Page Nav

HIDE

Grid Style

GRID_STYLE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

" হীরের দেশ হয়েও দক্ষিণ আফ্রিকা আজ হারিয়েছে তার উজ্জ্বলতা "

" হীরের দেশ হয়েও দক্ষিণ আফ্রিকা আজ হারিয়েছে তার উজ্জ্বলতা "
ভাবুন তো এক টুকরো হিরে যদি কোন মানুষ পায় তাহলে হয়তো তার জীবনটাই পাল্টে যেতে পারে। কিন্তু পৃথিবীর এই দেশটিতে হীরের খনি থাকা সত্ত্বেও মানুষদের মধ্যে রয়েছে অন…

 




" হীরের দেশ হয়েও দক্ষিণ আফ্রিকা আজ হারিয়েছে তার উজ্জ্বলতা "


ভাবুন তো এক টুকরো হিরে যদি কোন মানুষ পায় তাহলে হয়তো তার জীবনটাই পাল্টে যেতে পারে। কিন্তু পৃথিবীর এই দেশটিতে হীরের খনি থাকা সত্ত্বেও মানুষদের মধ্যে রয়েছে অনাহার, দাঙ্গা হানাহানি, বিরোধীতা, অত্যাচার সবকিছুই। পৃথিবীর এই দেশটি অনেকটা সত্যজিৎ রায়ের হীরক রাজার দেশের বর্ণিত হীরক রাজ্যের মত। হীরের খনির শ্রমিক হয়েও এদের মধ্যে নিরন্তর অশান্তি, দাঙ্গা, হানাহানি একরকম লেগেই আছে।


বিশ্বের সবচেয়ে দামি পাথর অর্থাৎ হীরের খনি রয়েছে  দক্ষিণ আফ্রিকায়। তবু সেই হিরেই দেশটির সর্বনাশের অন্যতম মূল কারণ। হিরের খনি থাকলেও তাতে লাভ হয়নি দেশের মানুষের। আসুন আজকের এই প্রতিবেদনের মাধ্যমে জেনে নিই কেন হীরের প্রাচুর্য থাকা সত্ত্বেও দেশটির এই অবস্থা।


ক্রিকেটের মাঠে বিগত বেশ কয়েক বছর ধরে প্রভূত জনপ্রিয়তা অর্জন করলেও, অভ্যন্তরীণ নানা সমস্যায় জর্জরিত দক্ষিণ আফ্রিকা। দারিদ্রতা, বৈষম্য, অশিক্ষা, জাতপাত এবং সর্বোপরি চুড়ান্ত অব্যবস্থা দেশটিকে ক্রমশ শেষের পথে নিয়ে যাচ্ছে।


ইতিহাস থেকে জানতে পারা যায় এই দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে অনেকটাই মিল আছে আমাদের ভারতবর্ষের প্রাচীন ইতিহাসের। দীর্ঘ বেশ কয়েক বছর ধরে এই দেশটি ছিল ব্রিটিশের অধীনে। ব্রিটিশরা দক্ষিণ আফ্রিকাকে মু্ক্তি দেয় বিশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে।


দেশটির বিভিন্ন পত্রপত্রিকা এবং ইতিহাস থেকে জানতে পারা যায় ১৮৬৬-৬৭ সালে দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রথম এখানে হিরে আবিষ্কৃত হয়। এই মূল্যবান রত্ন আবিষ্কারের পর দক্ষিণ আফ্রিকার কপাল খুলে যাবে বলে মনে করেছিলেন সে দেশের মানুষ সহ বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের গবেষকগণ। কিন্তু বাস্তবে হয়েছে ঠিক তার উল্টোটা। বাস্তবে এই হিরেই দেশটির সর্বনাশ ডেকে এনেছে।এই উজ্জ্বল রত্নই দেশকে আরো বেশি অন্ধকারের দিকে টেনে নিয়ে গেছে।


ইতিহাসের পাতা উল্টিয়ে দেখলে আজও দেখা যায় প্রথমে ডাচ এবং তার পর ব্রিটিশ— দক্ষিণ আফ্রিকা দেশটি পর পর দু’বার ঔপনিবেশিক শাসনের শিকার হয়েছিল। তবে প্রথম দিকে উপনিবেশ হিসাবে দক্ষিণ আফ্রিকার তেমন গুরুত্ব ছিল না। পরবর্তীকালে হিরে আবিষ্কার এই ধারণার মোড় ঘুরিয়ে দেয়।


হিরে আবিষ্কার হওয়ার আগে পর্যন্ত এই দক্ষিণ আফ্রিকা ছিল দীর্ঘ সমুদ্রযাত্রার মাঝে ইউরোপের বিভিন্ন দেশের বণিকদের বিশ্রামের জায়গা। হিরে খুঁজে পাওয়ার পর হঠাৎ করেই  দেশটি শিল্পক্ষেত্রে পরিণত হয়। ফলে ইউরোপীয় বিভিন্ন দেশের বণিকদেরও দক্ষিণ আফ্রিকার সম্পর্কে ধারণা পাল্টাতে শুরু করে।


