মহিষাদল বিধানসভা কেন্দ্রে তৃণমূল কংগ্রেসের এমনই হাঁড়ির খবর প্রকাশ্যে
কর্মীদের মধ্যে সমন্বয়ের অভাব, নেতাদের ঠান্ডা লড়াই । আবার কেউ বলছেন কর্মীদের একাংশ তলে তলে সাংগঠনিক কাজ থেকে মুখ ঘুরিয়ে নিয়েছেন । বিজেপিকে সমর্থন করেছে । ল…
মহিষাদল বিধানসভা কেন্দ্রে তৃণমূল কংগ্রেসের এমনই হাঁড়ির খবর প্রকাশ্যে
কর্মীদের মধ্যে সমন্বয়ের অভাব, নেতাদের ঠান্ডা লড়াই । আবার কেউ বলছেন কর্মীদের একাংশ তলে তলে সাংগঠনিক কাজ থেকে মুখ ঘুরিয়ে নিয়েছেন । বিজেপিকে সমর্থন করেছে । লোকসভা ভোট পরবর্তী পর্যালোচনায় মহিষাদল বিধানসভা কেন্দ্রে তৃণমূল কংগ্রেসের এমনই হাঁড়ির খবর প্রকাশ্যে চলে এলো । মাথা চুলকে কেউ কেউ বললেন, কি করে কি যে হয়ে গেল বোঝা মুশকিল । তৃণমূলের আত্মতুষ্টি, কোথাও সাংগঠনিক ঢিলেঢালা পরিস্থিতি তৃণমূলকেই ব্যাক ফুটে ফেলেছে । বিপরীতে অঞ্চলভিত্তিক ফলাফলের বিশ্লেষণে বিজেপির ব্যাপক উত্থান স্পষ্ট ভাবে ধরা পড়েছে ।
মহিষাদল ব্লকের ১১টি গ্রাম পঞ্চায়েত এবং হলদিয়া ব্লকের ৪টি গ্রাম পঞ্চায়েত, মোট ১৫ টি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকা নিয়ে মহিষাদল বিধানসভা । তার মধ্যে মহিষাদল ব্লকের কিসমত নাইকুণ্ডি, গড়কমলপুর, লক্ষ্যা-২ এবং নাটশাল-২ এই চারটি গ্রাম পঞ্চায়েতে এগিয়ে রয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস । ব্লকের বাকি ৭টি গ্রাম পঞ্চায়েতে বিজেপি এগিয়ে রয়েছে । এই রেজাল্টের বুথ ভিত্তিক পর্যালোচনায় উঠে এসেছে বেশ কিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য । মহিষাদল ব্লকের তৃণমূল কংগ্রেসের বেশ কিছু নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি , নেতা নিজের বুথেই হেরে গিয়েছেন । তথ্য বলছে মহিষাদল পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি, তথা স্থানীয় তৃণমূল নেত্রী শিউলি দাস তাঁর গড় কমলপুর গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার ৯৯ নম্বর বুথের বাসিন্দা । সেখানে তৃণমূল ১৯৫ ভোটে বিজিপির থেকে পিছিয়ে রয়েছে । তৃণমূল কংগ্রেস শাসিত স্থানীয় কিসমত নাইকুণ্ডি গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান দেবব্রত চক্রবর্তীর নিজের বুথ । বিজেপির থেকে পিছিয়ে রয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস । এমনিভাবে তৃণমূল কংগ্রেসের লক্ষ্যা দু'নম্বর অঞ্চল সভাপতি তপন গুছাইত, গড় কমলপুর অঞ্চল সভাপতি সুজিত মাইতি, সতীশ সামন্ত গ্রাম পঞ্চায়েতের তৃণমূল কংগ্রেস সভাপতি রাখাল মণ্ডল, নকশাল দু নম্বর অঞ্চল তৃণমূল কংগ্রেস সভাপতি সুকুমার পাত্র নিজেদের বুথে, কেউ কেউ অঞ্চলে বিজেপির কাছে হেরে গিয়েছেন । হলদিয়া ব্লকে চিত্রটা প্রায় একই । ব্লকের চারটি অঞ্চলের মধ্যে কেবলমাত্র চকদ্বীপা অঞ্চলে ১৩৩৮ ভোটে এগিয়ে রয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস । বাকি দেভোগ, দেউলপোতা এবং বাড় উত্তর হিংলি অঞ্চলে বিজেপি বিপুল ভোটে