মহিষাদল ব্লক প্রশাসনের উদ্যোগে তৈরি হচ্ছে তিন কোটির বেশি ব্যয়ে বর্জ ব্যবস্থাপনা প্রকল্প!
সেপটিক ট্যাঙ্কের বর্জ্য ও প্লাস্টিক বর্জ্য নিষ্কাশন করে তা থেকে সম্পদ তৈরির জন্য ৩ কোটি ১৫ লক্ষ টাকা ব্যয়ে দু›টি প্রকল্প গড়ছে মহিষাদল ব্লক …
মহিষাদল ব্লক প্রশাসনের উদ্যোগে তৈরি হচ্ছে তিন কোটির বেশি ব্যয়ে বর্জ ব্যবস্থাপনা প্রকল্প!
সেপটিক ট্যাঙ্কের বর্জ্য ও প্লাস্টিক বর্জ্য নিষ্কাশন করে তা থেকে সম্পদ তৈরির জন্য ৩ কোটি ১৫ লক্ষ টাকা ব্যয়ে দু›টি প্রকল্প গড়ছে মহিষাদল ব্লক প্রশাসন। একটি প্রকল্পের মাধ্যমে গ্রাম ও শহরতলির সেপটিক ট্যাঙ্কের বর্জ্য সংগ্রহ করে তা থেকে তৈরি হবে জৈব সার। এই প্রকল্পে সহায়তা করছে খড়্গপুর আইআইটি। এই প্রকল্পের নাম ‘ফিকাল স্ল্যাজ ম্যানেজমেন্ট’ বা এফএসএম। অন্য প্রকল্পে সিঙ্গল ইউজ প্লাস্টিক সংগ্রহ করে রিসাইক্লিংয়ের মাধ্যমে তা পুনর্ব্যবহার যোগ্য করা হবে। প্লাস্টিক ম্যানেজমেন্টের ওই প্রকল্প শীঘ্রই চালু হবে। ইতিমধ্যেই প্রায় ৩ কোটি টাকা খরচে ব্লকে ১১টি গ্রাম পঞ্চায়েতে গড়ে উঠেছে কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা প্রকল্প (এসডব্লুএম)। সব্জির খোসা, প্লাস্টিক ব্যাগ, প্লাস্টিক মোড়কের মতো গৃহস্থালির জৈব ও অজৈব বর্জ্য এবং রাস্তাঘাট ও বাজারের বর্জ্য সংগ্রহ করে তা থেকে সার তৈরি শুরু হয়েছে। সেই সার বাণিজ্যিকভাবে বিক্রিও করছে কয়েকটি গ্রাম পঞ্চায়েত। প্লাস্টিক বর্জ্য পৃথক করে শুরু হয়েছে ছোট আকারে রিসাইক্লিংও। এসডব্লুএম প্রকল্পে জেলার মডেল মহিষাদলের ইটামগরা ২ গ্রাম পঞ্চায়েত। প্রতি পঞ্চায়েতে এসডব্লুএম প্রকল্প এবং একই সঙ্গে ফিকাল স্ল্যাজ ম্যানেজমেন্ট ও প্লাস্টিক রিসাইক্লিং প্ল্যান্ট কোনও ব্লকেই নেই। ফলে গ্রামীণ এলাকায় সমস্ত ধরনের বর্জ্য ব্যবস্থাপনার উদ্যোগ নিয়ে মহিষাদল পূর্ব মেদিনীপুর জেলার মধ্যে মডেল হয়ে উঠেছে।
