Page Nav

HIDE

Grid Style

GRID_STYLE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

আজ " বর্ণপরিচয় " -- বইয়ের জন্মদিন !!

বাংলার ঘরে ঘরে সবচেয়ে আদরণীয় যে বই -- যা পৃথিবীতে এমন কোনো বাঙালী নেই , যিনি এই বইয়ের নাম শোনেনি বা হাতের কোমল স্পর্শে ছুঁয়ে দেখেননি , সেই কোমল আলতা রঙের গোলাপসুন্দরী এক ক্ষুদ্র পুস্তিকা --  যা সব বাঙালির জন্মসূত্রে সবচেয়ে নিকট আ…

 




বাংলার ঘরে ঘরে সবচেয়ে আদরণীয় যে বই -- যা পৃথিবীতে এমন কোনো বাঙালী নেই , যিনি এই বইয়ের নাম শোনেনি বা হাতের কোমল স্পর্শে ছুঁয়ে দেখেননি , সেই কোমল আলতা রঙের গোলাপসুন্দরী এক ক্ষুদ্র পুস্তিকা --  যা সব বাঙালির জন্মসূত্রে সবচেয়ে নিকট আত্মীয়ের মতো সুদূর শৈশব থেকে আত্মার  আত্মীয় হয়ে রয়ে গেছে আজও -- সেই " বর্ণপরিচয় "-- আজ তার ১৬৬ তম জন্মদিন !

যদিও ঐতিহাসিক দিক থেকে দেখতে গেলে শিশু শিক্ষাবিষয়ক বই প্রথম লিখেছিলেন মদনমোহন তর্কালঙ্কার। তিনি নদিয়ার মানুষ ছিলেন। অধ্যাপনা করেছেন সংস্কৃত কলেজেও। তাঁর ‘শিশুশিক্ষা’ নামের পুস্তিকা প্রকাশিত হয় তিন খণ্ডে। সেটা অবশ্য প্রকাশিত হয়েছিলো  ১৮৪৯ সালে। কিন্তু ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর লিখেছিলেন তাঁর বর্ণপরিচয় প্রধানত শিশুদের বাংলা ভাষা শেখানোর উদ্দেশ্য নিয়েই ! এ বই তিনি রচনা করেন মূলত সংস্কৃত শিক্ষা ছাড়াও বাংলা ভাষা শেখানোর প্রধান উদ্দেশ্য নিয়ে । শিক্ষার নতুন ধারায় হয়তো এই বইয়ের আজ কিছুটা প্রাসঙ্গিকতা হারিয়েছে , কিন্তু তাতে তার আদর আজও এতটুকু কমেনি ! নিজের আপন সন্তানের বিদ্যাশিক্ষায় সরস্বতী পূজায় আজও বিদ্যাসাগর - এর ' বর্ণপরিচয় ' এক মহার্ঘ পূজার অর্ঘ্যের  উপকরণ !

আসুন , সেই মহান " বর্ণপরিচয় " -- জন্মদিন উপলক্ষে তার প্রতি আমাদের স্মৃতিচারণ ও শ্রদ্ধা নিবেদন করি ! কারণ ১৮৫৫ সালের ১৩ ই এপ্রিল অর্থাৎ আজকের দিনে বিদ‍্যাসাগরের " বর্ণপরিচয় - ১ম ভাগ " প্রথম প্রকাশিত হয়। নানা পরীক্ষা - নিরীক্ষা শিক্ষাচিন্তায় হওয়া সত্ত্বেও 'বর্ণপরিচয়' প্রাথমিক স্তরের আজও যেন প্রথম শিশুশিক্ষা গ্রন্থ। বাংলার শিশুদের বাংলা ভাষা শিক্ষা দেওয়ার উদ্দেশ্যে বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে রচিত গ্রন্থসমূহের মধ্যে এটিই প্রথম। ১৮৫৫ সালে ১৩ ই এপ্রিল ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর রচিত এবং প্রধানত তাঁরই উদ্যোগে এই বই প্রথম প্রকাশিত হয়। সেই সময় থেকে আজও শিশুপাঠ্য গ্রন্থ হিসেবে এই ক্ষুদ্র পুস্তিকাটি  উভয় বাংলায় সমান গুরুত্বের সঙ্গে ব্যবহূত হয়ে আসছে। গ্রন্থটির " প্রথম ভাগে " স্বরবর্ণ ও ব্যঞ্জণবর্ণ, এবং তার সঙ্গে বিভিন্ন শব্দ ও বাক্যগঠন এবং অনুচ্ছেদ আকারে রচিত মোট একুশটি পাঠ আছে। গ্রন্থটির " দ্বিতীয় ভাগে " সংযুক্ত বর্ণের ব্যবহার দ্বারা শব্দ ও বাক্য গঠন, ফলাযোগে নানা শব্দসৃষ্টি, অঙ্কে ও কথায় সংখ্যা গণনা এবং উপদেশধর্মী ছোট ছোট রচনা মিলে মোট দশটি পাঠ আছে ।

