Page Nav

HIDE

Grid Style

GRID_STYLE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

আকবরের সমাধি - সেকেন্দ্রা

সেকেন্দ্রা বিখ্যাত আকবরের সমাধির কারনে । যদিও এই সেকেন্দ্রা নামটির ইতিহাস  আরো প্রাচীন। ১৪৯২ এ সিকান্দার লোধি আসেন আগ্ৰাএ।গড়ে ছিলেন দুর্গ এবং তাকে ঘিরে যে শহর গড়ে উঠেছিল তা ছিল সেকেন্দ্রাবাদ।আগ্রা ফোর্ট থেকে 14 কিলোমিটার দূরে …

 






 সেকেন্দ্রা বিখ্যাত আকবরের সমাধির কারনে । যদিও এই সেকেন্দ্রা নামটির ইতিহাস  আরো প্রাচীন। ১৪৯২ এ সিকান্দার লোধি আসেন আগ্ৰাএ।গড়ে ছিলেন দুর্গ এবং তাকে ঘিরে যে শহর গড়ে উঠেছিল তা ছিল সেকেন্দ্রাবাদ।আগ্রা ফোর্ট থেকে 14 কিলোমিটার দূরে এই সেকেন্দ্রা অন্চলটি আকবর পচ্ছন্দ করেছিলেন নিজের সমাধির জন‍্য। তখন জায়গাটা ছিলো জনমানবহীন নির্জন একটি জঙ্গল। পাখিদের কলকাকলিতে ছিলো সদা মুখর। বেশ নিরিবিলি হওয়ায় জায়গাটা হয়তো সম্রাটের খুব পছন্দ হয়েছিলো। করালেন নিজের পরিকল্পনা মতো একটি কাঠের মডেল ও। 


বর্তমানে আগ্রা তে তাজমহলের দিকে যাওয়ার প্রধান পথের পাশেই এর অবস্থান। এক সময়কার নির্জন জায়গাটি এখন জনকোলাহলে পূর্ণ। তবে তাজমহল ও আগ্রা ফোর্টের তুলনায় এখানে ভীড় কম । 50 টাকা করে টিকেটমূল্য। টিকেট কাউন্টার থেকে মূল গেটে যেতে একটুখানি পায়েচলা পথ। দুপাশে সারি সারি বাগান। পাখিদের কাকলি ও হরিনের দৌড়াদৌড়ি তে আজও এক মনোরম পরিবেশ। পায়ে পায়ে এগিয়ে গিয়ে মূল গেট। গেটটি তাজমহলের গেটের মতোন সুবিশাল। লাল বেলে পাথরে নির্মিত। অসাধারণ কারুকার্য গেট জুড়ে। চারপাশ চারটে উঁচু মিনার। 


শুরুতেই বলেছি যে আকবর নিজে জীবিত থাকাকালীন সময়েই গড়তে শুরু করেছিলেন নিজের সমাধির এই  ইমারত টি। যেই কারণে এই ইমারতের মূল প্ল‍্যানিং আকবর বাদশাহের। যদিও তিনি এটির কাজ শুরু করেছিলেন মাত্র, কিন্তু শেষ করে যেতে পারেন নি।


এখানে টিকিট দেখিয়ে ভেতরে ঢুকতে হবে। চারদিকে চারটে গেট থাকলেও আজ কেবল এই দক্ষিণ গেটটি খোলা। প্রতিটি গেটেই রয়েছে অসাধারণ সুন্দর নকশা, যা লাল-নীল বা সোনালী রঙের পাথর দিয়ে তৈরি। গেট থেকে মর্মর পাথরে নির্মিত বড় একটি রাস্তা চলে গেছে সমাধিস্থল বরাবর। দুপাশে বিশাল খালি প্রান্তর। এখানেও কিছু হরিনকে খেলে বেড়াতে দেখা যায়, ভাগ‍্য ভালো থাকলে এক দুটি ময়ুরের ও দর্শন পাওয়া যায়।  সামনে একটি স্বচ্ছ পানির ফোয়ারা। 


 আকবরের হাতে তৈরি হ্ওয়ার কারনে এটির প্রবেশ তোরনে তার প্রমাণ পাওয়া যায়।লাল গৈরিক চার বেলে পাথরের তৈরি প্রবেশ তোরনের একটি হিন্দু, একটি মুসলিম, একটি খ্রিষ্টীয় আর চতুর্থ টি আকবরের বিশ্বজনীন শৈলীতে তৈরী। প্রবেশ তোরনের ক‍্যালিগ্ৰাফিতে মোট ছত্রিশটি বানী - তার প্রথম তেইশটি ঘোষনা করছে আকবরের জাগতিক পরিচয়, তার জীবনকথা। বাকি তেরটি বানী মহম্মদ উক্ত ধর্মনিদেশ, বিশ্ব প্রেম মৈত্রীর কথা, মুক্তির কথা, ভাবের কথা।


