Page Nav

HIDE

Grid Style

GRID_STYLE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

সৃষ্টি ও তার কথা

🌼সৃষ্টিতত্ত্ব
ভগবানের সমগ্র সৃষ্টিতে দুই প্রকারের জগত রয়েছে। একটি হচ্ছে চিন্ময় জগত এবং অপরটি হচ্ছে জড় জগত। এর মধ্যে ৩ ভাগ হচ্ছে চিন্ময় জগত আর কেবল ১ ভাগ হচ্ছে জড় জগত।
🌼 চিন্ময় জগতের পরিচিতিঃ
চিন্ময় জগতের বৈশিষ্ট হচ্ছে- মহাপ্রলয়ের …

 





🌼সৃষ্টিতত্ত্ব


ভগবানের সমগ্র সৃষ্টিতে দুই প্রকারের জগত রয়েছে। একটি হচ্ছে চিন্ময় জগত এবং অপরটি হচ্ছে জড় জগত। এর মধ্যে ৩ ভাগ হচ্ছে চিন্ময় জগত আর কেবল ১ ভাগ হচ্ছে জড় জগত।


🌼 চিন্ময় জগতের পরিচিতিঃ


চিন্ময় জগতের বৈশিষ্ট হচ্ছে- মহাপ্রলয়ের সময় সমস্ত কিছু ধ্বংস হলেও এই চিন্ময় গ্রহলোক গুলোর কখনো বিনাশ হয় না। এখানে সব কিছুই স্বদা নিত্য এবং পরম আনন্দময়। ভগবান শ্রীগীতায় বলেছেন, সেখানে যে একবার যায় তাকে আর এই দুঃখময় জড় জগতে ফিরে আসতে হয় না। জন্ম-মৃত্যু, জড়া-ব্যাধি, দুঃখ-কষ্টের লেশ পর্যন্ত নাই সেখানে। সেটাই হচ্ছে সকল জীবের পরমাগতির স্থান।


🌼 গোলোক বৃন্দাবনঃ


চিন্ময় জগতের সর্বোচ্চ ধাম হচ্ছে গোলোক বৃন্দাবন। আদি এই চিন্ময় গোলোক ধামটি দেখতে সুবিশাল পদ্মফুলের মতো। এটিই হচ্ছে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের পরমধাম। এই চিন্ময় ধামকে আলোকিত করার জন্য কোন সুর্য বা নক্ষত্রের প্রয়োজন হয় না। মুলত এই গোলোক বৃন্দাবন ধাম থেকে যে ব্রহ্মজ্যোতি নির্গত হয় তার আলোতেই সমস্ত চিন্ময় জগত আলোকিত হয়। এখানে ঋতু মানেই বসন্তকাল। সেখানকার বৃক্ষগুলো হচ্ছে কল্পবৃক্ষ, গাভী গুলো হচ্ছে সুরভী গাভী। সেখানকার ঘর-বাড়ী এবং রাস্তাগুলো চিন্তামণি পাথর দ্বারা নির্মিত। সেখানে সহস্র শত লক্ষ্মীদেবী একনিষ্ঠ প্রেমোময়ী শ্রদ্ধা ও ভক্তির সাথে শ্রীকৃষ্ণের সেবা করে চলেছে। মুলত গোলোকের লক্ষীদেবীরাই হচ্ছেন সমস্ত বৈকুন্ঠলোকের লক্ষ্মীদেবীদের উৎস। সেখানে চলা মানেই নৃত্য এবং কথা মানেই গীত। মুলত এই গীত থেকেই গীতা শব্দটি এসেছে। পরম আনন্দময় সেই জগতে কোন জন্ম-মৃত্যু, জড়া-ব্যাধি, রোগ-শোকের লেশ পর্যন্ত নেই সেখানে। স্বদা নিত্য এবং চির আনন্দময় কৃষ্ণের সেই পরমধাম। কৃষ্ণ সেখানে তার সখাদের সাথে মনের আনন্দে গাভী চড়ান এবং নানান রকম লীলাবিলাসের মাধ্যমে ভক্তদের আনন্দে মাতিয়ে রাখেন।