এগিয়ে রয়েছে । ব্লকের তৃণমূল কংগ্রেস সভাপতি মানস দাস চকদ্বীপা অঞ্চলের ২৪৭ নম্বর বুথের ভোটার । এই বুথে তৃণমূল ৭৯ ভোটে বিজেপির কাছে হেরেছে । হলদিয়া পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি, স্থানীয় তৃণমূল নেতা শ্রীকান্ত মাইতি । তাঁর ২৪৬ নম্বর বুথে বিজেপি ১৯ টি ভোট লিড পেয়েছে । বর্ষীয়ান তৃণমূল কংগ্রেস নেতা রাম পদ জানা । তাঁর বাড়ির পাশে ২২৯ নম্বর বুথে ৩৯৭ টি ভোট পেয়ে বিজেপি এগিয়ে রয়েছে । হলদিয়া ব্লকের তৃণমূল কংগ্রেস শাসিত চকদ্বীপা গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান সুমিতা কর খুঁটিয়া এবং তাঁর স্বামী সঞ্জীব খুটিয়া ব্লকের যুব তৃণমূল কংগ্রেস সভাপতি । এলাকায় প্রভাব থাকলেও লোকসভা ভোটের ময়দানে নিজেদের বুথে বিজেপির কাছে ১৭৩ টি ভোটে তারা পরাজিত । হলদিয়া ব্লকের অঞ্চল ভিত্তিক ভোট বিশ্লেষণে স্থানীয় প্রবীণ তৃণমূল কংগ্রেস নেতা আলোক রঞ্জন দাস জানিয়েছেন,"ব্লকে নেতাদের মধ্যে কোন সমন্বয় নেই । নতুন পুরানোর মধ্যে বিভাজন রেখে তারা ভোটের লড়াই লড়েছেন । শুধুমাত্র আত্মতুষ্টি, জিতে যাওয়ার অহংকার ছিল । সেই অহংকার ওদের পতন ঘটিয়েছে ।" মহিষাদল বিধানসভার সার্বিক ভোট পর্যালোচনায় তৃণমূল কংগ্রেস বিধায়ক তিলক কুমার চক্রবর্তী হেরে যাওয়ার পিছনে অর্থের উপঢৌকনকে মূল কারণ বলে চিহ্নিত করেছেন । তিনি বলেন বিধানসভা এলাকায় বিরোধী বিজেপি শিবির বিপুল পরিমাণ অর্থ ছড়িয়েছে । বিজেপি সেই অর্থের কাছে আমরা হেরে গিয়েছি । কোথাও মানুষ বিরোধী শিবিরের থেকে মানুষ আমাদের প্রার্থীকে দুর্বলভাবে দেখেছেন । তমলুক সাংগঠনিক জেলায় দলের ঘনঘন চেয়ারম্যান, সভাপতি বদল, পাশাপাশি শ্রমিক সংগঠন যুব সংগঠনে নেতা পরিবর্তন সাংগঠনিক স্তরে প্রভাব ফেলেছে । বেশকিছু গ্রাম পঞ্চায়েত বুথ কিংবা ওয়ার গুলিতে সভাপতি কিংবা নেতৃত্ব বদল সংগঠনের ক্ষতি করেছে । সংগঠনকে গুছিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে সমস্যা তৈরি হয়েছে । লোকসভা ভোটের দুদিন আগে আমাদের কিছু সক্রিয় সমর্থক বিজেপির হয়ে কাজ করেছে । এগুলো আমাদের ত্রুটি । এই ত্রুটি সারিয়ে আমাদের আগামী দিনে এগোতে হবে ।" মহিলাদলের প্রবীন তৃণমূল নেতা আমেদ আলি জানিয়েছেন,"দলের মধ্যে থেকে বেশ কিছু নেতাকর্মী অন্তর্ঘাত করেছেন । দলকে পিছনে ফেলার চক্রান্ত করেছন । এটা জোর দিয়ে বলা যায় । বিধায়ক সকল স্তরের কর্মীদের মধ্যে সমন্বয় রক্ষা করে চলেননি ।" পাশাপাশি তৃণমূলের তমলুক সাংগঠনিক জেলার মন্ত্রী বিপ্লব রায় চৌধুরী, কিংবা হলদিয়ার ডেভেলপমেন্ট অথোরিটি চেয়ারম্যান জ্যোতির্ময় কর , দলের সুবাদে বড় পদ পেলেও তাদেরকে সাংগঠনিক কাজে তেমন দেখা যায়নি বলে বেশ কিছুকর্মী তোপ দেগেছেন । এতকিছুর মধ্যে বিভিন্ন নেতাকর্মী বিরোধী শিবিরের টাকার কাছে বশ হয়েছেন বলে বারবার দাবি করা হয়েছে । আগামী দিনে এই বিধানসভা এলাকার সাংগঠনিক পরিস্থিতি কি হয় এখন সেটাই দেখার বিষয় ।
No comments