Page Nav

HIDE

Grid Style

GRID_STYLE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

উত্তাল সমুদ্রে তেলের ব্যারেলে ভেসে ‘পুনর্জন্ম’ ৬ মৎস্যজীবীর

উত্তাল সমুদ্রে তেলের ব্যারেলে ভেসে ‘পুনর্জন্ম’ ৬ মৎস্যজীবীর
 কথায় আছে ‘রাখে হরি, মারে কে’। মাঝসমুদ্রে নৌকা উল্টে যাওয়ার পর ভরসা বলতে ছিল দু’টি ব্যারেল। জীবন-মৃত্যুর লড়াইয়ের শরিক হয়ে ২২ ঘণ্টার বেশি সমুদ্রে ভেসে থাকার পরও জীবিত অবস্…

 



উত্তাল সমুদ্রে তেলের ব্যারেলে ভেসে ‘পুনর্জন্ম’ ৬ মৎস্যজীবীর


 কথায় আছে ‘রাখে হরি, মারে কে’। মাঝসমুদ্রে নৌকা উল্টে যাওয়ার পর ভরসা বলতে ছিল দু’টি ব্যারেল। জীবন-মৃত্যুর লড়াইয়ের শরিক হয়ে ২২ ঘণ্টার বেশি সমুদ্রে ভেসে থাকার পরও জীবিত অবস্থায় উদ্ধার হলেন কাঁথির শৌলা মৎস্য আহরণ কেন্দ্রের ছয় মৎস্যজীবী। দু’টি ব্যারেলকে নিজেদের পরনের গেঞ্জি সহ অন্যান্য পোশাক দিয়ে কষে বেঁধে দেন মৎস্যজীবীরা। একজন ব্যারেলের উপর বসেছিলেন এবং পরনের পোশাক নাড়ছিলেন। যদি কোনও মৎস্যজীবী তাঁদের দেখতে পান, এই আশায়। ব্যারেল সহ তাঁকে আঁকড়ে ধরে ভেসেছিলেন বাকিরা। সমুদ্রের অশান্ত ঢেউ, বৃষ্টি, অন্ধকার, সামুদ্রিক জীবের হামলার ভয়, প্রতি পদে ছিল মৃত্যুর আশঙ্কা।  বুধবার দুপুরে একটি নৌকা মাছ ধরে ফেরার পথে ‘লালবঁয়ার’ কাছে তাঁদের উদ্ধার করে পেটুয়াঘাট মৎস্যবন্দরে নিয়ে আসে। অসুস্থ থাকায় সকলকে কাঁথি মহকুমা হাসপাতালে পাঠানো হয়। 

উদ্ধার হওয়া মৎস্যজীবীরা হলেন, কাঁথির রঘুসর্দার বাড়জালপাই এলাকার বাসিন্দা সত্যেন বেরা, গৌতম বেরা, বগুড়ান জালপাইয়ের খোকন বর, শৌলার দামোদরপুরের জগন্নাথ বর ও মানস বর এবং সমুদ্রপুরের জগবন্ধু দাস। তাঁদের মধ্যে মালিক কাম মাঝি সত্যেন। সকলেই বলেন, আমরা যে বেঁচে ফিরেছি, তারজন্য ঈশ্বরকে অসংখ্য ধন্যবাদ। মা গঙ্গার অশেষ কৃপায় আমরা রক্ষা পেয়েছি।

জানা গিয়েছে, শৌলা থেকে টু-সিলিন্ডার ভুটভুটি নৌকায় মঙ্গলবার ভোরে মৎস্যশিকারে যান ছ’জন মৎস্যজীবী। ফেরার পথে শৌলা থেকে ১০কিলোমিটারেরও বেশি দূরে বড় ঢেউয়ের তোড়ে নৌকা উল্টে যায়। যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ায় উদ্বিগ্ন বাড়ির লোকজন মৎস্যজীবী সংগঠনগুলিকে বিষয়টি জানান। সংগঠন মারফত খবর পেয়ে মৎস্যদপ্তর কোস্টগার্ডের সঙ্গে যোগাযোগ করে। কোস্টগার্ডের পাশাপাশি বুধবার ভোরে শৌলা থেকে কয়েকটি নৌকা মৎস্যজীবীদের সন্ধানে যায়। উদ্বিগ্ন পরিবারের লোকজন ও স্থানীয় বাসিন্দারা উৎকণ্ঠা নিয়ে শৌলায় তাঁদের জন্য অপেক্ষা করতে থাকেন। দুপুর ১২টা নাগাদ পুলিসের কাছ থেকে মৎস্যজীবীদের সন্ধান পাওয়া গিয়েছে বলে খবর পাওয়া যায়। পেটুয়াঘাটে গিয়ে মৎস্যজীবীদের দেখার পর হাঁফ ছাড়েন তাঁরা।

হাসপাতালে শুয়ে মাঝি সত্যেনবাবু বলেন, প্রথমে কিছুক্ষণ আমরা উল্টে যাওয়া নৌকার উপরেই বসেছিলাম। নৌকা ক্রমশই ডুবে যাচ্ছে দেখে ভাসতে থাকা ব্যারেল দু’টিকেই আমরা আঁকড়ে ধরি। দুটো ব্যারেলকে ভালো করে বেঁধে তা ধরে ভাসতে থাকি। ব্যারেলই আমাদের বাঁচার হাতিয়ার হয়ে দাঁড়াল। মৎস্যজীবী খোকন বর, গৌতম বেরা বলছিলেন, গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গিয়েছিল। সমুদ্রের নোনাজল খাওয়া যাচ্ছিল না। এভাবেই সারা রাত কেটে যায়। সকালে একটি নৌকা এসে আমাদের উদ্ধার করে। কী ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে ২২ ঘণ্টা কেটেছে, তা বলার মতো নয়। 

কাঁথি মহকুমা মৎস্যজীবী সমিতির সভাপতি আমিন সোহেল, দক্ষিণবঙ্গ মৎস্যজীবী ফোরামের সভাপতি দেবাশিস শ্যামল সহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা হাসপাতালে যান। তাঁরা মৎস্যজীবীদের সব রকমভাবে সহযোগিতা করার আশ্বাস দেন।

No comments