Page Nav

HIDE

Grid Style

GRID_STYLE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

বাঙালীর সমাজ ও জাতিবিন্যাসের বিবর্তন’ রানা চক্রবর্তী

‘প্রাচীন যুগে আর্যসমাজ থেকে বাঙলার সমাজসংগঠন সম্পূর্ণ পৃথক ছিল। আর্যসমাজ প্রতিষ্ঠিত ছিল ‘ব্রাহ্মণ’, ‘ক্ষত্রিয়’, ‘বৈশ্য’ ও ‘শূদ্র’ - এই চতুর্বর্ণের ওপরে। সুতরাং ‘বিদেহ’র পূর্বে অবস্থিত ‘প্রাচ্য’ দেশে চতুর্বর্ণ সমাজের অনুপ্রবেশ ঘট…

 





                                   

প্রাচীন যুগে আর্যসমাজ থেকে বাঙলার সমাজসংগঠন সম্পূর্ণ পৃথক ছিল। আর্যসমাজ প্রতিষ্ঠিত ছিল ‘ব্রাহ্মণ’, ‘ক্ষত্রিয়’, ‘বৈশ্য’ ও ‘শূদ্র’ - এই চতুর্বর্ণের ওপরে। সুতরাং ‘বিদেহ’র পূর্বে অবস্থিত ‘প্রাচ্য’ দেশে চতুর্বর্ণ সমাজের অনুপ্রবেশ ঘটেনি। সেখানে যে সমাজ প্রতিষ্ঠিত ছিল, সেটা ছিল ‘কৌমসমাজ’ - বিভিন্ন বৃত্তিধারী জাতিগোষ্ঠীর সমাজ। সে সমাজের মধ্যে ছিলেন নানাবৃত্তিধারী মানুষ। কিন্তু তাঁদের মধ্যে চতুর্বর্ণের বিভেদ না থাকার দরুনই আর্যরা প্রাচ্যদেশের লোকদের ঘৃণার চোখে দেখতেন৷ তবে প্রাক্-আর্যদের প্রতি বৈদিক আর্যদের বিদ্বেষপূর্ণ মনোভাব খুব বেশি দিন টেকেনি। ‘পঞ্চনদের উপত্যকা’ থেকে আর্যরা যতই পূর্বদিকে অগ্রসর হয়েছিল, প্রাক্‌-আর্যজাতিসমূহের সঙ্গে তাঁদের ততই সংমিশ্রণ ঘটেছিল। সেই সংমিশ্রণ মূলতঃ বিবাহের মাধ্যমে ঘটেছিল। ক্রমশঃ আর্যরা প্রাক-আর্যজাতিসমূহের সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় রীতিনীতি ও আচার-ব্যবহার অনেক গ্রহণ করতে শুরু করেছিলেন৷ ‘সুত্র’ যুগেই সেই সংমিশ্রণ ও সাংস্কৃতিক আদান-প্রদান পূর্ণ মাত্রায় ঘটেছিল। প্রাচ্যদেশের লোকদের প্রতি তাঁদের একটা উদার মনোভাব সেই যুগেই সঞ্চারিত হয়েছিল এবং তাঁরা বিধান দিয়েছিলেন যে, যদি কেউ তীর্থ যাত্রা বা অন্য কোনও কারণে প্রাচ্যদেশে যায়, তবে তাঁদের সে দোষ স্খলিত হবে ‘পুনোষ্টম’ বা ‘সর্বপৃষ্টা’ নামক যজ্ঞদ্বারা। কিন্তু পরে এই ‘শুদ্ধিকরণ-বিধানের’ও ক্রমশঃ অবলুপ্তি ঘটেছিল। আগেই বলা হয়েছে যে প্রাচীন বাঙলার সামাজিক সংগঠন ‘কৌমভিত্তিক’ ছিল। বাঙলার জনপদগুলি সেই সকল ‘কৌমজাতি’র নামেই অভিহিত হত। সেই সকল ‘কৌমজাতি’র মধ্যে অন্যতম ছিল - ‘পূন্ড্র’, ‘বঙ্গ’, ‘কর্বট’ প্রভৃতি। গবেষকদের মতে, সেই ‘পূন্ড্র’দের বংশধররাই হচ্ছেন বর্তমানের ‘পোদ’ জাতি। অনুরূপভাবে এটাও অনুমেয় যে, বর্তমান ‘কৈবর্ত’জাতি ‘কর্বট’-কৌমের বংশধর। এইসব জাতি ছাড়া প্রাচীন বাঙলায় আর এক জাতি ছিল। তাঁরা হচ্ছেন ‘বাগ্‌দি’ জাতি। এছাড়া আরও ছিলেন - ‘হাড়ি’, ‘ডোম’, ‘বাউড়ি’ প্রভৃতি জাতির পূর্বপুরুষরা। প্রাচীন গ্রীক লেখকদের রচনাবলী থেকে জানতে পারা যায় যে, ‘মৌর্যদের’ সময় পর্যন্ত ‘বাগ্‌দি’রাই ‘রাঢ়দেশের’ সংখ্যা গরিষ্ঠ জাতি ছিলেন। ‘কৈবর্ত’দের উল্লেখ ‘মনু’র ‘মানবধর্মশাস্ত্র’-এ পাওয়া যায়। ‘মনু’ তাঁদের ‘বর্ণ-সঙ্কর’ বলে অভিহিত করেছিলেন। ‘বিষ্ণুপুরাণ’-এ তাঁদের ‘অব্রাহ্মণ্য’ বলা হয়েছে। গবেষকরা মনে করেন যে, ‘মনু’ অপেক্ষা ‘বিষ্ণুপুরাণ’-এর উক্তিই ঠিক। কারণ বঙ্গদেশের অতি প্রাচীন অধিবাসী হিসাবে ‘কৈবর্ত’দের সংস্কৃতি যে আর্যদের ‘ব্রাহ্মণ্যধর্মবিহিত সংস্কৃতি’ থেকে ভিন্ন ছিল, সে বিষয়ে গবেষকদের কোন সন্দেহ নেই। পরবর্তী কালে ‘পালরাজা’দের সময় ‘কৈবর্ত’-জাতির শক্তির প্রবল অভ্যুত্থান ঘটেছিল। ‘পালরাজা’দের অধীনস্থ এক ‘কৈবর্ত সামন্তরাজ’ ‘দিব্যোক’ তাঁর প্রভুর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে ‘পাল রাজ’ ‘দ্বিতীয় মহীপাল’কে (১০৭০-৭১ খ্রীস্টাব্দ) নিহত করে ‘বরেন্দ্রভূম’ অধিকার করেছিলেন এবং সেখানে কিছুকাল রাজত্বও করেছিলেন। ‘দিব্যোকের’ উত্তরাধিকারী হিসাবে আরও দু’জন ‘কৈবর্তরাজা’ ‘বরেন্দ্রদেশ’ শাসন করেছিলেন। তাঁরা হচ্ছেন ‘রুদোক’ ও ‘ভীম’। সেই সময় কৈবর্তরা খুব শক্তিশালী হয়ে উঠেছিলেন ও সমাজে তাঁরা বেশ গুরুত্বপূর্ণ স্থান অধিকার করতেন। তখন তাঁরা আর ‘অব্রাহ্মণ্য’ বা ব্রাহ্মণ্য সংস্কৃতির বাইরে ছিলেন না। বস্তুতঃ তাঁদের মধ্যে অনেকেই তখন ‘ব্রাহ্মণ্যধর্ম ও সংস্কৃতি’ গ্রহণ করেছিলেন এবং সংস্কৃত ভাষায় পারদর্শিতা লাভ করে কবিতা রচনা করতে শুরু করে দিয়েছিলেন। জনৈক ‘কৈবর্ত কবি’ ‘পপিপ’-কর্তৃক রচিত একটি ‘গঙ্গাস্তোত্র’ ‘সদুক্তিকৰ্ণায়ত’ গ্রন্থে উদ্ধৃত হয়েছিল। আর এক জাতি যাঁরা সেই সময় প্রাধান্য লাভ করেছিল, তাঁরা হচ্ছেন বর্তমান ‘সদগোপ’ জাতির পূর্বপুরুষেরা। ‘তাম্রাশ্মযুগ’ থেকেই গ্রামের কৃষিভিত্তিক অর্থনীতিতে তাঁদের গুরুত্বপূর্ণ স্থান ছিল। গবেষকরা মনে করেন যে, ‘দক্ষিণরাঢ়ে’ ‘কৈবর্তদের’ যেমন আধিপত্য ছিল, ‘উত্তররাঢ়ে’ তেমনই ‘সদগোপ’দের প্রাধান্য ছিল। বর্তমানকালে এই দুই জাতির পারস্পরিক অবস্থান থেকে গবেষকদের সেটাই মনে হয়। অবশ্য গবেষকদের এরূপ অনুমান করবার সপক্ষে যথেষ্ট কারণ আছে যে, ‘পাল’ ও ‘শূরবংশীয়’ রাজারা ‘সদগোপ’ ছিলেন। গবেষকরা আরও মনে করেন যে, বাঙলায় ‘তন্ত্রধর্মের’ ব্যাপক প্রচার তাঁদের চেষ্টাতেই হয়েছিল। বস্তুতঃ তাঁরা ‘শিব’ ও ‘শক্তি’র উপাসক ছিলেন। ‘বর্ধমান’ ও ‘বীরভূমের’ অংশবিশেষ নিয়েই ছিল সদগোপদের বাসস্থান - যেটাকে ‘গোপভূম’ বলা হত। সদগোপদের বিভিন্ন শাখা ‘ভালকী’, ‘অমরাগড়’, ‘কাঁকশা’, ‘দিগ্‌নগর’, ‘ঢেক্করী’, ‘মঙ্গলকোট’, ‘নীলপুর’ প্রভৃতি জায়গায় বহু ‘সদগোপ’ রাজ্য স্থাপন করেছিলেন। ‘পালরাজা’দের আধিপত্যের সময় তাঁরা পালরাজাদেরই ‘সামন্তরাজা’ হিসাবে রাজত্ব করতেন। সেই সব ‘সদেগাপরাজা’দের মধ্যে অন্যতম ছিলেন ‘ইছাই ঘোষ’ বা ‘ঈশ্বর ঘোষ’। খ্রীস্টীয় একাদশ শতাব্দীতে তাঁর আবির্ভাব ঘটেছিল। তিনি ‘পালরাজ’ ‘মহীপালের’ (৯৭৭-১০২৭ খ্রীস্টাব্দ) সমসাময়িক ছিলেন। ‘রামগঞ্জের তাম্রশাসনে’ ‘ইছাই ঘোষের বংশ তালিকা’ পাওয়া যায়। তা থেকে জানতে পারা যায় যে, ‘মহামাণ্ডলিক’ ইছাই (ঈশ্বর) ঘোষের পিতা ছিলেন ‘ধবলঘোষ’ (‘ধর্মমঙ্গলকাব্য’ অনুযায়ী ‘সোমঘোষ’), তাঁর পিতামহ ছিলেন ‘বলঘোষ’ ও প্রপিতামহ ছিলেন ‘ধূর্তঘোষ’। এ থেকে গবেষকদের মনে হয় যে, ‘ধূর্তঘোষ’ খুব সম্ভবতঃ ‘পালরাজ রাজ্যপাল’ বা ‘দ্বিতীয় গোপালের’ সমসাময়িক ছিলেন। ‘অমরাগড়ে’ ইছাই ঘোষের সমসাময়িক ‘সগোপরাজা’ ছিলেন ‘হরিশ্চন্দ্র’। ইছাই ঘোষ ছিলেন ‘ধর্মঠাকুরের উপাসক’ আর ‘হরিশ্চন্দ্র’ ছিলেন ‘ভবানীর উপাসক’। এখানে একথা উল্লেখযোগ্য যে, ‘রামগঞ্জের তাম্রশাসনে’ ইছাই ঘোষের নামের সঙ্গে যে-সকল উপাধিসূচক বিশেষণ প্রয়োগ করা হয়েছিল, সেগুলো পালরাজগণ কর্তৃক ব্যবহৃত উপাধিসমূহকেও হার মানিয়ে দেয়। ‘উত্তররাঢ়ে’ যেমন ‘সদগোপ’দের প্রাধান্য ছিল, তেমনই ‘বাঁকুড়া’ জেলায় ছিল ‘মল্ল’দের প্রাধান্য। তাঁরা প্রাচীন ‘জৈনধর্মাবলম্বী’দের উত্তরপুরুষ ছিলেন কিনা সেটা বিবেচ্য। কেননা, ‘মহাবীর’ ‘মলভার’ বহন করতেন এবং অনেক জৈন অতি গৌরবের সঙ্গে ‘মলধারী’ উপাধি ধারণ করতেন। পরবর্তীকালে অবশ্য ‘মল্ল’ শব্দটি ‘বীর’ শব্দের সমবাচক শব্দ হিসাবেই গণ্য হত। সে যাই হোক, পরবর্তীকালে ‘আদিমল্ল’, ‘জয়মল্ল’, ‘কালুমল্ল’ ও ‘বীর হাম্বীর’ প্রভৃতি মল্লরাজগণের সাক্ষাৎ পাওয়া যায়। যদিও ‘বাঁকুড়া’র ‘বিষ্ণুপুরে’ তাঁদের রাজধানী অবস্থিত ছিল, তথাপি তাঁদের রাজশক্তি উত্তরে ‘সাঁওতাল পরগনা’র ‘দামিন-ই-কো’ থেকে দক্ষিণে ‘মেদিনীপুর’ জেলা পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। ‘বর্ধমানের’ অংশবিশেষ ও পশ্চিমে ‘পঞ্চকোট’, ‘মানভূম’ ও ‘ছোটনাগপুরের’ অংশবিশেষও তাঁদের রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত ছিল। এখানে উল্লেখনীয় যে ‘বৃহদ্ধর্মপুরাণ’-এ ‘মল্ল’দের ‘অন্ত্যজ জাতি’ বলে অভিহিত করা হয়েছে।                                 

