মল্লিকা তখন আপন সুপ্তিশয্যায়।ফাগুয়ার পিপাসাকাতর উন্মাদ চাঁদ-পশ্চিম আকাশে পেঁজা মেঘের বালিশে,এক আকাশ জ্যোৎস্নায় ভেসে যাচ্ছে -মল্লিকার শয্যাতল।বেহায়া কোকিলটা ভোর না হতেই কুহুকুহু ;হৃদেয়ের অতি নিভৃতে বৈকুণ্ঠলোকে-যে প্রেম স্তব্ধ হ…
মল্লিকা তখন আপন সুপ্তিশয্যায়।
ফাগুয়ার পিপাসাকাতর উন্মাদ চাঁদ-
পশ্চিম আকাশে পেঁজা মেঘের বালিশে,
এক আকাশ জ্যোৎস্নায় ভেসে যাচ্ছে -
মল্লিকার শয্যাতল।
বেহায়া কোকিলটা ভোর না হতেই কুহুকুহু ;
হৃদেয়ের অতি নিভৃতে বৈকুণ্ঠলোকে-
যে প্রেম স্তব্ধ হয়ে আছে,
তারই প্রগাঢ় আঘ্রাণ আবেশিত করে -
মল্লিকার সমস্ত চেতনায়।
মনের গহীনে মুহূর্তগুলি আরও ঘন হয়ে আসে।
বিশ বছর আগে এক ফাগুন বেলায়-
নববধূ মল্লিকাকে শুভ পরিণয়ে শুভলগ্নে-
প্রিয়তম শুনিয়েছিল মিলনের বাঁশি।
মহুয়ার দেদুল রঙে রাঙিয়েছিল-
বধূয়ার সলজ্জ অভিমান।
শ্যাম-রাধার ঝুলন দোলায় তখন,
না জানি কত আবেগের লতাপাতা-
কুসুমের কতকথা।
প্রিয়তম মোর কাজের তরাসে সুদূরে,
মল্লিকার চোখের পাতায় নামে-
অশ্রুজলের ভৈরবী।
নব রবিকিরণের ছোঁয়ায়-
মল্লিকা শয্যা ছেড়ে উঠে দাঁড়ায় জানালাপাশে।
অদূরে রঙের হিল্লোলে মাতে,
ফাগুন আগুন রঙে লালে লাল-
কুষ্ণচূড়া শিমূল পলাশ শাখা।
খর যৌবনের তৃপ্তিতে আপনি স্বয়ম্বরা।
আজ বুঝি রক্তকরবীর ডালে-
প্রথম ধরেছে কলি!
আপন হৃদয় কন্দরে-
তুলে নেয় আঁজলা ভরে প্রিমতমা তরে,
পলাশ শিমুল কৃষ্ণচূড়া করবীর রঙ।
মনকে প্রবোধ দেয় বারে বারে-
দূর থেকে সুদূরে বলেই বুঝি সবচেয়ে কাছে!
ভালোলাগা ঘিরে আছে সমস্ত হৃদয় জুড়ে।
লগ্ন হয়ে থাকা মল্লিকার হঠাৎই তন্ময়তা ভাঙে,
ওরা ডাকে মল্লিকাকে-,
"সবার রঙে রঙ মেশাতে হবে"।
পথপার্শে সবুজ সহাস্যে আদিগন্ত ধানক্ষেত,
সুদূরব্যপী শান্ত সমাহিত সজল স্নিগ্ধতা,
রিক্ত শাখায় নব পত্রালির শ্যামলিমা,
লজ্জাবতীর লাল রঙা বেগুনী ফুলের ঐশ্বর্য,
গগনতলে বুঝিবা তুমুল রঙের কোলাহল!
অনুরাগের আবেশে রঙে রাঙা মল্লিকা,
ভালোবাসাকে ছড়িয়ে দেয় -
হরিলুটের মতো,
অনুপমা ধরণী হয়ে যায়-
প্রেমের বৃন্দাবন।
No comments