Page Nav

HIDE

Grid Style

GRID_STYLE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

অটোইমিউন ডিজিজ আসলে কী?

অটোইমিউন ডিজিজ আসলে কী?
বয়স হয়েছিল মাত্র ১৯। বিরল ডার্মাটোমায়োসাইটিসে আক্রান্ত হয়ে প্রয়াত হন ‘দঙ্গল’ খ্যাত অভিনেত্রী সুহানি ভাটনগর। ডার্মাটোমায়োসাইটিস এক ধরনের অটোইমিউন ডিজিজ। এতো অল্প বয়সে অভিনেত্রীর মৃত্যু ঘিরে শুরু হয়েছে অটোইমি…

 


অটোইমিউন ডিজিজ আসলে কী?


বয়স হয়েছিল মাত্র ১৯। বিরল ডার্মাটোমায়োসাইটিসে আক্রান্ত হয়ে প্রয়াত হন ‘দঙ্গল’ খ্যাত অভিনেত্রী সুহানি ভাটনগর। ডার্মাটোমায়োসাইটিস এক ধরনের অটোইমিউন ডিজিজ। এতো অল্প বয়সে অভিনেত্রীর মৃত্যু ঘিরে শুরু হয়েছে অটোইমিউন ডিজিজ নিয়ে চর্চা। সোশ্যাল মিডিয়ার দৌলতে হাতে হাতে এই রোগ নিয়ে নানা ‘ফ্যাক্ট’। তা নিয়ে ছড়াচ্ছে আতঙ্ক। কিন্তু হোয়াটস অ্যাপে পাওয়া সেই সব ‘ফ্যাক্ট’ অনেকক্ষেত্রেই সত্যি নয়।

অটোইমিউন ডিজিজ আসলে কী?

আমাদের শরীরেই রোগ প্রতিরোধ করার ক্ষমতা রয়েছে। দেহে বাইরে থেকে কোনও ক্ষতিকারক বস্তু প্রবেশ করলেই দেহের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা তা নষ্ট করে দেয়। এখন কোনও কারণে যদি দেহের প্রতিরোধ শক্তি বুঝতেই না পারে, কোন বস্তু বাইরে থেকে এসেছে, আর কোন কোষটি আমাদের দেহেরই অংশ, তখনই সমস্যা শুরু হয়। দেহের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা ভালো কোষকেও আক্রমণ করে ফেলে। সহজ ভাষায় এটিই অটোইমিউন ডিজিজ। 

কিন্তু আমাদের দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কাজ করে কীভাবে? যে কোনও দেশের প্রতিরক্ষা নিশ্চিত করতে যেমন একাধিক স্তরে সৈন্যবাহিনী থাকে, তেমন আমাদের দেহেও রয়েছে। আমরা জন্মের সময়েই কিছু রোগ প্রতিরোধ করার ক্ষমতা নিয়ে জন্মাই। একে বলে ইনেনেট ইমিউনিটি। এটা আমাদের প্রতিরক্ষার প্রথম স্তর। বেসোফিল, নিউট্রোফিল ইত্যাদি এই প্রথম স্তরের অংশ। দেহে বহিরাগত কোনও জীবাণু প্রবেশ করলে, এরাই সেটিকে প্রথমে আক্রমণ করে। 

এই প্রথম স্তর প্রতিরোধ না করতে পারলে আসে আরেক ধরনের ‘সৈন্যবাহিনী’। এর নাম অ্যাকোয়ার্ড ইমিউনিটি। বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন রোগ, জীবাণুর সঙ্গে লড়তে লড়তে আমাদের দেহ অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করে। সেই অভিজ্ঞতা থেকেই এই ইমিউনিটি তৈরি হয়। এর নাম লিম্ফোসাইট। এই লিম্ফোসাইটে রয়েছে বি সেল ও টি সেল। এরাই বিভিন্ন অ্যান্টিবডি তৈরি করে আমাদের দেহকে রোগমুক্ত রাখে। 

কিন্তু বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে এই বি সেল, টি সেল ঘরশত্রু বিভীষণ হয়ে যেতে পারে। সাধারণত প্রত্যেক শিশুর জন্মের পর থেকেই দেহের কোষগুলির প্রতি একটা টলারেন্স তৈরি হতে শুরু করে। কিন্তু অনেক সময় একাধিক কারণে ‘সেলফ, নন-সেলফ’ পার্থক্য করার ক্ষমতা আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা করতে পারে না। তখন সে নিজের দেহের কোনও কোষ বা টিস্যুকেও বহিরাগত বলে ভেবে নিয়ে আক্রমণ করে। তৈরি হয় অটো-অ্যান্টিবডি। সারা দেহের যে কোনও অংশে এই যা আক্রমণ করতে পারে।

