Page Nav

HIDE

Grid Style

GRID_STYLE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

বাঁকুড়ার ঐতিহ্যের আরেক নাম হাটগ্রামের শঙ্খ শিল্প

বাংলার প্রাচীনতম আঙ্গিকগুলির মধ্যে অন্যতম হল শঙ্খ শিল্প। আর এই শিল্প জগতে অন্যতম নাম হাটগ্রাম। বাঁকুড়া জেলার ইন্দপুর ব্লকের অখ্যাত এই গ্রামটি আজ শঙ্খ শিল্পের হাত ধরে গোটা দেশের নজর কেড়েছে। শুধুমাত্র শাঁখা নয়, শঙ্খ দিয়ে যে কত রকমে…

 






বাংলার প্রাচীনতম আঙ্গিকগুলির মধ্যে অন্যতম হল শঙ্খ শিল্প। আর এই শিল্প জগতে অন্যতম নাম হাটগ্রাম। বাঁকুড়া জেলার ইন্দপুর ব্লকের অখ্যাত এই গ্রামটি আজ শঙ্খ শিল্পের হাত ধরে গোটা দেশের নজর কেড়েছে। শুধুমাত্র শাঁখা নয়, শঙ্খ দিয়ে যে কত রকমের হস্ত শিল্প বা ঘর সাজাবার জিনিষ তৈরি করা যায় তা এখানে না এলে বোঝা যাবে না। বাজাবার শঙ্খ তো রয়েছেই, তাছাড়া ধুপদানি, কাজলদানি, চুলের ক্লিপ, গলার হার ও শঙ্খ দিয়ে বিভিন্ন ধরনের শোপিস তৈরি করেন এখানকার শঙ্খ শিল্পীরা। গোটা রাজ্যের বেশিরভাগ শাঁখা ও শঙ্খজাত পণ্যের অধিকাংশের যোগান যায় এই হাটগ্রাম

থেকেই। আর সবচেয়ে যে বিষয়টা উল্লেখ না করলেই নয় এই হাটগ্রামে এমন কয়েকজন শঙ্খ শিল্পী রয়েছেন যারা শঙ্খের উপর সূক্ষ্ম কারুকার্য করে হিন্দু পুরানের নানান দেবদেবী ও রামায়ণ-মহভারতের নানান আখ্যান ফুটয়ে তুলেছেন অত্যন্ত দক্ষতার সাথে। আর এই কাজের জন্য অনেকেই জাতীয় পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। আর গোটা দেশ জুড়ে জনপ্রিয়তা বেড়েছে হাটগ্রামের।  


হাটগ্রামের শঙ্খ শিল্পের ইতিহাস বেশ পুরাতন। কেউ কেউ মনে করেন মল্ল রাজাদের সময়কাল থেকেই বিষ্ণুপুরের সাথে সাথে এই হাটগ্রামেও শঙ্খের নানান কাজ হতে শুরু করে। আর পরবর্তীতে চাহিদা বাড়তে থাকায় এখানে শঙ্খ শিল্প অন্যতম প্রধান শিল্পে পরিণত হয়। এই শিল্পের প্রধান কাঁচামাল শঙ্খের জোগানদার তামিলনাডু। মূলত চেন্নাই থেকে কলকাতা হয়ে বিভিন্ন ধরণের শঙ্খ এখানে আসে। বাঁকুড়া তথা পশ্চিমবঙ্গের শঙ্খ শিল্পের পীঠস্থান এই হাটগ্রামে এই কাজে প্রায় ৩০০ জন শিল্পী যুক্ত রয়েছেন। বর্তমানে বিষ্ণুপুরে শঙ্খ শিল্পের পরিস্থিতি অত্যন্ত করুণ হলেও হাটগ্রামে এই কাজ এখনও বেশ ভালো রকম চলছে। এই গ্রামে কোন কোন পরিবারের সকলেই এই কাজের সাথে যুক্ত। কারণ একক ভাবে এই কাজ সম্ভব নয়। প্রথমেই যেসব শঙ্খ আসে সেগুলিকে ঝাড়াই বাছাই করে বিভিন্ন সাইজের শঙ্খগুলিকে আলাদা আলাদা করে নেওয়া হয়। এরপর মেশিনে শঙ্খ কাটিং করার জন্য রয়েছেন একদল শিল্পী। আবার পালিশিং আর হাতে পরার শাঁখার নকশা তোলার জন্য রয়েছে আবার আলাদা আলাদা শিল্পী।


