Page Nav

HIDE

Grid Style

GRID_STYLE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

শালগ্রাম শিলার উৎপত্তি কোথা থেকে?

শালগ্রাম শিলাঃসাধারণ ভাবে প্রকৃত শালগ্রাম শিলা খুব সহজে পাওয়াই যায় না, তায় বাজারে কিনতে !!কারণ?শালগ্রাম শিলার উৎপত্তি কোথা থেকে?প্রথমেই এটা জেনে রাখা প্রয়োজন যে, সারা পৃথিবীতে একমাত্র নেপালের পশ্চিমে, হিমালয় পর্বতের ১২৫০০ ফুট ওপর…

 





শালগ্রাম শিলাঃ

সাধারণ ভাবে প্রকৃত শালগ্রাম শিলা খুব সহজে পাওয়াই যায় না, তায় বাজারে কিনতে !!

কারণ?

শালগ্রাম শিলার উৎপত্তি কোথা থেকে?

প্রথমেই এটা জেনে রাখা প্রয়োজন যে, সারা পৃথিবীতে একমাত্র নেপালের পশ্চিমে, হিমালয় পর্বতের ১২৫০০ ফুট ওপরে, যেখানে যাওয়ার একমাত্র উপায় হাঁটা পথ, সেখানে গণ্ডকী বা কালী-গণ্ডকী নামক নদীতেই একমাত্র প্রকৃত শালগ্রাম শিলা পাওয়া যায়, সেই জায়গাই হল নারায়ণের মুক্তি-তীর্থ-ক্ষেত্র বা মুক্তিনাথ। এছাড়া আর কোনো জায়গায় শালগ্রাম পাওয়া যায় না। কোথাও না॥

শালগ্রাম শিলা কি?

আজকের হিমালয় একসময়ে ছিল সমুদ্রগর্ভে। আজ থেকে প্রায় তিন কোটি বছর আগে সেনোজয়িক কালে, ইয়োসিন যুগের শেষ ভাগে, টেথিস সমুদ্র থেকে হিমালয় আস্তে আস্তে মাথা তুলতে শুরু করে আর তা শেষ হয় প্লাইস্টোসিন উপ-যুগে যা প্রায় এক কোটি বছর আগের কথা। ফলে, এক মহা অতীত কালের সামুদ্রিক পলি এবং প্রস্তরের স্তর রূপান্তরিত হয়েছে আজকের হিমালয়ের শিলাস্তরে।

হিমালয়ের এই শিলাস্তর কে বলা হয় “স্পিতি” শেল। খুব সুক্ষ্ম দানা পলি অবক্ষেপ (সেডিমেন্টেশন) থেকে তৈরী হয়েছে বলে, বিজারক পরিবেশে সৃষ্ট এই শেল এত তৈলাক্ত ও কুঁচকুঁচে কালো। আজ থেকে আঠারো কোটি বছর আগে, জুরাসিক যুগে — যে সময়ে ডাঙ্গায় ডাইনোসরেরা রাজত্ব করছে – সেই সময়ে এই পলি অবক্ষেপ ঘটেছিলো। তার বহু বহু কোটি বছর পরে সমুদ্রগর্ভ থেকে জন্ম নিল হিমালয়। এর ফলে, আজকের হিমালয়ের চিরতুষারাবৃত স্পিতি শেল শিলাস্তরে পাওয়া যায় জুরাসিক যুগের সামুদ্রিক জীবের প্রস্তরীভূত জীবাশ্ম। কালী-গণ্ডকীর উৎপত্তিও সেই চিরতুষারাবৃত অঞ্চলেই।

তবে জলের তীব্র স্রোতে ওই শিলাস্তরের ক্রমাগত ক্ষয় হচ্ছে। ধুয়ে মুছে ভেঙে নিয়ে আসছে বলে কালীগণ্ডকীর জলের রঙ এত স্বচ্ছ অথচ কালো। তাই তার নাম কালী-গন্ডকি। আর ওই শিলাস্তরের খাঁজে লুকিয়ে থাকা জুরাসিক যুগের অজস্র প্রস্তরীভূত সামুদ্রিক জীবাশ্ম জলের স্রোতে চলে আসছে। এই অজস্র শিলাভূত জীবাশ্মর মধ্যে একমাত্র "অ্যামনোয়ডিয়া গোষ্ঠীর শিলাভূত জীবাশ্মই" হল হিন্দুদের পরম পবিত্র শালগ্রাম শিলা বা নারায়ণ শিলা।

