Page Nav

HIDE

Grid Style

GRID_STYLE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

জাতির জনক মহাত্মা গান্ধীজী একবার এক বঙ্গসন্তানকে বলেছিলেন,"আহা আপনি যুক্ত প্রদেশের (অধুনা উত্তরপ্রদেশ) গভর্নরের পদগ্রহণ করতে রাজি হলেন না, আমি ভেবেছিলাম, আপনাকে ‘ইওর এক্সেলেন্সি’ বলে ডাকার সুযোগ পাব। তা আপনি সেটা কিছুতেই আর …


 




জাতির জনক মহাত্মা গান্ধীজী একবার এক বঙ্গসন্তানকে বলেছিলেন,"আহা আপনি যুক্ত প্রদেশের (অধুনা উত্তরপ্রদেশ) গভর্নরের পদগ্রহণ করতে রাজি হলেন না, আমি ভেবেছিলাম, আপনাকে ‘ইওর এক্সেলেন্সি’ বলে ডাকার সুযোগ পাব। তা আপনি সেটা কিছুতেই আর ,হতে দিলেন না" !!

বাঙালিবাবু হেসে জবাব দেন, "আমি আপনাকে আরও ভাল একটা বিকল্প প্রস্তাব দিতে পারি। আমি পদবীতে রয়, তাই আপনি আমাকে রয়্যাল বলতে পারেন। আর যে হেতু অনেকের চেয়ে লম্বা, সে হেতু আপনি আমাকে রয়্যাল হাইনেস বলতে পারেন! সেটা কিন্তু যথার্থই হবে" !!

সে দিন তিনি কিছুতেই গভর্নর হতে রাজি হননি। তবে পরবর্তী কালে হন পশ্চিমবঙ্গের দ্বিতীয় মুখ্যমন্ত্রী। 

১৯৪৮ সালের ২৩শে জানুয়ারি তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী শ্রদ্ধেয় প্রফুল্লচন্দ্র ঘোষকে সরিয়ে তাঁকেই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী করা হয়। ১৯৪৮ থেকে ৬২, এই চোদ্দবছর ছিলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী আর ঐ সময় কালটাই ছিল পশ্চিমবাংলার ঐতিহাসিক স্বর্ণযুগ !!

 *স্বাধীনতার ঠিক পরে কেন্দ্রের কংগ্রেস সরকার সিদ্ধান্ত নিল দেশ জুড়ে সোভিয়েত, ব্রিটিশ ও জার্মানির সহযোগিতায় ৮টি বড় বড় ইস্পাত কারখানা তৈরী হবে, কিন্তু সেই তালিকায় পশ্চিমবঙ্গের নাম ছিলোনা।* 

এ নিয়ে কেন্দ্রের সঙ্গে বিরোধ দেখা দিল  বাংলার l কারণ ডাক্তারবাবু চেয়েছিলেন রাণীগঞ্জ কয়লা খনি সংলগ্ন এলাকার কাছাকাছি দুর্গাপুরে একটা বড় কোনো কারখানা হোক। তারজন্য প্রয়োজনীয় সার্ভেও করে রেখেছিলেন তিনি । 

কেন্দ্র যুক্তি দেখালো দুর্গাপুর তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের সীমান্তের ১০০ মাইলের মধ্যে। ফলে যুদ্ধ বাধলে প্রতিবেশী দেশের লক্ষ্যে পরিণত হবে কারখানাটি। এবং এটা ভারত সরকারের সামরিক গোয়েন্দা বাহিনীর রিপোর্টের গোপনীয় তথ্য। 

এই যুক্তি মানলেন না মুখ্যমন্ত্রী বিধান চন্দ্র রায় ওদিকে প্রধানমন্ত্রী নেহেরুজীও তাঁর সিদ্ধান্তে অটল। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীও ছাড়বার পাত্র নয় একদমই l বিভিন্ন ভাবনাচিন্তা করতে লাগলেন তিনি l

তারপর হটাৎ করেই একদিন মুখ্যমন্ত্রী দুই জনপ্রিয় পত্রিকা আনন্দবাজার ও যুগান্তরের চীফ রিপোর্টার শিবদাস চক্রবর্তী ও অনিল ভট্টাচার্যকে রাইটার্সে নিজের ঘরে ডেকে পাঠালেন। 

