Page Nav

HIDE

Grid Style

GRID_STYLE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

বিপন্ন ভারত!

আজ ভারতবর্ষের বড় দুর্দিন।
চারদিকে হানাহানি, গণ্ডগোল, খুন,ধর্ষণ, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির
মেল বন্ধন ছিন্ন ।একটি নতুন রাজনৈতিক দলের নেতৃত্ব গোটা
ভারতের সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক পরিকাঠামোকে ভেঙ্গে
তছনছ করে দিচ্ছে ।কাশ্মীর থেকে…

 




আজ ভারতবর্ষের বড় দুর্দিন।
চারদিকে হানাহানি, গণ্ডগোল, খুন,ধর্ষণ, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির
মেল বন্ধন ছিন্ন ।একটি নতুন রাজনৈতিক দলের নেতৃত্ব গোটা
ভারতের সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক পরিকাঠামোকে ভেঙ্গে
তছনছ করে দিচ্ছে ।কাশ্মীর থেকে
কন্যাকুমারী, কচ্ছ থেকে কোহিমা
এই বিস্তীর্ণ ভূখণ্ড যেন আমাদের কাছে বড্ড অচেনা ।আমরা ভুলে
গেলাম এদেশের বুকে প্রথম প্রধানমন্ত্রী পণ্ডিত জওহরলাল নেহেরু
তার পাশের আসনে বসিয়েছিলেন শিক্ষামন্ত্রী হিসেবে সর্বজন শ্রদ্ধেয় মওলানা আবুল কালাম আজাদ সাহেব কে,ভুলে গেলে চলবে না
এদেশের রাষ্ট্রপতি হয়েছেন,ডঃ
ফকরুদ্দিন আলি আহমেদ,  জনাব
জাকির হোসেন সাহেব,ডঃ এ পি জে
আব্দুল কালাম। ওস্তাদ বিসমিল্লা সাহেব সারা জীবন সানাই বাজিয়ে গেলেন কাশী বিশ্বনাথের নহবতখানায়।আন্তর্জাতিক সেতারিয়া
পন্ডিত রবি শংকরের সঙ্গে তবলায় সঙ্গত করেছেন আর এক আন্তর্জাতিক তবলিয়া ওস্তাদ কেরামততুল্লা খাঁ।সেই সুরে তো হিন্দু
মুসলিম ছিল না ।আন্তর্জাতিক সরোদিয়া ওস্তাদ আলি আকবর খাঁ সাহেবের সঙ্গে তবলায় পণ্ডিত তন্ময় বসুর  সঙ্গত আমাদের শরীরের মনোবীণার পঞ্চতণ্ত্রীতে আবেগের ফল্গুধারার মূর্ছনা বহিয়ে দেয়।মনে হয় না  কে হিন্দু কে মুসলমান । শহীদ ভগৎ সিংহের উকিল হিসেবে পাশে
পায় প্রয়াত কংগ্রেস নেতা ,ব্যারিস্টার,
ওড়িশার প্রথম রাজ্যপাল,অরুনা  আসফ আলির স্বামী জনাব আসফ
আলি সাহেব কে।এদেশের স্বাধীনতার
বেদীমূলে শুধু তো হিন্দু প্রাণ দেয়নি ।সব ধর্মের, সব সম্প্রদায়ের মানুষের
প্রানের বিনিময়ে স্বাধীনতা।আসুন
সবাই মিলে দেশটাকে ভালবাসি ।মন্দির, মসজিদ, গির্জা সব থাকবে।আমার মা সন্ধ্যাবেলা তুলসী তলায়
লালপাড় গরদের শাড়ি পরে সাঁঝের
প্রদীপ জ্বেলে মঙ্গল শঙ্খ বাজিয়ে সবার মঙ্গল কামনা করবে ।আমার বন্ধু হায়দারের বাবা পবিত্র মসজিদে
পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে এই পৃথ্বীর
মঙ্গল চাইবেন।মসজিদের আজানের সুর আর মন্দিরের ঘন্টা - কাঁসারের ধ্বনি মিলেমিশে একাকার হয়ে যাবে ।
মহাকবি মহম্মদ ইকবাল লিখলেন ' সারে জাঁহাসে আচ্ছা হিন্দুস্থান হামারা,হামারা ' সুরারোপ করলেন
আর এক বিখ্যাত শিল্পী ( হিন্দুর  ছেলে) পন্ডিত রবি শঙ্কর  ।আমরা সবাই ভুলে গেছি।না তা চলতে পারে না ।রহিমা রক্ত দেয় রুমাকে। রাহুল কাঁধে তুলে নেয় রহমতের বাপের শেষ যাত্রার কফিন ।হায় ভারতবর্ষ!