প্যালিয়োজয়িক যুগের শুরুতে, মানে আজ থেকে প্রায় ৬০/৬৫ কোটি বছর আগে মলাস্কা অর্থাৎ শামুক জাতীয় প্রাণী পর্বের আদি প্রাণী সেফলোপডের আবির্ভাব। তারপর বিবর্তনের ধারা বেয়ে ২৩/২৫ কোটি বছর আগে এল এই অ্যামোনয়ডিয়া এবং তারই এক জ্ঞাতি ভাই অ্যামোনাইট গোষ্ঠীর এবং জুরাসিক থেকে ক্রিটেশিয়াস, মানে ৮ থেকে ১৫ কোটি বছর আগে এই অ্যামোনাইটের এত আধিক্য ছিল যে এই সময়কালকে বলা হয় অ্যামোনাইট যুগ। এই অ্যামোনাইট বিবর্তিত হয় বহু গণে। যার মধ্যে একটি হোল ‘পেরিসস্ফিংটিস ‘ এই পেরিস্ফিংটিস থেকে প্যারাবলিসোরাঁস, ভিরগাটোস্ফিংটিস আর অলাকোস্ফিংটিস,এই তিন উপগণ আর তাদের থেকে যেসব প্রজাতি জন্ম নিল, প্রধানতঃ তাদের জীবাশ্ম সম্বলিত শিলাকেই হিন্দুশাস্ত্রে পরম পবিত্র — সাক্ষাৎ নারায়ণ জ্ঞানে, শালগ্রাম শিলা রূপে পুজো করা হয়ে থাকে।

চিরতুষারাবৃত হিমালয় থেকে বয়ে আসা গণ্ডকী নদী ছাড়াও, নর্মদা তীরে এবং কচ্ছের কোন কোন জায়গায় শালগ্রাম শিলা পাওয়া যায়। কিন্তু, সেগুলি সবই ত্যাজ্য শিলা। কোনোটাই সনাতন ধর্ম মতে পূজ্য নয়।।

পুরাণে আছে, হিমালয়ের দক্ষিণে গণ্ডকীর উত্তরে দশ যোজন বিস্তৃত অঞ্চল হল – হরিক্ষেত্র। ভগবান বিষ্ণু এখানে অবস্থান করছেন শালগ্রাম শিলা রূপে। মহাভারতেও পাই এই মহাতীর্থের উল্লেখ। ভীষ্মের তীর্থ পরিক্রমার সময়ে মহর্ষি পুলস্ত্য মুনি তাঁকে গণ্ডকী ও শালগ্রাম তীর্থ দর্শনের উপদেশ দিয়েছিলেন। অথচ আশ্চর্যের কথা — অধিকাংশ হিন্দুদের কাছে এই হরিক্ষেত্র আজও যথেষ্টই অপরিচিত।

কি কান্ড? আসলে আমরা একটা শামুকের জীবাশ্ম কে নারায়ণ জ্ঞানে পূজো করি? এও কি সম্ভব? কোথায় পরম পবিত্র নিত্য প্রতিষ্ঠিত নারায়ণ আর কোথায় জীবাশ্ম (ফসিল)? এসবই মনে হয় যেন অবিশ্বাসীর বানানো গল্প।

