Page Nav

HIDE

Grid Style

GRID_STYLE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

বিপ্লবীর রাম প্রসাদ বিসমিল জীবনগাথা- সনৎকুমার বটব্যাল

রাম প্রসাদ বিসমিল  ছিলেন একজন  স্বাধীনতা সংগ্রামী ও সেই সঙ্গে একজন বীর বিপ্লবী / তিনি ১৯১৮ সালে  সালের মৈনপুরী ষড়যন্ত্র এবং ১৯২৫ সালের কাকোরি ষড়যন্ত্রে অংশ নিয়েছিলেন এবং ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছিলেন/  রামপ্…

 





  রাম প্রসাদ বিসমিল  ছিলেন একজন  স্বাধীনতা সংগ্রামী ও সেই সঙ্গে একজন বীর বিপ্লবী / তিনি ১৯১৮ সালে  সালের মৈনপুরী ষড়যন্ত্র এবং ১৯২৫ সালের কাকোরি ষড়যন্ত্রে অংশ নিয়েছিলেন এবং ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছিলেন/  রামপ্রসাদ বিসমিল'মৈনপুর কান্ড' আর 'কাকোরী কান্ডে'নেতৃত্ব দিয়ে ব্রিটিশ শাসকের বুকে কুঠার  আঘাত হেনেছিলেন/১১ বছরের বিপ্লবী জীবনে রামপ্রসাদ অনেক বই লিখেছিলেন এবং তা তিনি স্বয়ং নিজেই প্রকাশ করেন/ রাম প্রসাদের জীবনকালেই প্রায় সমস্ত বই প্রকাশিত হয়, কিন্তু ইংরেজ সরকার তার সমস্ত বই নিষিদ্ধ করেন/ বিসমিলকে তাঁর বিপ্লবী কর্মকাণ্ডের জন্য ১৯২৭ সালের ১৯ ডিসেম্বর ব্রিটিশরা ফাঁসি দিয়েছিল/ রামপ্রসাদ বিসমিল ভারতের স্বাধীনতার জন্য মাত্র ৩০ বছর বয়সে ফাঁসির মঞ্চে 

জীবনের জয়গান গেয়েছিলেন/

 রামপ্রসাদ বিসমিল ছিলেন বিপ্লবী সংগঠন হিন্দুস্তান রিপাবলিকান এসোসিয়েশনের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য/ শহীদ ভগৎ সিং তাকে এই বলে প্রশংসা করেছেন যে তিনি উর্দু ও হিন্দিতে একজন মহান কবি ও লেখক ছিলেন/ যিনি ইংরাজি থেকে  ক্যাথেরিন এবং বাংলা থেকে বলশেভিক অনুবাদ নিপুন ভাবে করেছিলেন/

একজন মুক্তিযোদ্ধা হওয়ার পাশাপাশি তিনি একজন দেশপ্রেমিক কবি এবং হিন্দি ও উর্দুতে লেখা লেখি করতেন / তিনি কোটি কোটি ভারতবাসীর মনের মণিকোঠায় কেবলমাত্র 'বিসমিল' হিসেবে  জনপ্রিয় হয়ে আছেন/

তাঁর বিখ্যাত রচনা---

 ' সারফারোশি কি তামান্না আব হামারে দিল মে হে দেখ না হে জোর কিতনা বাজো হে কাতিল মে হে '/

                              এই গান গেয়ে শত- সহস্র  বিপ্লবী হাসিমুখে ফাঁসির মঞ্চে জীবনের জয়গান গেয়ে গেছেন তার ইয়ত্তা নেই/

