Page Nav

HIDE

Grid Style

GRID_STYLE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

কষ্ট ছাড়া কেষ্ট মেলে না -আশিস কুমার পন্ডা

কষ্ট ছাড়া কেষ্ট মেলে না -আশিস কুমার পন্ডা

এক শহরে বিশাল এক জাদুঘর ছিল। তার এক বিশেষ প্রকোষ্ঠের ঠিক মাঝখানে শোভা পেত এক বিরল সাদা মার্বেল পাথর দিয়ে তৈরি এক ভব্য মূর্তি। মূর্তিটির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে মেঝেতেও বসানো হয়েছিল একই মানের…

 





কষ্ট ছাড়া কেষ্ট মেলে না -আশিস কুমার পন্ডা


 


এক শহরে বিশাল এক জাদুঘর ছিল। তার এক বিশেষ প্রকোষ্ঠের ঠিক মাঝখানে শোভা পেত এক বিরল সাদা মার্বেল পাথর দিয়ে তৈরি এক ভব্য মূর্তি। মূর্তিটির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে মেঝেতেও বসানো হয়েছিল একই মানের সাদা মার্বেল টাইলস। দূর দূর থেকে অনেক পর্যটক প্রতিদিন মূর্তিটি দেখতে আসতেন এবং মূর্তিটির অপূর্ব ভাস্কর্যের প্রশংসা করতেন।


একদিন রাতে মেঝের মার্বেল টাইলগুলি নিজেদের মধ্যে কথা বলছিল। তাদের মধ্যে একজন বলে উঠল, “বন্ধুগন, তোমরা নিশ্চয়ই লক্ষ্য করেছ যে সারা পৃথিবী থেকে অনেক দর্শনার্থী এখানে রোজ আসেন। কিন্তু, তারা আমাদের উপেক্ষা করেন এবং আমাদের উপর দাঁড়িয়ে কেবলমাত্র মূর্তিটির প্রশংসা করতে থাকেন। তাদের জুতার তলার নোংরা এবং দুর্গন্ধে আমাদের প্রাণ ওষ্ঠাগত হয়। এটা ঘোর অন্যায়। ভুলে যেও না, একই উত্স থেকে আমাদের সংগ্রহ করা হয়েছিল, একই বাহনে আমাদের ভাস্করের কারখানায় নিয়ে আসা হয়েছিল, একই ভাস্কর আমাদের রূপ দিয়েছিলেন, কিন্তু সবাই কেবল মূর্তিটির প্রশংসা করেন, আমাদের দিকে কেউ ফিরেও তাকান না। এটি আমাদের সবার পক্ষে অত্যন্ত অপমানজনক। আমরা এর তীব্র প্রতিবাদ করছি।” মূর্তির সাথে পক্ষপাতিত্ব করার জন্য তারা তাদের ভাস্করকে দায়ী করলো এবং সম্মিলিতভাবে তার কাছে ব্যাখ্যা চেয়ে পাঠালো।


ভাস্করটি যাদুঘরে পৌঁছে টাইলগুলিকে বললেন, "আমার প্রিয় বন্ধুরা, দয়া করে সেই দিনগুলির কথা মনে করার চেষ্টা কর, যখন তোমাদের আকার দেওয়ার কাজ করছিলাম! তোমাদের টাইলস-এর আকার দেওয়ার আমার কোনও ইচ্ছা ছিল না, বরং আমি তোমাদের সকলকে এক একটি ভব্য মূর্তির রূপ দিতে চেয়েছিলাম। তবে যে মুহুর্তে, তোমাদের ছেনী-হাতুড়ি দিয়ে কাটতে শুরু করলাম, তোমরা কেঁদে উঠলে, প্রতিরোধ করলে, টুকরো টুকরো হয়ে ভেঙে পড়তে শুরু করলে!”


একটি টাইল বলে উঠল, "খুব মনে আছে। ধারালো ছেনী দিয়ে কি নির্মমভাবে আমাদের আঘাত করছিলেন! সেই আঘাত অত্যন্ত বেদনাদায়ক এবং অসহনীয় ছিল। কতটা অমানবিক না হলে, আপনি আমাদের উপর এরকম অসহ্য অত্যাচার করতে পারতেন!"