যদিও খ্রীস্টপূর্ব যুগ থেকেই বঙ্গদেশে ‘ব্রাহ্মণ্যধর্মের’ অনুপ্রবেশ ঘটেছিল, তবুও ‘গুপ্তযুগের’ আগে ব্রাহ্মণ্যধর্ম বঙ্গদেশে বিশেষ প্রতিষ্ঠা লাভ করতে পারেনি। বস্তুতঃ গুপ্তযুগেই ভারতের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ব্রাহ্মণরা এসে বঙ্গদেশে বসবাস করতে শুরু করেছিলেন। সমসাময়িক ‘তাম্রপট্ট’সমূহ থেকে জানতে পারা যায় যে, সেই সময় বাঙলায় চিরস্থায়ী বসবাসের জন্য বহু ব্রাহ্মণকে ভূমি দান করা হয়েছিল এবং মন্দির নির্মাণ করাও হয়েছিল। সেই সব লিপি থেকে আরও জানতে পারা যায় যে, সেই সব ব্রাহ্মণ ‘বেদের’ বিভিন্ন শাখার অন্তর্ভুক্ত ছিলেন এবং ‘বৈদিক যজ্ঞ ও ক্রিয়াকলাপাদি’ সম্পন্ন করা সম্বন্ধে তাঁদের বিশেষ পারদর্শিতা ছিল। সাধারণতঃ সেই সকল ব্রাহ্মণ ‘শর্মা’ ও ‘স্বামিন’ উপাধি ধারণ করতেন। ব্রাহ্মণদের মধ্যে ‘গাঞি’ প্রথারও প্রচলন ছিল। ‘গাঞি’ বলতে সেই গ্রামকে বোঝাত যে গ্রামে এসে তাঁরা প্রথম বসবাস শুরু করেছিলেন। সেই সকল ‘গাঞি’ এর নাম (যেমন ‘ভট্ট’, ‘চট্ট’, ‘বন্দ্যো’ ইত্যাদি) পরবর্তীকালে উপাধি হিসাবে ব্যবহৃত হয়েছিল৷ সেই সব ‘তাম্রপট্টলিপি’ থেকে ‘ব্রাহ্মণেতর জাতিসমূহের’ যেসব উপাধি পাওয়া যায় সেগুলি হচ্ছে ‘দত্ত’, ‘পাল’, ‘মিত্র’, ‘বর্মণ’, ‘দাস’, ‘ভদ্র’, ‘সেন’, ‘দেব’, ‘ঘোষ’, ‘কুণ্ড’, ‘পালিত’, ‘নাগ’, ‘চন্দ্র’, ‘দাম’, ‘ভূতি’, ‘বিষ্ণু’, ‘যশ’, ‘শিব’, ‘রুদ্র’ ইত্যাদি। এই সব উপাধি বর্তমানকালে ‘কায়স্থ’ ও অন্যান্য জাতিসমূহ নিজেদের পদবী হিসাবে ব্যবহার করেন। কিন্তু এখানে যে যুগের কথা বলা হচ্ছে, সে যুগে স্বতন্ত্র জাতি হিসাবে ‘কায়স্থ’ জাতির উদ্ভব হয়নি। পরবর্তী কালের ‘তাম্রপট্ট’সমূহে অবশ্য এক শ্রেণীর ‘রাজকীয় কর্মচারী’র উল্লেখ পাওয়া যায়, যাঁদের নামের সঙ্গে ‘প্রথম-কায়স্থ’, ‘জ্যেষ্ঠকায়স্থ’, ইত্যাদি বিশেষণ ব্যবহার করা হয়েছিল। কিন্তু তাঁরা সাধারণতঃ ‘সচিবালয়ে’ লেখকের কাজ করতেন। সেই সময়ে ‘সমার্থবোধক’ শব্দহিসাবে ‘করণ’ শব্দও ব্যবহৃত হতে দেখতে পাওয়া গিয়েছিল। প্রাচীন গ্রন্থসমূহ থেকেও জানতে পারা যায় যে, প্রথমে ‘কায়স্থ’ এক বিশেষ বৃত্তিধারী গোষ্ঠীর নাম ছিল, সেটা কোনও বিশেষ জাতির নাম ছিল না৷ ‘বৃহদ্ধর্মপুরাণ’-এর জাতির তালিকার মধ্যে ‘কায়স্থ’ শব্দের পরিবর্তে ‘সমার্থবোধক’ ‘করণ’ শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে। ‘চান্দেল্লরাজ’ ‘ভোজবর্মণের’ ‘অজয়গড়-লিপি’তেও সেটাই করা হয়েছিল। ‘গাহডবালরাজ’ ‘গোবিন্দচন্দ্রের’ লপিসমূহেও সেটা দেখা যায়। সবচেয়ে বিচিত্র ব্যাপার হল, যদিও ওই সময়ের লিপিসমূহে ব্রাহ্মণ ব্যতীত অন্যান্য অনেকেরই নামের পাওয়া যায়, কিন্তু তাঁরা কেউই নিজেদের ‘ক্ষত্রিয়’ বা ‘বৈশ্য’ বলে দাবি করেনি। বিশেষ করে গবেষকরা প্রচুর পরিমাণে ‘নগরশ্রেষ্ঠী’, ‘সার্থবাহ’, ‘ব্যাপারী’ প্রভৃতি শব্দের উল্লেখ পেয়েছেন। কিন্তু তাঁদের কাউকেই নিজেদের ‘বৈশ্য’ বলে দাবি করতে দেখা যায়নি। এ থেকে গবেষকরা অনুমান করেন যে, ‘উত্তরভারতের’ ন্যায় ‘বর্ণবাচক জাতি’ হিসাবে ‘ক্ষত্রিয়’ ও ‘বৈশ্য’ জাতি কোনও দিনই বঙ্গদেশে ছিল না, যদিও বর্তমানে অনেক জাতির ক্ষেত্রে নিজেদের ‘ক্ষত্রিয়ত্ব’ দাবি করা একটা নেশায় পরিণত হয়েছে। এখানে যে সমাজের চিত্র দেওয়া হল, সেটা হচ্ছে ‘গুপ্তযুগের’ সমাজের চিত্র। আগেই বলা হয়েছে যে, সেই