু :--

এবার আসি রাঙাআলুতে ! সমস্ত  আলুই কন্দ গোত্রের অর্থাৎ মাটির নীচে হয় ! এটা একটা লতানে বীরুৎ! 

রাঙা আলুর বৈজ্ঞানিক  নাম "ইপোমিয়া বাটাটাস ! আকারে একটু লম্বাটে চার-ছইঞ্চি  লম্বা এবং বেলনাকার ! রঙটা লালচে কখনও  কখনও  মেটে রঙেরও হয় !  


তবে স্বাস্থের  পক্ষে প্রচন্ড উপকারী এই রাঙা আলু  বা মিষ্টি  আলু ! শরীরের কলকব্জা  গুলি ঠিকঠাক চালাতে যে সব পুষ্টিকর উপাদানগুলির প্রতিদিন প্রয়োজন পরে তার অধিকাংশই মজুত রয়েছে রাঙা আলুতে। যেমন ধরুন-ফাইবার, ভিটামিন সি, এ, ই, কে, ম্যাঙ্গানিজ, ক্যালসিয়াম, আয়রন এবং আরও কত কি! আর সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল এই সবকটি উপাদানই নানাভাবে শরীরের গঠনে এবং বিবিধ রোগকে দূরে রাখতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। রাঙাআলুর চাষ এখন প্রায়  সব জেলাতেই হয় ! এই আলু অবশ্য কাঁচা ও খাওয়া  যায়  সেলাডের সাথে ! 

আলু নিয়ে আমার   আপাতত আর কিছু বলার নেই -- তবে নেটের মাধ্যমে  এর সম্বন্ধে আরও অনেক কিছু জানা সম্ভব!

No comments