জন্মঃ- ১১ ই জুন ১৮৯৭ সাল, শাহজাহানপুর, উত্তর প্রদেশ /

# আত্মবলিদানঃ- ১৯ শে ডিসেম্বর ১৯২৭ সাল,গোরক্ষপুর,উত্তরপ্রদেশ/

রাম প্রসাদ বিসমিল ১৮৯৭ সালের ১১ ই জুন উত্তর প্রদেশের শাহজাহানপুরে একটি ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন/ বিপ্লবী রামপ্রসাদ বিসমিলের বাবার নাম ছিল মুরলিধর ও মায়ের  নাম ছিল মুলমতি দেবী/ মুরলিধর বাড়িতে বসেই রাম প্রসাদ কে হিন্দি শেখাতেন, সে সময় উর্দু ভাষাও খুব প্রচলিত ছিল যার কারনে রামপ্রসাদ কে এক মৌলবী সাহেবের কাছে পাঠানো হত উর্দু শেখার জন্য/ পণ্ডিত মুরলিধর রামপ্রসাদের পড়াশোনায় বিশেষ লক্ষ্য দিতেন/একটু দুষ্টুমি করলেই রামপ্রসাদ কে মার খেতে হত/ অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত রামপ্রসাদ সবসময় বিদ্যালয়ে  প্রথম হত/ ছোটবেলা  থেকেই আর্যসমাজের সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ক গড়ে ওঠে/ শাহজানপুরে আর্যকুমার সভা স্থাপিত করেন/ শাহজানপুরে আর্যসমাজ মন্দিরে স্বামী সোমদেবের সংস্পর্শে আসেন এবং সেখান থেকেই তাঁর জীবনের  পরিবর্তন আসে/

বিসমিলের যখন ১৮ বছর বয়স তখন সে স্কুল ছেড়ে কিছু বন্ধুবান্ধব নিয়ে লখনউ বেড়াতে  বেরিয়ে পড়ে /

বিসমিল  একদল যুবকদের সংগঠিত করেছিল এবং সোমদেবের সম্মতিতে আমেরিকার স্বাধীনতার ইতিহাস, আমেরিকা কী স্বতন্ত্র কা ইতিহাসের হিন্দিতে একটি বই প্রকাশের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল/ এই বইটিতে কল্পিত বাবু হরিভানস মহাশয়ের  লেখা প্রকাশিত হয়েছিল/এর প্রকাশকের নাম সোমদেব সিদ্ধগোপাল শুক্লা দেওয়া হয়েছিল/ বইটি প্রকাশের সাথে সাথেই উত্তরপ্রদেশ সরকার রাজ্যের মধ্যে এই বই নিষিদ্ধ করেছিল/

বিসমিল মাতৃদেবী নামে একটি বিপ্লবী সংগঠন গঠন করে এবং আড়াইয়ার স্কুল শিক্ষক গেঁদা লাল দীক্ষিতের সাথে যোগাযোগ করেছিল/ সোমদেব এই  ব্যবস্থা করেছিলেন কারণ,  বিসমিল তার মিশনে আরও কার্যকরী হতে পারে/আর তার যদি বিশেষ  অভিজ্ঞতা সম্পন্ন  লোকেরা থাকে/ দীক্ষিতের রাজ্যের কয়েকটি শক্তিশালী ডাকাত দলের সাথে তাঁর যোগাযোগ ছিল/ দীক্ষিত ব্রিটিশ শাসকদের বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রামে তাদের শক্তিটি কাজে লাগাতে চেয়েছিলেন/ বিসমিলের মতো দীক্ষিতও শিবাজি সমিতি নামে পরিচিত যুবকদের একটি সশস্ত্র সংগঠন গঠন করেছিলেন (শিবাজী মহারাজের নামানুসারে)/এই জুটি তাদের সংগঠনগুলিকে শক্তিশালী করার জন্য ইউনাইটেড প্রদেশের ( উত্তর প্রদেশ)  ইটাওয়াহ, মৈনপুরী, আগ্রা ও শাহজাহানপুর জেলা থেকে যুবকদের সংগঠিত করেছিল/

 ২৮ শে জানুয়ারী, ১৯১৮ সালে বিসমিল দেশবাসী কে 'নাম সন্দেশ' (দেশবাসীর উদ্দেশ্যে একটি বার্তা) শীর্ষক একটি পুস্তিকা প্রকাশ করেন, যা তিনি তাঁর কবিতা মৈনপুরী কি প্রতিজ্ঞা (মৈনপুরীর ব্রত) সহ বিতরণ করেছিলেন/ পার্টির অর্থের  হিসাব সঠিক ভাবে না দিতে পারার জন্য ১৯১৮ সালে তিনবার তাঁকে শোকজ করা হয়েছিল/