বিদ্যাসাগরের লেখা এই বই শুধু পাণ্ডিত্য নয়, কী অপরিসীম পরিশ্রম ও ভাষার প্রতি কি পরিমাণ ভালোবাসায় বাংলা শব্দ ভাণ্ডারে জমা করেছেন এই  বইয়ের পাতায় পাতায় অনেক  অপ্রচলিত অজানা অচেনা হারিয়ে যাওয়া শব্দ দিয়ে । স্বরবর্ণ ও ব্যঞ্জনের সঙ্গে পরিচয় পর্বের পরে শুরু হয়েছে  বর্ণযোজনা অংশ। অসাধারণ বিবেচনাবোধ এবং বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে বিদ্যাসাগর লিখেছেন এই বর্ণপরিচয়। প্রথমে দুটি বর্ণের শব্দ, তারপর তিনটি বর্ণের, এভাবে এগোতে থাকে পড়া। তারপর আ-কার, ই-কার, ঈ-কার, এইভাবে উ-কার ঊ-কার দিয়ে শব্দ লিখতে লিখতে শেষ হল গিয়ে ঔ-কারে।এরপর মিশ্রশব্দ। তারপরে বাক্য গঠনের সূচনা। যেমন –‘লাল ফুল’
(বিশেষণ,বিশেষ্য)। ‘জল খাও’ (বিশেষ্য, ক্রিয়াপদ)। জল পড়ে [বিশেষ্য (ক্রিয়া+ বিভক্তি)]। ধীরে ধীরে শিশু বর্ণ,শব্দ,বাক্যে পৌঁছে যাচ্ছে। সিঁড়ির মতো এক একটি ধাপ পেরিয়ে শিশু শব্দ শিখছে, শিখছে তার প্রয়োগ। আজও মনোবিজ্ঞানীরা বা শিক্ষাবিদরা এই শিক্ষণ-পদ্ধতিকে অনুসরণ করে চলেছেন।

বিদ্যাসাগর বর্ণপরিচয়ের নবম পাঠ থেকে লেখাপড়া নিয়ে, জীবনে চলার পথে সত্যের জয় এমন সব ভাবনাকে ছোটো ছোটো বাক্যে তুলে ধরেছেন। গোপালের নিষ্ঠা ও সততা, অন্যদিকে রাখালের বিপরীত জীবন-ভাবনাকে তুলে ধরেছেন। বইটি যারা পড়বে তারা এই নীতি কথাকে জানবে। উপলদ্ধিও করবে। জীবন ভাবনা সময় নিরপেক্ষ নয়। ফলে সময়ের সঙ্গে পাল্টেছে মূল্যবোধ, তাই বর্ণ পরিচয়ের কিছু বাক্য নিয়ে কিছু জিজ্ঞাসা খুব স্বাভাবিক। বিশেষ করে যখন কেউ কেউ নতুন করে এই বই শিশুদের পাঠ্য করার কথা বলছেন। বইটি রচিত হয়েছিল যে সময়ে, সে সময়ের জন্য হয়তো বিষয়টি ঠিকই ছিল, কিন্তু আজকের সময় শিশুদের পড়ায় মন না থাকলে কি তাকে দূরে সরিয়ে দিতে পারা যায় !  রাখাল অমনোযোগী ছাত্র, ফলে স্কুলে বাড়িতে কেউ তাকে ভালোবাসে না। এই কাহিনি পড়ে আজকের ক্লাসে পিছিয়ে পড়া শিশুরা কি পড়ায় আগ্রহী হয়ে উঠবে ? না তাদের আত্মবিশ্বাস আরও নড়বড়ে হয়ে যাবে ? যদিও বর্তমান শিক্ষা পদ্ধতিতে এই ' পিছিয়ে পড়া  ' রাখালদের জন্য শিক্ষকদের অতিরিক্ত যত্ন নেওয়ার কথা ভাবা হয় ।