যুগেই ‘উত্তরভারত’ থেকে ব্রাহ্মণরা দলে দলে বঙ্গদেশে এসে বসবাস শুরু করেছিলেন ও সমাজে প্রতিষ্ঠালাভ করেছিলেন। পরবর্তী কালে তাঁরাই ‘সপ্তশতী’ বা ‘সাতশতী’ ব্রাহ্মণ নামে অভিহিত হয়েছিলেন। ‘রাঢ়দেশে’ তাঁরা ‘সাতটি গোত্রভুক্ত’ ছিলেন ও ‘বরেন্দ্রদেশে’ ‘পাঁচটি গোত্রভুক্ত’ ছিলেন। ‘কুলশাস্ত্র’সমূহে তাঁদের বিরুদ্ধে ‘নিষ্ঠাহীনতা ও অজ্ঞতা’র যে অভিযোগ করা হয়েছিল, সেটা গবেষকদের কাছে ‘অভিসন্ধিমূলক কু-প্রচার’ বলেই মনে হয়। এটা পালযুগের ভূমিদান সংক্রান্ত ‘তাম্রপট্টলিপি’সমূহ থেকে প্রমাণিত হয়। কেননা, ‘গুপ্তযুগে’ সাধারণ ব্যক্তিরাই ব্রাহ্মণদের ভূমিদান করতেন। কিন্তু ‘পালযুগে’ রাজারাজড়ারাও ব্রাহ্মণদের ভূমিদান করতে শুরু করেছিলেন। সেই সব ‘তাম্রপট্টলিপি’সমূহে ব্রাহ্মণদের ‘শাস্ত্রজ্ঞ ও যাগযজ্ঞাদিকর্মে বিশেষ পারদর্শী’ বলে বর্ণনা করা হয়েছিল। সেই সব ব্রাহ্মণ যে ‘সপ্তশতী’ সমাজভুক্ত ছিলেন, সে বিষয়ে গবেষকদের কোন সন্দেহ নেই। সেই সকল লিপি থেকে আরও জানতে পারা যায় যে, বঙ্গদেশে ‘ব্রাহ্মণ’ ব্যতীত চতুর্বর্ণের অন্তর্ভুক্ত ‘ক্ষত্রিয়’ ও ‘বৈশ্য’ বলে আলাদা কোন বর্ণের কোন অস্তিত্ব ছিল না। তার মানে ‘গুপ্তযুগের’ ন্যায় ‘পালযুগে’ও অনুরূপ সমাজব্যবস্থাই চালু ছিল। মোট কথা, ওই যুগের ব্রাহ্মণেতর সমাজে পরবর্তী কালের ন্যায় কোনরূপ জাতিভেদ ছিল না। ‘কায়স্থ’রা ‘পেশাদারী শ্রেণী’ হিসাবেই গণ্য হতেন এবং তাঁরা রাজাদের মন্ত্রী ও এমন কি ‘ভিষক্’ হিসাবেও নিযুক্ত হতেন। এরূপ একজন ‘ভিষক্-কায়স্থ’ ‘শব্দপ্রদীপ’ নামে একখানি ‘ভেষজ-সম্পর্কিত গ্রন্থ’ রচনা করেছিলেন। বস্তুতঃ নবম ও দশম শতাব্দী থেকেই ‘কায়স্থ’রা নিজেদের স্বতন্ত্র জাতি হিসাবে গণ্য করতে শুরু করেছিলেন। এবং তখনই বোধ হয় অন্যান্য জাতিসমূহের অভ্যুত্থান ঘটেছিল। স্বতন্ত্র জাতি হিসাবে ‘কৈবর্ত’দের তো অভ্যুত্থান ঘটেই ছিল, কারণ তা ‘দিব্যোকের’ বিদ্রোহ থেকেই প্রকাশ পায়। কিন্তু অন্য কোনও ব্রাহ্মণেতর জাতির উল্লেখ ‘পালযুগের অনুশাসনসমূহে’ বড় একটা পাওয়া যায় না। সেই সকল ‘অনুশাসনে’ প্রধান ও অপ্রধান রাজকর্মচারীদের নামের তালিকার পরে যাঁদের উল্লেখ পাওয়া যায়, তাঁরা ছিলেন ‘প্রতিবেশী’, ‘ক্ষেত্রকার’ (বা ‘ভূমিকৰ্ষক’) এবং ‘কুটুম্ব’ বা প্রধান প্রধান গৃহস্থ। সুতরাং বঙ্গদেশে বর্তমানে যে জাতিবিন্যাস দেখতে পাওয়া যায়, পাল যুগে সেটার সম্পূর্ণ অভাব পরিলক্ষিত হয়। সমাজের নিম্নকোটির অন্তর্ভুক্ত যাঁদের নাম সেই সব ‘অনুশাসন’ থেকে পাওয়া যায়, তাঁদের অন্যতম হচ্ছেন ‘মেদ’, ‘অনধ্র’ ও ‘চণ্ডাল’। কিন্তু ‘চর্যাসাহিত্যে’ যে সব জাতির উল্লেখ পাওয়া যায় তাঁরা হচ্ছেন ‘ডোম’, ‘চণ্ডাল’, ‘শবর’ ও ‘কাপালিক’। তাঁরা সকলেই নিম্নস্তরের লোক ছিলেন৷ ‘ডোমেরা’ গ্রাম বা নগরের বাইরে বাস করতেন ও ব্রাহ্মণগণ কর্তৃক ‘অস্পৃশ্য’রূপে গণ্য হতেন। বৃত্তি হিসাবে তাঁরা ঝুড়ি-চুপড়ি ইত্যাদি তৈরি করতেন এবং নাচ-গানে তাঁরা বিশেষ পারদর্শী ছিলেন। সকলের নীচে স্থান ছিল ‘কাপালিক’দের। তাঁরা ‘নর-কঙ্কালের মালা’ পরে সম্পূর্ণ নগ্ন অবস্থায় ঘুরে বেড়াতেন। ‘শবর’রা পর্বতে ও অরণ্যে বাস করতেন। তাঁরা ‘ময়ূরপুচ্ছের পরিচ্ছদ’ পরতেন এবং গলায় ‘গুঞ্জাবীজের মালা’ ও কানে ‘বজ্রকুণ্ডল’ ধারণ করতেন। তাঁরা সঙ্গীতেও পারদর্শী ছিলেন এবং তাঁদের দ্বারা ‘শবরী’ রাগের প্রবর্তন হয়েছিল।