আমাদের পূর্ব পুরুষদের ইতিহাস রক্ষা করার দায়িত্ব আমাদের ।প্রয়োজন পড়লে প্রানের বিনিময়ে ।
এই প্রসঙ্গে একটি টি ভি সিরিয়ালের
কথা আজ খুব মনে পড়ছে ।
টিভিতে ১৯৮৯ এর ক্লাসিক ধারাবাহিক বি আর চোপড়ার মহাভারত সম্প্রচারিত হচ্ছে।  এই মহাভারত সিরিয়ালের পরিকল্পনা যখন বি আর চোপড়া সাহেব নিয়েছিলেন তখন সবচেয়ে বড় বিষয় যেটা তাঁকে চিন্তায় ফেলেছিলো সেটা হলো এই বিশাল এবং জটিল মহাকাব্যকে গল্পের আদলে  সাধারন মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে  হলে একটা খুব শক্তিশালী এবং মজবুত চিত্রনাট্যের প্রয়োজন। এমনিতে স্ক্রীপ্ট রাইটারের অভাব ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে নেই কিন্তু মহাভারতের মতো  আঠারো পর্বের সমস্ত  ঘটনা পুঙ্খানুপুঙ্খ  বিশ্লেষন করে সব চরিত্রের মুখে উপযুক্ত  সংলাপ বসিয়ে চিত্রনাট্য বানানোর মতো সেইরকম পড়াশোনা জানা উপযুক্ত লোক কোথায়? অনেক ভেবে বি আর চোপড়া দেখলেন একজন লোকই এই ভারতবর্ষে আছেন যিনি এই কাজটা  নিঁখুতভাবে করতে পারেন। তিনি হলেন বিখ্যাত উর্দু কবি এবং  হিন্দী সিনেমার স্বনামধন্য  চিত্রনাট্যকার ডঃ রাহী মাসুম রেজা (ম্যায় তুলসী তেরে আঙ্গন কি, কর্জ এবং হৃষিকেশ মুখার্জীর গোলমাল ওনার স্মরনীয় কাজগুলির মধ্যে অন্যতম)।
বি আর চোপড়া ডঃ রাহী মাসুম রেজার সাথে যোগাযোগ করলেন। রেজা সাহেব সব শুনে বললেন এতো উত্তম প্রস্তাব কিন্তু সমস্যা হলো আবার নতুন করে পড়াশোনা করতে হবে। প্রচুর ধকল আর খাটুনী আছে। এই বয়সে অত ধকল নিতে পারবো না। আর অন্যান্য ফিল্ম সিরিয়ালের কাজও আছে। সময় করা মুশকিল। আপনি অন্য কাউকে দেখলে খুশি হবো ।তবে কাজটা ছিল বড় ইন্টারেস্টিং ।এরপরেই সমস্ত নিউজ পেপারে এই সংবাদ খবর হিসাবে বেরিয়ে গেল যে বি আর চোপড়ার মহাভারতের চিত্রনাট্য লেখার প্রস্তাব ডঃ রাহী মাসুম রেজা প্রত্যাখান করেছেন। অমনি কিছু দিনের মধ্যেই চোপড়াদের দফতরে বন্যার মতো চিঠি আসা শুরু হয়ে গেল। উগ্র হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলো লিখলো - একটা মুসলমান ছাড়া মহাভারতের স্ক্রীপ্ট লেখানোর জন্যে আপনি সারা ভারতে আর লোক পাননি? হিন্দুরা কি মরে গেছে? গোঁড়া মুসলীম সংগঠনগুলিও চিঠিতে লিখলো - আপনার সাহস হয় কি একজন মুসলমানকে গিয়ে মহাভারতের স্ক্রীপ্ট লেখার কথা বলবার?
অত্যন্ত বুদ্ধিমান বি আর চোপড়া সমস্ত চিঠি রেজা সাহেবের কাছে  পাঠিয়ে দিলেন। সমস্ত চিঠির বক্তব্য এবং ভাষা পড়বার পরে রাহী মাসুম রেজা টেলিফোনে চোপড়া সাহেবকে নিশ্চিত  করলেন ' এইবার মহাভারতের চিত্রনাট্য আমি ছাড়া দ্বিতীয় কেউ লিখবে না'। আমিই লিখবো কারন আমিও গঙ্গাপুত্র ( রেজা সাহেব উত্তর প্রদেশের গঙ্গার   উপকূল গাজীপুরের আদি বাসিন্দা।তাই ভারতীয় চিন্তায় তিনিও গাঙ্গেয় বা গঙ্গাপুত্র।সুতরাং তাঁর অধিকার আছে ।)শুরু হোল এক নতুন দিগন্তরেখা বিস্তারের ।ভারতবর্ষের মহাভারতের বুকে নতুন চেতনার
নতুন দ্যোতক সূচিত হোল।
