Page Nav

HIDE

Grid Style

GRID_STYLE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

পিতৃপক্ষের শেষে শুরু হবে দেবীপক্ষ আজ অমাবস্যা

পিতৃপক্ষের শেষে শুরু হবে দেবীপক্ষ আজ অমাবস্যাআঁধারমাখা ভোরে পিতৃপুরুষেরা তাঁদের উত্তরপুরুষদের কাছে জললাভে তৃপ্ত হয়েছেন। পিতৃপক্ষের শেষে শুরু হবে দেবীপক্ষ। আজ গৃহের আঙিনায়, সর্বজনের পুজোয় দেবী আগমনের শুভ সঙ্গীত গীত হয়েছে। পিতৃপক্…

 


পিতৃপক্ষের শেষে শুরু হবে দেবীপক্ষ আজ অমাবস্যা

আঁধারমাখা ভোরে পিতৃপুরুষেরা তাঁদের উত্তরপুরুষদের কাছে জললাভে তৃপ্ত হয়েছেন। পিতৃপক্ষের শেষে শুরু হবে দেবীপক্ষ। আজ গৃহের আঙিনায়, সর্বজনের পুজোয় দেবী আগমনের শুভ সঙ্গীত গীত হয়েছে। পিতৃপক্ষ আর দেবীপক্ষের সন্ধিক্ষণে অসুরদলনী দেবীর আবাহনে মেতেছেন সাধকেরা। বাংলা শক্তিসাধনার দেশ। দেবীর আরাধনায় তাই বড় সমারোহ।

আমাদের বিশ্বাস, মহালয়ার দিনই শিবপত্নী পার্বতী শিবালয় কৈলাস থেকে ধরিত্রীর উদ্দেশে রওনা হন। তিনি এত দীর্ঘ পথ কখনও আসেন পালকিতে, কখনও ঘোড়ায় বা হাতিতে, কখনও আবার নৌকায়। পঞ্জিকা অনুসারে যে সপ্তমী তিথিতে তাঁকে শস্যবধূ রূপে স্নান করিয়ে মহাপুজোর সূচনা করা হবে সেইদিন যে বার হবে সেই বার অনুসারে তাঁর কোন বাহন তা বুঝতে পারা যাবে। দেবীর এক একটি বাহন মানুষের মন ও সমাজের উপর এক এক ভাবে প্রভাব ফেলে। যেমন ঘোড়ায় এলে তিনি ছত্রভঙ্গ করে আসবেন। পালকিতে আগমন হলে তিনি মড়ক বা মহামারী নিয়ে আসবেন। দেবীর আগমন তো সাধারণ ব্যাপার নয়। কত কাল ধরে দেবীর আবাহন নিয়ে কত সাহিত্য কত গবেষণা হয়েছে তার কি ইয়ত্তা আছে!

শ্রীশ্রীচণ্ডীতে বলা হয়েছে তিনি মহিষাসুরকে নিধনের জন্য জাগ্রতা হয়েছিলেন। আমাদের কাছে কিন্তু কেবল এই দানবদলনীর জাগরণকে মহালয়ার দিন গুরুত্ব দিই না। ভারতের মধ্যযুগের ভক্তি আন্দোলনের সঙ্গে বাংলায় যে মঙ্গলকাব্যের ধারা গড়ে উঠেছিল, মহালয়া তিথির সঙ্গে সেই ধারাটির সুগভীর সম্পর্ক আছে। দেবী চার পুত্র-কন্যাকে নিয়ে তাঁর এই আগমন বাঙালি মননে নিজ কন্যার পিতৃগৃহে আগমনের অনুভূতিকে জাগ্রত করেছে। আমরা মনে করি উমা হিমালয় কন্যা হলেও আমাদের ঘরের মেয়ে।