এবারে দেখা যাক যে, বাঙলার সমাজবিন্যাসের ইতিহাসে ‘সেনযুগে’ কি ঘটেছিল। ‘পালরাজা’রা ‘বৌদ্ধ’ ছিলেন, কিন্তু ‘সেনরাজা’রা ছিলেন ব্রাহ্মণ্যধর্মের স্তম্ভস্বরূপ। ব্রাহ্মণ্যধর্মের পুনঃপ্রতিষ্ঠায় তাঁরা যথেষ্ট প্রয়াসী হয়েছিলেন। ব্রাহ্মণ্যধর্মের অন্তর্ভুক্ত পূজা-অর্চনাদি ও যাগযজ্ঞ সম্পাদনে তাঁরা ব্রতী হয়েছিলেন। সেই সময়ের সমাজ ব্যবস্থায় ব্রাহ্মণদের প্রাধান্য পুনরায় ঘটেছিল। তাঁরা ‘স্মৃতিশাস্ত্র’ সমূহের অনুশাসন অনুযায়ী বিধান দিতে থাকেন এবং এই সকল বিধান সমাজকে ক্রমশঃ গ্রাস করতে শুরু করেছিল। সেই যুগেই ‘রাঢ়ী’ ও ‘বারেন্দ্র’ ছাড়া, ‘বৈদিক’, ‘শাকদ্বীপি’ প্রভৃতি ব্রাহ্মণদের সঙ্গে বাঙালির প্রথম সাক্ষাৎ ঘটেছিল। নানা শ্রেণীর ব্রাহ্মণের ছড়াছড়ি ঘটায় সেই যুগে নূতন করে ‘ব্রাহ্মণসমাজ’ সংগঠিত হয়েছিল এবং কিংবদন্তী অনুযায়ী ‘সেনরাজা’ ‘বল্লালসেন’ ‘কৌলীন্য-প্রথা’ প্রবর্তন করেছিলেন। ব্রাহ্মণদের মধ্যে ‘গাঞ’-এর প্রাধান্য সেই যুগে পরিলক্ষিত হয়েছিল এবং ‘বন্দ্যো’, ‘চট্ট’, ‘মুখটী’, ‘ঘোষাল’, ‘পুতিতুন্ড’, ‘গাঙ্গুলী’, ‘কাঞ্জীলাল’ ও ‘কুন্দলাল’ - এঁরা প্রধান বা ‘মুখ্যকুলীন’ হিসাবে পরিগণিত হয়েছিলেন। আর ‘রারী’, ‘গুড়’, ‘মাহিন্ত’, ‘কুলভী’, ‘চৌতখণ্ডি’, ‘পিপ্পলাই’, ‘গড়গড়ি’, ‘ঘণ্টাসরী’, ‘কেশরকোনা’, ‘দিমসাই’, ‘পরিহল’, ‘হাড়’, ‘পিতমুণ্ডী’ ও ‘দীর্ঘতি’ - এঁরা হয়েছিলেন ‘গৌণ কুলীন’৷ বাকী ব্রাহ্মণরা ‘শ্রোত্রিয়’ শ্রেণীভুক্ত হয়েছিলেন। সেই সময় ‘রাঢ়ীয়দের’ ছিল ৬টি ‘গাঞ’ (কারুর মতে ৫২ বা ৫৯), আর ‘বারেন্দ্রদের’ ছিল ১০০টি ‘গাঞ’। কিন্তু কিংবদন্তী অনুযায়ী ‘বল্লালসেন’ কর্তৃক মাত্র পাঁচটি ‘বারেন্দ্র গাঞ’, যথা - ‘লাহিড়ী’, ‘বাগচী’, ‘মৈত্র’ ও ‘ভাদুড়ী’ - ‘কুলীন’ বলে স্বীকৃত হয়েছিল। ‘শ্রোত্রিয় ব্রাহ্মণ’রা তিন শ্রেণীতে বিভক্ত হয়েছিলেন, যথা - ‘সিদ্ধশ্রোত্রীয়’, ‘সাধ্য-শ্রোত্রীয়’ ও ‘কাষ্ঠশ্রোত্রীয়’। এখানে পরবর্তী কালে রচিত ‘কুলপঞ্জিকা’সমূহে উল্লেখিত এক কাহিনীর উল্লেখ করা যেতে পারে৷ সেই কাহিনী অনুযায়ী ‘গৌড়ের রাজা’ ‘আদিশূর’ একটি যজ্ঞ সম্পাদন করবার সংকল্প করে ‘কান্যকুব্জ’ থেকে ‘পাঁচজন বেদজ্ঞ ব্রাহ্মণ’কে নিয়ে এসেছিলেন। বলা হয় যে, বঙ্গদেশে ‘সাতশতী’, ‘বৈদিক’ প্রভৃতি শ্রেণী ছাড়া আর যত ব্রাহ্মণ বর্তমানে আছেন তাঁরা সকলেই সেই ‘পঞ্চব্রাহ্মণের বংশধর’। সেই ‘পঞ্চব্রাহ্মণের’ সঙ্গে যে পাঁচজন ভৃত্য এসেছিলেন, বর্তমান বাঙলার ‘কুলীন কায়স্থগণ’ নাকি তাঁদের মধ্যে চারজনের বংশধর। কুলগ্রন্থসমূহে ‘আদিশূর’কে ‘বল্লালসেনের মাতামহ’ বলা হয়েছিল। কিন্তু পণ্ডিতমহলে ‘আদিশূর’-কর্তৃক সেই ‘পঞ্চব্রাহ্মণ’ আনয়নের কাহিনী ‘ঐতিহাসিক সত্য’ বলে গ্রহণ করা হয়নি। তবে ‘আদিশূর’ নামে প্রাচীন বঙ্গদেশে যে কোনও রাজা ছিলেন না, বা তিনি কোনও যজ্ঞ সম্পাদন করেননি বা তা অলীক বলে মনে করবার সপক্ষেও কোন প্রমাণ নেই। কিন্তু ‘কুলপঞ্জিকা’সমূহে ‘আদিশূরের বংশাবলী ও রাজত্বকাল’ সম্বন্ধে বিভিন্ন গ্রন্থে বিভিন্ন ও পরস্পরবিরোধী মতও দেখতে পাওয়া যায়। তিনি যে যজ্ঞ সম্পাদন করেছিলেন বিভিন্ন ‘কুলপঞ্জিকায়’ সেটার বিভিন্ন নাম এবং তিনি যে ‘পঞ্চব্রাহ্মণ’ এনেছিলেন বিভিন্ন গ্রন্থে তাঁদের বিভিন্ন নাম দেখে ওই কাহিনীর যথার্থতা সম্বন্ধে সন্দেহ অবশ্যই জাগে। তবে এটা ঠিক যে ‘সেনরাজা’ ‘বল্লালসেন’ কর্তৃক নতুন করে সামাজিক সংগঠনের একটা চেষ্টা হয়েছিল, যদিও সেটার ধারা, প্রকৃতি ও পদ্ধতি সম্বন্ধে ঐতিহাসিক ও গবেষকদের আজও সঠিক কিছু জানা নেই। ‘মহামহোপাধ্যায় হরপ্রসাদ শাস্ত্রী’ বলেছিলেন যে, সেনযুগে ব্রাহ্মণ্যধর্মের পুনঃপ্রতিষ্ঠার সঙ্গে বহু ‘বৌদ্ধধর্মাবলম্বী’ হিন্দু ধর্মে ধর্মান্তরিত হয়েছিলেন এবং সামাজিক সংগঠনের মধ্যে তাঁদের স্থান নির্ণয় করবার প্রয়োজনীয়তা ‘সেনযুগে’ই অনুভূত হয়েছিল। এর ফলে, বঙ্গদেশে নানা জাতি ও উপজাতির সৃষ্টি হয়েছিল। ‘সেনরাজত্বের’ অব্যবহিত পরেই ‘বৃহদ্ধর্মপুরাণ’ ‘রাঢ়দেশে’ রচিত হয়েছিল। ‘বৃহদ্ধর্মপুরাণ’-এ নানা জাতি ও উপজাতির উল্লেখ পাওয়া যায়। সুতরাং ধরে নেওয়া যেতে পারে যে, ‘বৃহদ্ধর্মপুরাণ’-এ বর্ণিত জাতি ও উপজাতিসমূহ ‘সেনরাজত্বকালে’ও বর্তমান ছিল। ‘বৃহদ্ধর্মপুরাণ’-এ যে সকল জাতি ও উপজাতির তালিকা দেওয়া আছে, সেটা হচ্ছে -