🌼চিন্ময় জগতের অন্যান্য ধামসমুহঃ


গোলোক বৃন্দাবন থেকে যে ব্রহ্মজ্যোতি নির্গত হচ্ছে তার আলোতেই সমস্ত চিন্ময় জগত আলোকিত হয়। এই ব্রহ্মজ্যোতির মাঝে রয়েছে অসংখ্য চিন্ময় গ্রহপুঞ্জ। প্রতিটি গ্রহপুঞ্জগুলোই হচ্ছে এক-একটি বৈকুন্ঠ জগত। ভগবান শ্রীকৃষ্ণের অংশ প্রকাশ শ্রীনারায়ণ হচ্ছেন এই বৈকুন্ঠ জগতের অধীশ্বর। অর্থাৎ ভগবান এখানে শ্রীনারায়ণ রুপে পুজিত হন। প্রতিটি বৈকুন্ঠে একজন করে নারায়ণ এবং লক্ষ্মীদেবী রয়েছেন। সেখানকার সকলেই হচ্ছেন নিত্য মুক্ত জীব। এরা সকলেই ভগবান শ্রীনারায়ণের মত চতুর্ভুজ স্বরুপ প্রাপ্ত হন। অর্থাৎ চার বাহু বিশিষ্ট চতুর্ভুজাকৃতির। সাধারণত বৈধী ভক্তির মাধ্যমে যারা ভগবানের আরাধনা করেন তারা মুক্তির পর বৈকুন্ঠধাম প্রাপ্ত হন। আবার যারা ভগবানের আদিরুপ শ্রীকৃষ্ণের প্রেমোময়ী সেবায় যুক্ত মুক্তির পর তাদের পরমাগতি হয় কৃষ্ণলোকে অর্থাৎ গোলোক বৃন্দাবনে। আর যারা ভগবানের নিরাকার রূপের উপাসক এবং ভগবানের সাথে বিরুদ্ধাচরণ করে মুক্তি লাভ করেন তারা এই ব্রহ্মজ্যোতিতে লীন হয়ে থাকেন। একে বলা হয় সাযুজ্য মুক্তি। এটাই হচ্ছে মায়াবাদী এবং আসুরিক প্রকৃতির জীবদের পরমাগতির স্থান। তারা কখনই ভগবতধামে প্রবেশ করতে পারেনা। ভগবান তাদের কাছে নিরাকার রুপেই প্রকাশিত হন।


🌿 চিন্ময় জগতে গোলোক বৃন্দাবন এবং বৈকুন্ঠধামের মাঝেও ভগবানের আরো ৩টি ধাম রয়েছে।


🌼 পর্যায়ক্রমিকভাবে এই ধামগুলোর পরিচিতি দেওয়া হলোঃ👇


 🌸গোলক বৃন্দাবন- স্বয়ং ভগবান এখানে শ্রীব্রজেন্দ্রনন্দনকৃষ্ণ রুপে অবস্থান করেন। মুলত এটিই হচ্ছে ভগবানের    ৷ আদি রুপ।

🌸মথুরা- মথুরেশ কৃষ্ণ এবং তদ্রুপ অভিমান দ্বিভুজ এবং চতুর্ভুজ রুপে অবস্থান করেন।

🌸দ্বারকাপুরী- দ্বারকাধীশ কৃষ্ণ, তদ্রুপ অভিমান দ্বিভুজ এবং চতুর্ভুজ রুপে অবস্থান করেন।

🌸অযোধ্যা- ভগবান এখানে শ্রীরামচন্দ্র তথা দ্বিভুজ রুপে অবস্থান করেন।

🌸বৈকুন্ঠধাম- এখানে ভগবান শ্রীনারায়ণ তথা চতুর্ভুজ রুপে অবস্থান করেন।


🌼 জড় জগতের সৃষ্টিঃ


জড় জগতটি হচ্ছে চিন্ময় জগতের সম্পুর্ণ বিপরীত। এখানে সব কিছুই বিনাশশীল। এখানে নিত্য সৃষ্টি এবং ধ্বংস লীলা প্রতিনিয়ত চলতেই থাকে। সৃষ্টির আদিতে কৃষ্ণের প্রথম প্রকাশ হচ্ছেন শ্রীবলরাম। তার থেকে মহাসংকর্ষণ। মহাসংকর্ষণ থেকে ভগবানের ৩ পুরুষ অবতার- কারণোদকশায়ী বা মহাবিষ্ণু, গর্ভোদকশায়ী বিষ্ণু এবং ক্ষীরদকশায়ী বিষ্ণু প্রকাশ।


🌼 ১.মহাবিষ্ণুর প্রকাশঃ


জড় জগত সৃষ্টির শুরুতে কখনো কখনো একখন্ড চিন্ময় মেঘ ব্রহ্মজ্যোতি সমন্বিত চিদাকাশের একটি ক্ষুদ্র অংশকে আচ্ছাদিত করে। সেই আচ্ছাদিত অংশের নাম “মহতত্ত্ব”। তারপর ভগবান নিজেকে মহাবিষ্ণুরুপে বিস্তার করেন এবং এই মহতত্ত্বের জলে শায়িত হন। সেই জলকে বলা হয় কারণসমুদ্র (কারণজল)। মহাবিষ্ণু যখন কারণ সমুদ্রে যোগনিদ্রায় শায়িত হন, তখন তার নিঃশ্বাস থেকে অসংখ ব্রহ্মান্ড নির্গত হয়। এই সকল ব্রহ্মান্ডগুলো ভাসমান অবস্থায় কারণ সমুদ্রের জলে সর্বত্র ইতস্তত ছড়ানো থাকে।


