শতাব্দী প্রাচীন রাজ হাইস্কুলের নবরূপায়িত ‘লাল বিল্ডিং’-এর উদ্বোধন
শনিবার শতাব্দী প্রাচীন রাজ হাইস্কুলের নবরূপায়িত ‘লাল বিল্ডিং’-এর উদ্বোধন। অনুষ্ঠান ঘিরে আবেগঘন পরিবেশ তৈরি হয়েছে মহিষাদলে। ঐতিহ্যবাহী এই স্কুল বাড়ি শুধু মহিষাদল নয়,…
শতাব্দী প্রাচীন রাজ হাইস্কুলের নবরূপায়িত ‘লাল বিল্ডিং’-এর উদ্বোধন
শনিবার শতাব্দী প্রাচীন রাজ হাইস্কুলের নবরূপায়িত ‘লাল বিল্ডিং’-এর উদ্বোধন। অনুষ্ঠান ঘিরে আবেগঘন পরিবেশ তৈরি হয়েছে মহিষাদলে। ঐতিহ্যবাহী এই স্কুল বাড়ি শুধু মহিষাদল নয়, মেদিনীপুর জেলা ও রাজ্যের আধুনিক শিক্ষার অন্যতম আঁতুড়ঘর। লাল বিল্ডিংয়ের দেওয়ালে লেখা রয়েছে প্রায় দেড়শো বছরের পুরনো একটি স্কুলের জন্মলগ্নের ইতিহাস, অতীত গৌরবগাথা। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে ওঠার সমসাময়িককালে মহিষাদল রাজ পরিবারের উদ্যোগে ইংরেজি শিক্ষার জন্য স্কুল গড়ে ওঠে প্রত্যন্ত গ্রামে। হিন্দি সাহিত্যের প্রখ্যাত কবি নিরালা(সূর্যকান্ত ত্রিপাঠি), ভারতবর্ষ পত্রিকার সম্পাদক লেখক জলধর সেন, বিপ্লবী সতীশচন্দ্র সামন্তর স্মৃতি বিজড়িত রাজ হাইস্কুল ছিল মেদিনীপুরের প্রথম অবৈতনিক স্কুল। নিরালা এই লাল বিল্ডিংয়ে পড়াশোনা করেছেন। কিছুদিন শিক্ষকতা করেছেন ভ্রমণকাহিনির লেখক জলধর সেন। জরাজীর্ণ অবস্থায় ধ্বংস হতে বসেছিল ঐতিহ্যবাহী লাল বিল্ডিং। ঐতিহ্য রক্ষার দাবি ওঠে মহিষাদলে। স্থানীয় বিধায়ক তিলক চক্রবর্তী ও শিক্ষানুরাগী মানুষজনের উদ্যোগে লাল বিল্ডিং সংস্কার কমিটি গড়ে বছরখানেক আগে কাজ শুরু হয়। নতুনভাবে সজ্জিত লাল বিল্ডিংয়ে এবার ইতিহাস মিউজিয়াম, ল্যাঙ্গুয়েজ স্টাডি সেন্টারের পরিকল্পনা করা হয়েছে।
মহিষাদলের রাজা লছমন প্রসাদ গর্গের(১৮৪১-১৮৭৮) উদ্যোগে রাজ হাইস্কুল গড়ে ওঠে। তিনি নিজে ভালো ইংরেজি জানতেন। ১৮৭৪ সালে রাজবাড়ি সংলগ্ন এক উচ্চশ্রেণির ইংরাজি স্কুল স্থাপন করেন। নামকরণ করেন ‘মহিষাদল রাজ হাই ইংলিশ স্কুল’। তবে রাজ হাইস্কুলের জন্মসাল নিয়ে কিছু মতান্তর রয়েছে। ওই সময়ের ডিস্ট্রিক্ট সেনসাস রিপোর্ট বা লেখক ও ম্যালির বই থেকে জানা গিয়েছে, ১৮৫২সাল নাগাদ ওই স্কুল শুরু হয়েছিল। রাজার এক ভাগ্নের (গুড়ুমবাবু নামে পরিচিত) পড়াশোনার জন্য রঙ্গিবসান প্যালেস সংলগ্ন দুর্গামণ্ডপে চালু হয় স্কুল। পরে সেটি লাল বিল্ডিংয়ের কাছে একটি বাড়িতে উঠে যায়। বেশ কিছুদিন ওই বাড়িতে স্কুল চলার পর ১৮৯৪ সাল নাগাদ রাজ হাইস্কুলের তৎকালীন নতুন ভবন ‘লাল বিল্ডিং’ তৈরি শুরু হয়। ১৮৯৬ সালে লাল বিল্ডিং নির্মাণের কাজ শেষ হয়। আজকের ওই লাল বিল্ডিং প্রায় ১৩০ বছরের পুরনো।
লাল বিল্ডিং ক্রমশ জরাজীর্ণ হয়ে পড়ে। তৎকালীন প্রধান শিক্ষক সুবোধচন্দ্র সেনগুপ্ত স্কুলের তহবিল থেকে অর্থ খরচ সংস্কার করেন। ফের একবার ১৯৯৯ সালে রাজ হাইস্কুলের ১২৫ বছর পূর্তি উদযাপন অনুষ্ঠানের প্রাক্কালে লাল বিল্ডিং সংস্কার করা হয়। কিন্তু দু’দশকের বেশি সময় ব্যবহার না হওয়ায় সেটি নষ্ট হতে বসে। লাল বিল্ডিং এমনভাবে জরাজীর্ণ হয়ে পড়ে যে, এটির সংস্কারের ব্যয়ভার নিয়ে চিন্তায় পড়েন সকলে। প্রাথমিকভাবে স্কুল কর্তৃপক্ষও তাই সংস্কারে আগ্রহী হয়নি। শেষে এগিয়ে আসেন মহিষাদলের বিধায়ক তিলক চক্রবর্তী এবং আঞ্চলিক ইতিহাস গবেষক অধ্যাপক হরিপদ মাইতির মতো শিক্ষানুরাগীরা। তিলকবাবু বলেন, লাল বিল্ডিংয়ের কাঠামো অক্ষুণ্ণ রেখে সংস্কারে প্রায় ৭০ লক্ষ টাকা ব্যয় হয়েছে। এজন্য বিধায়ক তহবিল থেকে ২২লক্ষ টাকা ব্যয় হয়েছে। স্কুলের শিক্ষক, প্রাক্তনীরা মিলিয়ে ১০লক্ষের বেশি অর্থ দিয়েছেন। লাল বিল্ডিংয়ের দু’টি বড় হলঘরে লাইব্রেরি, মিউজিয়াম গড়ে তোলা হবে। ব্রিটিশ কাউন্সিলের সহযোগিতায় অনলাইন ইংরেজি শিক্ষার কোর্স চালু করার উদ্যোগ নিচ্ছি। ল্যাঙ্গুয়েজ স্টাডি ও কেরিয়ার কাউন্সেলিং সেন্টার তৈরি হবে। হরিপদবাবু বলেন, মহিষাদলবাসীর পক্ষ থেকে লাল বিল্ডিংকে ‘হেরিটেজ’ ঘোষণার দাবি জানাচ্ছি।
No comments