জিআই সেপসিসে ভুগছেন প্রাক্তন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়! কী এই অসুখ? কেনই বা হয়?
শনিবার পেটের যন্ত্রণা এবং বমি হওয়ার মতো সমস্যা নিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন তমলুকের বিজেপি সাংসদ তথা প্রাক্তন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। তার পর …
জিআই সেপসিসে ভুগছেন প্রাক্তন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়! কী এই অসুখ? কেনই বা হয়?
শনিবার পেটের যন্ত্রণা এবং বমি হওয়ার মতো সমস্যা নিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন তমলুকের বিজেপি সাংসদ তথা প্রাক্তন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। তার পর থেকে মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত তাঁকে সঙ্কটমুক্ত বলে ঘোষণা করেনি হাসপাতাল।
তিন দিন হল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন প্রাক্তন বিচারপতি তথা তমলুকের সাংসদ অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। এখনও তাঁকে সঙ্কটমুক্ত বলতে পারেননি চিকিৎসকেরা। আলিপুর এলাকার যে হাসপাতালের আইসিইঊ-তে তাঁর চিকিৎসা চলছে, তারা জানিয়েছে, প্রাক্তন বিচারপতি গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল (জিআই) সেপসিস নামের এক ধরনের সংক্রমণজনিত সমস্যায় ভুগছেন। এই সেপসিস এমনই এক রোগ, যা থেকে কিডনি, হার্ট, মস্তিষ্ক-সহ শরীরের নানা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ একসঙ্গে বিকল হতে পারে! এমনকি, যথাসময়ে সঠিক চিকিৎসা না হলে রোগীর মৃত্যুও হতে পারে।
সেপসিস কী?
এমন এক রোগ যা প্রথমে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে আক্রমণ করে এবং ক্রমে তা থেকে বিভিন্ন অঙ্গের সঙ্গে জুড়ে থাকা সুস্থ সবল তন্তুরও ক্ষতি করতে শুরু করে। ফলে এক এক করে বিকল হতে শুরু করে শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ! কিন্তু প্রাক্তন বিচারপতি সেপসিসে আক্রান্ত হলেন কী ভাবে?
জিআই সেপসিসের মতো রোগ কখন হয়?
শহরের এক হাসপাতালের গ্যাসট্রোএনট্রোলজিস্ট প্রদীপ্তকুমার শেঠি জানাচ্ছেন, সেপসিস হয় তখনই, যখন কোনও সংক্রমণ শরীরে অতিরিক্ত মাত্রায় ছড়িয়ে পড়ে। আর এই রোগ দীর্ঘদিন ধরে তৈরি হয় না। আচমকা আসে এবং মারণ আঘাত হানার ক্ষমতা রাখে। শেঠি বলছেন, “শরীরে অতিমাত্রায় সংক্রমণ ছড়ালে প্রদাহও অতিরিক্ত পরিমাণে বেড়ে যায়। তাতে সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়ে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতায়। সচরাচর শরীরে কোনও রোগ হলে আমাদের রোগ প্রতিরোধ শক্তি তার বিরুদ্ধে লড়াই করে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে, বিপরীত প্রতিক্রিয়া হয়। রোগ প্রতিরোধ শক্তি লড়াই করার বদলে এমন পরিস্থিতি তৈরি করে, যা রোগীর জন্য সঙ্কটজনক। যার চিকিৎসা যথাসময়ে না হলে মৃত্যুও হতে পারে!”
প্রাক্তন বিচারপতির অসুখ গ্যাসট্রোইনটেস্টাইনাল সেপসিস আসলে কী? চিকিৎসক শেঠি বলছেন, “ওঁর ঠিক কী কী জটিলতা হয়েছে, তা আমি সবিস্তার জানি না। তবে সেপসিসের সংক্রমণ নানা ভাবে হতে পারে। কারও ক্ষেত্রে জীবাণু শ্বাসপ্রশ্বাসের মাধ্যমে ঢুকতে পারে। কারও ত্বকের রন্ধ্রপথ ধরে ঢুকতে পারে। আবার খাদ্যনালী বা গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল ট্র্যাকের মাধ্যমেও ঢুকতে পারে। গ্যাসট্রোইনটেস্টাইনাল সেপসিস তখনই বলা হবে, যখন জীবাণু খাদ্যনালী বা গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল ট্র্যাকের মাধ্যমে শরীরে ঢুকবে এবং তা থেকে অন্ত্রের যে কোনও জায়গায় সংক্রমণ ছড়াবে।’’
খাদ্যনালীর পথে শরীরে জীবাণু সংক্রমণ! তবে কি খাওয়াদাওয়ার সমস্যা থেকেই গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল সেপসিস হয়? মেডিসিনের চিকিৎসক রণবীর ভৌমিক বলছেন, “শরীরে জীবাণু গেলেই সেপসিস হবে, এমন কিন্তু নয়। অনেকের ক্ষেত্রে পেটের সমস্যা, ডায়েরিয়া, বমি ইত্যাদি হওয়ার পরে ধীরে ধীরে সেরেও যায়। আবার কারও ক্ষেত্রে দেখা যায় সংক্রমণ এতটাই ছড়াচ্ছে যে, তা মস্তিষ্ক, কিডনি, হার্টের সঙ্গে জুড়ে থাকা ধমনীগুলিকে নষ্ট করে দিচ্ছে। তেমন হলে মাল্টি অর্গান ফেলিওর হতে পারে। এমনকি, শরীরে জলাভাব হলে কিডনি বিকল হতে পারে, তার ফলেও অন্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বিকল হতে পারে।”
তা হলে সতর্ক হবেন কী ভাবে?
সতর্ক হওয়ার জন্য নিজের শরীরের ক্ষমতা সম্পর্কে অবগত হওয়া আগে জরুরি বলে মনে করেন চিকিৎসক শেঠি। তিনি বলছেন, “যাঁদের বয়স ষাটের বেশি বা যাঁরা অন্য কোনও রোগে আক্রান্ত, যাঁদের ক্যানসার হয়েছে বা কেমোথেরাপি চলেছে, তাঁদের বাড়তি সতর্ক হওয়া দরকার। কারণ এঁদের শারীরিক অসুস্থতা এবং দুর্বলতার কারণে এমনিতেই রোগ প্রতিরোধ করার ক্ষমতা কমে যায়। আর শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কম হলে এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা সবচেয়ে বেশি।”
প্রাক্তন বিচারপতির বয়স এখন ৬৩। অর্থাৎ, শারীরিক নিয়মে তাঁর রোগ প্রতিরোধ শক্তিও কম। এমন বয়স যাঁদের তাঁরা এই রোগ থেকে বাঁচতে হলে কী করবেন? চিকিৎসক রণবীর জানাচ্ছেন, এঁদের ক্ষেত্রে সচেতন ভাবে খাওয়াদাওয়া করা জরুরি। অর্থাৎ, বাইরে যা খুশি তাই খেয়ে নেওয়া, যত্রতত্র জল খাওয়া, কাটা ফল খাওয়া ইত্যাদি না করাই ভাল বলে মনে করেন তিনি। একসঙ্গে রণবীর বলছেন, “সেপসিসের মতো অসুখ ৬ ঘণ্টার মধ্যেই মারাত্মক আকার নিতে শুরু করতে পারে। সব সময়ে রোগী বেশি সময় পান না। তাই ভাল থাকতে হলে আগে থেকে নিজেকেই সচেতন থাকা জরুরি।”
No comments