Page Nav

HIDE

Grid Style

GRID_STYLE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

সার্ধশতবর্ষে গান্ধীবাদ -তাপস কুমার মাইতি

পৃথিবীর বর্তমান সময়ের শ্রেষ্ঠ   দর্শন 'গান্ধীবাদ'।শ্রেষ্ঠ দার্শনিক মোহনদাস করম চাঁদ গান্ধী কিনা সে কথা সময়  বলবে!শরীরে একখণ্ড কাপড় এবং হাতে একটি লাঠি নিয়ে আদর্শ ও নৈতিকতার প্রহরী হয়ে পৃথিবীর প্রায় ৭০টি দেশে জন্মের সার্ধশত…

 





পৃথিবীর বর্তমান সময়ের শ্রেষ্ঠ   দর্শন 'গান্ধীবাদ'।শ্রেষ্ঠ দার্শনিক মোহনদাস করম চাঁদ গান্ধী কিনা সে কথা সময়  বলবে!শরীরে একখণ্ড কাপড় এবং হাতে একটি লাঠি নিয়ে আদর্শ ও নৈতিকতার প্রহরী হয়ে পৃথিবীর প্রায় ৭০টি দেশে জন্মের সার্ধশতবর্ষে দন্ডায়মান তিনি। 


১৮৯৩ ভারতবাসীর মুক্তি আন্দোলনে একটি মাইলস্টোন। নরেন্দ্র নাথ দত্ত শিকাগো ধর্মমহা সভায় বিশ্বজনীনতার মহাপ্রকাশ ঘটালেন। অরবিন্দ ঘোষের দেশে ফিরে দেশের মাটিতে ফিরে চরম বিপ্লবাদের বীজ রোপণ করলেন। ১৮৯৩ মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী দক্ষিণ আফ্রিকা পৌঁছে বৃটিশ সাম্রাজ্যবাদের নগ্নরূপ পরিলক্ষিত করলেন। 


কোন ঘটনা গান্ধীর জীবনের গতিপথ পরিবর্তন করে দিয়েছিল?.... এক গুজরাটি ব্যবসায়ী দাদা আব্দুলার মামলা লড়তে তিনি ডারবান থেকে প্রিটোরিয়া যাচ্ছিলেন।ট্রেনে প্রথম শ্রেনীর টিকিট ছিল তার। তবুও বৃটিশ সাহেব প্লাটফর্মে ফেলে দিয়েছিল শীতের রাতে ট্রেন শুয়ে থাকা গান্ধীকে! সেদিন তিনি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন বৃটিশ বর্ণবাদের বিরূদ্ধে লড়বেন আইনি পথে। 


১৯১৪ পৃথিবীতে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের দামামা বেজেছে! গান্ধি প্রয়োজন অনুভব করলেন দেশে প্রত্যাবর্তনের। ১৯১৫ ভারতবর্ষে ফিরে এলেন। কলকাতায় ওই বছর মার্চে যোগদিলেন এক ছাত্র সম্মেলনে।স্বাধীনতাকামী অহিংসবাদী গান্ধীর কথা ভারতবাসী ততদিনে জেনে গেছে। 


১৯১৮ প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শেষ হলে বিশ্ব স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল। ভারতীয় সেনাদের সাহসিকতা ও সহযোগীতার পরিবর্তে কিছুই পেল না!বরং রাউলাট বিল ভাতরবাসীর উপর চাপিয়ে দিল বৃটিশ সরকার। ৬,এপ্রিল ১৯১৯ দেশ স্বতঃস্ফূর্ত হরতাল পালন করলো। ১৩,এপ্রিল রায়লট আইনের প্রতিবাদ সভায় জালিয়নাবাঘে গুলি চালিয়ে হত্যালীলা সংগঠিত করলো বৃটিশ সরকার। ১৯২০ কলকাতা কংগ্রেস অধিবেশনে লালা লাজপত রায় সভাপতিত্ব করলেন। বৃটিশের সঙ্গে সর্বপ্রকার অসহযোগিতার প্রস্তাব গৃহীত হয়। 


