জমীর অভাবে হলদিয়ায় থমকে আছে পুরসভার ৩টি বড় প্রকল্প
হলদিয়ায় শ্রমিকদের জন্য সাইকেল ট্র্যাক, সার্কিট হাউসের আদলে নদীর তীরে গেস্ট হাউস এবং শহরে আধুনিক মানের সেন্ট্রাল মার্কেট- তিনটি বড় পুর-প্রকল্পই থমকে গিয়েছে জমির অভাবে। হলদিয়া বন্দ…
জমীর অভাবে হলদিয়ায় থমকে আছে পুরসভার ৩টি বড় প্রকল্প
হলদিয়ায় শ্রমিকদের জন্য সাইকেল ট্র্যাক, সার্কিট হাউসের আদলে নদীর তীরে গেস্ট হাউস এবং শহরে আধুনিক মানের সেন্ট্রাল মার্কেট- তিনটি বড় পুর-প্রকল্পই থমকে গিয়েছে জমির অভাবে। হলদিয়া বন্দর কর্তৃপক্ষ ও হলদিয়া উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (এইচডিএ) কাছ থেকে প্রয়োজনীয় জমি মিলছে না। ফলে হলদিয়া পুরসভার প্রায় ৫০ কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প কার্যত অথই জলে। এই প্রকল্পগুলির জন্য পুরসভার অর্থের সংস্থান থাকলেও জমির অভাবই এখন বড়সড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। পুর- কর্তৃপক্ষ অবশ্য বিষয়টিকে জমির অভাব না বলে দুই কর্তৃপক্ষের সদিচ্ছার অভাবকেই দায়ী করেছে। কেন্দ্র ও রাজ্যের দুই সংস্থার কাছ থেকে হলদিয়ার উন্নয়নে জমি মিলছে না বলে তুলেছেন পুরসভার আধিকারিকরা। দুই সংস্থাকেই এনিয়ে বার বার চিঠি দেওয়ার পরও কোনও সদুত্তর মেলেনি বলে অভিযোগ। বিশেষ করে বন্দর কর্তৃপক্ষ হলদিয়া পুরসভার প্রতিটি উন্নয়ন প্রকল্পে টালবাহানা করে বা বাধা হয়ে দাঁড়ায় বলে অভিযোগ দীর্ঘদিনের। শহরের রাস্তা থেকে নিকাশির বড় অংশ বন্দর অধিকৃত জমির উপর দিয়ে রয়েছে। ফলে পুরসভার উন্নয়নের কাজ ব্যাহত হয়।
হলদিয়া পুর-কর্তৃপক্ষ পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রেখে শহরের সৌন্দর্যায়নের জন্য ন্যাশনাল এয়ার প্রোগ্রামের (এনক্যাপ) তহবিল থেকে কয়েক কোটি টাকা পেয়েছে। ওই টাকার একাংশ খরচ করে পুর কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের পথ সুরক্ষার জন্য সাইকেল ট্র্যাক তৈরির উদ্যোগ নিয়েছিল। হায়দরাবাদের সাইক্লিং ট্র্যাক 'হেলথওয়ে'র ধাঁচে হলদিয়ার এইচপিএল লিঙ্ক পাশে ২ মিটার চওড়া সাড়ে ৬ কিলোমিটার ট্র্যাক তৈরির পরিকল্পনা নেয় পুর কর্তৃপক্ষ।
সমীক্ষা করে দেখা গিয়েছে, ওই রাস্তায় সবচেয়ে বেশি সাইকেল নিয়ে শ্রমিকরা যাতায়াত করেন। রাস্তার পাশে ট্রাক ও ট্যাঙ্কার ফুটপাত দখল করে থাকায় দুর্ঘটনা ঘটে। জানা গিয়েছে, সাইকেল ট্র্যাকের জন্য প্রাথমিকভাবে ৮ কোটি টাকা খরচের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ওই ট্র্যাকের জন্য গত জুলাই মাসে এইচডিএ এবং পুরসভা যৌথভাবে লিঙ্করোড পরিদর্শন করে।
পুরসভার এক আধিকারিক বলেন, যৌথ ভিজিট হয়েছিল ঠিকই, কিন্তু এইচডিএর কাছ থেকে লিঙ্ক রোডের পাশে ফুটপাতের জমি পাওয়া নিয়ে সংশয় রয়েছে। একটানা জমি মিলবে না। ফলে সাইকেল ট্র্যাক তৈরি অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। এইচডিএ সূত্রে জানা গিয়েছে, গাড়ির সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় এইচডিএ লিঙ্ক রোড সম্প্রসারণের উদ্যোগ নিচ্ছে।
পুর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, দুর্গাচকে আধুনিকমানের বাজার তৈরির জন্যও এইচডিএর কাছে জমি চেয়ে পাওয়া যাচ্ছে না। ক্ষুদিরাম স্কোয়ার এলাকায় হাসপাতালের সামনে রাস্তার ওপর থেকে বাজার সরানোর জন্য এইচডিএর কাছে দেড় বছর ধরে জমি
চাওয়া হচ্ছে। কিন্তু সদুত্তর মেলেনি। পুর কর্তৃপক্ষ বাজার তৈরির জন্য ৬০-৭০ ডেসিমেল জমি লিজ চেয়ে আবেদন করেছে। শুধু এইচডিএ নয়, বন্দরের কাছ থেকেও গেস্ট হাউসের জন্য জমি চেয়ে কোনও সাড়া পায়নি পুর কর্তৃপক্ষ। টাউনশিপে বিদ্যাসাগর পার্ক সংলগ্ন হলদি নদীর পাশে বন্দরের জমি রয়েছে। ওই জমিতেই আধুনিক গেস্ট হাউস করার উদ্যোগ নিয়েছে পুর-কর্তৃপক্ষ। ২৫-৩০টি রুম সহ কটেজ, অডিটোরিয়াম এবং বাগান নিয়ে ২ একর জমির প্রয়োজন।
হলদিয়া পুরসভার প্রশাসক তথা মহকুমা শাসক সুপ্রভাত চট্টোপাধ্যায় বলেন, হলদিয়া পুরসভার নিজস্ব একটি গেস্ট হাউস প্রয়োজন। এজন্য পুরসভা নিজের তহবিল থেকেই খরচ করবে। বন্দরের কাছে জমি লিজ চেয়েছিল পুরসভা। বার বার আবেদনেও বন্দরের সাড়া মেলেনি। এমনকী জেলাশাসকও বন্দর কর্তৃপক্ষকে আবেদন করেছেন। কিন্তু বন্দর কর্তৃপক্ষ অনড়। একইভাবে দুর্গাচকে বাজার গড়ার জন্য এইচডিএর কাছে বাজার মূল্যে জমি লিজ চেয়েও কোনও সাড়া মেলেনি। এইচডিএর চিফ এগজিকিউটিভ অফিসার কোন্থাম সুধীর বলেন, পুরসভাকে দু'টি প্রকল্পের জন্যই এইচডিএ জমি দিতে রাজি। এনিয়ে আলোচনার প্রয়োজন। বন্দরের জেনারেল ম্যানেজার (প্রশাসন) প্রবীণকুমার দাস বলেন, পুরসভার গেস্ট হাউসের জমির প্রস্তাব নিয়ে এখনও আলোচনা হয়নি।
No comments