ইউএনপি কর্তৃক অনুমোদিত বই বিক্রি করার সময় পুলিশ তাদের মৈনপুরীর আশেপাশে অনুসন্ধান করে/১৯১৮ সালের পুলিশ যখন এগুলি পেয়েছিল, তখন বিসমিল বই বিক্রি না করে  আত্মগোপন করেন /  তিনি যখন দিল্লি ও আগ্রার মধ্যে আরেকটি লুটপাটের পরিকল্পনা করছিলেন, তখন একদল পুলিশ বাহিনী উপস্থিত হয় এবং উভয় পক্ষের মধ্যে  গুলি বিনিময় হয়/ বিসমিল লাফিয়ে যমুনা নদীতে ঝাঁপিয়ে পড়ে ,জলে ডুব সাঁতার দিয়ে পালিয়ে যায় / পুলিশ ও তার সহযোগীরা ভেবেছিল যে এই লড়াইয়ে তিনি মারা গেছেন/  দীক্ষিতকে ও  তার অন্যান্য সহচরদের সাথে গ্রেপ্তার করে আগ্রা দুর্গে রাখা হয/ কিন্তু সেখান থেকে দীক্ষিত পালিয়ে দিল্লি চলে এসে আত্মগোপন করেন / তাদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা দায়ের করা হয়েছিল/  ঘটনাটি 'মৈনপুরী চক্রান্ত' নামে পরিচিত/ ১৯১৯ সালের ১ নভেম্বর মৈনপুরীর জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মিঃ বি এস ক্রিস সকল আসামির বিরুদ্ধে রায় ঘোষণা করেন এবং দীক্ষিত ও বিসমিলকে পলাতক হিসাবে ঘোষণা করেন/

১৯১৯ - ১৯২০ সাল পর্যন্ত বিসমিল আত্মগোপন করে ছিলেন ,প্রকাশ্যে আসতেন না ,ছদ্মবেশ ধরে  উত্তর প্রদেশের বিভিন্ন গ্রামে ঘুরে বেড়াতেন এবং বেশ কয়েকটি বই লিখেছিলেন /এর মধ্যে মন ও লাহার শিরোনামে তাঁর এবং অন্যদের রচিত কবিতার একটি সংকলন ছিল/তখন তিনি বাংলা থেকেও দুটি রচনা অনুবাদ করেছিলেন /বলশেভিকন কী কর্তিত্ব এবং যোগিক সাধন, এবং একটি ইংরেজি পাঠ্য থেকে মনগড়া ক্যাথরিন বা' স্বাধীতা কি দেবী 'তে অনুবাদ করেছিলেন/ তাঁর এই সমস্ত বই সুশীলমালার অধীনে তাঁর নিজস্ব সংস্থার মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছিল / এক ,যোগিক সাধন ব্যতীত একাধিক বই এর পাণ্ডুলিপি  যা একটি প্রকাশককে দেওয়া হয়েছিল যে পলাতক ছিল এবং তার সন্ধান পাওয়া যায়নি/  এই বইগুলি সেখান থেকেই পাওয়া গেছে/  বিসমিলের আর একটি বই, ক্রান্তি গীতাঞ্জলি তাঁর মৃত্যুর পরে ১৯২৯ সালে প্রকাশিত হয়েছিল /

১৯২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে, যখন মৈনপুরী ষড়যন্ত্র মামলার সমস্ত বন্দিদের মুক্তি দেওয়া হয়েছিল, তখন বিসমিল বাড়ি ফিরে শাহজাহানপুরে এসেছিলেন/ সেখানে তিনি সরকারি আধিকারিকদের সাথে সম্মত হন যে তিনি আর বিপ্লবী কর্মকাণ্ডে অংশ নেবেন না/ রাম প্রসাদের এই বক্তব্যও আদালতের সামনে স্থানীয় ভাষায় রেকর্ড করা হয়েছিল/

 ১৯২১ সালে, শাহজাহানপুরের আহমেদাবাদ কংগ্রেসে অংশ নেওয়া বহু লোকের মধ্যে বিসমিলও  ছিলেন/ প্রবীণ কংগ্রেসী  প্রেম কৃষ্ণ খান্না এবং বিপ্লবী আশফাকুল্লা খাঁর সাথে মঞ্চে  তাঁর আসন ছিল/ বিসমিল মাওলানা হাসরাত মোহানীর সাথে কংগ্রেসে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছিলেন এবং কংগ্রেসের সাধারণ সভায় পূর্ন স্বরাজের সর্বাধিক আলোচিত প্রস্তাবটি রেখে ছিলেন/ সেই সময় মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী, যিনি এই প্রস্তাবের পক্ষে ছিলেন না, যুবকদের অপ্রতিরোধ্য দাবির কাছে  বেশ অসহায় হয়ে পড়েছিলেন/ তিনি শাহজাহানপুরে ফিরে এসে ইউনাইটেড প্রদেশের যুবকদের সরকারের সাথে সহযোগিতা না করার জন্য  সংগঠিত  করেছিলেন/ যুক্তরাষ্ট্রের জনগণ  বিসমিলের উগ্র বক্তব্যে  এতটাই প্রভাবিত হয়েছিল যে,  তারা ব্রিটিশ রাজের বিরুদ্ধে গর্জে উঠেছিলেন/  আদালতে করা বানারসি লাল  এর বক্তব্য অনুসারে - 'রাম প্রসাদ বলতেন যে অহিংসার মাধ্যমে স্বাধীনতা অর্জিত হবে না/'

