অনির্দিষ্টকাল কার্ফু ?অগ্নিগর্ভ বাংলাদেশে হত ৯৭
দাউদাউ করে জ্বলছে লাল রঙের বাসটি। আগুনের আঁচে বাসের রং যেন আরও লালচে হয়ে উঠেছে। অনেকটা রক্তের মতো। পাশে থাকা সাদা দু’টি বাসের উইন্ডস্ক্রিন ফেটে চৌচির। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্য…
অনির্দিষ্টকাল কার্ফু ?অগ্নিগর্ভ বাংলাদেশে হত ৯৭
দাউদাউ করে জ্বলছে লাল রঙের বাসটি। আগুনের আঁচে বাসের রং যেন আরও লালচে হয়ে উঠেছে। অনেকটা রক্তের মতো। পাশে থাকা সাদা দু’টি বাসের উইন্ডস্ক্রিন ফেটে চৌচির। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের ‘এক দফা’ দাবিতে অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দিয়েছিল বাংলাদেশের ছাত্রদের মঞ্চ ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’। সেই আন্দোলন ঘিরেই রবিবার রক্তের স্রোত বইল বাংলাদেশের রাস্তায়। ঢাকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সংঘর্ষের পর বাসের আগুন যেন সেই হিংসারই ‘প্রতীকী’ চিত্র। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাফ জানিয়েছেন, ছাত্রদের নাম করে বিভিন্ন জায়গায় হামলা চালাচ্ছে সন্ত্রাসবাদীরা।
দেশজুড়ে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিস, নিরাপত্তা বাহিনী ও আওয়ামি লিগের কর্মী-সমর্থকদের সংঘর্ষে বুধবার প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ৯৭ জন। আহত তিন শতাধিক। আন্দোলনের মধ্যেই সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুরে থানায় আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। সেই ঘটনায় ওসি সহ ১৩ জন পুলিসকর্মীর মৃত্যু হয়েছে। প্রশাসনের উপর চাপ বাড়াতে এদিন সন্ধ্যায় চার আন্দোলনকারীর দেহ নিয়ে ঢাকার কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার চত্বরে বিক্ষোভ দেখান পড়ুয়ারা।
আন্দোলনের নামে হিংসা ছড়ানোয় জড়িতদের যে কোনওমতে রেয়াত করা হবে না, তা এদিন স্পষ্ট করে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। শেখ হাসিনার দাবি, আন্দোলনের নামে দেশে নাশকতা ছড়ানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। আম জনতাকে শক্ত হাতে এই সন্ত্রাসবাদীদের দমনের ডাকও দেন তিনি। রবিবার ঢাকায় গণভবনে সেনাবাহিনীর তিন শাখার প্রধান সহ পুলিস, র্যাব, বিজিবির প্রধান ও অন্য আধিকারিকদের নিয়ে একপ্রস্থ বৈঠকও করেন তিনি। এদিকে, সতর্কতামূলক পদক্ষেপ হিসেবে বাংলাদেশে বাসরত ভারতীয় ছাত্র ও নাগরিকদের সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছে সিলেটের ভারতীয় সহকারী হাই-কমিশন।
ক্রমেই অগ্নিগর্ভ হচ্ছে সমগ্র পদ্মাপারের পরিস্থিতি। তা সামাল দিতে রবিবার সন্ধ্যা ছ’টা থেকে দেশজুড়ে অনির্দিষ্টকালের জন্য কার্ফু জারি করা হয়েছে। বন্ধ মোবাইল ইন্টারনেট পরিষেবা। মাঝে কয়েকদিন অফিস-কাছারি খুললেও সোমবার থেকে ফের তিনদিনের জন্য সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে সরকার। তার পরেও পরিস্থিতি কতটা নিয়ন্ত্রণে আসবে, তা নিয়ে সংশয়ে অনেকেই। তার বড় কারণ বাংলাদেশের হাইকোর্টের একটি ঘোষণা। আদালত জানিয়েছে, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হলে পুলিস বা অন্য নিরাপত্তা বাহিনী প্রয়োজনে গুলি চালাতে পারে। তাতে অবশ্য দমছেন না আন্দোলনকারীরা। কার্ফু উপেক্ষা করেই সোমবার ‘লং মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচির ডাক দেওয়া হয়েছে।
রবিবার সকাল থেকে ঢাকার বেশিরভাগ রাস্তাই ছিল ফাঁকা। শাহবাগ চত্বরে রাস্তা আটকে বিক্ষোভ দেখানোর সময় আওয়ামি লিগের কর্মী-সমর্থকদের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের ধস্তাধস্তি শুরু হয়। কিছুক্ষণের মধ্যেই পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। বেলা গড়াতেই বিভিন্ন জায়গা থেকে সংঘর্ষের খবর মেলে। মুন্সীগঞ্জে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আওয়ামি লিগ সদস্যদের সংঘর্ষে দু’জনের মৃত্যু হয়। গাজীপুরে মহাসড়ক অবরোধ ও আওয়ামি লিগের কার্যালয়ে আগুন লাগিয়ে দেয় বিক্ষোভকারীরা। চট্টগ্রাম, ফরিদপুর, ব্রাহ্মণবেড়িয়া, কুষ্টিয়া থেকে সংঘর্ষের খবর মেলে। বরিশালে রেহাই পায়নি প্রতিমন্ত্রীর বাড়িও। যদিও সরকার আলোচনার মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ সমাধান করতে চায় বলে জানান তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলি আরাফাত। তিনি বলেন, অশান্তি সৃষ্টি করা হলে শক্ত হাতে দমন করা হবে।
No comments