দ্বিতীয় পাঠের ভূমিকায় আছে, ‘...শব্দের উচ্চারণ ও বর্ণবিভাগ শিক্ষা করিতে গেলে, অতিশয় নীরস বোধ হইবেক ও বিরক্তি জন্মিবেক, এজন্য মধ্যে মধ্যে এক একটি পাঠ দেওয়া গিয়াছে...’। কিন্তু সেই পাঠের য-ফলা ও র-ফলার অংশটি চরিত্রগঠনের পক্ষে উপযোগী হলেও একটা প্রশ্ন থাকছে। ছাত্রদের সঙ্গে বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সম্পর্কের মধ্যে যথেষ্ট সহানুভূতিপূর্ণ আচরণ দেখতে পাই না কেন ?
বর্ণপরিচয় প্রথম ভাগ এবং বর্ণপরিচয় দ্বিতীয় ভাগেও, আজ আমরা যাকে বলি প্রকৃত আদর্শবাদী শিক্ষক, তেমন শিক্ষকদের দেখা মেলে না কেন ? ছাত্রদের ন্যায় অন্যায় শুধু জানানো হল, উচিত অনুচিত শেখানো হল, কিন্তু সহৃদয় মাষ্টারমশাই এর দেখা পাওয়া যায় না । মাষ্টারমশাই বা শিক্ষকেরা সেই সময় কী বড়োই কঠোর ছিলেন? কিন্তু বিদ্যাসাগরের ছেলেবেলাতেও শিক্ষক মশাইরা তো তাঁকে স্নেহ করেছেন।

বর্ণপরিচয়ের দ্বিতীয় ভাগের ষষ্ঠ অধ্যায় মাধব কেন এত অসহায় হয়ে পড়ল।‘মাধব' নামে একটি বালক ছিল। তার বয়স দশ বৎসর। ...সে প্রতিদিন বিদ্যালয়ে যাইত এবং মন দিয়া লেখাপড়া শিখিত।...এই সকল গুণ থাকিলে কি হয়, মাধবের একটি মহৎ দোষ ছিল। পরের দ্রব্য লইতে ভালোবাসিত।...বারংবার চুরি করাতে, শিক্ষক মহাশয় তাহাকে বিদ্যালয় হইতে বহিষ্কৃত করিয়া দিলেন ’। এখানেই প্রশ্ন জাগে, শিক্ষকদের অসহযোগিতাই কী আমাদের দেশের অনেক শিশুকে আজও পিছিয়ে রেখেছে ? কোন শিক্ষক এসে কেন তার হাত ধরল না মাধবের। আজ তো আর আইনের বলে মাধ্বদের তাড়িয়ে দেওয়া যায় না ! কিন্তু আজও এই কথাটি বড়ো ভাবিয়ে তোলে। কেনো জানি না , আজও গ্রামের বা কলকাতা মাষ্টারদের মধ্যে তেমন কোন আন্তরিকতা খুঁজে পাওয়া যায় না ।

ডক্টর অসিতকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় লিখেছেন,
“ শোনা যায়, প্যারীচরণ সরকার এবং বিদ্যাসাগর একদা সিদ্ধান্ত করেন যে, দু’জনে ইংরেজি ও বাংলায় বর্ণশিক্ষা বিষয়ক প্রাথমিক পুস্তিকা লিখবেন। তদনুসারে প্যারীচরণ First Book of Reading এবং বিদ্যাসাগর মহাশয় ‘বর্ণপরিচয় প্রথম ভাগ’ প্রকাশ করেন। ” বিহারীলাল সরকারের রচনা থেকে আর  এক অসাধারণ তথ্য জানা যায় যে , মফস্বলে স্কুল পরিদর্শনে যাওয়ার সময় তিনি পালকিতে বসে পথেই বর্ণপরিচয়ের পাণ্ডুলিপির খসড়া তৈরি করেছিলেন বিদ্যাসাগর।

