পর্যটনের বিকাশে হলদি নদীর তীরে 'কটেজ অন হুইলস'-এর ভাবনা হলদিয়া পুরসভার
হলদি নদীর তীরে 'কটেজ অন হুইলস' ট্যুরিজমের পরিকল্পনা করছে হলদিয়া পুরসভা। কাঠ বা কাঠের মণ্ড, বাঁশের তৈরি পরিবেশ বান্ধব কটেজের সঙ্গে থাকবে ভ্রাম্য…
পর্যটনের বিকাশে হলদি নদীর তীরে 'কটেজ অন হুইলস'-এর ভাবনা হলদিয়া পুরসভার
হলদি নদীর তীরে 'কটেজ অন হুইলস' ট্যুরিজমের পরিকল্পনা করছে হলদিয়া পুরসভা। কাঠ বা কাঠের মণ্ড, বাঁশের তৈরি পরিবেশ বান্ধব কটেজের সঙ্গে থাকবে ভ্রাম্যমাণ অডিটোরিয়ামও। লক্ষ্য, বন্দর শহরের পর্যটনকে আকর্ষণীয় করে তোলা। শিল্প সংস্থাগুলির কাছেও এধরনের কটেজ বা মিনি অডিটোরিয়াম খুবই আকর্ষণীয় হবে বলে মনে করছে পুর কর্তৃপক্ষ। এজন্য প্রায় ৪ কোটি টাকা বাজেট ধরা হয়েছে। রাজ্যের পর্যটন বিকাশে এধরনের উদ্যোগ প্রথম বলে দাবি হলদিয়া পুরসভার। আমেরিকা বা কানাডায় ইকো ট্যুরিজিমের প্রসারে নদী তীরে 'টাইনি হাউস অন হুইলস'-এর ইদানিং প্রচলন বাড়ছে। সেই একই ধাঁচে এবার হলদিয়া পুরসভাও বন্দর শহরের নির্জন নদী তীরে ভ্রাম্যমাণ কটেজের পরিকল্পনা করেছে। মধ্যবিত্ত এবং উচ্চবিত্তের জন্য কটেজের মধ্যে লাক্সারি বা সেমি লাক্সারি দু ধরনের আয়োজন থাকবে। বাঙালিয়ানার সঙ্গে আধুনিকতার মিশেল তৈরি করা হবে প্রতিটি কটেজ। উপকূল এলাকায় স্থায়ী নির্মাণের বাধা কাটাতেই পর্যটনে এধরনের উদ্যোগ নিতে চলেছে হলদিয়া পুর কর্তৃপক্ষ। সাম্প্রতিক একের পর এক সাইক্লোন বা জলোচ্ছ্বাসের কথাও মাথায় রয়েছে তাদের।
পুর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, কোস্টাল রেগুলেশন জোন অ্যাক্ট মেনে হলদিয়ার নদী তীরে পর্যটন বিকাশের উদ্যোগ নিতে চলেছে পুরসভা। কারণ হলদি নদীর তীরে কোনও স্থায়ী কটেজ বা রিসর্ট তৈরি করতে গেলে সিআরজেড নিয়মে আটকে যাবে। তাছাড়া হলদিয়ায় নদী তীরের জমিগুলি বন্দর কর্তৃপক্ষের অধীনে রয়েছে। তাদের কাছ থেকে নদী তীরের জমি পুরসভা ৩০ বছরের লিজে নিয়েছে। সেখানে কোনও ধরনের স্থায়ী নির্মাণে অনুমতি দিতে রাজি নয় বন্দর কর্তৃপক্ষ। ফলে নদীর তীরে বড় আকারে স্থায়ী রিসর্ট বা সরকারি সার্কিট হাউসের পরিকল্পনা থেকে সরে এসেছে পুরসভা। বরং নতুন ধরনের কটেজ অন হুইলস তৈরির পরিকল্পনা করেছে। হলদিয়ার মহকুমা শাসক তথা পুর প্রশাসক সুপ্রভাত চট্টোপাধ্যায় বলেন, পুর কর্তৃপক্ষ নদীর তীরে ভ্রাম্যমাণ কটেজ বসানোর চিন্তাভাবনা করছে।
একটি সংস্থার সঙ্গে প্রাথমিক কথাবার্তা হয়েছে। তারা আগামী সপ্তাহে হলদিয়া আসছে। জানা গিয়েছে, ভিন রাজ্যের ওই সংস্থাটি পুরসভাকে দেখাতে ট্রাকে করে আস্ত একটি কটেজ নিয়ে আসবে। কটেজ ছাড়াও ডরমেটরি, মিনি অডিটোরিয়াম হলঘর এবং মোবাইল সুইমিং পুলও থাকবে। হলদিয়ায় নদী তীর ঘিরে পর্যটনের দারুণ সম্ভবনা থাকলেও গত ২৫ বছরে কোনও পুরবোর্ডই তেমন উদ্যোগ নেয়নি বলে অভিযোগ বাসিন্দাদের। বিক্ষিপ্তভাবে নদীর তীরে পার্ক তৈরি বা নদীপাড়ের কিছুটা সৌন্দর্যায়ন হলেও পর্যটনের লক্ষ্যে সংহতভাবে কোনও কাজই হয়নি। টাউনশিপে হলদি ও হুগলি মোহনায় পুরসভার বিদ্যাসাগর পার্ক রয়েছে। নদীর তীরে প্রায় কোটি টাকা খরচ করে ৭-৮ বছর আগে সৌন্দর্যায়নের কাজ শুরু হলেও মাঝপথে থমকে যায়। নজরদারি ও যত্নের অভাবে সেই কাজও অনেক নষ্ট হয়ে গিয়েছে। একটি ঠিকাদার সংস্থা আবার মডেল তৈরির কারখানা করে ডাম্পিং ইয়ার্ড তৈরি করেছে বলে অভিযোগ। তাছাড়া শাসকদলের স্থানীয় নেতাদের মদতে মাছের আড়তে পরিণত হয়েছে নদী পাড়ের একাংশ। ফলে ভ্রমণার্থীদের পক্ষে জায়গাটি দুর্বিসহ হয়ে উঠেছে। কয়েক বছর আগে আমেরিকা ও জাপানের দুই কনসাল জেনারেল হলদিয়া এসে হলদিতে নৌকো ভ্রমণের পর উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেন। এবার হলদিয়ার পুর প্রশাসক উন্নয়নের পাশাপাশি হলদিয়ার নদীভিত্তিক পর্যটন ও অর্থনৈতিক বিকাশে জোর দিয়েছেন। এজন্য পেশাদার সংস্থার সাহায্য নিচ্ছেন। কটেজ অন হুইলসের সঙ্গে হলদিয়াকে ঘিরে উইক এন্ড ট্যুর প্যাকেজের কথা ভাবা হচ্ছে। বন্দরে জাহাজ, নয়াচর দ্বীপ ভ্রমণ, লঞ্চে চেপে বালুঘাটার জঙ্গল বা মোহনায় সূর্যাস্ত দেখার ব্যবস্থা।
No comments