কিন্তু তা ত নয়। আমাদের প্রাচীন শাস্ত্রকার ঋষিরা এত অর্বাচীন ছিলেন না। তাদের শিলাচর্চা বা জীবাশ্ম সম্পর্কে জ্ঞান কিছু কম ছিলনা। সেকালের শাস্ত্রীয় শিলা বিজ্ঞানীরাও জানতেন শালগ্রাম শিলা — ‘বজ্রকীট’ (এক ধরণের শামুক জাতীয় প্রাণী। শামুক (mollusca) জাতীয় প্রাণীর একটি বৈশিষ্ট হলো বহিঃ কঙ্কাল (exoskeleton)। ... আমাদের অস্থি কঙ্কাল ইত্যাদি ভিতরে থাকে (endoskeleton) আর মাংস বাইরে আর এদের ঠিক উল্টো। এদের বাইরেটা হাড়ের আবরণের জন্যে শক্ত। তাই ঋষিরা এদের বজ্রকীট বলেছেন। বজ্র কঠিন দেহ বিশিষ্ট। পুরো বিজ্ঞানটাই জানতেন ঋষিরা।) — এর দেহাবশেষের প্রস্তরীভূত রূপ — ফসিলই হলো আসলে শালগ্রাম শিলা। পুরাণে নারায়ণের উক্তি —

"অহঞ্চ শৈলরূপী চ গণ্ডকীতীর সন্নিধৌ। অধিষ্ঠানং করিষ্যামি ভারতে তব শাপতঃ।। বজ্রকীটাশ্চ কৃময়ো বজ্রদংষ্ট্রাশ্চ তত্র বৈ। মচ্ছিলাকুহরে চক্রং করিষ্যন্তি মদীয়কম।। ...গণ্ডক্যাশ্চোত্তরে তীরে গিরিরাজস্য দক্ষিণে......( ব্রহ্মপুরাণ, প্রকৃতি খণ্ড )।

শালগ্রাম শিলার গঠন কেমন?

শালগ্রাম শিলা ছোট্ট কুলের মতো থেকে গরুরগাড়ি র চাকার মতো মাপের হতে পারে। কিংতু সব শিলাই পূজ্য নয়। সাধারণত একটি আমলকির মতো মাপ থেকে, একটি বড় বেলের মতো মাপের সুন্দর সুগঠিত কৃষ্ণ বা মধুর বর্ণ শিলাই পূজ্য। শিলা যেনো ভগ্ন স্ফুটিত বা কর্কশ বা লাল উগ্র বর্ণ না হয়। সেই শিলা যেন সুন্দর ভাবে বসে, তবে সেই শিলা পূজ্য। শিলা যে সবসময় নিটোল গোল হবে এমন নয়, কারণ প্রাকৃতিক ভাবে সৃষ্ট বা গঠিত জিনিস সবসয়ম নিটোল গোল হয়ও না। ঐ যে জীবাশ্মের কথা বলা হয়েছিল, সেটাই হলো শালগ্রাম শিলার চক্র চিহ্ন। চক্র চিহ্নহীন শিলা পূজ্য নয়।

এবার প্রশ্ন ওই চক্র কি ভাবে দেখা যাবে?

চক্র শিলার গায়ে থাকতে পারে আবার ভিতরেও থাকতে পারে। যদি ভিতরে থাকে তবে শিলার গায়ে কোন ছিদ্র বা উন্মুক্ত যায়গা থাকবে যেখান দিয়ে ভিতরের চক্র অর্থাৎ বজ্র কীট বা ফসিলটি দেখা যায়। তবেই সেই শিলা পূজ্য।

চক্র এক বা একাধিক হতে পারে। চক্র সংখ্যা অনুযায়ী শিলার নাম করণ হয়। এক চক্র শিলা প্রায় উনিশ প্রকার। দ্বিচক্র শিলার প্রকার প্রায় আশি প্রকার। এরপরে আরো অনেক প্রকারের আছে। পঁচিশটির বেশি চক্র থাকলে তিঁনি বিশ্বম্ভর হিসাবে চিহ্নিত এবং পূজিত। এর উপরে আর নাম নেই। বিভিন্ন শিলার মধ্যে বঙ্গে দামোদর, শ্রীধর, বামন, নারায়ণ, লক্ষ্মী নারায়ণ, জনার্দন বা লক্ষ্মী জনার্দন, রাজ রাজেশ্বর ইত্যাদি শিলা অধিক প্রচলিত। দুঃখের বিষয় হলো শিলা চেনেন এমন মানুষ চিরকালই অত্যন্ত বিরল। তাই নামে দামোদর হলেও বা নামে জনার্দন হোলেও অনেক শিলাই আসলে শাস্ত্র লক্ষণ অনুযায়ী তা নয়।

তথ্য সংগ্রহঃ Quora থেকে।


No comments