১৮৫৫ সালের ১৩ এপ্রিলে প্রকাশিত হয় বর্ণপরিচয় প্রথম ভাগ এবং ওই বছরেই জুনে প্রকাশিত হয় বর্ণপরিচয় দ্বিতীয় ভাগ। বিহারীলাল আরও লিখেছেন, “ প্রথম প্রকাশে বর্ণপরিচয়ের আদর হয় নাই। ইহাতে বিদ্যাসাগর মহাশয় নিরাশ হন ; কিন্তু ক্রমে ইহার আদর বাড়িতে থাকে। ”

পণ্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর বর্ধমানে বসেই বর্ণপরিচয় -- প্রথম ও দ্বিতীয় ভাগ রচনা করেছিলেন। বিদ্যাসাগর তখন দক্ষিণবঙ্গের বিদ্যালয় পরিদর্শক হিসেবে বর্ধমান শহরে পার্কাস রোড ও প্যারীচাঁদ মিত্র লেনের সংযোগস্থলে বাস করতেন। এখানে দক্ষিণবঙ্গের বিদ্যালয় পরিদর্শকের হেড অফিস ছিল। তিনি থাকতেন এখানকার বাসিন্দা লেখক প্যারীচাঁদ মিত্রের বাড়িতে। এখান থেকেই বিদ্যাসাগর বিদ্যালয় পরিদর্শক হিসেবে বর্ধমান, হুগলি, মেদিনীপুর, নদিয়া ও মুর্শিদাবাদ–সহ দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন জেলার স্কুলগুলি পরিদর্শন করতেন। কখনও তিনি পায়ে হেঁটে, আবার কখনও গরুর গাড়িতে এবং পালকিতে চেপে দূর–দূরান্তে বিদ্যালয় পরিদর্শকের কাজে যেতেন। সেই সময়ই কাজের অবসরে বর্ণপরিচয় প্রথম ও দ্বিতীয় ভাগের পাণ্ডুলিপি তৈরি করেছিলেন।

১৮৫৫ সালের এপ্রিল মাসে  বর্ণপরিচয়  প্রথম ভাগ প্রকাশিত হয়। ঠিক ওই বছরের জুন মাসে প্রকাশিত হয়েছিল বর্ণপরিচয়  দ্বিতীয় ভাগ। বর্ণপরিচয় প্রথম ও দ্বিতীয় ভাগে তাই বর্ধমানের বহু ঘটনা যুক্ত করেছিলেন বিদ্যাসাগর। যেমন রসুলপুরে বালিকা বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠাকালে তিনি গ্রামের উমেশ বন্দ্যোপাধ্যায় নামে এক ব্যক্তির বাড়িতে যেতেন। একদিন তাঁর সামনেই উমেশবাবুর হাত ছুরিতে কেটে যায়। সেখান থেকে ফিরে তিনি বর্ণপরিচয় বইয়ে লিখেছেন, ‘‌উমেশ ছুরিতে হাত কাটিয়া ফেলিয়াছে।’‌  ঠিক তেমনই মেমারির পাঠশালার তারক, ঈশান, কৈলাশ —এই তিন ছাত্রের নাম তিনি উল্লেখ করেছেন। এছাড়া খণ্ডঘোষের পাঠশালার গোপাল যেমন সুবোধ বালক, রাখাল তেমন নয় —এই দু’‌জনের নামও তুলে ধরেছেন। বর্ধমানের বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ–লেখক সুধীরচন্দ্র দাঁ - এর লেখা একটি প্রবন্ধ থেকে এইসব উদ্ধৃতি করা হয়েছে। প্রথম এবং দ্বিতীয় ভাগে তিনি অত্যন্ত সহজ–সরল ভাষায় বিভিন্ন শব্দ যুক্তি–সহ লিখেছিলেন, যা প্রত্যেকের কাছে খুবই গ্রহণযোগ্য হয়ে ওঠে। বহু লেখকের বহু বই ও গল্পের পরিবর্তন ঘটলেও প্রাথমিকে কিন্তু আজও ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের বর্ণপরিচয় বাঙালি সমাজের কাছে শিক্ষার প্রথম ধাপ হিসেবেই রয়ে গেছে। তাই জনপ্রিয়তায় বর্ণপরিচয় আজও সবার ঊর্ধ্বে !