🌼 ২.গর্ভোদকশায়ী বিষ্ণুর প্রকাশঃ


মহাবিষ্ণু আবার প্রতিটি ব্রহ্মান্ডের ভেতরে নিজেকে গর্ভদোকশাতী বিষ্ণুরুপে প্রকাশ করেন। প্রতিটি ব্রহ্মান্ডের অর্ধেকাংশ তিনি জল দ্বারা পুর্ণ করেন। এটিই হচ্ছে গর্ভসাগর। সেই গর্ভসাগরে ভগবান গর্ভদোকশায়ী বিষ্ণু শেষ নাগের কুন্ডলীর উপর যোগনিদ্রায় শায়িত হন। তখন তাঁর নাভীকমল থেকে পদ্মনালের সৃষ্টি হয়। সেই পদ্মনালের উপর ব্রহ্মান্ডের রচয়িতা শ্রীব্রহ্মাজির প্রকাশ হয়।


ভগবানের নির্দেশানুসারে জীবের কামনা-বাসনা অনুসারে, ব্রহ্মাজি বিভিন্ন আকৃতির জীবদের সৃষ্টি করেন। ডিম্বাকৃতির ব্রহ্মান্ডের অভ্যন্তরের অংশটি অন্ধকারময়। এই অন্ধকার দূর করার জন্য তিনিই সুর্য, চন্দ্র ও অন্যান্য দেবতাদের সৃষ্টি করেন। ভগবানের সমগ্র সৃষ্টিতে এরকম অনন্ত কোটি ব্রহ্মাণ্ড রয়েছে। প্রতিটি ব্রহ্মান্ডেই একজন করে ব্রহ্মান্ডের রচয়িতা ব্রহ্মাজি রয়েছেন।


🌼 আমাদের ব্রহ্মান্ডের ১৪টি গ্রহলোক সমুহঃ-


🌸সত্যলোক বা ব্রহ্মলোকঃ ব্রহ্মাজির নিবাস।

🌸তপোলোকঃ ব্রহ্মার চার পুত্র- সনক, সনাতন, সনন্দন এবং সনৎকুমারদের নিবাস।

🌸জনলোকঃ নব যোগেন্দ্র ঋষিদের নিবাস।

🌸মহর্লোকঃ ভৃগুমণি ও অন্যান্য ঋষিদের নিবাস।

🌸স্বর্গলোকঃ দেবতাদের নিবাস।

🌸ভুবর্লোকঃ পিতৃপুরুষদের নিবাস।

🌸ভুবলোক বা পৃথিবীঃ মনুষ্য, পশু-পাখি ও অন্যান্য জীবদের নিবাস।

🌸অতলঃ বল দানবদের নিবাস।

🌸বিতলঃ হাটকেশ্বর শিবের নিবাস।

🌸সুতলঃ বামন অবতার দ্বারা রক্ষিত বলী মহারাজের নিবাস।

🌸তলাতলঃ শিব দ্বারা রক্ষিত ময় দানবদের নিবাস।

🌸মহাতলঃ কালীয়নাগ এবং দিতিপুত্র দৈত্যদের নিবাস।

🌸রসাতলঃ অসুরদের নিবাস।

🌸পাতালঃ বাসুকি নাগের নিবাস।


🌼 ৩.ক্ষীরোদকশায়ী বিষ্ণুর প্রকাশঃ


ব্রহ্মান্ডের অভ্যন্তরে উর্ধভাগে রয়েছে ক্ষীর সাগর। ভগবান এখানে নিজেকে আবার ক্ষীরোদকশায়ী বিষ্ণুরুপে প্রকাশ করেন এবং ক্ষীরসাগরে অনন্ত শেষ নাগের কুন্ডলির উপর তিনি শায়িত হন। এটি ব্রহ্মান্ডের সত্যলোকের উপরে অবস্থিত। দেবতারা সংকটময় মুহুর্তে এই ক্ষীর সাগরে ক্ষীরোদকশায়ী বিষ্ণুর নিকট স্বরণাগত হন। প্রতি যুগে যুগে ভগবানের যে স্বাংশ প্রকাশের আবির্ভাব ঘটে তা মুলত এই ক্ষীরোদকশায়ী বিষ্ণুরই অবতার। পৃথিবীর মানুষ তাকেই ভগবান নারায়ণ বলে জানে। তিনি আবার প্রতিটি জীবের হৃদয়ে পরমাত্মা রুপেও বিরাজ করেন।