১৯২০ ডিসেম্বর কানপুরে কংগ্রেসের পূর্ণাঙ্গ অধিবেশন।  চিত্তরঞ্জন দাশ ও বিপিনচন্দ্র পাল সহ বাংলার নেতৃত্বগন সহমত হওয়ায় আসহযোগ বা বয়কট কর্মসূচী গ্রহন করা হল। জালিয়নাবাঘের হত্যালীলায় ভারতবাসীর বৃটিশদের প্রতি পুঞ্জীভূত ঘৃনা ও বিদ্বেষ হাতিয়ার করে আন্দোলনের দায়িত্ব গ্রহণ করলেন গান্ধী।উল্লেখ্য এই অসহযোগ বা বয়ট আন্দোলনে সর্বপ্রথম কলকাতা হাইকোর্ট বয়কট করেন দেশপ্রান বীরেন্দ্রনাথ শাসমল এবং তার প্রিয় অনুগামী জননায়ক কুমারচন্দ্র জানা সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজের রাসায়ন বিভাগ অর্নাসের ছাত্র কলেজ বয়কট করলেন। এই আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে ভারতে গান্ধীবাদের সার্থক প্রয়োগ সম্ভব হয়েছিল। 


১২,মার্চ ১৯৩০ সবরমতীর তীরে ৭৯ জন স্বেচ্ছাসেবক নিয়ে বৃটিশ লবন আইন করলেন গান্ধী। লবন সত্যাগ্রহ মধ্যে সারাদেশে অহিংস আন্দোলনের সফল প্রয়োগ ঘটালেন মহাত্মা গান্ধী। 


১৯৩৯ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের দমামা বাজল। কংগ্রেস ওর্য়াকিং কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী গান্ধী ৮,আগষ্ট মধ্যরাতে বোম্বাই ঘোষনা করলেন '' ইংরেজ ভারত ছাড়ো বা কুইট ইন্ডিয়া"। ৯,আগস্ট আসমুদ্রহিমাচল গান্ধীর ডাকে উত্তাল হয়ে আছড়ে পড়লো রাজপথে। বৃটিশের বিরুদ্ধে ভারতবাসীর শেষ স্বাধীনতার আন্দোলন। কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী, কচ্ছের রন হতে কোহিমা গান্ধীর আহ্বানে এক ও ঐক্যবদ্ধ হয়ে গেল। এই বিপ্লবের ব্যপকতায় কোন কোন ক্ষেত্রে আন্দোলন অহিংসার পথে বিচ্যুত হয়েছিল বটে! অনেক ক্ষেত্রে প্রয়োজন ছিল,কোনো ক্ষেত্রে সুদীর্ঘ সময়ের কারনে আন্দোলনকারী'দের ধৈর্যচ্যুতিও ঘটে। বিচ্ছিন্ন হিংসা ব্যতীত নিরবচ্ছিন্ন অহিংস পথেই এই আন্দোলনে গান্ধীবাদের একটি সার্থক প্রয়োগ ঘটলো। স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাসে 'আগষ্ট বিপ্লব' গান্ধীবাদের অহিংসা তত্ত্বের প্রয়োগে অবিস্মরণীয় হয়ে থাকবে পৃথিবীর ইতিহাসে। 


গান্ধী বিশ্বাস করতেন যে অসত্যের ব্যবহারে কোন মহৎ কল্যাণ হতে পারে না। হিংসাত্মক আন্দোলনে অসত্যের ব্যবহার অনিবার্য। হিংসাত্মক আন্দোলন গড়ে ওঠে আড়ালে, অন্ধকারে, গোপনে। আর গোপন আন্দোলনে অসত্যকে গ্রহন করা ছাড়া উপায় নেই।মিথ্যাচার যেকোন আন্দোলনে পারস্পরিক বিশ্বাসে  ফাটল ধরিয়ে দেয়। অহিংসা আন্দোলনের মূল কথা অন্যয়ের সঙ্গে অসহযোগ।গান্ধী বলেছেন অন্যায়ের বিরোধিতাই কর্তব্য, যদি অহিংসা প্রতিরোধ অসম্ভব হয় তাহলে অহিংসা থেকে বিচ্যুত হয়ে উচিত অন্যায়ের বিরোধীতা করা। বৌদ্ধ ও জৈনধর্মের প্রভাবে সনাতন হিন্দু গান্ধীকে অহিংপথে অবিচল রেখেছিল। 


গান্ধী নোয়াখালীর দাঙ্গা বিদ্ধস্থ এলাকা পরিদর্শন করেছেন। ভারতের স্বাধীনতা প্রাপ্তির দিনে ব্যরাকপুর গঙ্গার ঘাটে বসে অনশন করেছেন। ৩০,জানুয়ারী ১৯৪৮ জীবন দিয়েই মহাত্মা বলে দিলেন হিন্দু মুসলমান ঐক্যবদ্ধ হোক! ভারতবর্ষ সবার।


No comments