সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের অঙ্গীকারে বিজ্ঞান মঞ্চের রাজ্য সম্মেলন শুরু টাকিতে
টাকি, ২৮ মার্চ উত্তর ২৪ পরগনার টাকিতে শুক্রবার শুরু হলো পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চের চতুর্দশ রাজ্য সম্মেলন। সুচনা পর্বে সংগঠনের পতাকা উত্তোলন করে শহ…
সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের অঙ্গীকারে বিজ্ঞান মঞ্চের রাজ্য সম্মেলন শুরু টাকিতে
টাকি, ২৮ মার্চ উত্তর ২৪ পরগনার টাকিতে শুক্রবার শুরু হলো পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চের চতুর্দশ রাজ্য সম্মেলন। সুচনা পর্বে সংগঠনের পতাকা উত্তোলন করে শহীদদের স্মৃতি ও শ্রদ্ধা জানান সংগঠনের রাজ্য সভাপতি পদার্থবিদ অধ্যাপক ড. সুবিমল সেন। শ্রদ্ধা জানান কার্যকরী সভাপতি অধ্যাপক সত্যজিৎ চক্রবর্তী, রাজা সম্পাদক প্রদীপ মহাপাত্র, সহ-সম্পাদক সৌরভ চক্রবর্তী সহ অন্যান্য রাজ্য নেতৃবৃন্দ। পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চের রাজ্য নেত্রী রত্না রায় সহ অন্যান্য স্যংস্কৃতিবা কর্মীরা উদ্বোধনী সঙ্গীত পরিবেশন করেন। শোক প্রস্তাব উত্থাপন করেন অধ্যাপক সত্যজিৎ চক্রবর্তী। সম্মেলনের সর্বাঙ্গিন সাফল্য কামনা করে উদ্বোধনী ভাষণ দেন বেঙ্গালুরু'র ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব সায়েন্সের বিজ্ঞানী অধ্যাপক অর্ণব রায়চৌধুরি।
অধ্যাপক বায়চৌধুরি তাঁর বক্তব্যে বাংলার সেরার সেরা বিজ্ঞানী ড. মেঘনাদ সাহা, সত্যেন্দ্রনাথ বসু ও সিডি রমনের পদার্থবিজ্ঞানের গবেষণার বিভিন্ন জটিল বিষয়গুলিকে সুন্দর সহজ ভাষায় ব্যাখ্যা করেন। সংগঠনের সভাপতি ড. সুবিমল সেন আন্দোলন এবং সংগ্রাম প্রসঙ্গে বিজ্ঞান সংস্কৃতির বিভিন্ন ভিন্ন দিক তুলে ধরে বলেন, সমাজের চরিত্র না বুঝলে জনবিজ্ঞান আন্দোলনকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। বিজ্ঞান প্রযুক্তির এত উন্নতি, মেডিক্যাল সায়েন্সের এত অগ্রগতি সত্ত্বেও সবার জন্য বাসস্থান, খাদ্য, চিকিৎসা ব্যবস্থা গড়ে উঠছে না রাষ্ট্রের ভুল নীতির কারণে। পরিবেশ ব্যাস হচ্ছে। গোটা সুন্দরবনাঞ্চল সাংঘাতিকভাবে আক্রান্ত। কে দায়ী? এই প্রশ্ন তুলে অভিযোগের সুরে তিনি বলেন কিছু ধনী ব্যক্তির প্রভুত লোভ-লালসাকে দায়ী করেন।
তিনি বলেন, সেই সব লোভ-লালসার মূল্য চোকাচ্ছেন সাধারণ মানুষ। আর কিছু ডিগ্রিধারী অশিক্ষিতরা সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প ছড়াচ্ছে। নিজের বক্তব্যে, অধ্যাপক সেন বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করে বলেন, বাড়ছে অসাম্য। আকাশ ছোঁয়া জিনিসপত্রের দাম। বাড়ছে বেকারি। ১৯৫২ সালে পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা গঠিত হয়। তারপর থেকে রাজ্যে নতুন সরকার গঠন হওয়ার আমে পর্যস্ত ধর্ম নিয়ে বিধানসভার অভ্যন্তরে কোনোদিন রাজনীতি হয়নি। যা আজ হচ্ছে। সে