🌼মহাপ্রলয়ঃ


কল্পারম্ভে অর্থাৎ ব্রহ্মার দিনের শুরুতে সকল কিছুর প্রকাশ ঘটে। আবার কল্পান্তে অর্থাৎ ব্রহ্মার রাত্রিকালীন সময়ে সমস্ত কিছু ধ্বংস প্রাপ্ত হয়ে যায়। একে বলা হয় আংশিক প্রলয়। পৃথিবীর সময়ে সহস্র চতুর্যুগে হচ্ছে ১ কল্প। অর্থাৎ ব্রহ্মার ২৪ ঘন্টা হচ্ছে পৃথিবীর সময়ের ৮৬৪ কোটি বছর। এভাবে ব্রহ্মা ব্রহ্মলোকের ১০০ বছর পর্যন্ত জীবিত থাকার পর দেহ ত্যাগ করেন। ব্রহ্মার জীবন অবসানের সাথে সাথে সমস্ত ব্রহ্মান্ডের প্রলয় ঘটে। একে বলা হয় মহাপ্রলয়। মহা প্রলয়ের সময় এরকম অনন্ত কোটি কোটি ব্রহ্মান্ড মহাবিষ্ণুর দেহাভ্যন্তরে বিলীন হয়ে যায়। অর্থাৎ মহাবিষ্ণু যখন শ্বাস ত্যাগ করেন তখন তার নিঃশ্বাস ও দেহের লোমকুপ থেকে অনন্ত কোটি কোটি ব্রহ্মান্ডের সৃষ্টি হয়। তিনি যখন উল্টো শ্বাস গ্রহণ করেন তখন সমস্ত ব্রহ্মান্ড তার মুখগহ্বরে প্রবেশ করে ধ্বংস প্রাপ্ত হয়। মহাবিষ্ণুর একটি নিঃশ্বাসকাল পর্যন্তই হচ্ছে সমস্ত ব্রহ্মান্ডের স্থিতি। জড় জগতে এরকম সৃষ্টি এবং প্রলয় বারংবার চলতেই থাকে। এটিই হচ্ছে এই জড় জগতের বৈশিষ্ট।


🌼জড় জগতের ৮৪ লক্ষ প্রকারের জীবঃ 


জলজা নবলক্ষাণি স্থাবরা লক্ষবিংশতি। 

ক্রিময়ো রুদ্রসংখ্যকাঃ পক্ষিণাং দশলক্ষণম্। 

ত্রিংশল্লক্ষাণি পশবঃ চতুর্লক্ষাণি মানুষাঃ।। (পদ্ম পুরাণ)


 অর্থাৎঃ- নয় লক্ষ জনম জলজ প্রাণীরূপে,  স্থাবর-জঙ্গম অর্থাৎ বৃক্ষ-লতারূপে কুড়ি লক্ষ জনম, ত্রিশ লক্ষ জনম পশু রূপে এবং মানব রূপে চার লক্ষ জনম এভাবে ৮৪ লক্ষ যোনি ভ্রমণ করতে হয় জীবের।


🌼 প্রাকৃত ও অপ্রাকৃত জগৎ কারা লাভ করেঃ(সংক্ষেপে)


🌿 দেবতাদের উপাসকেরা দেবলোক প্রাপ্ত হবে,ভূত প্রেতাদির উপাসকেরা ভূতলোক প্রাপ্ত হবে,পিতৃপুরুষদের উপাসকেরা পিতৃলোক প্রাপ্ত হবে,আমার ভক্তরা আমার পরমধাম লাভ করবে। গীতাঃ ২৫/৯


🌿 ব্রহ্মলোক আব্রহ্মভুবনাল্লোকাঃ পুনরাবর্তিনোহর্জুন ।   

  মামুপেত্য তু কৌন্তেয় পুনর্জন্ম ন বিদ্যতে ॥১৬॥


অনুবাদ:- হে অর্জুন ! এই ভুবন থেকে ব্রহ্মলোক পর্যন্ত সমস্ত লোকই পুনরাবর্তনশীল অর্থাৎ পুনর্জন্ম হয় ৷

কিন্তু হে কৌন্তেয় ! আমাকে প্রাপ্ত হলে আর পুনর্জন্ম হয় না।    শ্রীমদ্ভগবতগীতা:৮/১৬

No comments