বিভিন্ন ধরনের অটো-ইমিউন ডিজিজ

প্রায় ৮০টি অটো-ইমিউন ডিজিজের খোঁজ মিলেছে। সাধারণভাবে অটো-ইমিউন  ডিজিজ দুই ধরনের। অর্গ্যান স্পেসিফিক এবং নন-অর্গ্যান স্পেসিফিক বা সিস্টেমিক। অর্গ্যান স্পেসিফিকের মধ্যে হাশিমোটো থাইরয়েড, টাইপ-১ ডায়াবেটিস পড়ে। এছাড়া প্যাংক্রিয়াস, অ্যাড্রিনাল গ্রন্থিতেও অটো-ইমিউন ডিজিজের প্রভাব লক্ষ করা যায়। সিস্টেমিক অটো ইমিউন ডিজিজের মধ্যে পড়ে রিউম্যাটয়েড আর্থ্রাইটিস, সিস্টেমিক লুপাস, ডার্মাটোমায়োসাইটিস ইত্যাদি।

কেন হয়? 

এই অসুখ হওয়ার নানা কারণ আছে। সেগুলিকে তিনভাগে ভাগ করা যায়।

 জেনেটিক প্রিডিসপজিশন: বংশে কারও অটো-ইমিউন ডিজিজ থাকলে জিনগত ভাবে সমস্যা হতে পারে।  পরিবেশগত: কিছু কিছু ব্যাকটেরিয়াল, ফাঙ্গাল বা ভাইরাল ইনফেকশন, ক্ষতিকর অতিবেগুনি রশ্মি, পারদ, বিভিন্ন রাসায়নিক থেকেও এই অটো-ইমিউন ডিজিজ হতে পারে। 

 ইমিউন রেসপন্স ডিসরেগুলেশন: হঠাৎ সহ্য ক্ষমতা কমে গেলে, সেলফ, নন-সেলফ আইডেন্টিফিকেশনের ভারসাম্য শরীর হারিয়ে ফেললে এই রোগ হয়। এখানে বলে রাখা দরকার, ইমিউন রেসপন্স ডিসরেগুলেশন কিন্তু পুরুষের তুলনায় মহিলার ক্ষেত্রে বেশি লক্ষ করা গিয়েছে। কেন? একটা গবেষণায় দেখা গিয়েছে ইস্ট্রোজেন হরমোন এর জন্য অনেকাংশে দায়ী যা ট্রিগার হিসেবে কাজ করে। সাধারণত ২০ থেকে ৪০ বছর বয়সি মহিলাদের মধ্যে অটো-ইমিউন ডিজিজে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেশি। যেমন, প্রেগনেন্সির সময় বহু মহিলার লুপাস হয়। 

চিকিৎসা কী?

নিয়ম মেনে চললে অটো-ইমিউন ডিজিজ কিন্তু নিয়ন্ত্রণে রাখা সহজ। যাঁদের ব্যথা থাকে, তাঁদের নন-স্টেরয়ডাল অ্যান্টিইনফ্লমেটরি এজেন্ট দেওয়া হয়। রোদ থেকে যাঁদের এই সমস্যা হয়, তাঁদের কড়া রোদে না বেরনোই উচিত। এছাড়া, মহিলাদের জন্মনিরোধক পিল খেতেও বারণ করা হয়। কারণ ওতে ইস্ট্রোজেন থাকে। এছাড়া, আরেক ধরনের চিকিৎসা হয় ইমিউনো সাপ্রেসিভ এজেন্টের মাধ্যমে। যাঁদের ইমিউন রেসপন্স ডিসরেগুলেশন হয়, তাঁদের এই ধরনের ওষুধ দেওয়া হয়। পাশাপাশি স্ট্রেরয়েডও দেওয়া হয়। কিন্তু এক্ষেত্রে কিছু সতর্কতা অবলম্বন করতে হয়। বেশি ব্যবহারে ইনফেকশন হতে পারে। খুব জরুরি অবস্থায় প্লাজমা থেরাপিও করা হয়ে থাকে।

ভয়ের কিছু নেই

এই রোগ নিয়ন্ত্রণে বহু ওষুধ আছে। সঠিক সময়ে রোগনির্ণয়, চিকিৎসকের পরামর্শ মতো ওষুধ খাওয়া, স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করলেই আমরা স্বাভাবিক থাকতে পারব।

No comments