উত্তরপ্রদেশে কুম্ভমেলা আজ ‘মৃত্যুকুম্ভে’ পরিণত হয়েছে- মমতা ব্যানার্জি
হিন্দু ধর্মের জিগির তুলে সমাজে বিভাজন ঘটাচ্ছে বিজেপি। এভাবে ভোটযন্ত্রে ফায়দা তোলার চেষ্টা চলছে। গেরুয়া শিবিরের এই এজেন্ডা ফাঁস করে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন…
উত্তরপ্রদেশে কুম্ভমেলা আজ ‘মৃত্যুকুম্ভে’ পরিণত হয়েছে- মমতা ব্যানার্জি
হিন্দু ধর্মের জিগির তুলে সমাজে বিভাজন ঘটাচ্ছে বিজেপি। এভাবে ভোটযন্ত্রে ফায়দা তোলার চেষ্টা চলছে। গেরুয়া শিবিরের এই এজেন্ডা ফাঁস করে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মঙ্গলবার বিধানসভায় দাঁড়িয়ে গেরুয়া বাহিনীর বিরুদ্ধে তাঁর সরাসরি তোপ, ‘আপনারা একটা ধর্মকে বিক্রি করে খাচ্ছেন।’ সেইসঙ্গে বাংলায় নির্বিঘ্নে অনুষ্ঠিত হওয়া গঙ্গাসাগর, দুর্গাপুজো, সরস্বতী পুজোর পূর্ণাঙ্গ তথ্য হাজির করে মমতা এও দেখালেন, সঠিক পরিকল্পনার অভাবে উত্তরপ্রদেশে কুম্ভমেলা আজ ‘মৃত্যুকুম্ভে’ পরিণত হয়েছে।
ভোট এলেই বিজেপির বিরুদ্ধে বিভাজনের তাস খেলার অভিযোগ নতুন নয়। একুশের ভোটেও তার প্রমাণ মিলেছে। কখনও দিল্লি বিজেপির তাবড় নেতারা বাংলায় ডেইলি প্যাসেঞ্জার হয়ে এসে বলছেন, দুর্গাপুজো করতে দেওয়া হয় না। আবার কখনও তাঁদের মুখে শোনা গিয়েছে হিন্দুরাষ্ট্র গঠনের বিভাজনকারী সুর। বছর ঘুরলেই বাংলায় যখন বিধানসভা নির্বাচন, সেই প্রেক্ষাপটে এখন থেকেই ধর্মীয় সুড়সুড়ি দেওয়ার প্রচেষ্টায় নেমে পড়েছেন ভেক গেরুয়াধারীরা। মঙ্গলবার বিধানসভার সিঁড়িতে বিজেপি বিধায়করা গেরুয়া পাগড়ি পরে ধর্নায় বসেন। পুজো-পার্বণের প্রসঙ্গ টেনে মেরুকরণের চেষ্টা চালান তাঁরা। কড়া প্রতিক্রিয়া দিতে দেরি করেননি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এদিন বিধানসভার অধিবেশন কক্ষে দাঁড়িয়ে তিনি বলেন, ‘এই বিধানসভায় সব ধর্মের মানুষ আছেন। আমি ব্রাহ্মণ পরিবারের মেয়ে। আবার এখানে তফসিলি জাতি, উপজাতি, রাজবংশী সম্প্রদায়ের মানুষও আছেন। কিন্তু এমন কী হল যে আপনারা (বিজেপি) একটা ধর্মকে বিক্রি করে খাচ্ছেন! আমরা ধর্ম বিক্রি করি না। সর্বধর্মকে সম্মান করি।’
একদিকে মেরুকরণ, অন্যদিকে মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে জঙ্গিযোগের অভিযোগ। বঙ্গ বিজেপি নেতাদের এই লাগামছাড়া ‘অসৌজন্যে’ প্রবল ক্ষুব্ধ মমতা। এই ইস্যুতে প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লিখে অভিযোগও করছেন তিনি। মমতার কথায়, ‘রাজ্য বিজেপি নেতারা জঙ্গিযোগের কথা বলেছে। এর প্রমাণ আছে? বিজেপি নেতারা প্রমাণ দিতে পারলে মুখ্যমন্ত্রী পদ ছেড়ে দেব।’ পাশাপাশি বাংলাকে হেয় করার জন্য বিজেপি সংকীর্ণ রাজনীতি করছে বলে সরস্বতী পুজোর প্রসঙ্গ টেনে আনেন মমতা। বিধানসভা কক্ষের বাইরে এদিন বিজেপি বিধায়করা যে টি-শার্ট পরে ধর্না দেন, তাতে লেখা ছিল, ‘মা সরস্বতীর অপমান মানছি না’। তার জবাব তথ্য ও ছবি সহকারে হাজির করেছেন মমতা। বলেছেন, ‘আমি যোগমায়া দেবী কলেজের ছাত্রী ছিলাম। আর যোগেশচন্দ্র ল’কলেজে পড়তাম। দুটো জায়গাতেই সরস্বতী পুজো হয়েছে। একটি জায়গায় নির্মাণের কাজ চলছে, নোংরা পড়েছিল, তাই পুজো একটু সরিয়ে আনা হয়েছে। বাড়ি, ক্লাব, পাড়া মিলিয়ে বাংলাজুড়ে ৩-৪ কোটি সরস্বতী পুজো হয়েছে।’ যে বিজেপি নেতারা বাংলার পুজো-পার্বণ নিয়ে মিথ্যা তথ্য দিচ্ছেন, তাঁদের ‘বকবক বাবু’ বলে কটাক্ষ করেছেন মমতা। নির্বিঘ্নে সম্পন্ন হওয়া গঙ্গাসাগর মেলার প্রসঙ্গ টেনে তাঁর অভিযোগ, ‘মহাকুম্ভকে শ্রদ্ধা জানাই, সম্মান করি। কিন্তু মহাকুম্ভ এখন মৃত্যুকুম্ভ হয়ে গিয়েছে। ওরা বলেছে ৩০ জন মারা গিয়েছেন। কিন্তু হাজার হাজার দেহ ভাসিয়ে দেওয়া হয়েছে।’
No comments