চিত্রনাট্য লেখার পরে যখন সিরিয়ালের সম্প্রচার শুরু হলো তখন প্রশংসার বন্যায় ভেসে গেলে ডঃ রাহী মাসুম রেজা। অধিকাংশ চিঠিতেই ওনার পান্ডিত্যের প্রশংসা  এবং দীর্ঘজীবনের কামনা ছিলো। মহাভারতের যে অসাধারন সম্বোধনগুলো ভীষন জনপ্রিয় হয়েছিল যেমন - মাতাশ্রী, পিতাশ্রী , ভ্রাতাশ্রী , তাৎশ্রী এই শ্রী যুক্ত সম্বোধনগুলো আগে কোন ধার্মিক কাহিনীতে ব্যবহৃত হয়নি। এটা ডঃ রাহী মাসুম রেজার এক স্মরণীয় কীর্তি।কি অনবদ্য সংলাপ আর টানটান চিত্রনাট্য ছিল। কত সুন্দরভাবে মহাভারতএর জটিল জায়গা গুলোকে তুলে ধরেছিলেন। কোথায় সংস্কৃত শব্দ ব্যাবহার করতে হবে আবার কোথায় হিন্দী শব্দ ব্যবহার করতে হবে তারও এক দুরন্ত নমুনা পেশ করেছিলেন রেজা সাহেব। কুন্তী চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন নাজনীন , আর অর্জুনের চরিত্রে ফিরোজ খান। সামসুদ্দীন হয়েছিলেন বকাসুর। এটাই ভারতবর্ষ ।
রেজা সাহেব সমস্ত চিঠিগুলোকে বান্ডিল করে করে বেঁধে রাখতেন। এই রকম অনেক বড় বড় চিঠির বান্ডিল ওনার ঘরের মেঝেতে ছড়িয়ে রাখা থাকতো। একদিন এক সাংবাদিক যিনি রেজা সাহেবের কাছে ওনার সাক্ষাৎকার নিতে গেছিলেন তিনি একদম আলদা করে ঘরের কোনায় রাখা একটা ছোট্ট চিঠির বান্ডিলের দিকে অঙ্গুলী নির্দেশ করে রেজা সাহেবকে প্রশ্ন করলেন - এই ছোটো চিঠির বান্ডিলটা আপনি আলাদা করে রেখেছেন কেন?
- ওটা স্পেশাল বান্ডিল। উত্তর দিলেন রেজা সাহেব।
- স্পেশাল কেন? কি আছে ওতে? -
- ওটাতে উগ্র হিন্দু এবং মুসলীম সংগঠনগুলোর তরফ থেকে মহাভারতের চিত্রনাট্য লেখার জন্যে আমাকে থ্রেট এবং গালাগাল করা হয়েছে। তাই আলাদা করে রেখেছি।
তারপরে রেজা সাহেব বললেন - এত বড় বড় বান্ডিলের মধ্যে এই গালাগাল এবং হুমকি চিঠির ছোটো বান্ডিলটা দেখে তিনি প্রেরনা পান এবং এটা ভেবে উৎসাহিত হন যে আমাদের দেশে নোংরা চিন্তা করা মানুষের সংখ্যাটা ভালো এবং শুভচিন্তা করা মানুষের তুলনায় অনেক কম।
এই ঘটনা কিন্তু আজও আমাদের একটা শিক্ষা দেয় যে এখনো চারদিকে যারা সাম্প্রদায়িক বিষ ছড়াচ্ছে তাদের তুলনায় শুভবুদ্ধি সম্পন্ন মানুষের সংখ্যাটা এখনো অনেক অনেক বেশী সেই জন্যেই দুনিয়া চলছে।
ডঃ রাহী মাসুম রেজা একটি ইন্টারভিউতে বলেছিলেন যে - 'আমার নিজ ধর্মের লোকেরা আমাকে বলে ও মুসলমান নয় আবার হিন্দু  ধর্মের লোকেরা বলে ওতো মুসলিম কিন্তু আমার কাছে কেউ জানতে চাইলো না যে আমি কি'
হা ঈশ্বর এসব কে বুঝবে ?
দেশের বড় দুর্দিনে  আপনাদের সবাইকে চাই আমাদের প্রাণের প্রিয়
ভারতবর্ষকে রক্ষা করতে ।আসুন
সবাই মিলে রুখে দাঁড়াই সাম্প্রদায়িক
হানাদারদের বিরুদ্ধে ।নতুন ভারতবর্ষ
গড়ি আসুন ।
জয়হিন্দ
বন্দেমাতরম
ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস- জিন্দাবাদ
সনৎকুমার বটব্যাল
সাধারণ সম্পাদক
পূর্ব মেদিনীপুর জেলা কংগ্রেস কমিটি
সভাপতি
অধ্যাপক শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতি ( পূর্ব মেদিনীপুর জেলা কংগ্রেস শাখা)
সদস্য
পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশ কংগ্রেস কমিটি।

No comments