নেতৃত্বকে অন্ধকারে রেখে হলদিয়ার বিভিন্ন কারখানায় অস্থায়ী কর্মী নিয়োগের ঘটনায় জড়িয়ে পড়ছেন শিল্পাঞ্চলের কয়েকজন তৃণমূল নেতা। শক্ত হাতে ওই ঘটনার মোকাবিলা করার সিদ্ধান্ত নিল জেলা তৃণমূল। এধরনের নিয়োগ বাতিল করা হবে বলে বুধবার সাফ জানাল…
নেতৃত্বকে অন্ধকারে রেখে হলদিয়ার বিভিন্ন কারখানায় অস্থায়ী কর্মী নিয়োগের ঘটনায় জড়িয়ে পড়ছেন শিল্পাঞ্চলের কয়েকজন তৃণমূল নেতা। শক্ত হাতে ওই ঘটনার মোকাবিলা করার সিদ্ধান্ত নিল জেলা তৃণমূল। এধরনের নিয়োগ বাতিল করা হবে বলে বুধবার সাফ জানালেন জেলা তৃণমূল সভাপতি তথা মন্ত্রী সৌমেন মহাপাত্র। একইভাবে গোপনে নেতাদের একাংশ দু’-একটি কারখানা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ‘চার্টার অব ডিমান্ড’ তৈরি করছেন। এধরনের জিনিস একেবারেই বরদাস্ত হবে না বলে সৌমেনবাবু জানান। ভোটের পর থেকেই হলদিয়া শিল্পাঞ্চলের রাশ কার নিয়ন্ত্রণে থাকবে, তানিয়ে শিল্পাঞ্চলের শাসক দলের পাঁচ-ছ’জন নেতার মধ্যে তীব্র প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। শক্ত হাতে এর রাশ ধরতে না পারলে আগামী দিনে শিল্পাঞ্চলের পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
জানা গিয়েছে, আগস্ট মাসে হলদিয়া পেট্রকেমিক্যাল লিমিটেড(এইচপিএল) শাটডাউন করা হবে। শুরু হবে মেন্টেন্যান্সের কাজ। এজন্য দক্ষ এবং অদক্ষ মিলিয়ে দু’হাজারের বেশি কর্মী প্রয়োজন। ইতিমধ্যেই শিল্পাঞ্চলের এক নেতা এইচপিএলের দু’-তিনজনের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে প্রায় ৫০০অদক্ষ কর্মী নিয়োগ করে দিয়েছেন। ওই নেতাকে মঙ্গলবার রাতেই ভৎর্সনা করা হয়েছে বলে মন্ত্রী জানান। একই সঙ্গে এক্সাইড কারখানায় সম্প্রতি দেড়শো থেকে দুশো কর্মী নিয়োগ করা হয়েছে। সেই নিয়োগের ঘটনাও অবৈধ বলে সাফ জানান সৌমেনবাবু। তাঁদের নিয়োগ খারিজ করা হবে। এনিয়ে এইচপিএল এবং এক্সাইড কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সরাসরি কথা বলবেন মন্ত্রী।
উল্লেখ্য, গত দশ বছর হলদিয়া শিল্পাঞ্চলের বিভিন্ন কারখানায় কর্মী সংগঠন দেখভাল করতেন শুভেন্দু অধিকারী। তিনি বিজেপিতে চলে যাওয়ার পর হলদিয়া শিল্পাঞ্চলের রাশ কার নিয়ন্ত্রণে থাকবে, তানিয়ে হলদিয়ার চার-পাঁচজন নেতার মধ্যে প্রবল প্রতিযোগিতা শুরু হয়। সেই প্রতিযোগিতা থেকে নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষও হয়। শিল্পাঞ্চলের কর্মী ইউনিয়ন কারা দেখভাল করবেন, তানিয়ে টানাপোড়েন চলায় কেউ কেউ তার সুযোগ নিচ্ছেন।
এই মুহূর্তে আইএনটিটিইউসি-র রাজ্য সভাপতি ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায় এবং জেলা সভাপতি দিব্যেন্দু রায় হলদিয়া শিল্পাঞ্চল এলাকায় সংগঠন দেখছেন। কিন্তু, সংগঠনের জেলা সভাপতির বাড়ি তমলুকে। এই অবস্থায় হলদিয়া শিল্পাঞ্চলের নেতারা অনেকক্ষেত্রে নিজেরাই গোপনে বিভিন্ন কারখানার কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে কর্মী ঢুকিয়ে দিচ্ছেন। এভাবেই একটি কারখানার কর্তৃপক্ষের সঙ্গে চার্টার অব ডিমান্ড(সিওডি) হয়ে গিয়েছে। সেই সিওডি বাতিল করা হবে বলে মন্ত্রী জানিয়েছেন।
‘এক ব্যক্তি এক পদ’ নীতি অনুযায়ী পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় তৃণমূলের নতুন জেলা সভাপতি ঘোষণা বাকি। সেই ঘোষণার পর নতুন জেলা কমিটি এবং শাখা সংগঠন তৈরি হবে। পাশাপাশি হলদিয়া শিল্পাঞ্চলে বিভিন্ন কর্মী ইউনিয়ন কারা দেখভাল করবে, সেই সংক্রান্ত কমিটিও তৈরি হয়নি। এই টানাপোড়েনের সুযোগ নিয়ে কেউ কেউ ব্যক্তিগত স্বার্থে লোকজন নিয়োগ করছেন বলে অভিযোগ। সৌমেনবাবু বলেন, আমাদের সম্মতি ছাড়া এভাবে নিয়োগ করা যাবে না। সবটাই অবৈধ নিয়োগ। এধরনের নিয়োগ বাতিল করা হবে। আমরা এইচপিএল, এক্সাইড সংস্থার চেয়ারম্যান, এমডি-র সঙ্গে সাক্ষাৎ করব। ঘটনায় জড়িত দলের নেতাদের সতর্ক করা হয়েছে। পাশাপাশি বিজেপির বিধায়ক এখন বিভিন্ন কারখানার গেটে গিয়ে প্রভাব খাটানোর চেষ্টা করছেন। এটাও বরদাস্ত করা হবে না।
No comments