 ১৯২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে চৌরিচৌরায় কয়েকজন আন্দোলনকারী কৃষককে পুলিশ হত্যা করে/ চৌরিচৌরার  থানা আক্রমণ করে এবং ২২ জন পুলিশকে জীবন্ত পুড়িয়ে মারা হয়/ গান্ধীজি এই ঘটনার পেছনের সত্যতা নির্ধারণ না করে কংগ্রেসের কোনও কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্যের পরামর্শ না নিয়ে অসহযোগ আন্দোলন অবিলম্বে বন্ধ করার ঘোষণা করেছিলেন/ বিসমিল এবং তাঁর দলের  যুবকরা গান্ধীজির  তীব্র বিরোধিতা করেছিলেন ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল কংগ্রেসের ১৯২২ সালের অধিবেশনটিতে, গান্ধীজি  তাঁর সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করতে অস্বীকৃত হলে  তৎকালীন রাষ্ট্রপতি চিত্তরঞ্জন দাস পদত্যাগ করেন/ ১৯২৩ সালের জানুয়ারিতে, মতি লাল নেহরু এবং চিত্তরঞ্জন দাসের যৌথ নেতৃত্বে একটি নতুন দল' স্বরাজ পার্টি 'গঠন করা হয়ে ছিলো /এবং যুব গোষ্ঠী বিসমিলের নেতৃত্বে একটি বিপ্লবী দল গঠন করেছিলন/

লালা হর দয়াল এর সম্মতিতে বিসমিল এলাহাবাদে গিয়েছিলেন, সেখানে তিনি ১৯২৩ সালে শচীন্দ্রনাথ সান্যাল এবং বাংলার আরেক বিপ্লবী ডঃ যদুগোপাল মুখার্জী(তমলুক-পূর্ব মেদিনীপুর)র সহায়তায় দলের গঠনতন্ত্রের খসড়া তৈরি করেন/সংস্থার মূল নাম এবং লক্ষ্যগুলি হলুদ কাগজে টাইপ করা হয়েছিল/  পরবর্তীকালে সংবিধান-

কমিটির বৈঠক  ৩ রা অক্টোবর ১৯২৪  সালে কানপুরে অনুষ্ঠিত হয়,শচীন্দ্র নাথ সান্যালের সভাপতিত্বে/

এই বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, যে দলের নাম হবে হিন্দুস্তান রিপাবলিকান অ্যাসোসিয়েশন/ অন্যদের কাছ থেকে দীর্ঘ আলোচনার পরে বিসমিলকে সেখানে শাহজাহানপুর জেলা আয়োজক এবং অস্ত্র বিভাগের প্রধান ঘোষণা করা হয়/ইউনাইটেড প্রদেশের প্রাদেশিক সংগঠকের (আগ্রা ও আউধ) অতিরিক্ত দায়িত্বও তাঁকে দেওয়া হয়েছিল/শচীন্দ্রনাথ সান্যাল, সর্বসম্মতভাবে জাতীয় সংগঠক হিসাবে মনোনীত হয়েছিলেন এবং অপর প্রবীণ সদস্য যোগেশ চন্দ্র চ্যাটার্জীকে  অনুশীলন সমিতির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল/ কানপুরে বৈঠকে অংশ নেওয়ার পরে সান্যাল  ও চ্যাটার্জি উভয়ই ইউপি থেকে চলে যান/  এবং সংগঠনের আরও সম্প্রসারণের জন্য বাংলায়  যোগাযোগ শুরু করেন/