১) ‘উত্তম সঙ্কর’ (‘শ্রোত্রীয় ব্রাহ্মণ’রা যাঁদের পুরোহিতের কাজ করেন) – (ক) করণ, (খ) অম্বষ্ঠ, (গ) উগ্র, (ঘ) মগধ, (ঙ) গন্ধবণিক, (চ) কাংস্যবণিক, (ছ) শঙ্খবণিক, (জ) কুম্ভকার, (ঝ) তন্তুবায়, (ঞ) কর্মকার, (ট) সদগোপ, (ঠ) দাস, (ড) রাজপুত, (ঢ) নাপিত, (ণ) মোদক, (ত) বারুজীবী, (থ) সুত, (দ) মালাকার, (ধ) তাম্বুলি ও (ন) তৈলক।

(২) ‘মধ্যম সঙ্কর’ – (ক) তক্ষ, (খ) রজক, (গ) স্বর্ণকার, (ঘ) সুবর্ণবণিক, (ঙ) আভীর, (চ) তৈলক, (ছ) ধীবর, (জ) শৌণ্ডিক, (ঝ) নট, (ঞ) শবক ও (ট) জালিক।

(৩) ‘অন্ত্যজ’ - (ক) গৃহি, (খ) কুড়ব, (গ) চণ্ডাল, (ঘ) বাদুর, (ঙ) চর্মকার (চ) ঘট্টজীবী, (ছ) দোলবাহী ও (জ) মল্ল।

