Page Nav

HIDE

Grid Style

GRID_STYLE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

ব্রেকিং নিউজ ঃ চৈতন্যপুর চিত্রকর পাড়ার শেষ তুলির টানে মা কালীর প্রতিমা গড়েছেন মহিলারা

করোনা আবহে সাধারণ মানুষ বিভিন্ন পেশা থেকে পরিবর্তিত হয়ে ভিন্ন পেশায় যুক্ত হয়েছেন। কোভিড ১৯ কে কাটিয়ে ধীরে ধীরে মানুষ স্বাভাবিক জীবন-যাপনে ফিরে আসছেন। কেবলমাত্র স্কুল-কলেজ না খুললেও সরকারি অফিস-আদালত এবং স্বাভাবিকভাবেই বিশ্বকর…

 




করোনা আবহে সাধারণ মানুষ বিভিন্ন পেশা থেকে পরিবর্তিত হয়ে ভিন্ন পেশায় যুক্ত হয়েছেন। কোভিড ১৯ কে কাটিয়ে ধীরে ধীরে মানুষ স্বাভাবিক জীবন-যাপনে ফিরে আসছেন। কেবলমাত্র স্কুল-কলেজ না খুললেও সরকারি অফিস-আদালত এবং স্বাভাবিকভাবেই বিশ্বকর্মা, দুর্গা এবং লক্ষী পুজো সরকারি নিয়ম মেনে আদালতের নির্দেশ মেনে পূজার্চনা হয়েছে ।পূর্ব মেদিনীপুর জেলার শিল্প সংস্কৃতির শহর হলদিয়া চৈতন্যপুর চিত্রকর পাড়ার মহিলারা করছেন মা কালীর মূর্তি।আর বাড়ির পুরুষরা তারা অন্যান্য সময় চলে যান ভিন রাজ্যে। লকডাউনের জন্য তারা গৃহবন্দী থাকার ফলেই মহিলাদের সঙ্গে সহযোগী হিসেবে কাজ করছেন। রাত পোহালেই মা কালীপুজো। কালী মূর্তি তৈরি করছেন ছাঁচের প্রতিমা এক চিলতে উঠান জায়গা নেই রাস্তার পাশে বসে মাটির প্রতিমা রং করতে ব্যস্ত আট বছরের  বালিকা থেকে শুরু করে ৮০ বছরের বৃদ্ধ মোটা তুলিতে হলুদ রং দিয়ে কেউ আঁকছেন শিবের বাঘছাল, তুলির টানে কেউ ফুটিয়ে তুলছেন মাকালী প্রতিমা ত্রিনয়ন। মহিলা শিল্পীদের নিপুন হাতের ছোঁওয়ায় জীবন্ত হয়ে উঠছে ছোট-বড় বিভিন্ন সাইজের কালী প্রতিমা। হেমন্তের প্রতিমার রং শুকিয়ে নিয়ে শুরু হয়েছে প্যাকেজিং। কয়েকদিন ধরেই চিত্রকর পাড়ায় আসতে শুরু করেছেন প্রতিমা পাইকাইরেরা। চিত্রকর পাড়ার মহিলা শিল্পীদের জীবন যুদ্ধে সঙ্গে যে "রাঁধে সে চুলও বাঁধে" প্রবাদ বাক্যের বাস্তবে এক একশো ভাগ মিল রয়েছে।এ এক অন্যজীবন চিত্রকর পাড়ায়।


