Page Nav

HIDE

Grid Style

GRID_STYLE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

আজ ২৫-শে বৈশাখ, আজ 'চু-চেন্-তাং'-এর শুভ জন্মদিন .. .. *

কার নাম এই চু-চেন্-তাং ?  এ তো আর আমাদের দেশী নাম নয়, খাস চীন দেশীয় নাম। বই পড়ে আরও অবাক হলাম যে, 'চু-চেন্ তাং' - আমাদের বিশ্বকবি কবিগুরুর আর এক নাম।কবি তখন 'নোবেল পুরস্কার' পেয়েছেন 'গীতাঞ্জলি' লিখে (১৯…

 



কার নাম এই চু-চেন্-তাং ?  এ তো আর আমাদের দেশী নাম নয়, খাস চীন দেশীয় নাম। বই পড়ে আরও অবাক হলাম যে, 'চু-চেন্ তাং' - আমাদের বিশ্বকবি কবিগুরুর আর এক নাম।

কবি তখন 'নোবেল পুরস্কার' পেয়েছেন 'গীতাঞ্জলি' লিখে (১৯১৩, ১০ নভেম্বর, মতান্তরে ১৩ নভেম্বর)। বিশ্বব‍্যাপি ছড়িয়ে পড়েছে বঙ্গ-দুলাল ভারত-রবির খ্যাতি। তাই দেশ-দেশান্তর থেকে প্রচুর আমন্ত্রণ আসছে কবিগুরুর কাছে। কেউ আমন্ত্রণ জানিয়েছেন তাদের দেশে পদার্পণ করে তাদের ধন্য করতে ; কেউ বা অনুরোধ জানিয়েছেন তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে পদধূলি দিয়ে দেশের জ্ঞানী-গুণী ও ছাত্রদের উদ্দেশ‍্যে কিছু কথা বলতে।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর .. .. তিনি যে বিশ্বকবি, বিশ্বের ডাকে সাড়া না দিয়ে তিনি তাদের বিমুখ করবেন কী করে! তাই পূর্ব এশিয়া জাপান থেকে শুরু করে ব্রিটেন, আমেরিকা, সুইডেন, সুইজারল্যাণ্ড, জার্মান, আরও কত কত দেশ তিনি ঘুরলেন, তার ইয়ত্তা নেই। তারপর ডাক এলো চীন থেকে। পিকিং বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে আমন্ত্রণ জানালো। সেসময় ভারতের বন্ধু, কৃষ্টি ও সভ্যতার সহযাত্রী চীনের আমন্ত্রণ পেয়ে কবি খুব খুশি হয়েছিলেন, গ্রহণ করলেন আন্তরিক আমন্ত্রণ।

ওদিকে চীনে এক মহা হুলস্থূল শুরু হয়েছে। ভারতঋষি, বিশ্বকবি আসছেন চীন ভ্রমণে ৷ কিভাবে তাঁকে সম্বর্ধনা জানানো হবে, কিভাবে কি হবে তাই নিয়ে সকলেই মহাব্যস্ত..  কি ভাবে বিশ্বকবি'কে করা হবে স্বাগত, আদর-আপ্যায়ন, তাই নিয়ে দেশের ছোট-বড়ো, যুবক, ছাত্র সবার পক্ষ থেকে চীন সরকারের কাছে আবেদন গেলো - মহামান্য অতিথি, কবীন্দ্র রবীন্দ্রনাথকে যেন চীন-সম্রাটের রাজপ্রাসাদেই রাখার ব্যবস্থা করা হয়। এই উত্তম প্রস্তাবে সম্রাটেরও যে সৌভাগ্য, তাই সম্রাট গ্রহণ করলেন দেশের প্রস্তাব।

১৯২৪ সালে কবি পদার্পণ করলেন ঐতিহাসিক শহর পিকিং-এ। সমস্ত চীন দেশের লোক ভেঙে পড়লো কবিকে দেখে ধন্য হতে। তিল ধারণের ঠাঁই নেই। সকলেই অবাক। কৈ, কবি কোথায়! এ যে শান্ত সুমাহিত সর্বসুন্দর ঋষি। চোখে-মুখে দীপ্ত অপূর্ব-সুন্দর জ্যোতি। মহাশ্রদ্ধায় অবনত হলো সকলের চিত্ত। চীন-সম্রাট হু-য়ান-তাং বিশ্বকবিকে অভ্যর্থনা জানালেন। দেশবাসীর পক্ষ থেকে তিনি তাঁকে উপহার দিলেন চারশো বছরের পুরানো একখানি ছবি, ভারত-চীনের অতীত দিনের মধুর সম্পর্ককে স্মরণ করে। এই প্রতীক উপহারে বিশ্বকবি অত্যন্ত খুশি হয়েছিলেন।

কবি যখন চীনে অবস্থান করছেন, সেই সময় উপস্থিত হলো কবির জন্মদিনের দিন। স্বাভাবিক ভাবেই চীন দেশে কবির আগমনের আনন্দের ঢেউ যেতে না যেতেই আরেক আনন্দের বান এলো.. এলো পঁচিশে বৈশাখ। আনন্দে মেতে উঠলো চীনবাসী। বিশ্বকবির জন্মোৎসব পালন করবে তারা কবিকে সঙ্গে নিয়ে ! 

কবি ভাবলেন.... “পরবাসী আমি যে দুয়ারে চাই - তারি মাঝে মোর আছে যেন ঠাই....” 

তাই পরমাত্মীয়ের খোঁজ পেলেন কবি এখানেও। চীন দেশীয় রীতিতেই পালন করা হলো কবিগুরুর জন্মদিন। সারাদেশ থেকে এলো শতশত উপহার। নীল পায়জামা, কমলা রঙের আলখাল্লা, আর মাথায় বেগুনী রঙের টুপি দিয়ে সাজানো হলো কবিগুরুকে। সবার সামনে দাড়িয়ে কবি বক্তৃতা দিলেন আবেগভরা কণ্ঠে।

চীনের মানুষও তাদের প্রাণের ভাষায় শ্রদ্ধা নিবেদন করলো বরেণ্য কবির জন্ম-উৎসবে। শুধু শ্রদ্ধা জানিয়েই ক্ষান্ত হলো না.. তাদের নিজস্ব ভাষায় কবির নতুন নামকরণ করে কবিকে করে নিল তারা একান্ত আপনার, পরমাত্মীয়। সে নাম “চু-চেন্-তাং” ..  

কথার অর্থ, “বজ্রের ন্যায় পরাক্রান্ত ভারত-সূর্য”। 

আজ কবিগুরুর জন্মদিনে জানাই আমাদের আন্তরিক শ্রদ্ধাঞ্জলি, অনেক অনেক ভালোবাসা আর শত কোটি প্রণাম প্রণাম প্রণাম।

No comments