জেলার নির্মল বাংলা মিশনের আধিকারিক কাবেরী সামন্ত বলেন, পূর্ব মেদিনীপুরে দু›টি ফিকাল স্ল্যাজ ম্যানেজমেন্ট প্ল্যান্ট গড়ে উঠছে। একটি মহিষাদলে এবং অন্যটি রামনগরে। রামনগরের প্রকল্পের কাজ শেষের পথে। মহিষাদলের প্রকল্পের কাজ চলতি মাসেই শুরু হবে। মূলত হলদিয়া এবং দীঘা দু›টি শহর এবং শহরতলি এলাকার কথা চিন্তা করেই দু›টি মডেল প্রকল্প জেলায় তৈরি হচ্ছে। প্লাস্টিক ম্যানেজমেন্ট প্ল্যান্টও ইতিমধ্যেই জেলায় কয়েকটি গড়েছে। জেলা আধিকারিক বলেন, পটাশপুর ও ভগবানপুরে দু›টি এধরনের প্ল্যান্ট ইতিমধ্যেই কাজ শুরু করেছে। খাদ্যবস্তুর মোড়ক হিসেবে ব্যবহৃত বিশেষ ধরনের প্লাস্টিক শোধনের জন্য নতুন একটি মেশিন পটাশপুরে বসানো হচ্ছে। ওই প্ল্যান্টগুলিতে রিসাইক্লিং করা প্লাস্টিক বিক্রির জন্য মার্কেটিং চেন তৈরি হচ্ছে। জেলার রিসাইক্লিং করা প্লাস্টিক কারা কিনবে বা ওই প্লাস্টিক কীভাবে ব্যবহার করে নতুন শিল্প গড়ে উঠবে তা নিয়েও আলোচনা চলছে। তাছাড়া ওই রিসাইকেল করা প্লাস্টিক দানা পরীক্ষামূলক ভাবে পিচ রাস্তা তৈরির সময়ও ব্যবহার শুরু হয়েছে জেলায়। এধরনের রাস্তা টেকসই হয়।
মহিষাদলের কিসমৎ নাইকুন্ডি গ্রাম পঞ্চায়েতের বাসুদেবপুরে হিজলি টাইডাল ক্যানেলের উল্টো দিকে সড়কের পাশে ফিকাল স্ল্যাজ ম্যানেজমেন্ট প্ল্যান্ট গড়ে উঠছে। পঞ্চায়েত সমিতির স্বাস্থ্য কর্মাধ্যক্ষ তরুণ মণ্ডল বলেন, ২ কোটি ৬৭ লক্ষ টাকা ব্যয়ে এফএসএম প্রকল্প তৈরি হবে। গৃহস্থ বাড়ি, আবাসন, হোটেলের সেপটিক ট্যাঙ্ক থেকে মলমূত্রের বর্জ্য বিশেষ গাড়িতে করে সংগ্রহ করে এনে ওই প্ল্যান্টে নিষ্কাশন করা হবে। ওই মলমূত্র থেকে যাতে দূষণ না ছড়ায় সেজন্য এই প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। হলদিয়া পুর এলাকাতেও এধরনের প্ল্যান্ট নেই। পুরসভা সহ কয়েকটি ব্লকের সেপটিক ট্যাঙ্কের বর্জ্য সংগ্রহ করা হবে। তারপর তা থেকে জৈব সার তৈরি হবে। এজন্য প্রযুক্তি দিচ্ছে খড়্গপুর আইআইটি। টেন্ডার করে একটি সংস্থাকে ওয়ার্ক অর্ডার দেওয়ার পরও ওই সংস্থা সময়মতো কাজ শুরু করতে পারেনি। আইআইটির তরফে ওই সংস্থাকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। এর পাশাপাশি প্লাস্টিক নিয়ন্ত্রণের জন্য মহিষাদলের এক্তারপুরে ৪৮ লক্ষ টাকা ব্যয়ে একটি প্লাস্টিক ম্যানেজমেন্ট প্ল্যান্ট তৈরি হচ্ছে। কিছুদিনের মধ্যে মেশিন বসবে। বিভিন্ন পঞ্চায়েতে এসবিএমের মাধ্যমে যে প্লাস্টিক সংগ্রহ করা হয়, তা পাঠানো হবে ওই প্ল্যান্টে।
No comments