 সকলের ঘুম থেকে উঠে বাড়ির কাজ সেরে প্রতিমা মাটির তৈরি শুরু করেন মহিলা কারিগররা। হুগলি নদী  থেকে গঙ্গা মাটি দিয়ে তৈরি হয় ছাঁচের প্রতিমা। বাড়ি ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা সাহায্য করে প্রতিমা মুখের সাজ করে কেউ করে শরীরের নানা অংশের। ছাঁচের প্রতিমা গড়ার ফাঁকেই ফাঁকে চলে রান্নাবান্না ,গৃহস্থালীতে দৈনন্দিন কাজ। বছর তিরিশ আগে রোদে শুকিয়ে নেওয়ার পর আগুনে পুড়ে তৈরি হতো টেরাকোটার প্রতিমা ।এখন চাহিদা বেশি থাকায় রোদে শুকিয়ে বাহারি রং করে বিক্রি হয় হাটে। 


সমস্ত কাজই নিজেদের হাতে করেন মল্লিকা, গীতার,রুবি কল্পনা, অসীমা,অনিতা, পঙ্কজ চিত্রকররা। এখন ছোট-বড় মিলিয়ে কয়েক হাজার প্রতিমা গড়েছেন মহিলা শিল্পীরা। প্রতিমা পাইকারি দাম ৪০ টাকা থেকে ৪০০ টাকা।


প্রায় দেড়শো বছর আগে চিত্রকরদের পূর্বপুরুষ আয়ন চিত্রকর বর্ধমান থেকে জীবিকার সন্ধানে আসেন সুতাহাটা চৈতন্যপুর এলাকায়। তাদের উত্তরসূরি সুশান্ত, নেপাল  ও রবীন্দ্রনাথ চিএকর বলেন পদবী দেখে অনেকেই আমাদের পট শিল্পী ভাবেন। কিন্তু আমরা কেউ পটের সঙ্গে যুক্ত নই মাটির প্রতিমা ও পুতুল তৈরি চিত্রকরদের বংশ পরস্পরায় পেশা।


পুরুষেরা দেশের নানা প্রান্তে ঘুরে মাটির প্রতিমা গড়তেন আর মহিলারা বাড়িতে বসে বানাতেন পুতুল। প্লাস্টিক পুতুলের জন্য মাটির পুতুলের চাহিদা নেই। মহিলারা এখন তাই ছাঁচের প্রতিমা গড়ে হাল ধরছেন সংসারের। বছরের তিন-চারমাস দিল্লী ,মুম্বাই, মধ্যপ্রদেশ, ঝাড়খণ্ড, কিংবা কালীঘাটে থাকে রিঙ্কু চিত্রকর ও মিলন চিত্রকরেরা ।তারা বলেন চিত্রকর পাড়ার পুরুষদের জীবনযাপনের যাযাবরের মতো। বাড়ি ফিরলে তারা মহিলা শিল্পীদের সহযোগী হয়ে কাজ করেন ।এমন ছবি অন্য কোথাও দেখা যায় না।


পদ্ম চিত্রকর নিজের বাড়ির উঠানে বসে নাতবৌ পুতুলকে কালী প্রতিমার রং করতে সাহায্য করি।৮৫  বছরের পদ্মা চিত্রকর তিনি বলেন ১৩ বছর বয়সে বিয়ে হওয়ার পর পুতুল আর প্রতিমা গড়াই শিখি তারপর সত্তর বৎসর ধরে আজও সিজিন এলে ঘরে বসে পড়ি। বৌমা পাড়ার মেয়ে বউ, নাতি নাতনি কতজনকে শিখিয়েছি তার শেষ নেই।


কলেজে পড়ার ফাঁকে প্রতিমা গড়ার কাজে মাকে সাহায্য করেন মধুমিতা চিত্রকর। শিল্পীরা বলেন ছাঁচের প্রতিমা সিজিন ব্যবসা। সারা বৎসর তাদের হাতে কোনো কাজ থাকে না।


পুরুষরাও বাইরে থাকে তিন মাস আয় করে আনেন সারা বৎসর সেই টাকায় সংসার চলে। ২০ থেকে ২২ টি পরিবার সিংহভাগই গরিব। রাজ্য সরকারের শিল্পীভাতার  জন্য বারবার আবেদন করার পর তাদের ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ।



No comments