তাদের এই বিপ্লবী  কাজ-কর্মে  অর্থ সংগ্রহ করবার আর  অস্ত্রসস্ত্র আনার জন্য  বিসমিল শাহজাহানপুর থেকে লখনৌতে ট্রেনে  ভ্রমণের সময় খেয়াল করলেন যে প্রত্যেক স্টেশন মাস্টার তার কেবিনে গার্ডের মাধ্যমে টাকার ব্যাগ আনছেন/ সেই টাকার ব্যাগটি লখনৌ জংশনের সুপারেন্টেন্ডেন্টের কাছে হস্তান্তর করা হচ্ছে/ বিসমিল সিদ্ধান্ত নিলেন সরকারি অর্থ লুট করবার /বিসমিল  লখনউয়ের নিকটে কাকোরিতে একটি ট্রেনে বহনকারী সরকারী কোষাগার লুট করার জন্য একটি পরিকল্পনার রূপরেখাও তৈরী করে ফেললেন/বিপ্লবীরা তাদের কার্যক্রম চালানোর জন্য এবং অস্ত্রশস্ত্র কেনার উদ্দেশ্যে, বিপ্লবীরা ৮ আগস্ট ১৯২৫ তারিখে শাহজাহানপুরে একটি সভায় বসেন/ অনেক কথাবার্তার পর  সিদ্ধান্ত হয় যে তারা সরণপুর লখনৌ চলাচলকারী ৮-ডাউন প্যাসেঞ্জার ট্রেন বহনকারী সরকারি কোষাগার লুট করবেন/

এই ঐতিহাসিক ঘটনাটি ১৯২৫ সালের ৯ ই  আগস্ট ঘটেছিল এবং এই ঘটনাটি কাকোরি ষড়যন্ত্র হিসাবে পরিচিত/

৯ আগস্ট ১৯২৫ তারিখে আসফাকউল্লা খান এবং অন্য আটজন বিসমিলের নেতৃত্বে মোট ১০ জন ট্রেন লুট করেন/ অন্যরা হলেন বারানসি থেকে রাজেন্দ্র লাহিড়ী, বাংলা থেকে শচীন্দ্র নাথ বক্সী , উন্নাও থেকে চন্দ্রশেখর আজাদ, কলকাতা থেকে কেশব চক্রবর্তী, রাইবেরেলি থেকে বনওয়ারী লাল, ইটাওয়া থেকে মুকুন্দি লাল, বেনারস থেকে মন্মথ নাথ গুপ্ত এবং শাহজাহানপুর থেকে মুরারি লাল/


দশ জন বিপ্লবীরা ৮-ডাউনের সাহারানপুর-লখনউ যাত্রীবাহী ট্রেনটি কাকোরিতে থামিয়ে দিয়েছিল / লখনউ রেলওয়ে জংশনের ঠিক আগের স্টেশন/  এই ক্রিয়াকলাপে জার্মান-তৈরি মাউসার সি ৯৬ আধা-স্বয়ংক্রিয় পিস্তল ব্যবহৃত হয়েছিল/  এইচ আর এ চিফ রাম প্রসাদ বিসমিল, লেফটেন্যান্ট আশফাকুল্লা খান ,তার মাউসারকে মন্মথ নাথ গুপ্তের হাতে তুলে দিয়েছিলেন/ আগ্রহের সাথে  ঐ নতুন অস্ত্র দেখছিল, মন্মথ নাথ গুপ্ত/ মন্মথ গুলি চালালে দুর্ঘটনাক্রমে ট্রেন থেকে উঠে আসা যাত্রী আহমেদ আলীকে গুলি লাগে/ তিনি মারা যান/

৪০ জনেরও বেশি বিপ্লবীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল এই ঘটনায় এবং কেবল দশ জনই এই ঘটনায়  অংশ নিয়েছিল/ ঘটনার সাথে পুরোপুরি সম্পর্কিত না হওয়া ব্যক্তিদেরও ধর পাকড় করা হয়েছিলো/  তবে তাদের কিছুকে ছাড় দেওয়া হয়েছিল/ সরকার নিযুক্ত জগৎ নারায়ণ মোল্লাকে অবিশ্বাস্য ফি দিয়ে সরকারী আইনজীবী হিসাবে নিয়োগ করেছিলেন/ ডক্টর হরকরন নাথ মিশ্র (ব্যারিস্টার ,এম.এল.এ.) এবং ডাঃ মোহন লাল স্যাক্সেনা (এম এল সি) প্রতিরক্ষা পরামর্শে নিযুক্ত ছিলেন/ অভিযুক্তদের রক্ষার জন্য প্রতিরক্ষা কমিটিও গঠন করা হয়েছিল/ গোবিন্দ বল্লভ পন্থ, চন্দ্র ভানু গুপ্ত এবং কৃপা শঙ্কর হাজেলা তাদের মামলা লড়ে ছিলেন/ পুরুষদের দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছিল এবং পরবর্তী আপিলগুলি ব্যর্থ হয়েছিল/ ১৯২৭ সালের ১ লা সেপ্টেম্বর লন্ডনে প্রিভি কাউন্সিলের কাছে দায়মুক্তির চূড়ান্ত আবেদন জানানো হয়েছিল কিন্তু তাও ব্যর্থ হয়েছিল/