এ ছাড়া ‘বৃহদ্ধর্মপুরাণ’-এ আরও যেসব জাতির উল্লেখ আছে, তাঁদের অন্যতম হচ্ছেন ‘শাকদ্বীপী ব্রাহ্মণ’ (‘দেবল’, ‘গণক’ ইত্যাদি) ও ‘ম্লেচ্ছজাতি’সমূহ, যথা - ‘পুলিন্দ’, ‘কক্কস’, ‘যবন’, ‘খস’, ‘সৌম্য’, ‘কম্বোজ’, ‘শবর’ ও ‘খর’। লক্ষ্যণীয় যে, ‘বাগদি’, ‘ডোম’, ‘কৈবর্ত’ প্রভৃতি যেসব জাতির একসময় বাঙলার জাতিবিন্যাসে প্রাধান্য ছিল, তাঁদের নাম এই তালিকায় নেই। উপরে প্রদত্ত তালিকা থেকে বেশ বোঝা যায় যে তৎকালীন জাতিসমূহের উৎপত্তি তিনভাবে ঘটেছিল - (ক) ‘বৃত্তিগত’, (খ) ‘কর্মগত’, ও (গ) ‘নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠীগত’। তবে ‘সুবর্ণবণিক’দের ‘মধ্যমসঙ্কর’রূপে গণ্য করবার কারণ সম্বন্ধে বলা হয় যে, ‘বল্লভানন্দ’ নামে সেই সময়ের প্রসিদ্ধ এক ‘সুবর্ণবণিক’ ‘রাজা বল্লালসেন’কে অর্থ সরবরাহ করতে অসম্মত হওয়ায় ‘বল্লালসেন’ তাঁদের অবনমিত করেছিলেন।                                

(তথ্যসূত্র:

১- Folk elements in Bengali life, Dr. Atul Sur.

২- বাংলা ও বাঙালির বিবর্তন, ডাঃ অতুল সুর।

৩- বাঙ্গালীর ইতিহাস, নীহাররঞ্জন রায়।

৪- বাঙ্গলার ইতিহাস, রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায়।

৫- বাংলা দেশের ইতিহাস, রমেশচন্দ্র মজুমদার।

৬- Dynamics of synthesis in Hindu culture, Dr. Atul Sur.)

                             

No comments