সরকারি বিজ্ঞাপন পাইয়ে দেওয়ার বিনিময়ে নিজের বা দলের গুনগান গাইতে ঢাক পেটানো প্রচার করতে নয়, তিনি বললেন আপনারা বাংলার সবথেকে জনপ্রিয় দুই পত্রিকার দায়িত্বশীল সম্মানিত সাংবাদিক l নিজের রাজ্যের প্রতিও আপনাদের বেশ কিছুটা দায়ভার বর্তায় l অতএব তাঁরা যেন নিয়মিত নিজেদের কাগজে লিখে দুর্গাপুরে বড় ভারী ইস্পাত কারখানা তৈরির পক্ষে জনমত গড়ে তোলেন এবং কেন্দ্রের ওপর একটা কৌশলী চাপ তৈরি করেন l এর কিছুদিন পর থেকেই দুই পত্রিকায় ছাপা হতে লাগল এ নিয়ে অসংখ্য রিপোর্ট।

সে সময়ের কেন্দ্রীয় শিল্পমন্ত্রী ছিলেন উড়িষ্যার নিত্যানন্দ কানুনগো, ইস্পাত কারখানা তৈরির প্রকল্প তারই অধীনস্ত দপ্তরের অধীনে। 

একদিন মুখ্যমন্ত্রী বিধান চন্দ্র রায়কে যেতে হলো জাতীয় উন্নয়ন পর্ষদের বৈঠকে। সভা চলাকালীন হঠাৎ করেই কেন্দ্রীয় শিল্পমন্ত্রী অজ্ঞান হয়ে পড়ে গেলেন। তড়িঘড়ি তাঁকে নিয়ে যাওয়া হলো হাসপাতালে, সেখানে পরীক্ষা করে দেখা গেল তাঁর পিত্তথলিতে পাথর জমা হয়ে জটিল আকার নিয়েছে। 

ডাক্তার মুখ্যমন্ত্রী বিধান চন্দ্র রায় বললেন পরদিনই অপারেশন করতে হবে এবং সেটা তারই তত্ত্বাবধানে হবে। তবে আজকের মতন এই অপারেশন সেদিন এত সহজ কাজ ছিল না। 

অতীতে মন্ত্রীমশাই বিদেশে চিকিৎসা করিয়েও কোন ভালো ফল পাননি। যাইহোক ডাক্তার মুখ্যমন্ত্রী বিধান চন্দ্রের সুচিকিৎসায় উনি ধীরে ধীরে ভালো হয়ে উঠলেন।


 *এরপর একদিন ডাক্তারবাবু গেলেন রোগী দেখতে। শিল্পমন্ত্রী ডাক্তার রায়ের হাত ধরে বললেন, "আপনি আমার মূল্যবান জীবন ফিরিয়ে দিলেন। কিন্তু কোনো ফি তো নিলেন না।" উত্তরে মুখ্যমন্ত্রী বিধান চন্দ্র রায় একটু মুচকি হেসে বলেছিলেন, 

"আমার ফি যদি তুমি সত্যিই দিতে চাও তাহলে আমার বাংলায় দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানার ছাড়পত্র দিয়ে দিয়ো।"* 

 *ফি দিয়েছিলেন কেন্দ্রীয় শিল্পমন্ত্রী নিত্যানন্দ কানুনগো। তিনি নিজে প্রধানমন্ত্রী নেহরুর সাথে লড়াই করে ঠিকই সম্মতি আদায় করলেন। তারপর একদিন দুর্গাপুরের ইস্পাত কারখানা তৈরির সরকারি অনুমোদনের কাগজটি নিয়ে সোজা নিজে নিয়ে চলে এলেন একেবারে কলকাতায়।* 

মুখ্যমন্ত্রীকে খবর দিয়ে সোজা হাজির হলেন তাঁর দপ্তরে, হাতে একটা সৌখিন রুপার থালা, তার ওপর সুন্দর একটি খামে মোড়া অনুমোদনের চিঠি। 

গিয়ে বললেন, "এই আপনার ফি"। 

মুখ্যমন্ত্রী বিধান চন্দ্র রায় তখুনি চিঠিটি নিজে না খুলে জরুরি ভিত্তিতে খবর দিয়ে ডেকে আনালেন আনন্দবাজার ও যুগান্তরের দুই চিফ রিপোর্টারকে। 

তারপর ওই দুজনকে সামনে ডেকে নিয়ে পাশে বসিয়ে চিঠিটা নিলেন কেন্দ্রীয় শিল্পমন্ত্রীর কাছ থেকে। বলেছিলেন, বাংলায় এই কারখানার অনুমোদন পেতে এদের অবদানও কম নয়। ওনারাও সেদিন প্রমাণ করে দিয়েছিলেন চাইলে রাজ্য বা দেশ গঠনে সাংবাদিকরাও সদর্থক ভূমিকা নিতে পারেন !!

১৯৬১ সালে তিনি ভারতরত্ন সম্মানে ভূষিত হন l তাঁর জন্ম ও প্রয়াণদিবস একই দিনে l 

"১লা জুলাই" !!

আজ এই মহান পুণ্যদিবসে বাংলার নবরূপকারকে আমাদের সশ্রদ্ধ প্রণাম !

No comments