তবে যেটা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ তা হল দক্ষিণ আফ্রিকার এই হীরের খনিতে সে দেশের আদিবাসী মানুষদের কোন অধিকার ছিল না। তারা শুধুমাত্র হীরের খনিতে শ্রমিক হিসাবে কাজ করতো। দীর্ঘক্ষণ কাজ করার পরেও মিলতো না উপযুক্ত পারিশ্রমিক।


একাধিক বিদেশী সংস্থা দক্ষিণ আফ্রিকার এই হীরের খনি দখল করেছিল। ইতিহাস থেকে আরও জানতে পারা যায় বিশ্বের প্রায় ৯০ শতাংশ হিরে এক সময় যোগান দিত এই দক্ষিণ আফ্রিকার খনিগুলি।


কিরে আবিষ্কারের পর থেকে যত দিন গেছে ততই বিদেশি শক্তির অত্যাচার বেড়েছে দক্ষিণ আফ্রিকার সাধারণ মানুষের ওপরে। খনিতে কাজ করার পরে উপযুক্ত পারিশ্রম না দিয়ে চলত নির্মম অত্যাচার। এই সময় থেকেই সাদা এবং কালো চামড়ার বিভেদ, বৈষম্য প্রকট হয়ে ওঠে আফ্রিকা মহাদেশের এই দেশটিতে।


 ফিরে আবিষ্কারের বেশ কয়েক বছর পরে দক্ষিণ আফ্রিকায় একটি আইন পাশ হয়, যাতে সাফ জানিয়ে দেওয়া হয়, কৃষ্ণাঙ্গেরা সেই দেশে কোনও সম্পত্তির অধিকারী হতে পারবেন না।দেশটির সমাজকে গায়ের রঙের ভিত্তিতে তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়— কৃষ্ণাঙ্গ, শ্বেতাঙ্গ এবং ভারতীয় বংশোদ্ভূত।


কৃষ্ণাঙ্গ, শ্বেতাঙ্গের বিভেদ দক্ষিণ আফ্রিকাকে অন্দর থেকে একরকম দুর্বল করে দিয়েছিল। দেশটির অর্থনীতি পুরোপুরি ভেঙে গিয়েছিল। আর সব কিছুরই সূত্রপাত হয়েছিল হিরেকে কেন্দ্র করে।


বিপুল হিরের ভান্ডারের মালিক হওয়া সত্ত্বেও দক্ষিণ আফ্রিকার সাধারণ মানুষ কখনও ওই ভান্ডারের সুবিধা ভোগ করতে পারেননি। তাঁরা চিরকাল বিদেশি শাসনের  মধ্যে শাসিত ছিলেন।


১৯৯৪ সালে মহা শক্তিধর বিদেশি শক্তিকে সরিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকায় ক্ষমতায় আসে আফ্রিকান ন্যাশানাল কংগ্রেস। এর পর অনেকেই আশা করেছিলেন সমাজে সাম্য ফিরবে।। কিন্তু তাতেও ছবিটা এতোটুকুও বদলায়নি। 


বর্তমানে দক্ষিণ আফ্রিকায় বেকারত্বের হার ৩৫ শতাংশেরও বেশি। দেশের প্রায় ৬০ শতাংশ তরুণ কর্মহীন। অপরাধমূলক কাজ সেখানে এতটাই বেশি যে, প্রশাসনের উপর ভরসা করে থাকা যায় না। বেশ কিছু ধনি সম্প্রদায়ের মানুষজন নিজেদের ঘরে চুরি-ডাকাতি ঠেকাতে কাঁটাতারের জাল বিছিয়ে রাখতে বাধ্য হন।


দক্ষিণ আফ্রিকার বিভিন্ন সমস্যার মধ্যে আরও একটি মূল সমস্যা হল দৈনন্দিন বিদ্যুতের অপ্রতুলতা। প্রতি বাড়িতে দিনে অন্তত ১২ থেকে ১৫ ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকে না। গ্রামীণ এলাকায় পরিস্থিতি আরও খারাপ। দেশটিতে বিদ্যুতের চাহিদা অত্যন্ত বেশি কিন্তু জোগান একেবারেই কম। ক্রমবর্ধমান এই বিদ্যুতের চাহিদা কোনরকম ভাবে যোগান দিতে পারে না সে দেশের সরকার।


এ সকল সমস্যার সমাধানের পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে দুর্নীতি। দক্ষিণ আফ্রিকা সরকার বিদ্যুৎ থেকে শুরু করে শিল্প, বাণিজ্য, শিক্ষা প্রভৃতি নানা খাতে পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ করে। কিন্তু তাতে কোন লাভ হয় না। কারণ দেশটির দুর্নীতিবাজ রাজনীতিবিদরা নিজের আখের গোছাতেই বেশি তৎপর। দেশটির উন্নয়নের দিকে এতোটুকুও ভ্রুক্ষেপ নেই কারোর।


তাই হিরের দেশ হয়েও দক্ষিণ আফ্রিকার নেই কোন ঔজ্জ্বল্য। ঔপনিবেশিক শাসন, বিদেশি ঔদ্ধত্য, বর্ণবৈষম্যের বিষ ঠেলে কখনও আলোয় মাথা তুলতেই পারেনি এই দেশ। তাই অনেকেই বলেন দক্ষিণ আফ্রিকার এই অবনতির পিছনে অনেকাংশেই দায়ী মূল্যবান রত্ন হিরে


No comments