 বাগান পেরিয়ে ফতেহপুর সিকরী পাঁচ মহলের আদলে ২২.৫ মিঃ উচ্চ চারতলা সৌধ তৈরী হয়েছে সমাধির উপর। প্রথম তিনটি তলা লাল বেলে পাথরের ,আর সব্বোচ্চ তলা টি শ্বেতমর্মরের। চারপাশে ৯৩ ধাপের চার মিনারেট। ভূগর্ভে মূল সমাধি । দক্ষিন দিক থেকে পথ নেমেছে স্বর্ণখচিত ফ্রেস্কো চিত্রে সুশোভিত ধনুকাকৃতি খিলানের ভূগর্ভস্থ সমাধিকক্ষে। উপরে প্রতিরূপ হয়েছে ৩০ ফুট উঁচু বেদিতে।। মূল কবর একটি অন্ধকারচ্ছন্ন কক্ষের ভেতর। সেখানে যাবার পথটিও কেমন অন্ধকার আর ভূতুড়ে। জুতা বাইরে রেখে প্রবেশ করলাম সেখানে। ভয়ে গা ছমছম করে উঠছিলো হঠাৎ হঠাৎ। ভেতরে চলছিলো আলো আঁধারির খেলা। কবরটি মর্মর পাথরে আবৃত। মাধির ঠিক ওপর বরাবর মিটিমিটি জ্বলছিলো পুরোনো আমলের একটি ঝাড়বাতি। সে আলোয় দেখলাম কবরের গায়ে কুরআনের কয়েকটি আয়াত লেখা রয়েছে। দাঁড়িয়ে তা পাঠ করলাম। ঝাড়বাতি ছাড়া ভেতরে অন্য আলো জ্বালানো বা মোবাইলে ছবি ওঠানো নিষেধ। 


আকবর যখন এই ইমারতের নির্মাণ শুরে করেছিলেন তখন তার ছিল  সিকান্দ্রার সমাধিভবন টিই হবে মুঘল সাম্রাজ্যের পারিবারিক সমাধি ক্ষেত্র। সেই হিসাবে একতলার ঘর গুলি কবর দেওয়ার উপযুক্ত করে তৈরি করান। কিন্তু আকবর ছাড়াও আরাম বানু বেগম (আকবরের কনিষ্ঠা কন্যা), দানিয়াল মিরজা (আকবরের পুত্র, জাহাঙ্গীরের ভ্রাতা), জেব-উন-নিসা (অউরংজেবের জ্যেষ্ঠা কন্যা), ফ্লোরা অ্যানি স্টিল (এক ব্রিটিশ লেখিকা), খানুম সুলতান বেগম (আকবরের জ্যেষ্ঠা কন্যা) সমাহিত আছেন। আর আছে মুমতাজের সদ্যজাত দুই সন্তানের কবর। এই দুই শিশুর কবরের সেনোটাফ গুলিতে দুধ ঢালার জন্য গর্ত করা আছে।


একতলার কক্ষ গুলি প্রত্যেকটি ভবিষ্যতে মুঘল বংশের অন্যান্য সদস্যদের কবর দেওয়ার জন্য পরিকল্পিত হওয়ার কারনে প্রত্যেকটি কক্ষের ছাদ গম্বুজাকৃতি (কনকেভ মিরর) মাঝখানে দাঁড়িয়ে আওয়াজ করলে প্রতিধ্বনিত হয়। স্তম্ভ গুলি এমন ভাবে তৈরি, যে একটি স্তম্ভের গায়ে ফিসফিস করে কথা বললেও তা বিপরীত দিকের স্তম্ভে কান পাতলে স্পষ্ট শোনা যায়। 


মনে করা হয় নীচের তলা আকবরের তৈরী হলে ও উপরের তলা গুলো জাহাঙ্গীর এর তৈরি।তাই কিছু কিছু জায়গায় আর্কিটেকচারল পার্থক্য দৃষ্টি গোচর হয়।


 আকবর এটির নির্মাণ কার্য শুরু করেন ১৫৯৮ এ ১৬০৪ এ তার মৃত্যুর সময় এটার নির্মাণ মনে হয় একতলা পর্যন্ত হয়েছিল ।একতলার কেন্দ্রস্হলে তিনি  গড়েছিলেন জমিন সই সুবৃহৎ ইবানটি।ইবানের মাথায় একটিমাত্র চবুতরা - সেটা গোলাকৃতি নয়, আয়তক্ষেত্র এবং তিন তিন খিলান সম্বন্বিত। আর তার এক এক পাশে পাঁচটি করে খিলান।আকবর দ্বারা নির্মিত এই প্রথমতলের উচ্চতা 9.14 মিটার।এই দেখে তাই এক এক সময়ে মনে হয়, আকবর বৃহত্তর কিছু গড়তে চেয়েছিলেন। কিন্তু মৃত্যুর কারনে তা তার দ্বারা সন্পূর্ন হতে পারেনি। 


এও মনে করাএটির বাগিচার ভূমি নকশা ও দক্ষিণ তোরন তিনি নিজেই নির্মাণ করান। এছাড়া অপর তিনটি তোরন প্রতিম ইমারৎ ও সন্ভবত তার আমলেই তৈরি। 


জাহাঙ্গীর ১৬১২ অবধি বাকি তিনটে তলা শেষ করেন। হিন্দু মুসলিম স্হাপত‍্যশৈলীর সমন্বয়ে ১৫ লক্ষ টাকা ব‍্যয় হয়ে ছিল এই সৌধ নির্মাণ এ।

No comments