সিঁদুরগাছ জোগাড়ে হিমশিম রেলকর্তারা
বিশ্ব পরিবেশ দিবসে তাঁর সরকারি বাস ভবনে সিঁদুরগাছ পুঁতেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। আর তারপরই কেন্দ্রীয় সরকারের দপ্তরে দপ্তরে ওই গাছ পোঁতার ফরমান পৌঁছেছে উপরতলা থেকে। সেই হুকুম তামিল করতে বৃহ…
সিঁদুরগাছ জোগাড়ে হিমশিম রেলকর্তারা
বিশ্ব পরিবেশ দিবসে তাঁর সরকারি বাস ভবনে সিঁদুরগাছ পুঁতেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। আর তারপরই কেন্দ্রীয় সরকারের দপ্তরে দপ্তরে ওই গাছ পোঁতার ফরমান পৌঁছেছে উপরতলা থেকে। সেই হুকুম তামিল করতে বৃহস্পতিবার গলদঘর্ম দশা পূর্ব রেলকর্তাদের।
প্রতিবছরই বিশ্ব পরিবেশ দিবসে আর পাঁচটা দপ্তরের মতো বৃক্ষরোপণ উৎসব পালন করে ভারতীয় রেলের বিভিন্ন জোন ও ডিভিশন। মূলত রোপণ করা গাছের মধ্যে থাকে আম, জাম, কাঁঠাল, পেয়ারা, সবেদা, লিচু, আতা-র মতো ক্রান্তীয় বৃক্ষ। কিন্তু ভারতীয় সেনাবাহিনীর 'অপারেশন সিঁদুর'-এর পর দেশজুড়ে সিঁদুরের গায়ে এখন রাজনীতির গন্ধ। তাই বিশ্ব পরিবেশ দিবসে দিল্লির রেল ভবনের কর্তারা যে দেশের যাবতীয় ডিভিশনের রেল কলোনি, পার্কিং জোন, স্টেশনে সিঁদুর গাছ লাগানোর নির্দেশ পাঠাবেন, সেটাই তো স্বাভাবিক!
'লাও' তো বললেন! কিন্তু মিলবে কোথায়? যে হর্টিকালচার এজেন্সি রেলকে গাছের জোগান দেয়, তাদের ভাঁড়ারেও এই গাছ বাড়ন্ত। প্রাকৃতিকভাবে বিষুব অঞ্চলীয় গুল্মজাতীয় উদ্ভিদ এই সিঁদুর গাছের আদি জন্ম দক্ষিণ আমেরিকায়। সেখান থেকে এদেশে এর আগমন। ছড়িয়ে ছিটিয়ে বিভিন্ন প্রদেশে নার্সারির দুনিয়ায় চাহিদা তেমন একটা নেই।
তাই বরাত পেয়ে বিপাকে পড়া রেলের নথিভুক্ত হর্টিকালচার এজেন্সি সকাতরে কড়া নাড়া শুরু করল বড় বড় নার্সারিগুলির দরজায়। শেষে সেখান থেকেই সিঁদুরগাছ এনে দায় রক্ষা করা গেল। রেল আধিকারিকরাও সেই গাছ পুঁতে ছবি দিয়ে হাঁফ ছেড়ে বাঁচলেন।
পহেলগাঁওয়ের জঙ্গি হামলা পরবর্তীকালে প্রধানমন্ত্রীর সিঁদুরগাছ রোপণের পরই সিঁদূরগাছের জনপ্রিয়তা তুঙ্গে। রোজই গুগলে এই গাছের ঠিকুজি খুঁজে চলেছেন লক্ষ লক্ষ ভারতবাসী। এই গুল্মের বৈজ্ঞানিক নাম 'বিক্সা ওরেলানা'। ইংরেজি নাম 'আন্নাত্তো'। হিন্দিতে বলা হয় সিঁদূরগাছ। চিরসবুজ এই গাছ ২০-৩০ ফুট লম্বা হয়। ফলের বীজের রং উজ্জ্বল লাল। ওই বীজ থেকে গাঢ় লাল এক ধরনের রং তৈরি হয়। প্রাকৃতিক সেই লাল রং ভারত ও বিদেশে খাবারেও ব্যবহার করা হয়। অতীতে ওষ্ঠরঞ্জনী হিসাবে এর বহুল ব্যবহার থাকায় লিপস্টিক গাছ নামেও এটি পরিচিত।
হাওড়ার ডিআরএম সঞ্জীব কুমার জানিয়েছেন, এই গাছ থেকে সিঁদূর তৈরি হয়। যা বিবাহিত মহিলারা ব্যবহার করেন। পূর্ব রেলের ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ সূত্রে বলা হয়েছে, ফলের গাছের রোপণ বাড়াতে রেল বরাবর তৎপর। তবে এবার সিঁদুর গাছ বিশেষ পরিচিত না হওয়ায় কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্রের দ্বারস্থও হতে হয়েছে। রেলকর্তাদের কথায়, পূর্ব রেলের হাওড়া, শিয়ালদহ-সহ অন্য ডিভিশনগুলির রেল কলোনি, স্টেশন বা বাগানে বিশ্ব পরিবেশ দিবসে এতদিন রোপণ করা হত মূলত ফলগাছ। রেলের বক্তব্য, উন্নয়ন ও সম্প্রসারণের জন্য বিভিন্ন স্টেশনে গাছ কাটা পড়ছে। পরিবেশের ভারসাম্যে তাই স্টেশন চত্বরে লাগানো হচ্ছে নতুন গাছ। সেই গাছ যাতে সঠিক যত্ন পায়, সেজন্য তৎপর হতে বলা হয়েছে ইঞ্জিনায়ারিং বিভাগকেও।
No comments