আসলে প্যারীচরণের ইংরেজি গ্রন্থখানিও বাঙালি সমাজে দীর্ঘকালের আদরের বস্তু ছিল। তবে আজকের বিশ্বায়নের যুগে এই গ্রন্থটির শিক্ষামূল্য কিছুই অবশিষ্ট নেই। অথচ বিদ্যাসাগর মহাশয়ের " বর্ণপরিচয় " গ্রন্থটি আজও বাঙালি সমাজে শিশুদের বাংলা শিক্ষার প্রথম সহায়ক বই হয়ে রয়ে গেছে ! যদিও  ১২৫ বছরে কেবল স্বরবর্ণ '৯' ও অন্তস্থ ‘ব’ টি ব্যঞ্জন থেকে বাদ দেওয়া হয় । তবুও একথা অনস্বীকার্য যে , আধুনিক বাংলা বর্ণমালার মূল রূপকার হলেন  স্বয়ং ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর।

বর্ণপরিচয় যে অত্যন্ত কার্যকর হয়েছিল তা এর কাটতি ও জনপ্রিয়তা দেখেই বোঝা যায়।
১৮৫৫ থেকে বিদ্যাসাগরের মৃত্যুর আগে পর্যন্ত (১৮৯১) মোট ৩৫ বছরে বর্ণপরিচয় প্রথম ভাগ - এর ১৫২টি মুদ্রণ সংস্করণ প্রকাশিত হয়েছে।
প্রথম তিন বছরে ১১টি সংস্করণে ৮৮ হাজার কপি মুদ্রিত হয়েছিল। পাঠকের কৌতূহল নিবৃত্ত করার জন্য বলা যায়, এ বইয়ের প্রথম সংস্করণ ছাপা হয়েছিল ৩ হাজার কপি। সেকালের হিসাবে যথেষ্ট বলতে হবে এ সংখ্যাকে। ১৮৬৭ থেকে ১৮৯০ সাল পর্যন্ত ২৩ বছরে ১২৭টি সংস্করণে এ বই মুদ্রিত হয়েছে ৩৩ লাখ ৬০ হাজার কপি। অর্থাৎ এ সময় বছরে গড়ে বর্ণপরিচয় মুদ্রিত হয় ১ লাখ ৪০ হাজার কপি। বলাবাহুল্য, এ কাটতি বা জনপ্রিয়তা বৃদ্ধির সঙ্গে শিক্ষাবিস্তারেরও একটা প্রত্যক্ষ সম্পর্ক আছে ।
প্রসঙ্গত ১৮৫৫ সালে দুই পয়সা মূল্যের এই ক্ষীণকায় পুস্তিকার প্রকাশ বাংলার শিক্ষাজগতে ছিল এক যুগান্তকারী ঘটনা সেসময়ে !

এই পুস্তিকায় বিদ্যাসাগর মহাশয় বাংলা বর্ণমালাকে সংস্কৃত ভাষার অযৌক্তিক শাসনজাল থেকে মুক্ত করেছিলেন  এবং যুক্তি ও বাস্তবতাবোধের প্রয়োগে এই বর্ণমালার সংস্কার-সাধনে প্রবৃত্ত হয়েছিলেন । গ্রন্থটি যে শুধু বিদ্যাসাগরের জীবৎকালেই সমাদৃত হয়েছিল তাই নয়, আজ গ্রন্থপ্রকাশের ১৬৫ বছর পরেও এর জনপ্রিয়তা বিন্দুমাত্র হ্রাস পায়নি। পশ্চিমবঙ্গ সরকার এই গ্রন্থটিকে একটি অন্যতম প্রধান গ্রন্থ হিসাবে অনুমোদন করেছিলেন । পশ্চিমবঙ্গ সরকার ও কলকাতা পৌরসংস্থার যৌথ প্রয়াসে কলকাতার কলেজ স্ট্রিট বইপাড়ায় ভারতে বৃহত্তম যে বইবাসরটি (বই বিক্রয়ের শপিং মল) নির্মিত হয়েছে  তার নামও এই গ্রন্থটির সম্মানে বর্ণপরিচয় রাখা হয়েছে !

আমাদের পিতৃ - পিতামহের স্মৃতিবিজড়িত সেই মহান বই " বর্ণপরিচয় " ১৬৬ তম জন্মদিন !
একটা প্রণাম কি আজ সেই মহান বিদ্যাসাগর মহাশয়ের প্রাপ্য নয় !! 

No comments