Page Nav

HIDE

Grid Style

GRID_STYLE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

কুকুর ভালোবাসেন নাকি কুকুরে ভয় পান?

কুকুর  ভালোবাসেন নাকি কুকুরে ভয় পান?কুকুর  ভালোবাসেন নাকি কুকুরে ভয় পান? উত্তর আপনার যা-ই হোক, কুকুর আঁচড়ালে বা কামড়ালে তার বিষের প্রভাব কিন্তু সকলের শরীরে সমান! কুকুরের লালার বিষ থেকে বাঁচতে প্রতিষেধক নিতেই হবে। বহু কুকুরপ্রেমীর…

 



কুকুর  ভালোবাসেন নাকি কুকুরে ভয় পান?

কুকুর  ভালোবাসেন নাকি কুকুরে ভয় পান? উত্তর আপনার যা-ই হোক, কুকুর আঁচড়ালে বা কামড়ালে তার বিষের প্রভাব কিন্তু সকলের শরীরে সমান! কুকুরের লালার বিষ থেকে বাঁচতে প্রতিষেধক নিতেই হবে। বহু কুকুরপ্রেমীর ক্ষেত্রে দেখা যায়, অল্পস্বল্প আঁচড় বা কুকুরের নখে সামান্য চিড়ে যাওয়া নিয়ে মাথা ঘামান না। চিকিৎসাবিজ্ঞান ও জলাতঙ্ক রোগের প্রকৃতি জানলে বুঝবেন, এই রোগের সঙ্গে যুঝতে গেলে আবেগের কোনও জায়গা নেই। কুকুর ও মানুষ আলাদা প্রজাতির প্রাণী। কুকুর মানুষকে কামড়ালে বা আঁচড়ালে জলাতঙ্ক হওয়ার ঝুঁকি থেকে যায়। তাই কুকুরটি যতই প্রিয় হোক না কেন, ‘ওর থেকে আমার কোনও ক্ষতি হবে না’— জাতীয় কথা এখানে শুধুই আবেগের বাতুলতা! কুকুর ভালোবাসুন ক্ষতি নেই, কিন্তু কুকুরের আঁচড় কামড় নিয়ে সজাগ থেকে নিজেকেও ভালোবাসতে শিখুন।

কুকুরের আঁচড় বা কামড়কে অবহেলা করলে, উপযুক্ত ভ্যাকসিন না নিলে সেই সংক্রমণ থেকে জলাতঙ্ক হওয়ার শঙ্কা থেকেই যায়। আর এই অসুখ প্রাণঘাতী। দুর্ভাগ্যের বিষয় এর কোনও চিকিৎসা এখনও অবধি নেই। লক্ষণ প্রকাশ পাওয়ার পর একজন রোগী সর্বোচ্চ সাত দিন পর্যন্ত বাঁচতে পারেন। এই মৃত্যুযন্ত্রণা এতই কষ্টকর যে সিংহভাগ সময়ে রোগীকে অর্ধচেতন করে রাখা হয়। তাই এই রোগ প্রতিরোধ করা ছাড়া অন্য উপায় নেই।


টীকার ইতিহাস

১৮৮৫ সালে ফরাসি নাগরিক জোসেফ লিস্টারকে কুকুরে কামড়ায়। লুই পাস্তুর প্রথম তাঁর শরীরে এই র‌্যাবিস ভাইরাসের টিকা ব্যবহার করেন। সেটি তখন ছিল নার্ভ-টিস্যু ভ্যাকসিন। বড় ও মোটা সূচ, বেশ বেদনাদায়ক। ভ্যাকসিনের সংখ্যাও অনেক বেশি। নাভির চারপাশে এই ইঞ্জেকশন দিতে হতো। এই ভ্যাকসিনের প্রভাবে জোসেফ সে যাত্রা প্রাণে বেঁচে যান। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই ভ্যাকসিন উন্নত হয়েছে। সুচ সরু হয়ে এসেছে টিস্যু কালচার ভ্যাকসিন, যা কম বেদনাদায়ক ও বাহুতে নিতে হয়। প্রয়োজন হয় মাত্র ৫টি। বর্তমানে এই ভ্যাকসিনের পাশাপাশি র‌্যাবিস ইমিউনোগ্লোবিউলিন, টিটেনাস ও অ্যান্টিবায়োটিক মিলে এই প্রতিরোধ তৈরি করা হয়।


ঝুঁকি কখন

কুকুরের আঁচড়, কামড় বা কোনও ক্ষতস্থানে কুকুরের লালা লেগে গেলে এই অসুখের ঝুঁকি তৈরি হয়। র‌্যাবিস ভাইরাসের কারণে এই অসুখ মানবশরীরে বাসা বাঁধে। এই ভাইরাসের সঙ্গে লড়তে গেলে শুধু ইঞ্জেকশন বা ভ্যাকসিন যথেষ্ট নয়। প্রয়োজন নিয়ম মেনে ‘উন্ড টয়লেট’ করা। 


উন্ড টয়লেট কেন?