১৮ মাসের আইনী প্রক্রিয়া অনুসরণ করার পরে বিসমিল, আশফাকুল্লা খান, রওশন সিং এবং রাজেন্দ্র নাথ লাহিড়ীকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছিল/ ১৯২৭ সালের ১৯ ডিসেম্বর বিসমিলকে গোরক্ষপুর কারাগারে, আশফাকুল্লা খানকে ফৈজাবাদ কারাগারে এবং রোশন সিংকে  এলাহাবাদ কারাগারে ফাঁসি দেওয়া হয়েছিল/ লাহিড়িকে দু'দিন আগে গন্ডা কারাগারে ফাঁসি দেওয়া হয়েছিল/

রাম প্রসাদ বিসমিলের আত্মজীবনীটি কাকোরি কে শাহেদের প্রচ্ছদ শিরোনামে প্রকাশিত হয়েছিল/ গণেশ শংকর ছাত্রার্থী ১৯২৮ সালে প্রতাপ প্রেস, কানপুর থেকে/ এই বইয়ের মোটামুটি অনুবাদটি ব্রিটিশ ভারতের ইউনাইটেড প্রদেশের ফৌজদারি তদন্ত বিভাগ তৈরি করেছিল/ অনুবাদকৃত বইটি সারা দেশে অফিসিয়াল এবং পুলিশ ব্যবহারের জন্য গোপনীয় নথি হিসাবে প্রচারিত হয়েছিল /

তিনি ভারতে ব্রিটিশ রাজ আমলে যুদ্ধের ডাক হিসাবে  তার বিখ্যাত রচনা -

"সারফারোশি কি তামান্না আব হামারে দিল মে হে দেখ না হে জোর কিতনা বাজো হে কাতিল মে হে" কবিতাটি অমর করেছিলেন।/এটি প্রথম দিল্লি থেকে প্রকাশিত "সাবাহ" জার্নালে প্রকাশিত হয়েছিল/ পরে এটি একটি জনপ্রিয় সংগীত রূপে আমরা শুনতে পাই /

গ্রেটার নয়েডায় রাম প্রসাদ বিসমিল উদ্যান পার্ক 

শাহজাহানপুরের শহীদ স্মারক সমিতি শাহজাহানপুর শহরের খিরনি বাগ মহল্লায় একটি স্মৃতিসৌধ প্রতিষ্ঠা করে যেখানে বিসমিলের জন্ম ১৮৯৭ সালে হয়েছিল এবং তার নামকরণ করা হয় "অমর শহীদ রাম প্রসাদ বিসমিল স্মারক"/

ভারতীয় রেলের উত্তর রেলওয়ে অঞ্চল শাহজাহানপুর থেকে ১১ কিমি বা ৬.৮  মাইল দূরে বিপ্লবী রাম প্রসাদ বিসমিল রেল স্টেশন নির্মাণ করা হয়েছে /কাকোরিতেই কাকোরি ষড়যন্ত্রকারীদের একটি স্মৃতিসৌধ রয়েছে/১৯৮৩ সালের ১৯ ডিসেম্বর এটি ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী উদ্বোধন করেছিলেন/

ভারত সরকার বিসমিলের জন্মশতবর্ষে ১৯ ডিসেম্বর ১৯৯৭ এ একাধিক স্মারক ডাকটিকিট  ছাপিয়ে তাঁকে সম্মান জানিয়েছিলেন/

উত্তরপ্রদেশ সরকার তাঁর নামে একটি পার্কের নামকরণ করেছিলেন "অমর শহীদ রাম প্রসাদ বিসমিল উদ্যান " রামপুর জগির গ্রামের কাছে/

হে বীর লহ প্রনাম, তোমার স্থান ভারতবর্ষের কোটি কোটি ভারতবাসীর মনের মণিকোঠায়/

আজ এই মহান বীর বিপ্লবীর জন্মজয়ন্তীতে আমার আন্তরিক শ্রদ্ধা ও আভূমি প্রনাম জানাই/


No comments