এখানকার বেশিরভাগ শিল্পী মূলত মহিলাদের হাতে পরার শাঁখা তৈরি করেন। আবার বেশ কয়েক জন রয়েছেন যারা শঙ্খ দিয়ে বিভিন্ন শো পিস, ঘর সাজাবার জিনিষ, ধূপদানি, কাজলদানি, মাথার ক্লিপ, কানের দুল বা গলার হার তৈরি করেন। এরা সাধারণত বংশপরম্পরায় এই কাজ করে আসছেন। কিন্তু এই হাটগ্রামে এমন কয়েকজন শিল্পী রয়েছেন যাদের হাতের কাজে জাদু রয়েছে। অসীম দক্ষতা আর শৈল্পিক নৈপুণ্যে তারা শঙ্খয়ের উপরে ফুটিয়ে তোলেন হিন্দু পুরাণের নানান দেবদেবী বা রামায়ণ-মহাভারতের নানান ঘটনাবলির নিখুঁত প্রতিরূপ। ৬-৭ ইঞ্চি একটা শঙ্খে এই ধরণের একটি কাজ করতে একজন শিল্পীর প্রায় দেড়-দুই মাস সময় লাগে। অসীম ধৈর্য আর বিচক্ষণতার পরিচয় লাগে এই সব কাজে। শঙ্খের অন্যান্য কাজের চেয়ে এই ধরণের কাজের মূল্য বেশ অনেকটাই বেশি। একটা ৬ ইঞ্চির কারুকার্য করা শঙ্খের মূল্য শুরু হয় ৬/৮ হাজার টাকা থেকে। তবে দেশ বিদেশের শিল্প রসিকদের কাছে এই ধরণের কাজের চাহিদা আকাশ ছোঁয়া। এই কাজের জন্য এই গ্রাম থেকে অনেকেই রাজ্য ও রাষ্ট্রীয় স্তরে পুরষ্কার পেয়েছেন।   


তবে যে কাজে হাটগ্রামের অধিকাংশ শিল্পী যুক্ত সেই শাঁখা তৈরির চাহিদায় আজ ভাটা পড়েছে। পর্যাপ্ত কাঁচামালের যোগান কমেছে আবার ভালো মানের শঙ্খের দাম অত্যধিক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। অন্যদিকে নব্য আধুনিকতার ছোঁয়ায় আজ বাঙালি মহিলাদের শাঁখা পরা চল কমেছে। একসময় রাজ্যের সব জেলায় এখানথেকে শাঁখার যোগান গেলেও এখন তা অনেকটাই কমে গেছে। ফলে নব প্রজন্ম আর এই শিল্পে আসতে উৎসাহ পাচ্ছে না। অনেকেই এখন শাঁখা তৈরি ছেড়ে ঘর সাজাবার অন্যান্য জিনিষ তৈরিতে মন দিয়েছেন। তবে এ জন্য যেভাবে প্রচার আর বিপণন দরকার তাতে বেশ খামতি রয়েছে। তবে সরকার অল্প বিস্তর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে এই শিল্পের প্রসারে। 


শিল্পীদের কাছ থেকে নিজেদের পছন্দসই জিনিষ কিনে আনতে পারেন।  ব্যবহার করুন নিজের জন্য, উপহার দিন প্রিয়জনেদের। বাঙালীর মধ্যে বেঁচে থাক হাটগ্রামের শঙ্খ শিল্প, বেঁচে থাক হাটগ্রামের শঙ্খশিল্পীরা।

No comments