কারণে বিজ্ঞান আন্দোলনের কর্মীদের দায়িত্ব বিজ্ঞান আন্দোলনের পাশাপাশি চতুর্দিকে যা ঘটছে তাকে অনুধাবন করে তার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের নতুন নতুন পন্থা আবিষ্কার করার সাথে সাথে বৈচিত্রের মধ্যে ঐক্য বিনিষ্টকারীদের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তুলতে পাকলে তবেই আমরা জটিল এক কঠিন পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসতে পারবো।
বিজ্ঞান সংস্কৃতির প্রসার ঘটাও এবং বিজ্ঞানমনস্ক ও পরিবেশ সচেতন সমাজ গড়ার আহ্বান জানিয়ে এদিন পার্থিব বসু ও অনিন্দ্য চ্যাটার্কি মঞ্চে (টাকি সাংস্কৃতিক মঞ্চ), বসু-আইনস্টাইন প্রাঙ্গণে শুরুহয়েছে পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চের চতুর্দশ রাজ্য সম্মেলন। সম্মেলন মঞ্চের ঢিল ছোঁড়া দূরত্বে শান্ত ইছামতী নদী। ওপারে প্রতিবেশী বাংলাদেশ। বামফ্রন্টের সময়ে এপারে গড়ে উঠেছে পর্যটন কেন্দ্র, নদীগর্ভে চলে যাওয়া টাকি রাজবাড়ি ঘাটের কিয়দাশ, টাকি সরকারি স্কুল, মহাবিদ্যালয়।
সম্মেলনকে আরও প্রাণবন্ত করে তুলতে বিজ্ঞান সচেতনতা এবং তার প্রসার, কুসংস্কারাচ্ছন্ন মুক্ত সমাজ গড়ার লক্ষ্যে ঢাকি রাজবাড়ি ঘাট সংলগ্ন ইছামতী নদীর পাড় ঘেঁষে ৩ দিনের বিজ্ঞান মেলার আয়োজন করা হয়েছে। মেলায় চাঁপাপুকুর হাইস্কুল, বরুণরাট হাইস্কুল, টাকি রামকৃষ্ণ মিশন, টাকি ভবনাথ হাইস্কুল সহ বিভিন্ন স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীদের বিজ্ঞান বিষয়ক মডেল প্রদর্শনী ছাড়াও সাংস্কৃতিক মঞ্চে বিজ্ঞান বিষয়ক আলোচনা গান নৃত্য, তথ্য সংস্কৃতি দপ্তর বসিরহাট মহকুমা আয়োজিত লোকগীতি পরিবেশিত হয়। সম্মেলনস্থলের প্রবেশদ্বারে এই সময়কালে হারিয়ে যাওয়া সাথী ড. পার্থিব বসু, অনিন্দ্য চ্যাটার্জি, অধ্যাপক বিকাশ সিনহা, টানবন্ধু গ্যেদানী, সুভাষ চক্রবর্তী, অর্ধেন্দু শেখর দাস, কমলেশ ভৌমিকদের স্মরণ করা হয়েছে।
সম্মেলন কক্ষে নির্বিচারে গাছকাটা বন্ধ করো, সুন্দরবনকে রক্ষা করো, পুকুর, নয়ানজুলি সহ সমস্ত জলাশয় ভরাট বন্ধ করো সম্পর্কিত স্লোগান প্লাকার্ড দিয়ে সাজানো হয়েছে। টাকি দুবার মোড় সহ বিভিন্ন মোড়ে ছোট বড় তোরণ ও সংগঠনের পতাকায় সাজিয়ে তোলা হয়েছে টাকির ইছামতী রোড। জনবিজ্ঞান আন্দোলনের অন্যতম নেত্রী রত্না রায় সহ অন্যান্যরা এদিন উদ্বোধনী সঙ্গীতের মধ্যে দিয়ে সম্মেলনের আনুষ্ঠানিক শুরু হয়। সম্মেলনে শোক প্রস্তাব উত্থাপন করেন কার্যকরী সভাপতি অধ্যাপক সত্যজিৎ চক্রবর্তী। উদ্বোধক বিশিষ্ট পদার্থ বিজ্ঞানী অধ্যাপক অর্ণব রায়চৌধুরির প্রাক পরিচিতি তুলে ধরেন অধ্যাপক শ্যামল চক্রবর্তী। রাজ্যের ২৩টি জেলা থেকে এদিন ৪৪৪ জন প্রতিনিধি বিজ্ঞান মঞ্চের চতুর্দশ রাজা সম্মেলনে যোগ দিয়েছিলেন। উপস্থিত ছিলেন গণতান্ত্রিক আন্দোলনের নেতা শ্রীদীপ ভট্টাচার্য, পলাশ দাশ, মৃণাল চক্রবর্তী, সত্যসেবী কর ও রাজু আহমেদ।
No comments