চিকিৎসাবিজ্ঞানের গাইডলাইন মেনে আক্রান্ত জায়গাটিকে প্রথমেই উচ্চ ক্ষারযুক্ত সাবান ও ২ শতাংশ পোভিডিন আয়োডিন মেশানো জল দিয়ে ১৫ মিনিট ধরে ধুতে হবে। একেই উন্ড টয়লেট বলে। এই র‌্যাবিস ভাইরাসের এমনই প্রকৃতি যে শুধু প্রতিষেধক বা টিকা দিয়ে এর ১০০ শতাংশ বিষ নির্মূল করা যায় না। ৫০ শতাংশ ভাইরাসকে সাবানজলে ধুয়ে নির্মূল করে দিতে হয়। বাকি ভাইরাস নির্মূলের জন্য ভ্যাকসিন ও অন্যান্য চিকিৎসার উপর নির্ভর করতে হয়। তাই ভ্যাকসিনের মতোই উন্ড টয়লেট গুরুত্বপূর্ণ।


 কুকুর শুঁকলেও কি ভ্যাকসিন?

জলাতঙ্কের তিনটি ভাগ আছে। ১) কুকুরে শোঁকা, ২) কুকুরের আঁচড়, ৩) কুকুরের কামড়। কোনও কুকুর যদি আপনাকে শোঁকে, তাহলে বাড়িতে এসে ভালো করে শোঁকা জায়গাটি উচ্চ ক্ষারযুক্ত সাবান ও ২ শতাংশ পোভিডিন আয়োডিন দিয়ে ধুয়ে নিন। এতে জলাতঙ্কের ঝুঁকি এড়ানো সম্ভব। নিজের বাড়ির কুকুরের প্রয়োজনীয় সব ভ্যাকসিন নেওয়া থাকলে সেক্ষেত্রে শুঁকলে অতটা ভয় নেই। তবে অন্যের বাড়ির কুকুর হলে বাড়ি ফিরে ভালো করে হাত-পা ধুয়ে নিন।


কুকুর আঁচড়াল, কী করব?

কুকুরের নখ থেকেও র‌্যাবিস ভাইরাস ছড়ায়। এটি জলাতঙ্কের দ্বিতীয় ক্যাটেগরি। তাই চেনা বা অচেনা যে কোনও কুকুর আঁচড়ালে যদি চিরে যায়, রক্ত না বেরয়, তাহলে প্রথমে নিয়ম মেনে ওই জায়গাটি উচ্চ ক্ষারযুক্ত সাবান ও ২ শতাংশ পোভিডিন আয়োডিন দিয়ে ধুতে হবে মিনিট ১৫ ধরে। তারপর অবশ্যই ভ্যাকসিন নিতে হবে। পাঁচটি ইঞ্জেকশনের প্রথমটি ঘটনার দিন, তারপর ঘটনার ৩ দিনের মাথায়, তৃতায়টি ৭ দিনের মাথায় চতুর্থটি ১৪ দিনের মাথায় ও পঞ্চমটি ২৮ দিনের মাথায় নিতে হবে। এই সব ভ্যাকসিন হাতে নিতে হবে।


কামড়ালে অতিরিক্ত কী?

কুকুরের কামড়ে রক্তের দেখা মিললে বা ক্ষত তৈরি হলে উন্ড টয়লেট ও ভ্যাকসিন নেওয়ার পুরো প্রক্রিয়াটির সঙ্গে যোগ হবে র‌্যাবিস ইমিউনোগ্লোবিউলিন ইঞ্জেকশন। এটি ক্ষতস্থানের মধ্যে নিতে হবে। এটি একটি রেডিমেড অ্যান্টিবডি। ভ্যাকসিন শরীরে প্রবেশ করে কাজ করতে যে ক’টি দিন সময় নেবে, তার আগেই এই ইমিউনোগ্লোবিউলিন ক্ষতস্থানে থেকে যাওয়া বিষকে প্রশমিত করবে। এর আয়ু সাত দিন। এই সাত দিনের মধ্যে শরীরের ভ্যাকসিন সক্রিয় হয়ে যাবে। এর সঙ্গে প্রয়োজন একটি টিটেনাস ইঞ্জেকশন ও প্রয়োজনীয় অ্যান্টিবায়োটিক। 


শুধু কুকুরেই সতর্কতা?

যে কোনও উষ্ণ রক্তের প্রাণী থেকেই এই রোগ ছড়াতে পারে। কুকুর, বিড়াল, বেজি, গবাদি পশু, ঘোড়া, ভোঁদড়, শিয়াল ইত্যাদির কামড় থেকে জলাতঙ্ক ছড়াতে পারে। 

সতর্কতা

• প্রতিটি ভ্যাকসিন যেন তারিখ ও পদ্ধতি মেনে দেওয়া হয়। 

• অর্ধেক ভ্যাকসিন হাতে, অর্ধেক পেটে এভাবে নেবেন না। সব ভ্যাকসিন হাতে, ইমিউনোগ্লোবিউলিন ক্ষতস্থানে নিতে হবে।

• পুরসভা ও পঞ্চায়েতের দায়িত্ব স্থানীয় কুকুরদের প্রয়োজনীয় ভ্যাকসিনেশন ও লাইগেশন করানোর। নাগরিক সচেতনতাও প্রয়োজন।

No comments