মহালয়া তিথির অর্থ, তিনি এসে গিয়েছেন। তাই মহালয়ার পরের দিন থেকে শুরু হয় নবরাত্রি উত্‌সব। দেবীর ন’টি রূপ এল কী করে? কেনই বা এই নয়টি রূপের কথা উচ্চারিত হল? শ্রীশ্রীচণ্ডীর মধ্যেই দেবীর এই নয়টি রূপের কথা স্বয়ং ব্রহ্মা উচ্চারণ করছেন। শৈলপুত্রী, ব্রহ্মচারিণী, চন্দ্রঘণ্টা বা চণ্ডঘণ্টা, কুষ্মাণ্ডা, স্কন্দমাতা, কাত্যায়ানী, কালরাত্রি, মহাগৌরী ও সিদ্ধিদাত্রী —এই ন’টি রূপে দেবী নবদুর্গা। যেহেতু ব্রহ্মা স্বয়ং রূপগুলি বর্ণনা করেছিলেন তাই এই নবদেবীর ন’টি কাহিনির মধ্য দিয়ে আমরা দেবীর একটি সামগ্রিক লীলারূপ ফুটে উঠতে দেখি। প্রথম শৈলপুত্রী। দেবী হলেন গিরিরাজের কন্যা তাই তিনি শৈলপুত্রী। দেবীর দ্বিতীয় রূপ ব্রহ্মচারিণী। এই রূপে দেবীর আরাধনায় সফল হয় যে, ব্রহ্মজ্ঞান তার করকমলাগত হয় অনায়াসে। তৃতীয় চন্দ্রঘণ্টা, এই বিচিত্র নামটিতে কেন তাঁকে চিহ্নিত করা হল তার ব্যাখ্যা করা হয়েছে দুর্গাপ্রদীপ টীকাতে। সেখানে বলা হয়েছে ‘চন্দ্রের মতো নির্মল ঘণ্টা যার তিনিই চন্দ্রঘণ্টা’। আবার ভিন্নমতে যিনি চন্দ্রের মতো নির্মল, সুন্দর। অর্থাৎ চাঁদের মতো মুখ যাঁর। যিনি অসামান্যা আহ্লাদকারিণী ও লাবণ্যময়ী তিনিই দেবী চন্দ্রঘণ্টা। কালিকা পুরাণে দেবীর নাম ‘চন্দ্রঘণ্টা’র পরিবর্তে ‘চণ্ডঘণ্টা’ উল্লিখিত হতে দেখা যায়। দেবীর চতুর্থ রূপ কুষ্মাণ্ডা। অর্থাৎ ত্রিবিধ তাপযুক্ত সংসারভক্ষণকারী। আধিভৌতিক, আধিদৈবিক ও আধ্যাত্মিক এই ত্রিবিধ তাপ। আর ওই তিন রকম কুৎসিত তাপের নাম ‘কুষ্মা’। 

দেবীর পঞ্চম রূপ স্কন্দমাতা তিনি স্কন্দ বা কার্তিকের মা, তাই স্কন্দমাতা। নবদুর্গার ষষ্ঠ দেবী হলেন কাত্যায়নী। হিমালয়ের ঋষি কাত্যায়নের আশ্রমে আশ্বিন মাসের কৃষ্ণা-চতুর্দশী তিথিতে দেবগণের মিলিত তেজপুঞ্জ থেকে দশভুজা মূর্তির আবির্ভাব হয়। তাই তিনি কাত্যায়নী। দেবীর সপ্তম রূপ কালরাত্রি। হিমালয় কন্যা কৃষ্ণবর্ণা। হিমালয় তাই তাঁর নাম রেখেছিলেন ‘কালী’। তাঁর কালো রূপের জন্য তাঁকে কালরাত্রি বলা হয়। দেবীর নয়টি রূপের অষ্টম রূপ হল মহাগৌরী। দেবী তাঁর দেহের কৃষ্ণকোষ ত্যাগ করে হয়ে উঠলেন গৌরবর্ণা। সেই গৌরবর্ণা দেবীকে মহাগৌরী রূপে আমরা পুজো করি। নবদুর্গার নবম ও শেষরূপটি হল সিদ্ধিদাত্রী রূপ। যে দেবী সিদ্ধি দান করেন তিনিই সিদ্ধিদাত্রী।

No comments