ভাস্করটি বললেন, "তুমি ঠিক বলেছ, ছেনী-হাতুড়ির আঘাতের যন্ত্রণা তোমরা সহ্য করতে পারনি, তাই তোমাদের মুক্তি দিয়ে, আমি মূর্তিটির কাজ শুরু করেছিলাম। মূর্তিটিকে রূপ দিতে গিয়ে আমি তাকে দিনের পর দিন ছেনী দিয়ে অনেক আঘাত করেছি, কিন্তু সে ব্যাথা পেয়ে ভেঙে পড়েনি। সে একবারও আমাকে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেনি এবং ধৈর্য সহকারে আমাকে এক সুন্দর মূর্তির রূপ দেওয়ার জন্য সম্পূর্ণরূপে সহযোগিতা করেছিল। তার প্রতিক্রিয়া ছিল তোমাদের থেকে সম্পূর্ণ আলাদা এবং সেই কারণে, আমি তাকে তোমাদের থেকে আলাদা এবং এক বিশ্বমানের অপরূপ সুন্দর রূপ দিতে পেরেছিলাম। তোমরা সচেতনভাবে তোমাদের ভবিষ্যৎ বেছে নিয়েছ, নিজেদের সাধারণ মেঝের টাইল হিসাবে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেছ! তাই তোমাদের এই পরিনতির জন্যে কাউকে দোষ দিতে পার না। এখন অনুতাপ করে কোন লাভ নেই, এই অবস্থা তোমাদের মেনে নিতেই হবে। ”


মার্বেল টাইলসগুলি নিঃশব্দে ভাস্করের কথাগুলি মন দিয়ে শুনল এবং তাদের ভুল বুঝতে পেরে চুপ করে গেল।


জীবনের যে কোন ক্ষেত্রেই আমাদের পরিস্থিতির উন্নতি এবং জীবনে এগিয়ে যাওয়ার একমাত্র উপায় হল পরিবর্তন। সেই পরিবর্তণ আসে বিভিন্ন অনুশীলন এবং প্রচেষ্টার মাধ্যমে যার জন্যে আমাদের  আরামদায়ক অঞ্চল থেকে এক অনাবিষ্কৃত অঞ্চলে প্রবেশ করতে হয়। আমাদের এমন কিছু চেষ্টা করতে হয় যা আগে কখনও চেষ্টা করি নি, এমন কিছু শিখতে হয় যা আগে কখনও শিখিনি, অজানা পরিবেশে অভ্যস্ত হতে হয়, অপরিচিতের সঙ্গে পরিচিত হতে হয়। তাই পরিবর্তণ মোটেও আরামদায়ক নয়, বরং প্রাথমিকভাবে অস্বস্তিকর এবং বেদনাদায়ক।  আমাদের মধ্যে অনেকে এই অস্বস্তি, বেদনা, ভয়, ইত্যাদি কাটিয়ে উঠে চেনা পরিবেশের বাইরে বেরিয়ে আসতে পছন্দ করেন না। বিজয়ীদের এখানেই পরাজিতদের থেকে আলাদা করে দেয় ।


আমাদের জীবনের সমস্ত মুহূর্ত এবং অভিজ্ঞতা আমাদের জীবনে এক নিপুন ভাস্করের ভূমিকা পালন করে চলে এবং আমাদের সেরা সংস্করণ তৈরি করার জন্যে ক্রমাগত নিখুঁত আকৃতি দিতে থাকে। জীবনের প্রতিটি ক্ষুরধার মুহূর্ত থেকে আসা প্রতিটি সমস্যা, প্রতিটি ব্যর্থতা, প্রতিটি আঘাত, প্রতিটি বেদনা, আমরা সহ্য করতে প্রস্তুত কিনা, তা নির্ধারন করে দেয় আমাদের ভবিষ্যৎ; এক সাধারণ মেঝের টাইল বা কারুকার্যমন্ডিত এক মূর্তি; লোকেরা আমাদের পায়ের তলায় মাড়িয়ে যাবেন, না কি তারা আমাদের পায়ের ছাপ অনুসরন করবেন?

No comments